তিল চাষ সঠিক পদ্ধতি

Didibhai Agrofarm
0


 তিল একটি অর্থকারী ফসল।  কম খরচে ও কম পরিশ্রমে ভালো লাভ করা যায়। বাজারে তিলের এবং তিল তেলের চাহিদা প্রচুর কিন্তু চাহিদার তুলনায় চাষ কম হয়। আমাদের রাজ্যে তেল বীজের মধ্যে তিলের স্থান দ্বিতীয় সরষের পরেই। 

    ১. জাত :- 

    রমা, তিলোত্তমা ,সাবেত্রী,উম, জহর ,রাজস্থান, কৃষ্ণা, বি- ৬৭ , জি.টি -২ , টি.কে.জি -২১ ইত্যাদি।

    ২.  বোনার সময় :- 

    তিল চাষ মূলত সারাবছর করা যায়। গ্রীষ্মকালীন চাষ ফাল্গুন পর্যন্ত তাপমাত্রা ২০ -৩৪  মধ্যে তিল চাষের উপযোগী সময়। আলু চাষের পরেই সেই জমিতে তিল চাষ করা যায়।  তবে জমির ধরণের নির্ভর করে বীজ রোপন করা উচিত। গাছের গোড়ায় জল যেন না দাঁড়ায় তবে গোড়া পচা রোগ দেখা দিতে পারে এবং অতি বর্ষায় যেন তিল উৎপাদন সময় না হয় তবে দানা পুষ্ট হবে না ও উৎপাদন কম হবে, এই বিষয় গুলির দিকে কৃষকদের নজর রাখতে হবে। বর্ষাকালীন তিল চাষ জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে করতে হয় এবং ভাদ্র মাসের শেষ সময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাব কেটে যাওয়ার পর বা বর্ষা বিদায় নিলে তিল চাষের উপযোক্ত হয়।   রমা, তিলোত্তমা সারা বছর চাষ করা যায়।

    ৩. জমি ও মাটি :- 

    উঁচু যে কোনো মাটিতে হয়। পলি দোআঁশ , বেলে দোআঁশ মাটি তিল চাষের জন্যে ভালো উপযোগী।  বর্ষাকালে নিকাশী ব্যবস্থা থাকা দরকার ৷ 

    ৪. সেচ ব্যবস্থাপনা :- 

    মাটিতে ‘জো’ থাকা অবস্থায় বীজ বপন করতে হবে। প্রথম সেচ ৩০-৩৫ দিনের মাথায়, দ্বিতীয় সেচ ২০ দিন পর। বর্ষায়কালীন ফসল তাই সেচের দরকার বেশি হয় না।

    ৫. সারি ও গাছের দূরত্ব :- 

    সারির দূরত্ব ১ ফুট বা ৩০ সেন্টিমিটার, সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪  ইঞ্চি। সাধারণত ছিটিয়ে লাগানো হয় ৷ সেক্ষেত্রে গাছের দূরত্ব ৬-৭ ইঞ্চি ৷ রোপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিতে হবে। ১ কেজি বীজের জন্যে ২ গ্রাম কার্বোন্ডাজিম ৫০% এবং ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি দিয়ে করলে ৫ গ্রাম প্রতি কেজি বীজে মেখে শোধন করে রোপন করতে হবে। এর জন্যে একটি কৌটোতে বীজ ও শুকনো জীবাণু নাশক দিয়ে ঝাকিয়ে নিলেই হয়।  এছাড়াও জৈব ভাবে বীজামৃত দিয়ে শোধন করে নিলে আরো ভালো হয়। 

    ৬. বীজের হার :- 

    ছড়িয়ে বপন করলে  ১ কেজি বিঘা প্রতি এবং সারিতে রোপন করলে ৮০০ গ্রাম প্রতি বিঘায় (৩৩ শতকে ১ বিঘা হিসাবে)। সারিতে রোপন করলে ফলন ভালো পাওয়া যায় এবং ঘন রোপন করলে ফলন কমে যায় ৷

    ৭. সার প্রয়োগ :-

     সার প্রয়োগ করার আগে মাটি পরীক্ষা করে নিলে সব থেকে ভালো হয়। তাহলে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ হয় যা গাছের সঠিক পুষ্টি ও মাটির জন্যে ভালো ও খরচ কম হয়। সাধারণত তিল এর জন্যে প্রধান তিনটি খাদ্য নাইট্রোজেন ৬ কেজি ৫০০ গ্রাম ,ফসফেট ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম এবং পটাশ ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম প্রয়োজন হয় , এর জন্যে বীজ রোপনের পূর্বে বিঘা প্রতি ইউরিয়া ৭ কেজি , সিঙ্গেল সুপার ফসফেট ২১ কেজি এবং মিউরেট অফ পটাশ ৩ কেজি ছড়িয়ে দিয়ে শেষ চাষ দিতে হবে। 

    বীজ রোপনের ১ মাস পর ৭ কেজি ইউরিয়া ও ৩ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে আলু চাষের পর তিল রোপন করলে সারের পরিমান কমিয়ে দিয়ে বপন করলে হবে। 

    এছাড়াও  তিল চাষের জন্যে প্রতি বিঘায় ৬০০-১০০০ কেজি কম্পোস্ট ও অ্যাজোটোব্যাক্টর ও পি এস বি জীবাণুসার ব্যবহার করা ভালো। খাদ্যের চাহিদা বেশি। কাঠা প্রতি এক থেকে দেড় কেজি নিমখোল দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হয়।  যে কোনো তৈল বীজ চাষের ক্ষেত্রে সালফার প্রয়োগ আবশ্যক। যদি উল্লেখিত ফসফেট এর পরিমান কম ব্যবহার করা হয় তবে চাষের সময় বিঘা প্রতি ৩ কেজি সালফার প্রয়োগ করলে ভালো।  যদি না করা হয় তবে চারা গাছে সালফার ১% দিয়ে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। 

    ৮. রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ :- 

    তিলের রোগ কম , বপনের পূর্বে বীজ শোধন করে নিলে রোগ হয় না বললেই চলে।  বৃষ্টিতে বেশি আক্রান্ত হলে পাতা ধসা রোগ হয়।  

    তিলের মারাত্মক রোগের মধ্যে একটি রোগ হল  ফাই লোডি। এটি সাধারত বাহক পোকা দ্বারা  গাছে রোগ ছড়িয়ে পরে।  এই রোগ হলে গাছের মাথার পাতা গুলি ছোট ছোট হয়ে  ঝুটি বেঁধে যায় এর ফলে গাছ আর বাড়ে না এবং ফুল ফল হয় না ও কান্ড চ্যাপ্টা হয়ে যায় । এর প্রতিকারের জন্যে বাহক পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়  ইমিডাক্লোরোপিড ১৭.৬% এস.এল ২ এম.এল প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হয়। 

    তিল গাছ শুকিয়ে যায় যা উইল্টিং রোগের জন্যে হয়। ট্রাইকোডার্মা দিয়ে বীজ  শোধন করে রোপন করলে এই রোগ আসে না। 

     তিল চাষে সাধারণত পাতামোড়া পোকা , ক্যাপসুল ছিদ্রকারী পোকা , বিছে পোকা শুরুর দিকে কিছ দেখা যায় যা পাতা খেতে থাকে। 

    • নিয়ন্ত্রনের জন্যে নিয়মিত মাঠ পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দু একটি পোকা দেখলে হাত দিয়ে মেরে ফেলতে হবে। পরে নিঁম তেল ১০০০০ পি.পি.এম ২ এম.এল প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।  আলোক ফাঁদ ,ফেরোমোন ফাঁদ বা বিষটোপ ঝোলা গুড়ে বিষ মাখিয়ে জমির চারিদিকে আলে বা মাঝে লাঠি গেড়ে তাতে দিয়ে রাখলে পোকা এসে বসে এবং মারা যায়। 
    • পাখি বসার জায়গা করে দিলে পাখি এসে পোকা ধরে খায় এর জন্যে বিঘা প্রতি ৫-৬ টা গাছের ডাল জমির মাঝে মাঝে পুঁতে রাখলে ভালো হয়। 
    • আক্রান্ত বেশি হলে  ইমিডাক্লোরোপিড ১৭.৬% এস.এল ২ এম.এল প্রতি লিটার জলে বা এসিফেট ৭.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। 

    ৯. সাথি ফসল :- 

    মুগ, বিউলি, ছোটো দানা শস্য।

    ১০. ফসল কাটার সময় :-  

    গাছ হলুদ হতে থাকবে ,পাতা ঝরে পড়বে , সুটি গুলো বাদামি রং ধারণ করবে এবং যখন মাঠের ৭৫% ফসল এমনটা হবে তখন কেটে নিয়ে এসে বাড়িতে বা উঁচু জায়গায় মাথা গুলো ভেতর দিকে ও গোড়া গুলো বাহির দিকে রেখে গোল করে উঁচু স্তূপ বানিয়ে ৫-৭ দিন জাক দিতে হবে। জাক দিলে পুষ্ট দানা পাওয়া যায় , ফলন বেশি ও তেল বেশি পাওয়া যায়। জাক দেওয়া হয়ে গেলে দুদিন ভালো করে রোদে শুকিয়ে লাঠি দিয়ে মেরে তিল ছাড়িয়ে নিয়ে আবার রোদে শুকিয়ে ঘরের তাপমাত্রায় ঠান্ডা করে বস্তা প্যাকেজিং করা যায়। 

    ১১. উৎপাদন ও লাভ  :- 

    বিঘা প্রতি ২০০-২৫০০  কেজি দানা পাওয়া যায় যদি গুণগত মানের বীজ সঠিক ভাবে সার জল প্রয়োগ করা হয়  । 

    তিল থেকে ৪০-৫০% তেল পাওয়া যায় এবং যা খরচ করে বিক্রয় হয় সে অনুযায়ী ৩০-৪০% খরচ বাদ ৬০-৭০% টাকা লাভ করা যায় চলমান বাজারের উপর নির্ভর করে। 

    ১২. তথ্য সূত্র - 

    • কৃষিবিভাগ পশ্চিমবঙ্গ সরকার। 
    • ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান কেন্দ্র (ICAR  )


    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)