মটরশুটি চাষ কৌশল

Didibhai Agrofarm
0
মাঝারি, উঁচু জমি, দোঁয়াশ ও পলি মাটিতে ভাল হয়৷ ক্ষারধর্মী মাটিতে চাষ হয় না। ঝুরঝুরে সরস মাটিতে বীজ বুনতে হয়। আমন ধান কাটার পর পয়রা পদ্ধতিতে ঘোসো বা মাঠ মটরের চাষ হয়।


শীতকালীন ডাল শস্যের মধ্যে মটর অন্যতম। সুস্বাদু ডাল হিসাবে তো বটেই। ছোলা মটর মিশেল করে ঘুগনীর স্বাদ তো জিভেয় জল আসে। মটরের শাক তো খুবই জনপ্রিয় ৷ কৃষকেরা সাধারণত বাজারের চাহিদা অনুযায়ী মটর কে বিভিন্ন পর্যায়ে উৎপাদনের জন্যে চাষ করে থাকেন।  মটর চাষ একটি সহজ পদ্ধতি যদি নির্দিষ্ট কিছু বিষয় জেনে নিয়ে চাষ করা যায় তাহলে লাভের পরিমান বেশি হয়। মটর শাক এবং সবুজ অবস্থায় যেটিকে মটরশুটি বলা হয় এবং বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায় এ ছাড়াও শুকিয়ে মটর তৈরী করে বিক্রি করা হয় তাই মটর চাষ কৃষকদের জন্যে একটি অর্থকারী ফসল বলা যেতে পারে।

    ১. জাত ও বৈশিষ্ট :-

    ক. তিঁ৬৩ :-

    ১৩৫-১৪০ দিনে পাকে, উজ্জ্বল সাদা, আকর্ষণীয় বড় দানা (১০০টি দানার ওজন ২৫ গ্রাম), লতানো স্বভাবের পাতার রং হালকা সবুজ।

    খ. BR ১২ :-

    ১৩০-১৩৫ দিনে পাকে, মাঝারী দৈর্ঘ্যের লতানো স্বভাবের৷ অনুজ্জ্বল সাদা মাঝারী আকারের দানা, ১০০টি দানার ওজন ২০.৫ গ্রাম, দানার নাভী কালচে হয়। রচনা: উন্নত জলদী জাত, ফুল সাদা ছোট দাঁড়ানো ঝোপ, মাঝারী আকারের দানা হয়৷

    গ. দেশি স্থানীয় জাত :-

     ছোট ঘন সবুজ ঝোপ, দানা ছোট, অনুজ্জ্বল, খরা সহ্য ক্ষমতা বেশি, জমি না চষে পয়রা করে

    চাষ করা হয়। ঘোসো মটর, মাঠ মটর নানা স্থানীয় নামে পরিচিত। এর ঝোপ ছোট ও পাতা খেসারীর মত লম্বাটে হয়। 

    ২. মটর বপনের সময় :- 

    অক্টোবরের ২য় পক্ষ থেকে নভেম্বরের ১ম পক্ষ (কাৰ্ত্তিক মাস)।

    ৩. জমি ও মাটি :-

    মাঝারি, উঁচু জমি, দোঁয়াশ ও পলি মাটিতে ভাল হয়৷ ক্ষারধর্মী মাটিতে চাষ হয় না। ঝুরঝুরে সরস মাটিতে বীজ বুনতে হয়। আমন ধান কাটার পর পয়রা পদ্ধতিতে ঘোসো বা মাঠ মটরের চাষ হয়। পয়রা পদ্ধতিতে চাষ করলে সময় ও খরচ দুটি বাঁচে।

    ৪. সেচ এর প্রয়োজনীয়তা :-

     তিনটি হালকা সেচ দিতে পারলে ভাল। প্রথমটি ২৫-৩০ দিনের মধ্যে, দ্বিতীয় সেচ ৫০-৬০ দিনে ও তৃতীয়টি ৯০-৯৫ দিনের মধ্যে। জলের অভাব থাকলে প্রথম ও দ্বিতীয়টি দেওয়া ভাল৷ জল জমা বা অতিরিক্ত সেচ সহ্য করতে পারে না।

    ৫. সারি ও গাছের দূরত্ব :-

    সাধারণত: ছিটিয়ে লাগানো হয়৷ সারিতে লাগালে সারির দূরত্ব ৩০-৩৫ সেমি এবং সারিতে গাছের দূরত্ব ১০ সেমি৷

    ৬. বীজের হার :-

    দানার আকার ভেদে বিঘা প্রতি ১২-১৪ কেজি বীজ লাগে ৷

    ৭. সার প্রয়োগের পরিমান :-

    বীজে রাইজোবিয়াম স্পেসিস প্রজাতির জীবাণুসার (পি ১০-৭৬) মাখিয়ে লাগালে ফলন ভাল হয়৷ প্রথম চাষে ৫-৭ কুইন্টাল জৈব সার দিতে হবে সাথে ১০-১২ কেজি রক ফসফেট বা ডোলোমাইট বা সিঙ্গেল সুপার ফসফেট দিলে ফলন ভাল হয়৷

    ৮. উৎপাদন :- 

    বিঘা প্রতি ২-৩ কুইন্টাল পর্যন্ত দানা ও ৩-৪ কুইন্টাল শুকনো গোখাদ্য পাওয়া যায়৷ স্থানীয় ঘোসো বা মাঠ মটরের ফলন ৮০-১২০ কেজি পর্যন্ত হয়৷

    ৯. ফসল সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা :-

    শুঁটি ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হতে পারে। শুঁটি ধরার সময় থেকে ১০-১২ দিন অন্তর ৩-৪ বার ১৫% নিমপাতার নির্যাস , ১.৫% নিম তেল ও ০.২৫ শতাংশ সাবানের জলীয় দ্রবণ স্প্রে করলে পোকা নিয়ন্ত্রণে থাকে৷

    মটর ডালে পাউডারি মিলডিউ ছত্রাক (সাদা পাউডারের মত আস্তরণ) পাতা ডাঁটায় দেখা গেলে ৩% নিম তেলের সাথে ০.২৫% সাবানের মিশ্রণ ১৫,৪০ ও ৫০ দিনে স্প্রে করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে৷

    ক্ষতির পরিমান বেশি দেখলে নিঁম পাতা ,রসুন ,লঙ্কা ,তামাক পাতা ও গোমূত্র সহযোগে অগ্নি অস্ত্র তৈরী করে ব্যবহার করলে দ্রুত  পোকার আক্রমণ কমে যায়।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)