মুসুর ডাল চাষ এর সনাতন পদ্ধতি

Didibhai Agrofarm
0
আমন ধান কাটার পর সেচ বিহীন বেশীর ভাগ জমি এখনও পতিত পরে থাকে অথচ মাটির সঞ্চিত রসেই এর চাষ করতে পারি। আমন ধান কাটার পর ১২-১৫ দিন আগে জমি জল ছেড়ে দিয়ে ধান কাটার ৩-৪ দিন আগে শুধু বীজ ছড়িয়ে পয়রা পদ্ধতিতে মুসুরীর চাষ আমাদের রাজ্যে ভালোই হয়।


মুসুরীর ডাল আমাদের ঘরে ঘরে সব চাইতে জনপ্রিয়। প্রায় প্রতি দিন কম বেশী পাতে পড়ে। আমন ধান কাটার পর সেচ বিহীন বেশীর ভাগ জমি এখনও পতিত পরে থাকে অথচ মাটির সঞ্চিত রসেই এর চাষ করতে পারি। আমন ধান কাটার পর ১২-১৫ দিন আগে জমি জল ছেড়ে দিয়ে ধান কাটার ৩-৪ দিন আগে শুধু বীজ ছড়িয়ে পয়রা পদ্ধতিতে মুসুরীর চাষ আমাদের রাজ্যে ভালোই হয়। আমাদের রাজ্যে ডালের প্রয়োজন বেশীর ভাগটাই বাইরে থেকে আমদানী করতে হয়। ডাল চাষ কৃষি অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা নিতে পারে। 

    ১.মুসুর ডাল এর উচ্চফলনশীল জাত ও বৈশিষ্ট :-

    ক। মালিকা (K-75):-

     উত্তর প্রদেশের স্থানীয় বাছাই করা জাত৷ দানায় ধূসর বা ছাই রং-এর ছিটে থাকে, দানা বড়, ১০০০টি দানার ওজন ২৭ গ্রাম৷ স্বাভাবিক চাষে ১২৫-১৭৫ কেজি এবং পয়রা চাষে ৮০-১০০ কেজি বিঘা প্রতি ফলন হয়।

    খ। আশা (B-77):-

    আসামের স্থানীয় বাছাই করা জাত, ১২০ দিনে পাকে৷ দানার রং মালিকার মত, আকারে ছোট, ১০০০টি দানার ওজন ১৬ গ্রাম৷ খরা সহ্য করার ক্ষমতা ভাল। বিঘা প্রতি উৎপাদন ১২৫-১৭৫ কেজি হয়৷ পয়রা চাষে ৬০-৮০ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গে এর চাষ বেশী হয়৷ ১২০ দিনে পাকে ৷

    গ। রঞ্জন (B-256) :-

     দানার আকার মাঝারি, ধূসর বর্ণের। গাছ শাখাবহুল। ১২৫-১৩০ দিনে পাকে ৷

    ২.জমি ও মাটি :-

    পলিমাটি, দোঁয়াশ, ও এঁটেল মাটিতে ভাল হয়।

    ৩.মুসুর ডাল চাষের সময় :-

     অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ৷ (কার্তিকের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত)। বিনা চাষে পয়রা পদ্ধতিতে করলে ধান কাটার ২ সপ্তাহ আগে জল বের করে দিয়ে কাটার ৩-৪ দিন আগে বীজ ছেটাতে হয়। বেশী আগে বীজ ছেটালে বাড় ভাল হয় না, শাখা প্রশাখা কম হয়, গাছ সরু ও লম্বা হয়ে যায়৷ ফসল কম হয়৷

    ৪.বীজের হার :-

    বিঘা প্রতি ছোট দানা ৪-৫ কেজি ও বড় দানা ৫-৬ কেজি। প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ২০-৩০ গ্রাম তিসির বীজ মিশিয়ে লাগালে গোড়া পচা, ঢলে পড়া রোগ কম হয়।

    ৫.সারি ও গাছের দূরত্ব :-

     সারিতে বুনলে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি বা ৮-১০ ইঞ্চি৷ সারিতে চারার দূরত্ব ৩-৪ সেমি বা ১-১.৫ ইঞ্চি। ছিটিয়ে বুনলে প্রতি বর্গ হাতে ৩২-৩৫ টি হারে দানা ছড়াতে হয়৷ মাটি চষে লাগালে দুই আঙ্গুল বা ৩-৪ সেমি গভীরে বীজ বুনতে হবে।

    ৬.সার প্রয়োগ :-

    রাইজোবিয়াম স্পেসিস জাতের জীবাণুসার অবশ্যই বীজে মাখাতে হবে। এরপর জলে ভেজানো ঠান্ডা করা ২০০ গ্রাম চুন প্রতি কেজি বীজে মাখিয়ে বুনলে খুবই ভালো হয়। বিঘা প্রতি ৬-৮ কুইন্টাল ভালো কম্পোস্ট, ১৫-২০ কেজি রক ফসফেট বা ডলোমাইট দিলে ভালো হয়।  ফসলের একমাস বয়স থেকে, পনেরো দিন অন্তর তিনবার তরল সার স্প্রে করে ২৫% উৎপাদন বাড়িয়ে তোলা যায় ৷ এতে পাতার মরচে পড়া রোগ কম হয় । 

    ৭.সেচ ব্যবস্থাপনা :-

     বোনার সময় মাটিতে রস না থাকলে একটি সেচ দিয়ে মাটি তৈরী করতে হবে এবং দানা পুষ্ট হওয়ার সময় একবার করে হালকা সেচ দিলে ফলন বাড়ে। পয়রা চাষে কখনও মাটিতে রসের অভাব হলে - মাটি ফেটে গেলে একটা হালকা সেচ দিলে ভালো হয়৷ সেচ বেশী হলে বা গোড়ায় জল জমলে হলদে হয়ে মরে যায়।

    ৮.সাথি ফসল :-

     কুসুম, গম, তিসি, সরষে। দেখা গেছে মুসুরের ৪-৬ লাইন পর ১ লাইন যব বা তিসি লাগালে মিশু চাষে একক চাষের তুলনায় মুসুরের ফলন বাড়ে৷ ছোলার তুলনায় মুসুর কিছুটা ছায়া পছন্দ করে তাই মিশ্রচাষে উৎপাদন বাড়ে৷ পয়রা চাষে মুসুর লাভজনক ফসল হিসাবে স্থান করে নিয়েছে।

    ৯ .উৎপাদন :-

     সাধারণত ১২০-১৫০ কেজি দানা হয়৷ ছিটিয়ে বুনলে ৮০-১০০ কেজি দানা সাধারণত পাওয়া যায়। 

    ১০. মুসুর ডালের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণও সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা :-

     শুঁটি ছিদ্রকারী লেদা পোকার আক্রমণ হতে পারে। ১৫ শতাংশ নিম পাতার নির্যাস ৭-১ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করলে পোকা নিয়ন্ত্রন হয়। পাতা ঝলসা রোগ হলে ৫ শতাংশ নিম তুঁতের দ্রবণ বা বোর্দো দ্রবণ ১২-১৫ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করতে হবে। পাতা ঝলসা রোগে টাটকা গোবরের ১৫ শতাংশ নির্যাস ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করলেও উপকার পাওয়া যায়।

    তথ্য সূত্র - 

    ড: বিবেকানন্দ সান্যাল (প্রাক্তন কৃষি আধিকারিক )

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)