শীতকালীন ডাল শস্যের মধ্যে রাজমা অন্যতম শস্য। বাজার দরও সবচাইতে বেশী থাকে ৷ কাজেই পারিবারিক পুষ্টি তো বটেই অর্থকরী ফসল হিসেবেও এর মূল্য খুবই বেশী। বাংলার আবহাওয়া এই চাষের জন্য খই উপযুক্ত।
১.রাজমা পরিচিতি :-
মরশুমি শুঁটি জাতীয় দাঁড়ানো ঝোপ। দানা জাতের বরবটির মতো। ৬০-১০০ সেমি লম্বা হয়। পাতা হালকা সবুজ, শুঁটি ১০-১৫ সেমি লম্বা, চ্যাপ্টা ধরণের৷ ৮-১০টি লম্বাটে দানা থাকে৷ দানা সাদা ও নানা আকর্ষণীয় রং-এর হয়।
২. রাজমা জাত :-
PDR-14, উদয়, জ্বালা ইত্যাদি ৷ ১০০-১১০ দিনে ওঠে।
৩. রাজমা বোনার সময় :-
১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর (কার্তিক মাস)। বীজের হারঃ বিঘা প্রতি ৬-৮ কেজি বীজ লাগে৷ সারিতে লাগালে বীজ কম লাগে।
৪. জমি ও মাটি :-
মাঝারি, উঁচু জমি, দোঁয়াশ মাটিতে ভালো ফলন হয়। মাটি ক্ষারধর্মী হলে ফলন ভালো হয় না৷ জল নিকাশী ব্যবস্থা ভালো থাকা দরকার।
৫. সারি ও গাছের দূরত্ব :-
সাধারণত: সারিতে বীজ লাগনো হয়৷ সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সেমি বা ১০-১২ ইঞ্চি। সারিতে বীজের দূরত্ব ১০ সেমি বা ৪ ইঞ্চি৷ বীজ ৫-৭ সেমি বা ২-৩ ইঞ্চি গভীরে লাগানো হয়।
৬. সার প্রয়োগ :-
বীজে রাজমার জন্য নির্দিষ্ট জীবাণুসার মাখিয়ে বীজ বুনতে হবে। প্রথম চাষে বিঘা প্রতি ৫-৭ কুইন্টাল জৈবসার ও ১০-১২ কেজি সিঙ্গেল সুপার ফসফেট বা রক ফসফেট বা ডলোমাইট দিলে ফলন ভালো হয়৷
৭. সেচ প্রয়োগ :-
ঝুরঝুরে সরস মাটিতে বীজ বুনতে হয়৷ হালকা তিনটি সেচ দরকার। প্রথম সেচ ২৫-৩০ দিনের মধ্যে, দ্বিতীয় সেচ ৫০-৬০ দিনের মধ্যে, তৃতীয়টি ৯০-১০০ দিনের মধ্যে দিতে হবে। জল জমা সহ্য করতে পারে না।
৮. সাথি ফসল :-
আলু, তিসি, ধনে, মেথি ইত্যাদি৷
৯. রোগ পোকার সুরক্ষা :-
রোগপোকার তেমন আক্রমণ দেখা যায় না ৷ বীজ রাখা যায় কিন্তু বেশীদিন রাখলে অঙ্কুরোদম কম হয়। শুটি ছিদ্রকারী পোকা দেখা দিলে ১৫ শতাংশ নিম পাতার নির্যাস ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বার বিকালের দিকে স্প্রে করলে উপদ্রব কমে যায়।
১০. উৎপাদন :-
বিঘা প্রতি ১৫০-২০০ কেজি দানা পাওয়া যায় । কচি শুঁটি সব্জী হিসাবে ব্যবহার হয়।
১১. বিক্রি :-
বাজারে রাজমার চাহিদা প্রচুর। প্রতি কুইন্টাল ১০০০০ -১২০০০ টাকা বিক্রয় হয়।
১১. শুঁটি জাতীয় ফসল চাষে উপরি লাভ :-
নিবিড় চাষে – বিশেষ করে দানা জাতীয় ফসলের বার বার চাষের ফলে, যেমন ধানের পরে আবার ধান, ধানের পরে গম, এধরনের শস্যচক্রে জমির, বিশেষ করে উপরের স্তরের মাটি খুব দুর্বল হয়ে পড়ে৷ কিন্তু শস্যচক্রে একবার ডালের চাষ করে নিলে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ে, উপরের স্তরের মাটি এক মরশুম বিশ্রাম পায় কারণ যে কোন ও শুঁটি জাতীয় ফসল মাটির গভীর স্তর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে, উপরন্তু বাতাসের নাইট্রোজেন রাইজোবিয়াম জীবাণুর মাধ্যমে (যা শুঁটি জাতীয় ফসলের শিকড়ে গুটি তৈরি করে) সংগ্রহ করে, মাটিতে যোগান দেয় ও রেখে যায় যেটা পরের ফসল ভোগ করতে পারে। ফলে পরের ফসলে বাইরে থেকে দেওয়া নাইট্রোজেন সারের চাহিদা কমে যায়। দেখা গেছে একবার শুঁটি জাতীয় ফসল চাষ করে নিলে বিঘা প্রতি গড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ কিলো নাইট্রোজেন জমির মাটিতে জমা হয়। যেটা প্রায় আট থেকে নয় কিলো ইউরিয়া সারের সমান৷ আর এই সংগৃহীত জৈব নাইট্রোজেন ইউরিয়ার মত চটজলদি শেষ হয়ে যায় না। ধীরে ধীরে পরের ফসলটি প্রায় সবাটাই পেয়ে যায়। এছাড়া শুঁটি জাতীয় ফসল মাটির গভীর থেকে নানা খনিজ খাদ্য তুলে এনে মাটির উপর স্তরে রেখে যায়, মাটির কার্যকরী গভীরতা বাড়ে ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ে কাজেই বার্ষিক শস্যচক্রে অন্তত একবার শুঁটি জাতীয় ফসল চাষ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করা খুব জরুরী।
তথ্য সূত্র - ড: বি .কে সান্যাল (প্রাক্তন কৃষি অধিকারিক )