তেল বীজের মধ্যে সরিষা তেল উৎপাদনে সবার আগে। বাঙালীর রান্না ঘরে সরষের তেল ও মশলা হিসাবে সরষে দানা অপরিহার্য্যা।
১. সরিষার জাত ও বৈশিষ্ট :-
ক) DMRIJ - ৩১ গিরিরাজ -
- ১৩০ -১৫০ দিন সময়কাল ,
- গাছের উচ্চতা ১৮০-২১০ সে.মি .
- উৎপাদন একর প্রতি ৯-১০ কুইন্টাল
- ৩৯-৪২% তেল পাওয়া যায়।
খ) DRMR ১৫০-৩৫ -
- সময়কাল ১১৪ দিন।
- গাছের উচ্চতা ২০০ সে.মি .।
- উৎপাদন প্রতি একর ৬-৭ কুইন্টাল।
- ৩৭-৪০% তেল পাওয়া যায়।
গ) DMH -১ হাইব্রিড -
- সময়কাল ১২৬ দিন।
- উৎপাদন প্রতি একর ১১-১২ কুইন্টাল।
- ৪০% তেল পাওয়া যায়।
ঘ) পুসা ২৮ NPJ -১২৪ -
- সময়কাল ৯১ -১৩১ দিন।
- গাছের উচ্চতা ১৬২ -১৯৫ সে.মি .।
- উৎপাদন প্রতি একর৭-৮ কুইন্টাল।
- তেল পাওয়া যায় ৩৯-৪২%।
ঙ) পুসা ২২ (LET -১৭ ) -
- সময়কাল ১৩৮-১৪৮ দিন।
- গাছের উচ্চতা ১৬৫-২০০ সে.মি .।
- উৎপাদন প্রতি একর ৯-১০ কুইন্টাল।
- তেল পাওয়া যায় ৩৪-৩৬%।
চ) বিনয় (বি -৯ )
- সময়কাল ৯০-৯৫ দিন।
- গাছের উচ্চতা ৯০-৯৫ সে.মি .।
- উৎপাদন প্রতি একর ৮-৯ কুইন্টাল।
- তেল পাওয়া যায় ৪৬%।
২ . রোপনের সময় :-
রবি মরশুমে শুকনো ঠান্ডা আবহাওয়ায় - ১০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এর চাষ হয়ে থাকে৷ কার্তিক অগ্রহায়নে আমন ধান ওঠার পর লাল বা কালো দানা সর্ষে লাগানোর সময়৷ জলদি জাতের ‘তোরিয়া' (হলুদ দানা)গুলি আশ্বিনের প্রথমেই উঁচু জমিতে লাগানো হয়৷ ৮০-৮৫ দিনে ওঠে।
৩. জমি ও মাটি :-
বেলে দোঁয়াশ থেকে এঁটেল- বিভিন্ন গঠন ও গ্রথন সম্পন্ন মাটিতে সর্ষের চাষ হয়। মাঝারি থেকে গভীর, ভালো নিকাশি যুক্ত জমি সর্ষে চাষের উপযুক্ত। মাটির পি.এইচ ৬.০-৭.৫ আদর্শ৷
৪. সেচ প্রয়োগ :-
মাটিতে ‘জো’ থাকা অবস্থায় বীজ বপন করতে হবে। প্রথম সেচ ৩০-৩৫ দিনের মাথায়, দ্বিতীয় সেচ ২০ দিন পর। জলের অভাব থাকলে দানা পুষ্ট হবার সময় দ্বিতীয় সেচটি দিলে ভালো হয়।
৫. সারি ও গাছের দূরত্ব :-
সারি থেকে সারি ৪৫ সেমি ও সারিতে গাছের দূরত্ব ১৫-২০ সেমি। ৫-৬ সেমি বা দু ইঞ্চি গভীরে বীজ বুনতে হয়৷ সারিতে লাগালে পরিচর্য্যা করতে সুবিধা হয়৷
৬. বীজের হার :-
বিঘা প্রতি ৮০০ গ্রাম৷ হেক্টরে ৬ কেজি।
৭. সার প্রয়োগ :-
প্রতি বিঘায় ৬০০-৮০০ কেজি কম্পোস্ট, অ্যাজোটোব্যাক্টর ও পি এস বি জীবাণুসার ব্যবহার করা ভালো। খাদ্যের চাহিদা বেশি। বোনার সময় মূল সার হিসাবে বিঘা প্রতি ১৬-১৮ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট, ৬-৮ কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করা যায়। তবে মাটি পরিক্ষার সুপারিশের ভিত্তিতে সার ব্যবহার করা উচিত৷ মাটি পরীক্ষা ফলাফল অনুযায়ী খাদ্য ও অনুখাদ্য ব্যবহারের উপর ফলন নির্ভর করে।
তেল বীজে তেলের পরিমান বাড়ানোর জন্য অনুখাদ্য হিসাবে সালফার ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়। ‘সালফেট অফ পটাশ জলের গুলে ১ শতাংশ দ্রবণ এক থেকে দু'বার ৩০ ও ৪৫ দিনে স্প্রে করলে দানায় তেলের পরিমান বাড়ে। এন.পি .ক ১৮:১৮:১৮ ম্যাক্রোফার্ট জলে গুলনশীল সার স্প্রে করলে গাছের বৃদ্ধি পুষ্টি নিয়ে হয় এবং ফলন বেশি হয়।
৮. সাথি ফসল :-
মিশ্র ফসল হিসাবে ছোলা, গম, মুসুরের সাথে চাষ করা যায়৷ সেক্ষেত্রে বীজের হার অর্ধেক হবে। ধান ওঠার পর পয়রা পদ্ধতিতে মিশ্র চাষ করলে ফলন কিছুটা কম হলেও চিন আয় বেশি হয়।
তথ্য সূত্র -
১. ড: বিবেকানন্দ সান্যাল (প্রাক্তন কৃষি আধিকারিক )।
২. ভারতীয় তৈল উন্নয়ণ বোর্ড।
৩. ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান কেন্দ্র।