সূর্যমুখী চাষ এর আধুনিক কৌশল

Didibhai Agrofarm
0
সূর্যমুখী চাষ বছরের যে কোনো সময় লাগানো যায়। বর্ষকালে জুন-জুলাই, শীতকালে অক্টোবর-নভেম্বর, গ্রীষ্মকালে এবং ফেব্রুয়ারি মার্চে লাগানোর সময়।


সূর্যমুখী চাষ একটি লাভজনক চাষ। বর্তমান সময়ে তৈল বাজারে তেল চাহিদা বেড়ে চলেছে। সূর্যমুখী তেলের মূল্য বেশি পাওয়া যায়। তাই সঠিক জাত ও সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে যদি সূর্যমুখী চাষ করা যায় তবে অনেক বেশি লাভ করা যায়। 

    ১.সূর্যমুখী জাত ও বৈশিষ্ট :- 

    ভারতে উচ্চফলনশীল অনেকগুলি সূর্যমুখী প্রজাতি রয়েছে যার মধ্যে নিম্নে কয়েকটি উচ্চফলনশীল প্রজাতির বৈশিষ্ট বর্ণনা করা হল -

    ক) ডি.আর .এস .এইচ -১ হাইব্রিড -

    • রবি ও খরিফ দুটি সিজনেই বপন করা যায়। 
    • গাছের উচ্চতা ১৬০-১৭০ সেমী। 
    • খরিফ সিজনে ফুল আসে ৬০-৬৫ দিনে। 
    • রবি সিজনে ফুল আসে ৭০-৭৫ দিনে। 
    • মোট সময়কাল ৯৫-১০৫ দিন খরিফ ও রবি। 
    • উৎপাদন - ১০-১১ কুইন্টাল প্রতি একর। 
    • তেল পাওয়া যায় ৪৯-৪৪%। 
    • বীজ এর ওজন ১০০ টি বীজ ৫.০- ৫.৫ গরম। 

    খ) কে.বি.এস.এইচ -৪৪ হাইব্রিড -

    • রবি ও খরিফ দুটি সিজনেই বপন করা যায়। 
    • গাছের উচ্চতা ১৬৫-১৭৫ সেমী। 
    • খরিফ সিজনে ফুল আসে ৬০-৬৫ দিনে। 
    • রবি সিজনে ফুল আসে ৬৪-৬৬ দিনে। 
    • মোট সময়কাল ৯৫-১০৫ দিন খরিফ ও রবি। 
    • উৎপাদন - ১১-১২  কুইন্টাল প্রতি একর। 
    • তেল পাওয়া যায় ৩৬-৩৮%। 
    • বীজ এর ওজন ১০০ টি বীজ ৪.3 গ্রাম । 

    গ) মরডেন বেঁটে জাত (MORDEN) -

    • রবি ও খরিফ দুটি সিজনেই বপন করা যায়। 
    • গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সে.মি। 
    • খরিফ সিজনে ফুল আসে ৫২-৫৬ দিনে। 
    • রবি সিজনে ফুল আসে ৫৪-৫৮ দিনে। 
    • মোট সময়কাল ৮৫-৮৮ দিন খরিফ ও রবি। 
    • উৎপাদন - ৬-৭  কুইন্টাল প্রতি একর। 
    • তেল পাওয়া যায় ৩৪-৩৫%। 
    • বীজ এর ওজন ১০০ টি বীজ ৪.৫- ৪.৮ গ্রাম। 

    ঘ) গাউসুফ-১৫ (GAUSUF -15 ) 

    • রবি সিজনে বপন করা যায়। 
    • গাছের উচ্চতা ১৫০-১৬০ সে.মি। 
    • ফুল আসে ৫৮-৬৫ দিনে। 
    • মোট সময়কাল ৯২-৯৮ দিন।  
    • উৎপাদন - ৫-৬  কুইন্টাল প্রতি একর। 
    • তেল পাওয়া যায় ৩৫-৩৯%। 
    • বীজ এর ওজন ১০০ টি বীজ ৫-৬ গ্রাম। 

    ২. রোপনের সময় :- 

    সূর্যমুখী চাষ বছরের যে কোনো সময় লাগানো যায়। বর্ষকালে জুন-জুলাই, শীতকালে অক্টোবর-নভেম্বর, গ্রীষ্মকালে এবং ফেব্রুয়ারি মার্চে লাগানোর সময়।

    ৩. জমি ও মাটি :-

    উঁচু ও মাঝারি জমি। দোঁয়াশ ও বেলে-দোঁয়াশ মাটি। 

    ৪. সারি ও গাছের দূরত্ব :- 

    সূর্যমুখী চাষে সারির দূরত্ব ৪৫ সেমি বা দেড় ফুট এবং সারিতে গাছের দূরত্ব ২০-২৫ সেমি বা ৮-১০ ইঞ্চি। ১-১.৫ ইঞ্চি গভীরে লাগাতে হয়।

    ৫. বীজের হার :- 

    সূর্যমুখী ছিটিয়ে বপন করলে  বিঘা প্রতি ১ কেজি এবং লাইন করে বুনলে ৭০০-৭৫০ গ্রাম বিঘা প্রতি বীজ লাগে। প্রতি হেক্টরে ছিটিয়ে বুনালে ৭-৮ কেজি এবং লাইনে বুনলে ৩-৪ কেজি বীজ লাগে। 

    ৬. সার প্রয়োগ :- 

    সূর্যমুখী গাছ প্রচুর খাবার মাটি থেকে নেয়৷ তাই চাহিদা পূরণে ১২০০-১৮০০ কেজি জৈব সার দেওয়া দরকার। অ্যাজোটোবেক্টর ও পি এস বি জীবাণুসার ব্যবহারে যথাক্রমে নাইট্রোজেন ও ফসফেটের জোগান বাড়ানো সম্ভব। প্রয়োজনীয় জৈব সারের অভাবে বিঘা প্রতি ১৬ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট ও ৮ কেজি মিউরেট অফ পটাশ সুপারিশ করা হয়।

    ৭. সেচ প্রয়োগ :-

    সূর্যমুখী চাষে গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে দুটি সেচ লাগে। ১) প্রথম সেচটি এক থেকে দেড় মাসের মাথায়। দ্বিতীয় সেচটি তার তিন সপ্তাহ পর।

    ৮.সাথি ফসল :-

     গম, ভুট্টা, তিসি। ৬ সারি চীনাবাদামের পর ২ সারি সূর্যমুখীর চাষ করলে আর্থিক লাভ বেশী হয়৷

     ৯. উৎপাদন :- 

    সূর্যমুখী চাষ সেচযুক্ত এলাকায় বিঘায় কমবেশি ২-৩  কুইন্টাল বীজ ও ৩ কুইন্টাল জ্বালানি পাওয়া যায় (হেক্টরে বীজ ১৫ কুইন্টাল ও ২০-৩০ কুইন্টাল জ্বালানী)।

     ১০. মন্তব্য :- 

    ২১ দিনের মধ্যে আগাছা পরিষ্কার না করলে ঠিকমত চারার বৃদ্ধি ভালো হয় না। বীজে ৪০-৫০% তেল পাওয়া যায়৷ ফুল ফোটার সময় বৃষ্টি হলে বা মৌমাছি, প্রজাপতি ঠিকমতো না এলে পরাগ সংযোগ ঠিকমতো হয় না- ফলন কমে যায়৷ তাই ফুল ফোটার সময় কীটনাশক স্প্রে করা উচিত নয়। ভোজ্য তেল হিসাবে এই তেল উন্নতমানের। সামান্য নোনা মাটিতেও এর চাষ করা যায়। রাসায়নিক সার একবারে না দিয়ে অর্ধেক নাইট্রোজেন, সম্পূর্ণ ফসফেট ও অর্ধেক পটাশ সার শেষ চাষে এবং বাকি অর্ধেক নাইট্রোজেন এবং মিউরেট অফ পটাশ ৩ সপ্তাহ পর পর দিলে ভালো হয়।

    তথ্য সূত্র -

    ১.ভারতীয় তৈল গবেষণা কেন্দ্র (ICAR )

    ২. ড: বিবেকানন্দ সান্যাল (প্রাক্তন কৃষি আধিকারিক )


    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)