খেসারি ডাল চাষ কৌশল

Didibhai Agrofarm
0
বিঘা প্রতি ৬-৮ কেজি। বীজের আকার, বোনার সময় ও চাষের পদ্ধতি (জমি চষে অথবা পয়রা করে) অনুযায়ী বীজের পরিমাণ নির্ভর করে৷ পয়রা পদ্ধতিতে লাগালে ১০-১২ কেজি বিঘা প্রতি বীজ লাগবে৷


খেসারির ডাল খাওয়া নিয়ে অতীতে নানা সন্দেহ ভুল প্রমাণিত হয়েছে৷ কৃষি বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন উন্নত জাতও তৈরী করেছেন। আমাদের রাজ্যে আমন ধান কাটার পর নিচু, সেচ বিহীন বেশীরভাগ জমি খালি পড়ে থাকে৷ বস্তুত আগে ওই সব জমিতে ব্যাপক খেসারির চাষই প্রধানত হোত৷ মানুষের খাবার জন্য তো বটেই, রাজ্যে প্রাণীপালনের ব্যাপক প্রসারের ফলে পশুখাদ্যের চাহিদা অনেক বেড়েছে যা আমদানী করে মেটানো যাচ্ছে না। কাজেই স্থানীয়ভাবে ডালের উৎপাদন বাড়াতে হলে ওই সব জমিতে খেসারি চাষের বিশেষ গুরুত্ব ও সুযোগ আছে৷ বাজারে প্রচুর চাহিদা তৈরী আছে৷

১. খেসারি ডাল জাত ও বৈশিষ্ট :-

 ক. নির্মল- ১ও২ :-

দানার রং ধূসর ও আকারে বড়৷ ১২০-১৩০ দিনে পাকে৷ পশ্চিমবঙ্গে বিঘা প্রতি ১৮৫ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া গেছে। সাধারণত ১০০-১২০ কেজি ফলে৷

খ. পুষা ২৪-১ :-

 দানার রং লালচে ধূসর। ১৫০-১৬০ দিনে পাকে৷ উৎপাদন ক্ষমতা বিঘা প্রতি ২০০-২৬০ কেজি৷ পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র চাষের জন্য সুপারিশ করা হয়৷ সাধারণভাবে বিঘা প্রতি ১০০-১৩০ কেজি দানা পাওয়া যায়। 

গ. B-১ :-

দানার রং ধূসর আকারে মাঝারী। ১২০-১৩০ দিনে পাকে৷ বিঘা প্রতি উৎপাদন ১০০-১২৫ কেজি। এছাড়া বায়ো এল -২১২ উন্নত জাত আছে৷

২. খেসারি বপনের সময় :-

 অক্টোবর - নভেম্বরের প্রথম পক্ষ বা কার্তিকের দ্বিতীয় পক্ষ থেকে অঘ্রানের প্রথম পক্ষ৷ অর্থাৎ আমন ধান কাটার সময়।

৩. জমি ও মাটি :-

নিচু ও মাঝারী জমির রসালো দোঁয়াশ ও এঁটেল মাটি৷ গোড়ায় জল দাঁড়ানো সহ্য করতে পারে না।

৪. বীজের হার :-

 বিঘা প্রতি ৬-৮ কেজি। বীজের আকার, বোনার সময় ও চাষের পদ্ধতি (জমি চষে অথবা পয়রা করে) অনুযায়ী বীজের পরিমাণ নির্ভর করে৷ পয়রা পদ্ধতিতে লাগালে ১০-১২ কেজি বিঘা প্রতি বীজ লাগবে৷

৫. গাছের দূরত্ব :-

সাধারণত ছিটিয়ে পয়রা পদ্ধতিতে বোনা হয়৷ প্রতি বর্গ হাতে ৬-৭টি চারা রাখতে হয়৷ আমন ধান কাটার ২ সপ্তাহ আগে জল বের করে দিয়ে কাটার ৭-১০ দিন আগে বীজ ছড়ানো হয়৷ জমি চষে বীজ লাগাতে হলে বীজ ৩-৪ সেমি (১-১.৫ ইঞ্চি) গভীরে লাগাতে হয়৷

 ৬. সার প্রয়োগ :-

 খেসারির জন্য রাইজোবিয়াম লিগুমিনেসিরাম জাতের জীবাণুসারের ব্যবহারে ফলন বাড়ে৷ আর কোনো সার দেওয়া হয় না৷ যে জমিতে প্রথম খেসারি চাষ করা হবে - জীবাণুসার যদি না পাওয়া যায়, যেসব জমিতে বরাবর খেসারী চাষ হয়ে থাকে সেসব জমি থেকে ১-২ বস্তা মাটি এনে ভালোভাবে মিশিয়ে দিলে জীবাণুসারের কাজ হয়। 

৭. জল সেচ :-

 সেচ না দিলেও চলবে। পয়রা ফসল হিসাবে চাষ হয়। তবে ফুল আসার সময় ও দানা পুষ্ট হবার সময় জমিতে রসের অভাব হলে দুটি সেচ লাগে৷

৮. উৎপাদন :-

 সাধারণভাবে বিঘা প্রতি ৮০-১৫০ কেজি দানা ফলে।

৯. ডাল চাষে উপরি লাভ 

নিবিড় চাষে – বিশেষ করে দানা জাতীয় ফসলের বার বার চাষের ফলে, যেমন ধানের পরে আবার ধান, ধানের পরে গম, এধরনের শস্যচক্রে জমির, বিশেষ করে উপরের স্তরের মাটি খুব দুর্বল হয়ে পড়ে৷ কিন্তু শস্যচক্রে একবার ডালের চাষ করে নিলে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ে, উপরের স্তরের মাটি এক মরশুম বিশ্রাম পায় কারণ যে কোন ও ডাল শস্য মাটির গভীর স্তর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে, উপরন্তু বাতাসের নাইট্রোজেন রাইজোবিয়াম জীবাণুর মাধ্যমে (যা ডাল বা শুঁটি জাতীয় ফসলের শিকড়ে গুটি তৈরি করে) সংগ্রহ করে, মাটিতে যোগান দেয় ও রেখে যায় যেটা পরের ফসল ভোগ করতে পারে। ফলে পরের ফসলে বাইরে থেকে দেওয়া নাইট্রোজেন সারের চাহিদা কমে যায়। দেখা গেছে একবার ডাল চাষ করে নিলে বিঘা প্রতি গড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ কিলো নাইট্রোজেন জমির মাটিতে জমা হয়। যেটা প্রায় আট থেকে নয় কিলো ইউরিয়া সারের সমান৷ আর এই সংগৃহীত জৈব নাইট্রোজেন ইউরিয়ার মত চটজলদি শেষ হয়ে যায় না। ধীরে ধীরে পরের ফসলটি প্রায় সবাটাই পেয়ে যায়। এছাড়া ডাল শস্য মাটির গভীর থেকে নানা খনিজ খাদ্য তুলে এনে মাটির উপর স্তরে রেখে যায়, মাটির কার্যকরী গভীরতা বাড়ে ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ে কাজেই বার্ষিক শস্যচক্রে অন্তত একবার ডাল শস্যের চাষ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করা খুব জরুরী।

তথ্য সূত্র - ড: বি .কে সান্যাল (প্রাক্তন কৃষি অধিকারিক )

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)