বাকলা চাষ পদ্ধতি

Didibhai Agrofarm
0

 

বাকলা ৬০-৭০ সেমি লম্বা খাড়া ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদ। ফুলের পাপড়ির রং বাইরের দিক সাদা ও কেন্দ্রের দিক বেগুনী, শুঁটি সবুজ, নলাকার, ৫-৭ সেমি লম্বা। শুঁটিতে ৫-৯ টি মেটে রং-এর সামান্য কোঁচকানো দেশী মটরের মতো গোল দানা হয়৷

বাকলা একটি ডাল শস্য। এ ফসল সাধারণত গরু, ছাগলে যেমন খায় না তেমনি রোগপোকা বিশেষ হয় না। কম খরচে, অল্প জলে ও অল্প পরিচর্যায় বাকলা ডাল চাষ বেশ লাভজনক৷ বাকলা দানার খোসা খুব শক্ত তাই ঘরে রাখলে মটর দানার মতো সহজে পোকা লাগে না৷

    ১. পরিচিতি :-

    বাকলা ৬০-৭০ সেমি লম্বা খাড়া ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদ। ফুলের পাপড়ির রং বাইরের দিক সাদা ও কেন্দ্রের দিক বেগুনী, শুঁটি সবুজ, নলাকার, ৫-৭ সেমি লম্বা। শুঁটিতে ৫-৯ টি মেটে রং-এর সামান্য কোঁচকানো দেশী মটরের মতো গোল দানা হয় ৷ দানার খোসা শক্ত৷ খেতে মটর ডালের মতো। ১৩০-১৫০ দিনে ওঠে। রবি মরশুমে অসময়ে বৃষ্টির ফলে মুসুরি, ছোলার ফলন প্রায়ই নষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে। তাই ছোলা, মুসুরির বিকল্প হিসাবেও বাকলা চাষের সম্ভাবনা আছে। 

    ২. বীজ বপনের  সময় :-

    বাকলা চাষ  অক্টোবর থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ (কার্তিক) পর্যন্ত বাকলা বীজ বোনা হয়। আমন ধান কাটার পর অন্যান্য রবি ফসলের মতোই এর চাষ হয়ে থাকে। 

    ৩. বীজের হার :-  

    বিঘা প্রতি (৩৩ শতকে) প্রায় ৫ কেজি বীজ লাগে ৷ 

    ৪. জমি ও মাটি :-

    বাকলা চাষ যে কোনো রসালো মাটিতেই হয়; এমনকি কম উর্বর মাটিতেও হয়৷ রসালো দোঁয়াশ উর্বর মাটি এর পছন্দ। 

    ৫. বোনার পদ্ধতি :-

    সাধারণত এই বীজ ছিটিয়ে বোনা হয়।ছিটিয়ে বোনার পর মই দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজের গায়ে রাইজোবিয়াম জীবাণুসার মাখিয়ে লাগানো দরকার।

    ৬. সারি ও গাছের দূরত্ব :-

    যদি সারিতে লাগানো হয় তাহলে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি রাখতে হবে৷ সারিতে গাছের দূরত্ব ১২-১৫ সেমি হবে। এভাবে লাগালে বিঘায় দুই থেকে আড়াই কেজি বীজ লাগে। সাধারণত: ছিটিয়ে বোনা হয়।

     ৭.সার প্রয়োগ :-

     বাকলা শুঁটি জাতীয় ফসল তাই মাটিতে নাইট্রোজেন সারের বিশেষ প্রয়োজন হয় না৷ বরং বাকলা নিজেই মাটিতে নাইট্রোজেনের জোগান দেয় ফলে মাটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। বীজ বোনার আগে জমিতে গোবর সার বা পচা আবর্জনা সার দিয়ে সাথে বিঘা প্রতি ১০-১৫ কেজি রক্ ফসফেট, না পাওয়া গেলে সিঙ্গেল সুপার ফসফেট প্রথম চাষে দিতে পারলে ফসল বেশী পাওয়া যায়। রাইজোবিয়াম স্পেসিস জাতের জীবাণু সার বীজে মাখিয়ে বুনলে ফলন ভালো হয়।

    ৮. সেচ প্রয়োগ :- 

    মাঝারি রসালো জমিতে সেচের দরকার পড়ে না। একেবারেই বৃষ্টি না হলে ও মাটিতে রসের অভাব হলে ১ থেকে ২ টি সেচ দরকার হয়। বীজ বোনা, ফুল আসার মুখে ও দানা পুষ্ট হবার সময় মাটিতে রস থাকা দরকার। তবে বৃদ্ধিকালে, বিশেষত শুঁটি আসার পরে হালকা সেচে ফলন বাড়ে। এই চাষে বিশেষ কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তবে জমিতে আগাছা জন্মালে ১-২ বার নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হয়।

    ৯. সাথি ফসল :- 

    আলুর সঙ্গে বাকলা সাথি ফসল হিসেবে চাষ করা হয়ে থাকে৷ অনেক সময় গম, যব, সরষে, তিসি প্রভৃতি রবি ফসলের সঙ্গে মিশ্রফসল রূপে চাষ করা হয়।

    ১০. উৎপাদন :-

    ১২৫-১৩০ দিনে ওঠে। হালকা সেচ দিতে পারলে বিঘা প্রতি ২-৩ কুইন্টাল বাকলা ডাল ফলন হয়। রোগ পোকা ও সুরক্ষা: বিশেষ রোগ পোকা দেখা যায় না। দানায় সহজে পোকা লাগে না। তাই বেশী দিন ধরে রাখা সহজ।

    ১১. ব্যবহার ও খাদ্যগুণ :-

     ডাল মাড়াই করে, ঝেড়ে বা শুকিয়ে রাখা হয়। ঝাড়াইয়ের পরে শুকনো ডালপালা ও ভূমি পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ ডাল সুস্বাদু, মটর ডালের মতো। শুঁটি সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়। পুষ্ট কাঁচা দানা মটর শুঁটির মতো৷ তবে এক সিদ্ধ করে জল ফেলে খাওয়া উচিত৷ পশুখাদ্য হিসেবেও দানা উপযুক্ত ও সস্তা।

    ১১. শুঁটি জাতীয় ফসল চাষে উপরি লাভ :-

    নিবিড় চাষে – বিশেষ করে দানা জাতীয় ফসলের বার বার চাষের ফলে, যেমন ধানের পরে আবার ধান, ধানের পরে গম, এধরনের শস্যচক্রে জমির, বিশেষ করে উপরের স্তরের মাটি খুব দুর্বল হয়ে পড়ে৷ কিন্তু শস্যচক্রে একবার ডালের চাষ করে নিলে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ে, উপরের স্তরের মাটি এক মরশুম বিশ্রাম পায় কারণ যে কোন ও ডাল শস্য মাটির গভীর স্তর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে, উপরন্তু বাতাসের নাইট্রোজেন রাইজোবিয়াম জীবাণুর মাধ্যমে (যা ডাল বা শুঁটি জাতীয় ফসলের শিকড়ে গুটি তৈরি করে) সংগ্রহ করে, মাটিতে যোগান দেয় ও রেখে যায় যেটা পরের ফসল ভোগ করতে পারে। ফলে পরের ফসলে বাইরে থেকে দেওয়া নাইট্রোজেন সারের চাহিদা কমে যায়। দেখা গেছে একবার ডাল চাষ করে নিলে বিঘা প্রতি গড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ কিলো নাইট্রোজেন জমির মাটিতে জমা হয়। যেটা প্রায় আট থেকে নয় কিলো ইউরিয়া সারের সমান৷ আর এই সংগৃহীত জৈব নাইট্রোজেন ইউরিয়ার মত চটজলদি শেষ হয়ে যায় না। ধীরে ধীরে পরের ফসলটি প্রায় সবাটাই পেয়ে যায়। এছাড়া ডাল শস্য মাটির গভীর থেকে নানা খনিজ খাদ্য তুলে এনে মাটির উপর স্তরে রেখে যায়, মাটির কার্যকরী গভীরতা বাড়ে ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ে কাজেই বার্ষিক শস্যচক্রে অন্তত একবার ডাল শস্যের চাষ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করা খুব জরুরী।


    তথ্য সূত্র - ড: বি .কে সান্যাল (প্রাক্তন কৃষি অধিকারিক )

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)