ছোলা বুট চাষ কৌশল

Didibhai Agrofarm
0

বপনের আগে বীজ ৪০-৪৫ মিনিট জলে বা তরল সারে ভিজিয়ে তারপর জল ঝড়িয়ে নিয়ে রাইজোবিয়াম স্পেসিস জাতের জীবাণু সার মাখিয়ে বুনতে হবে।

 

ছোলা ডাল শস্য হিসেবে খুবই জনপ্রিয়৷ নিত্য দিন ছাড়াও উৎসবে, আপ্পায়নে ছোলার ডালের আদর খুব বেশী। গোটা ছোলার ঘুগনি তো সবার প্রিয়। অঙ্কুর গজানো গোটা ছোলা, টাটকা শুটির দানা, কচি ছোলার শাক খুবই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। আমাদের রাজ্যে আমন ধান কাটার পর অসেচ এলাকা বেশীর ভাগই পতিত পরে থাকে৷ মাটির সামান্য সঞ্চিত রসে, সেচ ছাড়া, শীতকালে এর চাষের সবচাইতে বেশী সুযোগ আছে। কিন্তু এর প্রচলন এরাজ্যে এখনও কম৷ ধান কাটার পর জমি না চষে পয়রা পদ্ধতিতে এর চাষ ভালোভাবে করা যায়, শুধুই কেবল বীজের খরচ হয়। ডাল চাষে বিপ্লব আনতে হলে এর জুরি নেই।

    ১.জাত ও বৈশিষ্ট :-

     ক.দেশী উন্নত জাত :-পুষা ২৫৬, মহামায়া-১ (বি-১১৫), বি .আর -৭৭, বি .আর-৭৮  ১২০-১৩০ দিনে পাকে ৷ 

    খ. কাবুলী জাত :-আই.সি.সি ভি -৫, আই.সি.সি ভি-৬ , কে -৫, এল -৫৫০ , ১০০ দিনে পাকে ৷

     নীচু এলাকায় যেখানে ডিসেম্বরের আগে ছোলা লাগানো সম্ভব হয় না সেখানে জে.জি -৭৪, স্ট্রেইন-৭৬ ,সি -২৩৫, জি-১১৪,, ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ওঠে ও বিঘায় ১৩০-১৮০ কেজি ফলন দেয় এবং জ্যাকি ৯২১৮ বিঘায় ২০০ কেজির উপর ফলন পাওয়া যায়। 

    ২. ছোলা বপনের সময় :-

     নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ অগ্রানের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বোনা যায়। আমন ধান কাটার ২ সপ্তাহ আগে জমির জল বের করে দিয়ে ধান কাটার ৭-১০ দিন আগে বীজ ছড়িয়ে পয়রা পদ্ধতিতে ছোলা চাষও করা যায়। এক্ষেত্রে আমন ধানের নাড়া বড় রেখে কাটলে মাটিতে অনেকটা রস ধরে রাখা যায় এবং ফলন ভালো হয়৷

    ৩. বীজের পরিমান  :-

    বড় দানা হলে (কাবুলি জাত) বিঘা প্রতি সাড়ে আট থেকে সাড়ে দশ কেজি৷ ছোট দানা হলে ৮-১০ কেজি বিঘা প্রতি।

    ৪. সারি ও গাছের দূরত্ব :-

     সাধারণত: ছিটিয়ে লাগানো হয়৷ সারিতে লাগালে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি বা ১ ফুট। সারিতে বীজের দূরত্ব ১০ সেমি বা ৪ ইঞ্চি। ছিটিয়ে লাগালে প্রতি বর্গ হাতে ৮-৯ টি হারে দানা দিতে হবে। জমি চষে লাগাতে হলে মাটির ৩ আঙ্গুল বা দেড় থেকে দুই ইঞ্চি গভীরে বীজ মই বা পটা দিয়ে চেপে দিতে হয়৷ পয়রা পদ্ধতিতে চাষে বীজের পরিমাণ ২০-৩০ শতাংশ বাড়িয়ে বীজ ছড়াতে হয়৷

    ৫. জমি ও মাটি :-

    উঁচু মাঝারি জমি। দোয়াশ, বেলে-দোঁয়াশ ও এঁটেল মাটিতে চাষ ভাল হয়। মিহি করে মাটি তৈরীর দরকার হয় না। পয়রা পদ্ধতিতে চাষ করলে জমি চষার প্রয়োজনই হয় না।

    ৬. সার প্রয়োগ :-

     বিঘা প্রতি ৬-৭ কুইন্টাল কম্পোস্ট সার ও ১০-১২ কেজি সিঙ্গেল সুপার ফসফেট এবং রাইজোবিয়াম স্পেসিস জাতের জীবাণু সার দর করে পাস্ট সার চাষে সার দরকার নেই। শুধু জীবাণু সার বীজে মাখিয়ে ছেটাতে হবে।

    ৭. সেচ প্রয়োগ :-

     জল সেচের সুবিধা থাকলে দানা পুষ্ট হওয়ার সময় হালকা সেচ দিতে পারলে ভালো। পয়রা পদ্ধতিতে চাষে কেবল দানা পুষ্ট হবার সময় ১টি সেচ দিতে পারলে ভালো হয়৷ বীজ বোনার সময় মাটিতে বীজ গজানোর মতো রসের প্রয়োজন হয়।

    ৮. সাথি ফসল :-

     গম, তিসি, কুসুম। তিসির সাথে মিশিয়ে লাগালে গোড়া পচা, ঢলে পরা রোগ কম হয়।

    ৯. উৎপাদন :-

    বিঘা প্রতি ১২০-১৫০ কেজি দানা পাওয়া যায়। ভাল জাতের বীজ, হালকা সেচের ব্যবস্থা থাকলে ১৫০-২০০ কেজি ফলনও পাওয়া যায়৷

    ১০. বিশেষ ব্যবস্থাপনা :-

    বপনের আগে বীজ ৪০-৪৫ মিনিট জলে বা তরল সারে ভিজিয়ে তারপর জল ঝড়িয়ে নিয়ে রাইজোবিয়াম স্পেসিস জাতের জীবাণু সার মাখিয়ে বুনতে হবে। সেচের সুবিধা থাকলে বীজ বোনার আগে মাটি রসিয়ে নিয়ে ও শুঁটিতে দানা পুষ্ট হবার সময় হালকা সেচ দিতে পারলে উৎপাদন বেশী হবে। ধান কাটার পরে লাঙলের উপযুক্ত না হলেও মাটি ভিজে থাকতে থাকতে খুপি করে বীজ বপন করলে বিনা সেচে ভাল ফসল হতে পারে৷ প্রতি কেজি বীজের সাথে ২০-৩০ গ্রাম তিসির বীজ মিশিয়ে বুনলে গোড়া পচা, ঢলে পড়া রোগের আক্রমণ কম হয়৷

    পয়রা চাষে ছোলা বীজের পরিমাণ ২০%-৩০% বাড়ানো দরকার ও ধান কাটার সময় নাড়া লম্বা রেখে কাটা ভাল৷ কাবুলি জাতগুলো জলদি ও নাবী লাগানোর উপযুক্ত৷ অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে লাগানো চলে। কাবুলি জাতে শুঁটি ছিদ্রকারী পোকা কম হয়৷

    ১১. ডাল চাষে উপরি লাভ :-

    নিবিড় চাষে – বিশেষ করে দানা জাতীয় ফসলের বার বার চাষের ফলে, যেমন ধানের পরে আবার ধান, ধানের পরে গম, এধরনের শস্যচক্রে জমির, বিশেষ করে উপরের স্তরের মাটি খুব দুর্বল হয়ে পড়ে৷ কিন্তু শস্যচক্রে একবার ডালের চাষ করে নিলে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ে, উপরের স্তরের মাটি এক মরশুম বিশ্রাম পায় কারণ যে কোন ও ডাল শস্য মাটির গভীর স্তর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে, উপরন্তু বাতাসের নাইট্রোজেন রাইজোবিয়াম জীবাণুর মাধ্যমে (যা ডাল বা শুঁটি জাতীয় ফসলের শিকড়ে গুটি তৈরি করে) সংগ্রহ করে, মাটিতে যোগান দেয় ও রেখে যায় যেটা পরের ফসল ভোগ করতে পারে। ফলে পরের ফসলে বাইরে থেকে দেওয়া নাইট্রোজেন সারের চাহিদা কমে যায়। দেখা গেছে একবার ডাল চাষ করে নিলে বিঘা প্রতি গড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ কিলো নাইট্রোজেন জমির মাটিতে জমা হয়। যেটা প্রায় আট থেকে নয় কিলো ইউরিয়া সারের সমান৷ আর এই সংগৃহীত জৈব নাইট্রোজেন ইউরিয়ার মত চটজলদি শেষ হয়ে যায় না। ধীরে ধীরে পরের ফসলটি প্রায় সবাটাই পেয়ে যায়। এছাড়া ডাল শস্য মাটির গভীর থেকে নানা খনিজ খাদ্য তুলে এনে মাটির উপর স্তরে রেখে যায়, মাটির কার্যকরী গভীরতা বাড়ে ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ে কাজেই বার্ষিক শস্যচক্রে অন্তত একবার ডাল শস্যের চাষ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করা খুব জরুরী।

    প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

    ১.ছোলা কখন চাষ করা হয়?

    নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ অগ্রানের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বোনা যায়। আমন ধান কাটার ২ সপ্তাহ আগে জমির জল বের করে দিয়ে ধান কাটার ৭-১০ দিন আগে বীজ ছড়িয়ে পয়রা পদ্ধতিতে ছোলা চাষও করা যায়।

    ২. ছোলা চাষের জন্য কোন মাটি ভালো ?

    উঁচু মাঝারি জমি। দোয়াশ, বেলে-দোঁয়াশ ও এঁটেল মাটিতে চাষ ভাল হয়।

    ৩.বাংলার ছোলা কোন ঋতুতে জন্মে ?

    শরৎ কালের শেষ থেকে হেমন্ত কাল ঋতুর শেষ পর্যন্ত ছোলা রোপন করা যায়। 


    তথ্য সূত্র - ড: বি .কে সান্যাল (প্রাক্তন কৃষি অধিকারিক )

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)