মাছের ২৫ টি রোগ এর লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ ও প্রতিকার ব্যবস্থাপনা

Didibhai Agrofarm
1
জীবাণু বা ব্যাটেরিয়াঘটিত রোগের কারণে মাছের পাখনা ও লেজ পচা ,পেট ফোলা ,চোখ সাদা বা ঘোলা এবং শিঙ্গি মাগুরের শুর খসে পড়া  লক্ষণ গুল


মাছ চাষের সাফল্য পুকুরের পরিবেশ, পরিচর্যা ও মাছের মজুতের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। কোন কারণে পুকুরের ভৌত ও রাসায়নিক পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন বা পরিচর্যার শিথিলতার দরুন কিংবা খাদ্যের তুলনায় অধিক সংখ্যক মাছের সমাবেশ হলে মাছ রোগাক্রান্ত হতে পারে। মাছের রোগের কারণ ও লক্ষণ গুলি দেখে মোটামুটি নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করে মাছ চাষে প্রয়োজনীয় আগাম সতর্কতা গ্রহণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা করা হয়ে থাকে -

প্রিয় পাঠকগণ সূচিপত্রে উল্লেখিত বিষয়ে ক্লিক করলে অপার জানার বিষয়টি খুঁজে পেতে সহজ হবে।

    মাছের রোগের কারণ-

    সাধারণত নিন্মলিখিত ৫ টি কারণে কার্প ও অন্যান্য প্রজাতির মাছ গুলি আক্রান্ত হয়ে থাকে।  যেমন -

    ক) পরিবেশগত কারণে।

    খ) সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে।

    গ)অপুষ্টিজনিত কারণে।

    ঘ) বংশগত, জন্মগত, সহজাত কারণে৷

    ঙ)জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণে।

    পরিবেশগত কারণে মাছের রোগ ও লক্ষণ সমূহ :-

    পরিবেশগত কিছু সমস্যার জন্যে  মাছের কিছু লক্ষণ দেখলে মাছ রোগাক্রান্ত হয়েছে বুঝা যায়। 

    মাছের রোগের লক্ষণ গুলি -

    ১) মাছের খাদ্য গ্রহণে অনীহা।

    ২) মাছ পুকুর পাড়ে অলসভাবে ঘোরাঘুরি করে।

    ৩) মাছ পুকুরের উপর ভাসতে থাকে।

    ৪) মাছ পুকুরে ঘুরপাক খায়, ভারসাম্য হারায়।

    ৫) মাছের গায়ের রঙ বদলে যায়।

    ৬) দেহে ক্ষত সৃষ্টি হয়।

    ৭) চোখ ও ফুলকা ফুলে যায় ।

    ৮) দেহে আলপিনের মাথার মত পরজীবির সিস্ট দেখা যায়।

    ৯) লেজ খসে পড়ে।

    ক) পরিবেশগত কারণে মাছের রোগের কারণ গুলি -

    ১) পুকুরে গ্যাস তৈরী হওয়া। 

    ২) জল ঘোলাটে এবং কাদা থাকা। 

    ৩) উদ্ভিদ কণা / অণুকণার প্রাচুর্য্য বেশি থাকা। 

    ৪) রেনু ও ধানি পোনার পেটফোলা। 

    ১) পুকুরে গ্যাস তৈরী হওয়া

    ক) লক্ষণ:-

    মাছের খাবি খাওয়া। 

    খ) কারণ :-

    • জলাশয়ে -দ্রবীভূত অক্সিজেনের
    • অভাব হওয়ার জন্য।
    • বেশি সংখ্যায় মাছ/বীজ পোনা মজুত করার জন্য। অধিক পরিমাণ জলজ উদ্ভিদ থাকায়।
    • পর্যাপ্ত পরিমাণ উদ্ভিদ ও প্রাণীজ খাদ্য কণা/অণুকণা থাকায়।
    • তলদেশে জৈব পদার্থের আধিক্য থাকায়।
    • অতিরিক্ত পরিমাণ পাঁক মাটি থাকায়।
    • অতিরিক্ত পরিমাণ পরিপূরক খাদ্যের ব্যবহার করায়।

    গ) প্রতিরোধ :-

    • জলাশয়ের তলদেশে থেকে পাঁক মাটি তুলে ফেলা।
    • বিঘা প্রতি ২০-২৫ কি.গ্রাম চুন প্রয়োগ করা।
    • প্রয়োজন মতো জৈব সার প্রয়োগ করা, রাসায়নিক সার ব্যবহার না করা।
    • প্রয়োজন মতো পরিপূরক খাদ্যের ব্যবহার করা।

    ঘ)  মাছের খাবি খাওয়া রোগ এর চিকিৎসা :-

    • পরিমাণ মতো প্রতি মাসে চুন প্রয়োগ করা।
    • নির্দিষ্ট সংখ্যায় বীজ পোনা মজুত করা।
    • উদ্ভিদ অণুকণার পরিমাণ খুব বেশী দেখা গেলে ৩০ কি.গ্রাম কাঁচা টাটকা গোবর ১০০-১৫০ লিটার জলে গুলে জলাশয়ের জলে ছিটিয়ে দেওয়া।
    • কলা গাছ কুচি কুচি করে কেটে জলে ফেলা দেওয়া এবং জলে বাঁশ দিয়ে পেটানো।

    ২) জল ঘোলাটে এবং কাদা থাকা :-

    ক) লক্ষণ :-

    • জল ঘোলাটে বা কাদাটে থাকা (Turbidity)
    • পুকুরে জল ঘোলাটে থাকায় ফুলকোয় কাদার কণা জমা হয়।মাছ ভেসে ওঠে ও  খাবি খায় এবং অনেক সময় মাছ মারা যায়।

    খ) কারণ :-

    · জলে কাদার অণুকণা বেশি থাকায় শ্বাস কষ্ট হয়৷ 

    গ) প্রতিরোধ/ চিকিৎসা :-

    • চুন প্রয়োগ করা - বিঘা প্রতি ৩০-৩৫ কেজি।
    • বিঘা প্রতি ৬৫০-৭০০ গ্রাম ফিটকিরি ৬০-৭০ লিটার জলে গুলে জলাশয়ের জলে ছিটিয়ে দেওয়া এবং ফিটকিরির দ্রবণ ছিটানোর পর প্রতি ২-৩ দিন অন্তর ২৫-৩০ কি.গ্রাম পচানো গোবর গুলে জলাশয়ের জলে ছিটিয়ে দেওয়া ৫-৭ বার।
    • কাঁচা শুঁটি জাতীয় পাতা বা অন্যান্য নরম পাতার ৪-৫ টি বোঝা (প্রতিটি ২০-২৫কেজি ওজন হিসাবে) জলের কয়েকটি স্থানে ডুবিয়ে রাখা, একটু পচলেই জলে গুলে মিশিয়ে দেওয়া।

    ৩) উদ্ভিদ কণা/অণুকণার প্রাচুর্য বেড়ে যাওয়া :-

    ক) লক্ষণ :-

    পুকুরে জল ভীষণভাবে সবুজ হয়ে জলে গন্ধ হয় এবং জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারণে মাছ ভেসে ওঠে ও খাবি খায়।

    খ) কারণ:

    পুকুরে অত্যাধিক সার প্রয়োগ এবং গোবর/সার ধোয়া জল ঢোকার ফলে জল গারো সবুজ হয়ে যায়। 

    গ) প্রতিরোধ চিকিৎসা :-

    • পুকুরে জলের পরিমান এবং জলে সার এর উপস্থিতি নির্ণয় করে সঠিক পরিমানে   রাসায়নিক এবং জৈব সার প্রয়োগ করতে হয় । 
    • টাটকা কাঁচা গোবর জলে ছিটিয়ে দেওয়া (বিঘা প্রতি ২৫-৩০ কেজি গোবর ১০০-১২০ লিটার জলে গুলে)।
    • বিঘা প্রতি ১৫-২০ কেজি  চুন প্রয়োগ করা ও পাড় ধোয়া জল ঢোকা বন্ধ করা।
    • ২০০ লিটার জলে ১০০-১৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট গুলে জলাশয়ের উপরের স্তরে স্প্রে করা যাতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে।

    ৪) রেনু ও ধানি পোনার পেটফোলা রোগ :-

    ক) লক্ষণ :-

    রেণু ও ধানী মাছের/বীজ পোনার পেট ফুলে থাকা। 

    খ) কারণ :-

    অত্যাধিক উদ্ভিদ কণার উৎপাদনে সালোক সংশ্লেষ মারফত জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়।

    গ) বীজ পোনার পেট ফোলা রোগের চিকিৎসা :

    সূর্যালোক নিয়ন্ত্রণে রেখে পুকুরে প্রাণী কণা বাড়াতে কাঁচা গোবরের দ্রবণ জলের উপরিভাগে ছেটাতে হয়। 

    খ) সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে মাছের রোগ :- 

    সাময়িক লাভের প্রলোভনে না পড়ে টেকসই চাষ ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া উচিত, বিশেষ করে প্রজাতি বাছাই ও সারের ব্যবহার বিষয়ে। দেশে তাড়াতাড়ি বাড়ে বড় জাতের মাছের প্রজাতি আছে, তাই বিদেশী প্রজাতির মাছ চাষ না করা উচিত। এছাড়া রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব- সার ব্যবহার করাই ভালো। এতে মাটি ও জলের গুণাগুণ হারাবে না এবং পরনির্ভরশীল হতে হবে না। পরিপূরক খাদ্য গ্রামীণ উপকরণ দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। এতে খাদ্যের গুণগত মান জানা থাকবে। ফলে সময়মতো ও চাহিদামত পেতে অসুবিধা হবে না চাষ উপকরণ এবং জলজ পরিবশে দূষিত হবে না, মাছেদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা যাবে এবং রোগ অসুখের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে৷

    গ) অপুষ্টিজনিত কারণে মাছের রোগ :-

    সঠিক পরিমাণে খাদ্যের জোগান না থাকলে মাছেদের দেহের বাড় ঘটবে না, সুস্বাস্থ্য বজায় থাকবে না এবং এর ফলে এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকবে না। সহজেই রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হবে। তাই মাছেদের সঠিক বাড় ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সময়মতো সঠিক পরিমাণে নিয়ম মেনে সার প্রয়োগ ও বীজ পোনা মজুত করা একান্তভাবে দরকার।

    ঘ) বংশগত, জন্মগত ও সহজাত কারণে মাছের রোগ :- 

    সুস্বাস্থ্য, নিরোগ, সবল ও সঠিক ওজন এবং মাপের স্ত্রী ও পুরুষ মাছ প্রজননের কাজে ব্যবহার করলেই পাওয়া যাবে নিটোল সবল, সুস্থ, নিরোগ মাছের বীজপোনা। এদের দেহের বাড় বেশি হবে। এইভাবেই বংশগত, জন্মগত ও সহজাত রোগ/ অসুখ এড়ানো যাবে।

    ঙ) জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণে মাছের রোগ :-

    পরিবেশগত কারণ গুলি ছাড়াও নিন্মলিখিত ৬ টি কারণ মাছের প্রধান  রোগের কারণ হিসাবে ধরা হয় -

    ১) ছত্রাকঘটিত রোগ। 

    ২) জীবাণু বা ব্যাটেরিয়াঘটিত রোগ। 

    ৩) আদ্যপ্ৰাণী বা প্রোটোজোয়াঘটিত রোগ। 

    ৪) কৃমিঘটিত রোগ। 

    ৫)  সন্ধিপদ বা কবচী প্রাণীঘটিত রোগ। 

    ৬) ভাইরাস ঘটিত রোগ। 

    ১) মাছের ছত্রাক ঘটিত রোগ :-

    ছত্রাক ঘটিত কারণে ক) মাছের ফুলকা গলা রোগ,খ) স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস রোগ ,গ) সাদা লোম বা সুতো গুচ্ছ ক্ষত সাধারনত এই তিনটি রোগ হয়ে থাকে। 

    ক) মাছের ফুলকা গলা রোগ (Gillirot) :-

    এই রোগ ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ থেকে হয়। এটি Branchiomyces sp. নামক ছত্রাকের আক্রমণে হয় ৷গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমে পুকুরের জৈব পদার্থ পচে জল দূষিত হলে এই ছত্রাক মাছের ফুলকায় বাসা বাঁধে এবং দ্রুত বংশবিস্তার করে। মাছের ফুলকাতে প্রথমে লাল লাল গুটি দেখা যায় পরে তা ঈষৎ ধূসরবর্ণে পরিবর্তিত হয়ে ছত্রাকগুলো ধীরে ধীরে ফুলকাতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে ফুলকা পচতে আরম্ভ করে এবং খসে খসে পড়ে ও দুর্গন্ধ বের হয়। অক্সিজেনের অভাবে মাছের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আক্রান্ত মাছগুলি পুকুরের উপরিভাগে খাবি খেতে থাকে, অবশেষে মাছ মারা যায়। 

    ১) মাছের ফুলকা গলা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা :-

    • বাইরের জল যাতে না ঢোকে তার ব্যবস্থা করা।
    • নিয়মিত চুন ও সার প্রয়োগ করা।
    • নির্দিষ্ট পরিমাণ বীজ পোনা মজুত করা।
    • ৪ বছর অন্তর পাঁক তোলা।

    ২) মাছের ফুলকা গলা রোগ প্রতিকার :-

    •  রোগের প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি লিটার জলে ৩০-৩৫ গ্রাম সাধারণ লবন মিশ্রিত করে আক্রান্ত মাছকে ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে পুকুরে ছেড়ে দিতে হয়।
    •  ১০ লিটার জলে ১ গ্রাম তুঁতে মিশ্রিত করে আক্রান্ত মাছকে ঐ দ্রবণে ১০-৩০ মিনিট ডুবিয়ে নিলে উপকার পাওয়া যায়।
    • বিঘা প্রতি ২৫ কেজি কলিচুন প্রয়োগ করে জলের পি এইচ ৯ এর কাছাকাছি রাখতে পারলে এই রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়।
    •  পুকুরে পরিবেশন করা খাদ্য বন্ধ রাখতে হবে এবং সম্ভব হলে পুকুরে বিশুদ্ধ জল প্রবেশ করাতে হবে।

     খ) মাছের স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস রোগ :- 

    ১) মাছের স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস রোগের কারণ ও লক্ষণঃ-

    মাছ পরিবহণকালে বা জাল টানার সময় মাছের দেহে কোন ক্ষত হলে ঐ ক্ষতস্থানে সাদা সাদা সূতোর টুকরার মত এক প্রকার ছত্রাক বাসা বাঁধে। এর আক্রমণে মাছ দূর্বল হয়ে পড়ে। ঘা ক্রমশঃ বেড়ে চলে এবং পরিশেষে মাছ মারা যায় ।

    ২)মাছের স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস রোগ প্রতিকার :- 

    • চারাপোনা আক্রান্ত হলে প্রতি লিটার জলে ১০ গ্রাম সাধারণ লবন মিশ্রিত করে মাছকে ২০ মিনিট ধরে ডোবাতে হবে। বড় মাছ আক্রান্ত হলে প্রতি লিটার জলে ৩০ গ্রাম সাধারণ লবন মিশ্রিত করে আক্রান্ত মাছকে ১০ মিনিট ধরে ডোবালে সুফল পাওয়া যাবে।
    •  প্রতি লিটার জলে ৫ মিলিগ্রাম (৫ পি পি এম) পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশ্রিত করে ঐ দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে উপকার হয়।
    • ১০ লিটার জলে ৫ গ্রাম তুঁতে মিশ্রিত করে, ঐ মিশ্রিত দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ডুবিয়ে রাখতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না মাছ অস্বস্তি বোধ করে।

    গ) মাছের সাদা লোম বা সুতো গুচ্ছ ক্ষত - (White filamentus tuft disease)

    ১) মাছের সাদা লোম বা সুতো গুচ্ছ ক্ষত লক্ষণঃ-

    মাছের পাখনা, দেহ, চোখ, ফুলকোয় সাদা দাগ প্রাথমিকভাবে দেখা দেয়৷ পরে লোমের মতো গুচ্ছ আকার ধারণ করে এবং দেহে ক্ষতের সৃষ্টি করে।

    ২)  মাছের সাদা লোম বা সুতো গুচ্ছ ক্ষত কারণ :-

    জল দূষিত হলে Saprolegnia parasitica নামক ছত্রাকের আক্রমণে মাছের এই রোগ হয়।

    ৩) মাছের সাদা লোম বা সুতো গুচ্ছ ক্ষত প্রতিরোধ :-

    • তলদেশ থেকে পচনশীল জৈব পদার্থ পরিষ্কার রাখা, নিয়মমত পাঁক তোলা।
    • বাইরে জল ঢুকতে না দেওয়া।
    • সময়মতো ও পরিমাণমত চুন ও সার প্রয়োগ করা।

    ৪) মাছের সাদা লোম বা সুতো গুচ্ছ ক্ষত চিকিৎসা :-

    • ৩% লবণ জলের দ্রবণে আক্রান্ত মাছেদের ৪-৫ মিনিট
    • ধরে আক্রান্ত মাছেদের ম্লান করিয়ে দেওয়া। 
    • প্রতি ১০ লিটারে ১ মিলিগ্রাম মেলাচাইট গ্রীণ গোলা জলীয় দ্রবণে ৪-৫ মিনিট ধরে আক্রান্ত মাছেদের ম্লান করানো(রাসায়নিক পদার্থ না ব্যবহার করাই শ্রেয়)।
    • লিটার প্রতি ১ মিলিগ্রাম তুঁতে বা ২-৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট জলীয় দ্রবণে আক্রান্ত মাছেদেরকে ২-৪ মিনিট ধরে স্নান করানো।

    ২) মাছের জীবাণু বা ব্যাটেরিয়াঘটিত রোগ :-

    জীবাণু বা ব্যাটেরিয়াঘটিত রোগের কারণে মাছের পাখনা ও লেজ পচা ,পেট ফোলা ,চোখ সাদা বা ঘোলা এবং শিঙ্গি মাগুরের শুর খসে পড়া সাধারণত এই ৪ টি রোগের লক্ষণ গুলি দেখা যায়। যেমন -

    ক) মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগ (Tail & Fin rot)

    ১) মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের লক্ষণ :-

    এটি একটি ছোঁয়াচে ও মারাত্মক রোগ। পুকুরে অত্যাধিক পাঁক জমলে এবং বাইরে থেকে পচাজল পুকুরে প্রবেশ করলে মাছ একধরণের জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হয়। প্রথম অবস্থায় পাখনা বা লেজের কিনারাতে সাদা রেখা চিহ্ন দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে তা প্রসারিত হতে থাকে। পাখনা ও লেজের পচন শুরু হয় এবং পাখনাগুলো পচে গিয়ে খসে পড়ে , রক্ত ঝরে সঙ্গে দেহের আঁশও আলগা হয়ে যায়। আক্রান্ত মাছ পুকুরে ঘুরপাক খেতে থাকে ও মাছ মারা যায় ৷

    ২) মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের কারণ :-

    • দুটি জাতের ব্যাকটেরিয়ার (Aeromonas hydrophila ও Pseudomonas fluorescens ) যৌথ আক্রমণে এই রোগ হয়। 
    • জলাশয়ের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিশেষ করে জলের গভীরতা কমে যাওয়ায়, খাদ্য না থাকা বা অধিক সার ও পরিপূরক খাদ্য প্রয়োগের ফলে।
    • সূর্যালোকের অভাব ও জলাশয়ের তলদেশে অত্যাধিক পাঁক থাকার জন্য।

    ৩)মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা  :-

    • বাইরে থেকে জল এনে জলের গভীরতা বাড়ানো।
    • পাঁক পরিষ্কার করা/তুলে ফেলা।
    • বিঘা প্রতি ২০-২৫ কি.গ্রাম চুন গুলে ঠান্ডা করে জলাশয়ে প্রয়োগ করা করতে হয়। 

    ৪) মাছের লেজ ও পাখনা পচা রোগের চিকিৎসা :-

    • লিটার প্রতি ২০ মিলি গ্রাম তুঁতে গোলা দ্রবণে আক্রান্ত মাছেদের ১-২ মিনিট ধরে স্নান করিয়ে দেওয়া৷ সম্পৃক্ত তুঁতের দ্রবণ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দেওয়া।
    • লিটার প্রতি ১-২ মিলিগ্রাম এক্রিফ্লোভিন (Acriflavin) মিশিয়ে সেই দ্রবণে আক্রান্ত মাছেদের ১-২ মিনিট স্নান করিয়ে ছেড়ে দেওয়া।
    • পুকুরে ১ পি পি এম (প্রতিলিটার জলে ১ মিলিগ্রাম) পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যাবে। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি একমিটার গভীরতাযুক্ত পুকুরে ১.৩ কেজি পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট প্রয়োগ করতে হবে।
    •  পরিপূরক খাদ্যের সঙ্গে টেরামাইসিন মিশিয়ে মাছকে কয়েকদিন পরিবেশন করলে এই রোগের প্রতিকার করা যাবে। প্রতি কেজি খাদ্যের সঙ্গে ১০০ মিলিগ্রাম ওজনের টেরামাইসিন ট্যাবলেট মিশ্রিত করে পর পর সাতদিন ধরে এই ঔষুধ মিশ্রিত খাদ্য পরিবেশন করতে হয়।

    খ) মাছের ড্রপসি বা পেট ফোলা  রোগ :-

    ১) মাছের ড্রপসি বা পেট ফোলা রোগের লক্ষণ :-

    এটি একটি জীবানুঘটিত সংক্রামক রোগ। এই রোগের ফলে মাছের শরীরের ভেতরে জল জমে। মাছের দেহের আঁশ খাড়া হয়ে  তার নীচে জল জমে। 

    ২) মাছের ড্রপসি বা পেট ফোলা রোগের কারণ :-

    এটা অপুষ্টি ও ব্যাকটেরিয়ার (Aeromonas hydrophila) আক্রমণের কারণে হয়। জলের গভীরতা কমলে এবং খাবারের অভাব হলে হয় ।

    ৩) মাছের ড্রপসি বা পেট ফোলা রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা :

    • কমপক্ষে প্রতিমাসে ১ বার নিমখোল ও হলুদ গুঁড়ো মেশানো পরিপূরক খাদ্য (নিমখোল: হলুদ গুঁড়ো:মিহি কুড়ো১:০.০৫:২০) খেতে দেওয়া।
    • বাইরে থেকে জল ঢুকিয়ে জলের গভীরতা বাড়ানো৷
    • প্রয়োজন মতো জৈব সার প্রয়োগ করা, যাতে মাছের খাদ্যাভাব না ঘটে।
    • বিঘা প্রতি ২৫-৩০ কেজি চুন প্রয়োগ করা।

    ৪) মাছের ড্রপসি বা পেট ফোলা রোগের চিকিৎসা  :-

    • মাছের ড্রপসি বা পেট ফোলা একটা মারাত্মক সংক্রামক রোগ তাই আক্রান্ত মাছকে পুকুর থেকে তুলে নষ্ট করে দেওয়া
    • প্রতিলিটার জলে ১৫ মিলিগ্রাম ক্লোরোমাইসেটিন বা টেরামাইসিন মিশ্রিত করে, ঐ মিশ্রিত দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে কয়েক মিনিট ডুবিয়ে রাখলে সুফল পাওয়া যায়।
    • লিটার প্রতি ১-২ মিলিগ্রাম Acriflavin মেশানো দ্রবণে আক্রান্ত মাছের ১-২ মিনিট স্নান করিয়ে দেওয়া।
    •  রোগের প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি লিটার জলে ৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশ্রিত করে, মিশ্রিত দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ২-৩ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
    •  প্রতি কেজি পরিপূরক খাদ্যের সঙ্গে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন ট্যাবলেট মিশ্রিত করে ৭ দিন ধরে মাছকে খাওয়াতে হবে।

    গ) মাছের চোখ সাদা বা ঘোলা রোগ : 

    ১) মাছের চোখ সাদা বা ঘোলা রোগের লক্ষণ :-

    এক ধরনের জীবানু মাছের চোখকে আক্রান্ত করে, ফলে মাছের চোখ ঘোলাটে হয় এবং পরবর্তীকালে চোখে ছানি পড়ে সাদা হয়ে যায় (কাতলা মাছেই বেশি দেখা যায়)।চোখ পচতে শুরু করে এবং মাছ মারা যায়।

    ২) মাছের চোখ সাদা বা ঘোলা রোগের কারণ -

     জলজ পরিবেশ দূষিত হওয়ায় বা বেশি পরিমাণে বীজ পোনা মজুত করার কারণে Aeromonas liquifaciens নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এই রোগ হয়। 

    ৩) মাছের চোখ সাদা বা ঘোলা রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা :-

    • জলাশয়ে বিঘা প্রতি ২৫-৩০ কেজি  চুন গুলে ঠান্ডা করে প্রয়োগ করা।
    • জলাশয়ের অতিরিক্ত পাঁক তুলে ফেলা।
    • পরিমাণমতো বীজ পোনা মজুত করা।
    • প্রতি মাসে  ৬-৮ কেজি  চুন (বিঘা প্রতি) প্রয়োগ করা।
    • জলজ পরিবেশ সুস্থ রাখতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া৷

    ৪) মাছের চোখ সাদা বা ঘোলা রোগের চিকিৎসা :

    • লিটার প্রতি ২-৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট মিশ্রিত জলীয় দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ২-৩ মিনিট ধরে স্নান করিয়ে দেওয়া।
    •  প্রতিলিটার জলে ৮ মিলিগ্রাম ক্লোরোমাইসেটিন গুলে, সেই জলে আক্রান্ত মাছকে ১ মনিট ডুবিয়ে রেখে ছেড়ে দিতে হয়। এই রকম পর পর তিনদিন করতে হয়।
    • জলাশয়ে লিটার প্রতি ০.৫-০.৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট প্রয়োগ করা বা ব্যবহার করা।
    • লিটার প্রতি ২-৪ মিলিগ্রাম Acriflavin মেশানো জলীয় দ্রবণে আক্রান্ত মাছেদের ১-২ মিনিট স্নান করানো।

    ঘ) শিঙ্গি, মাগুরের মাছের শুঁড় খসা রোগ -  (Loss of barbles)

    ১) শিঙ্গি মাগুরের শুঁড় খসা রোগের লক্ষণ :-

    শীত/গ্রীষ্মে জল কমলে শিঙ্গি মাগুড়ের শুড় ভেঙে যায়। ভাঙা জায়গা থেকে রক্ত ঝরে কিংবা ঘা দেখা যায়। মাছ অস্বস্তিতে ছটপট করে এবং মারা যায়।

    ২) শিঙ্গি, মাগুরের শুঁড় খসা রোগের কারণ:-

    • ব্যাকটেরিয়ার (Aeromonas sp.) আক্রমণে জলের স্বল্পতা থাকায় ৷
    • অস্বাস্থ্যকর জলজ পরিবেশের কারণে।

    ৩) শিঙ্গি মাগুরের শুঁড় খসা রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা :

    জলাশয়ে বাইরে থেকে জল এনে গভীরতা বাড়ানো। বিঘা প্রতি ২৫-২৩০ কি.গ্রাম চুন প্রয়োগ করা। জলাশয়ের তলদেশের মাটি মাঝে মাঝে ঘেঁটে দেওয়া।

    ৪) শিঙ্গি মাগুরের শুঁড় খসা রোগের চিকিৎসা :-

    • লিটার প্রতি ৫০-১০০ মি.গ্রাম কপার সালফেট (তুঁতে) জলীয় দ্রবণে ১-২ মি: দরে রোগাক্রান্ত মাছেদের স্নান করিয়ে দেওয়া।
    • কি.গ্রাম প্রতি পরিপূরক খাবারে ১০০-১২০ মিলিগ্রাম এ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে ১০ দিন খেতে দেওয়া৷ লিটার প্রতি ৩-৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেটের জলীয় দ্রবণে আক্রান্ত মাছেদেরকে ১-২ মিনিট স্নান করানো।

    ৩) আদ্যপ্ৰাণী বা প্রোটোজোয়াঘটিত মাছের রোগ :-

    আদ্যপ্ৰাণী বা প্রোটোজোয়াঘটিত রোগের কারণে মাছের ফুলকা পচা,সাদা দাগ বা হোয়াইট স্পট ,সাদাগুটি ,মাথাঘোরা সাধারণত এই ৪ টি লক্ষণ তাদের রোগ নির্ণয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।    

    ক) ফুলকো পচা রোগের (Gillrot)

    ১) ফুলকো পচা রোগের লক্ষণ :-

    ফুলকো থেকে প্রচুর পরিমাণে রস বের হয়। • শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, মাছ ভাসতে থাকে৷ ধীরে ধীরে চলাফেরা করে। ওজন কমে যায়, মৃত্যুর পথে এগোতে থাকে (দেহের চামড়ায়ও এরা আক্রমণ করে)।

    ২) ফুলকো পচা রোগের কারণ :-

    জল দূষিত হওয়ার কারণে Trichodina indica নামক আদ্যকোষীর আক্রমণে মাছের এই রোগ হয় ৷

    ৩) ফুলকো পচা রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা :-

    • অতিরিক্ত পাঁক তুলে ফেলা৷
    • নিয়মিত প্রতি মাসে বিঘা প্রতি ৬-৮  কেজি চুন প্রয়োগ করা ।
    • মাছের দৈহিক বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য মাসিক জৈবসার প্রয়োগ করা মাসিক বা পাক্ষিকভাবে। নোংরা/দূষিত জল যাতে জলাশয়ে না ঢুকতে পারে তার ব্যবস্থা করা।

    ৪) ফুলকো পচা রোগের চিকিৎসা :-

    • · ২-৩% লবণ জলের দ্রবণে আক্রান্ত মাছেদের ১-২ মিনিট স্নান করানো।
    • জলাশয়ে লিটার প্রতি ১-২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট ব্যবহার করা।

    খ) মাছের সাদা দাগ বা হোয়াইট স্পট রোগ - (White spot /baIchthyophthiriasis)

    ১) মাছের সাদা দাগ বা হোয়াইট স্পট রোগের লক্ষণ :-

    • এই রোগ বীজ পোনায় বেশি দেখা যায়। মাছের গায়ে, পাখনায়, ফুলকোয়
    • আলপিনের ডগার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা দাগ দেখা যায় এবং রস বের হয়।

    ২) মাছের সাদা দাগ বা হোয়াইট স্পট রোগের কারণ :-

    জলাশয়ের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য Ichthyophthirius multifiliis আদ্যকোষীর আক্রমণে ম্যাচে এই সাদা দাগ রোগ হয়। 

    ৩) মাছের সাদা দাগ বা হোয়াইট স্পট রোগের প্রতিকার :-

    • পরিমাণ মতো চুন প্রয়োগ করা।
    • প্রাকৃতিক খাদ্যের জোগান ঠিক রাখা।

    ৪) মাছের সাদা দাগ বা হোয়াইট স্পট রোগের চিকিৎসা :-

    • ২-৩% লবণ জলের দ্রবণে ১-২ মিনিটি আক্রান্ত মাছেদের স্নান করিয়ে দেওয়া। একই ব্যবস্থাপনা ৬-৭ দিন করা।
    • লিটার প্রতি ০.০৫-০.১০ মিলিগ্রাম মেলাকাইট গ্রীণ (Malachite green) এর জলীয় দ্রবণে ৩-৪ মিনিট আক্রান্ত মাছেদের ডুবিয়ে রাখা, একই ব্যবস্থাপনা ৩-৪ দিন। অথবা 
    •  ৫ লিটার জলে ১ মিলিলিটার ফরমালিন মিশ্রিত করে, ঐ মিশ্রিত দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ১০-১৫ মিনিট ডোবালে উপকার হয়।

    গ) মাছের সাদা গুটি / বসন্তরোগ রোগের  বা মিকসোস্পোরোডিওসিস :-

    ১) মাছের সাদা গুটি / বসন্তরোগ রোগের লক্ষণ :-

     আক্রান্ত মাছের দেহ ও ফুলকাতে আলপিনের মাথার মত সাদা সাদা গুটি দেখা যায়। প্রকোপ বেশী হলে মাছের শ্বাসকষ্ট হয় এবং মাছের আঁশ আলগা হয়ে খসে পড়ে। শ্বাসকষ্টে মাছ জলের উপরে ভেসে যায়, খাবি খায় ও মাছ মারা যায়। বর্ষার শেষে এই রোগ দেখা দেয় ৷ সাদা গুটি বা বসন্ত রোগ কাতলা মাছে বেশি দেখা যায়৷

    ২) মাছের সাদা গুটি / বসন্তরোগ রোগের কারণ :-

    জলাশয়ে মাছের আধিক্য থাকায় Myxobolus bengalensis ও M.sphericum ও M. rohitae নামক আদ্যকোষীর আক্রমণে মাছের সাদা গুটি রোগ হয় । 

    ৩) মাছের সাদা গুটি / বসন্তরোগ রোগের প্রতিকার :-

    • প্রতি লিটার জলে ২০ গ্রাম সাধারণ লবন মিশিয়ে, সেই মিশ্রিত দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ৫ মিনিট ডুবিয়ে নিলে উপকার পাওয়া যায়।
    •  ৫ লিটার জলে ১ মিলিলিটার ফরমালিন মিশিয়ে, ঐ মিশ্রিত দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ১০-১৫ মিনিট ডোবালে সুফল পাওয়া যায়।

    ঘ) মাছের মাথা ঘোরা রোগ : (Whirling disease)

    ১) মাছের মাথা ঘোরা রোগের লক্ষণ:-

    • মাছ জলের উপরে উঠে ঘুরপাক খায় ও তলিয়ে যায়।
    • মাছ মারা যায়।

    ২) মাছের মাথা ঘোরা রোগের কারণ :-

    · আদ্যপ্রাণী Myxosoma cerebralis আদ্যপ্রাণীর আক্রমণে মেরুদন্ডের বিকৃতি ঘটে।মাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বেশী লেজ নাড়ায়।

    ৩) মাছের মাথা ঘোরা রোগের প্রতিরোধ :-

    বিঘা প্রতি ৭-৮  কেজি  চুন প্রয়োগ করা এবং তলদেশের মাটি ঘেটে দেওয়া।

    ৪) মাছের মাথা ঘোরা রোগের চিকিৎসা :-

    মাছের মাথা ঘোড়া রোগের কোনো চিকিৎসা নেই।

    ৪) মাছের কৃমিঘটিত রোগ :-

    মাছের কৃমি ঘটিত রোগ ৩ টি কারণে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। যেমন -

     ক) মাছে গাইরোড্যাটাইলোসিস ও ড্যাকটাইলোগাইরাস কৃমি আক্রমণ  :-

     ১) মাছের কৃমি রোগের  লক্ষন :- 

    এক ধরণের অতি ক্ষুদ্র চ্যাপ্টা কৃমির আক্রমণে এই রোগ হয়। এই কৃমিরা সুক্ষ্ম হুকের সাহায্যে মাছের দেহ ও ফুলকাতে আটকে থাকে এবং রক্ত শোষণ করে। বর্ষাকালে। এদের ডিম ফুটে বাচ্চা হয় এবং পোনা মাছের ভীষণ ক্ষতি করে। এদের আক্রমণে মাছের দেহ জ্বালা করে, দেহ থেকে প্রচুর শ্লেষ্মা বা লালা জাতীয় পদার্থের ক্ষরণ হয় এবং শ্বাসকষ্টে মাছ ধীরে ধীরে মারা যায়।

    ২) মাছের কৃমি রোগের  কারণ :-

    জলাশয়ের জল দূষিত হয়ে গেলে গাইরোড্যাটাইলোসিস ও ড্যাকটাইলোগাইরাস প্রজাতির কৃমি আক্রমণে  মাছের কৃমিঘটিত রোগ হয় 

    ৩) মাছের কৃমি রোগের প্রতিরোধ :-

    • জলাশয়ে সর্বদা রোদ পেতে পাড়ের বড় গাছের ডাল ছেঁটে দেওয়া। পরিমাণমতো ও সময়মতো ত্রৈমাসিক চুন প্রয়োগ করা।
    • তলদেশে জমা জৈব পদার্থ সহ পাঁক পরিষ্কার করা।
    • বাঁশ আধা আধি ফালা করে কেটে পুকুরে পুঁতে দেওয়া যাতে তারা বাঁশের কাটা ধারে গা ঘষতে পারে।

    ৪) মাছের কৃমি রোগের চিকিৎসা :-

    •  প্রতি লিটার জলে ৩০ গ্রাম সাধারণ লবন মিশিয়ে, ঐ মিশ্রিত দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ৫-৬ মিনিট ধরে ২- ৩ দিন ডোবাতে হবে।
    •  ১০০ লিটার জলে ২৫ মিলিলিটার ফরমালিন মিশ্রিত করে, ঐ মিশ্রিত দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ১০-১৫ মিনিট ডোবাতে হবে।

    খ) মাছের জোঁক - (Fish leech)

    ১) মাছের জোঁক রোগের  লক্ষন :-

    • দেহে রক্তের ছোপ দাগ দেখা যায়।
    • দেহে চোখে ও মলদ্বারের নরম মাংসল জায়গায় লেগে থাকে৷
    • ছটপট করে, জলে এলোপাথারি দৌড়ায়।
    • আঁশ খসে পড়ে, ঘা দেখা দেয়।
    • ঘায়ে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়।

    ২) মাছের জোঁক রোগের কারণ :-

    • জলজ জোঁক-এর (Hemicilepsis piscicola) আক্রমণে শক্ত বস্তুতে গা ঘষে।
    • জলে জৈব পদার্থসহ বেশি পাঁক থাকায়।

    ৩) মাছের জোঁক রোগের প্রতিরোধ :-

    • সময়মতো পাঁক তুলে ফেলা।
    • পরিমাণমতো প্রতি মাসে  চুন প্রয়োগ করা।
    • বাঁশ আধা আধি ফালা করে কেটে পুকুরে পুঁতে দেওয়া যাতে তারা বাঁশের কাটা ধারে গা ঘষতে পারে।

    ৪) মাছের জোঁক রোগের চিকিৎসা :

    ২-৩% লবণের জলীয় দ্রবণে আক্রান্ত মাছেদেরকে ৩-৪ মিনিট ধরে স্নান করানো।

    ৫)  সন্ধিপদ বা কবচী প্রাণীঘটিত রোগ :-

    সন্ধিপদ বা কবচী প্রাণীঘটিত মাছের রোগ সৃষ্টিকারী উকুন বা আরগুলোসিস 

      ক) মাছের উকুন বা আরগুলোসিস :-

    ১) মাছের উকুন বা আরগুলোসিস রোগের লক্ষন :-

    সাধারণতঃ রুই, কাতলা, মৃগেল মাছের দেহ ও ফুলকা আরগুলাস বা মাছের উকুন দ্বারা আক্রান্ত হয়। এদের খালি চোখে দেখা যায়। দুটি বড় শোষকের দ্বারা ফুলকোয়, পাখনায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আটকে থেকে রক্ত শোষণ করে। এর আক্রমণে মাছের আঁশ আলগা হয়ে যায় এবং আক্রান্ত স্থানে রক্তের চিহ্ন দেখা যায় ও দেহ লম্বাটে দেখায় ফুলকোয় আক্রমণে রঙ ফ্যাকাসে দেখায়৷। মাছ ছটপট করতে থাকে, পুকুরের কিনারায় গা ঘষতে থাকে এবং ক্রমশঃ দূর্বল হয়ে পড়ে। 

    ২) মাছের উকুন বা আরগুলোসিস রোগের কারণ :-

    • Argulus sp. Larnaea sp. Ergasilus sp. নামক অতিক্ষুদ্র পরজীবি সন্ধিপদ প্রাণীর আক্রমণে ৷ Argulus sp.এর আক্রমণেই বেশি ৷ (Argulus দেখতে অতি ছোট স্বচ্ছ কাঁচ টিপের মত, দুটো দাগ থাকে মাথার দিকে; Larnaea sp. অতি ছোট্ট সরু সুতোর মতো স্বচ্ছ; Ergasilus sp. সাদা ছোট্ট লম্বাকার)।
    • দূষিত জলজ পরিবেশ ও অধিক পরিমাণে পরিপূরক খাদ্য প্রয়োগে এগুলির উৎপত্তি হয় ৷

    ৩) মাছের উকুন বা আরগুলোসিস রোগের প্রতিরোধ :-

    • জলাশয়ে জলজ উদ্ভিদ না রাখা৷
    • জৈব পদার্থের বিশেষ করে পরিপূরক খাদ্যের প্রয়োগ যেন পরিমাণে অধিক না হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখা৷ সময়মতো এবং নিয়মিত চুন প্রয়োগ করা।

    ৪) মাছের উকুন বা আরগুলোসিস রোগের প্রতিকার :-

    •  রোগের প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি লিটার জলে ৩০ গ্রাম সাধারণ লবন মিশ্রিত করে, ঐ মিশ্রিত দ্রবণে রোগাক্রান্ত মাছকে ৫-৬ মিনিট ডোবাতে হয়। এরকম ২-৩ দিন করতে হবে।
    •  প্রতি লিটার জলে গ্যামাকসিন ০.৫ মিলিগ্রাম (০.৫ পি পি এম) হিসাবে সপ্তাহে ২-৩ বার পুকুরে প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যায়। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ১ মিটার জলের গভীরতায় ৬৭০ গ্রাম গ্যামাকসিন প্রয়োগ
    • করতে হবে।
    •  বিঘা প্রতি ১ মিটার গভীরতাযুক্ত পুকুরে ৮-১০ মিলিলিটার নুভান (Nuvan) প্রয়োগ করতে হবে। এতে আরগুলাস মারা পড়লেও তাদের ডিম মরবে না। তাই চারদিন পর যখন ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে তখন আবার একই মাত্রায় নুভান প্রয়োগ করলে পুকুর থেকে আরগুলাস নির্মূল হবে।

    ৬) মাছের ভাইরাস ঘটিত রোগ :-

    ভাইরাস ঘটিত রোগের মধ্যে মাছের ক্ষত রোগকেই মৎস গবেষকরা উল্লেখ করেছেন -

    ক) মাছের ক্ষত রোগ বা এপিজুটিক আলসারেটিভ ডিজিস সিন্ড্রোম (EUS) :-

    ধারণা -মাছের এই রোগটি পশ্চিমবঙ্গে মহামারী ক্ষত রোগ নামে পরিচিত। এই রোগটি ১৯৮৮ সালে ভারতে মহামারী আকার ধারণ করে। এরপর থেকে প্রতি বছর বর্ষাকালের পর ঠিক শীতের শুরুতে এই রোগ দেখা যাচ্ছে। প্রথমের দিকে পুকুরের তলদেশে বসবাসকারী মাছ যেমন শাল, শোল, ল্যাটা, মাগুর, কই প্রভৃতি মাছে দেখা গিয়েছিল, বর্তমানে রুই, কাতলা মৃগেল মাছও এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। যদিও এই রোগের প্রকৃত কারণ কি তা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ আছে। যাই হোক পুকুরের জল দূষিত হলে এই রোগের প্রকোপ খুব বেশী দেখা যায়। কারণ দূষিত পরিবেশে মাছ খুব দূর্বল হয়ে পড়ে এবং মাছকে আশ্রয় করে পরজীবিরা দ্রুত বংশ বিস্তার করে। সাধারণতঃ এই রোগের প্রকোপ বেশী দেখা যায় চাষের জমির পাশের পুকুরে যেখানে বৃষ্টি ধোয়া জলের সাথে জমিতে দেওয়া বিভিন্ন কীটনাশক পুকুরে এসে পড়ে। এই দূষণ শীতকালে পুকুরে জল কমে যাওয়ায় আরো ঘন হয়। জলে কীটনাশক দূষণের ফলে মাছেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও অন্যান্য শারিরীক কাজের ব্যাঘাতও ঘটে। জলে দূষণ ঘন হওয়ার জন্য অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে পুকুরে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণুগুলো সংখ্যায় বেড়ে যায় এবং দূর্বল মাছগুলোকে আক্রমণ করে ক্ষত রোগের সৃষ্টি করে।

    ) মাছের ক্ষত রোগের লক্ষণ :-

    আক্রান্ত মাছের গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। এই লাল দাগ গোলাকার এবং বেশীর ভাগ সময়ে এই দাগ মাছের লেজের দিকেই থাকে তবে সারা গায়েও এই দাগ দেখা যেতে পারে। ক্রমে আক্রান্ত স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হবে এবং মাংসপেশী খসে পড়বে। মাছগুলি জলের মধ্যে অস্বাভাবিক ভাবে ছোটাছুটি করে।

    ২) মাছের ক্ষত রোগের কারণ :-

    কারণ জানার জন্য বিশ্বব্যাপী পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে, এখনও পরিষ্কার নয়।

    কারও কারও মতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ও পরজীবির একত্রিক আক্রমণের ফলেই এই রোগের সৃষ্টি।

    ৩) মাছের ক্ষত রোগ প্রতিরোধের উপায়  :-

    •  বর্ষার সময় খেত-খামার থেকে জল যাতে পুকুরে না আসতে পারে তার জন্য পুকুরের পাড় উঁচু করে দিতে হবে।
    • জলাশয়ের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা, বিশেষ করে গভীরতা ও খাদ্য উৎপাদন যেন যথেষ্ট পরিমাণে থাকে এবং পাঁক সময়মতো তুলে ফেলা৷
    • প্রতি মাসে একবার বিঘা প্রতি ৬-৮ কেজি চুন দিয়ে  তলার মাটি ঘেঁটে দেওয়া।   

    ৪) মাছের ক্ষত রোগের চিকিৎসা :-

    • নিন্মে উল্লেখিত বিষয় গুলি ধাপে ধাপে প্রয়োগ করে মাছের ক্ষত রোগের চিকিৎসা করা যায়। সব কিছু একবারে প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।  প্রয়োগ করার পর কাজ হচ্ছে কিনা দেখে অন্যগুলি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে।  
    • মাছে ক্ষত বা ঘা রোগ শুরু হলে প্রথম করণীয় কাজ হল বিঘা প্রতি ১ মিটার গভীরতাযুক্ত জলে ১২-১৩ গ্রাম মিথিলিন ব্লু প্রতি সপ্তাহে একবার করে দিতে হবে।
    • আক্রান্ত মাছকে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মেশানো জলে (১০ লিটার জলে ৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট) এবং ৫ শতাংশ লবন জলে (১০ লিটার জলে ৫০০ গ্রাম লবন )ডুবিয়ে ছাড়তে হবে।
    • চুন দেওয়ার একদিন পরে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ১ পি পি এম হারে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ বিঘা প্রতি ১ মিটার জলের গভীরতার জন্য ১ কিলো ৩০০ গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট প্রয়োগ করতে হবে।
    • ড্যাপসন ১০০ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে ১৪ দিন দিতে হবে। ড্যাপসন মাছের ক্ষত রোগের ভালো ঔষধ হিসাবে ভালো কাজ করে। 
    •  বিঘা প্রতি ১৬ কেজি  চুন গুলে ২৪ ঘন্টা ঠান্ডা করে তার সাথে বিঘা প্রতি ১কেজি ৬০০ গ্রাম কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে সারা জলাশয়ে ছিটিয়ে জল নেড়ে দেওয়া  এবং ১০-১২ দিন পরে পুণ:প্রয়োগ করা (৩ ফুট গভীরতা প্রতি)। বিঘা প্রতি ৩৫০ মিলিলিটার শঙ্করারিষ্ট জলে গুলে জলাশয়ে ছিটিয়ে দেওয়া, ৭ দিন পরে পুন:প্রয়োগ করা বিঘা প্রতি ৬৫০-৭০০ গ্রাম ফিটকিরির দ্রবণ তৈরি করে জলাশয়ে ছিটিয়ে দেওয়া এবং ১ সপ্তাহ পরে ২য় বার পুণ:প্রয়োগ করা। ফিটকিরি ব্যবহারে প্রাকৃতিক অনুখাদ্যকণা কমে যায়; তাই জৈব সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক অনুখাদ্য বাড়ানোর ব্যবস্থা করা।
    • ICAR (ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান সংস্থা) উদ্ভাবিত CIFAX ওষুধ বিঘা প্রতি ১৩০ মিলিলিটার নিয়ে ১৫ লিটার জলে গুলে জলাশয়ে ছিটিয়ে এবং জল নেড়ে দেওয়া (৩ ফুট জলের গভীরতা প্রতি)। এটি প্রয়োগে মাছের ক্ষত রোগে ভালো সুফল পাওয়া গেছে। 
    • বিঘা প্রতি ৫০-৫৫ কেজি  ছাই প্রয়োগ করা( ৩ ফুট গভীরতা প্রতি)।


    তথ্যসূত্র -

    মৎস বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ সরকার। 

    মৎস বিভাগ ত্রিপুরা সরকার। 


    FAQ ( প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর )

    ১) কি কি কারণে মাছ রোগে আক্রান্ত হয়?

    সাধারনত মাছ পরিবেশগত কারণ ,জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণে ,অপুষ্টিজনিত কারণে ,সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে,বংশগত এবং জন্মগত সহজাত এই ৬ টি কারণে আক্রান্ত হয়ে থাকে। 

    ২) মাছের রোগ কিভাবে হয় ?

    মাছ চাষ করার জন্যে জলাশয়ের সঠিক প্রস্তুতি ও পরিচর্যার এভাবে মাছের বিভিন্ন রোগ হয় যেমন জলাশয়ে পর্যাপ্ত রোঁদের ব্যবস্থার জন্যে পারের গাছের ডালপালা পরিষ্কার না রাখা , সময় মতো জলাশয়ের তলার পাক তুলে না ফেলা বা পর্যাপ্ত পরিমানে চুনের ব্যবহার করে মাটির গ্যাস নির্মূল না করা , জলের পরিচর্যা না করা ,নিয়মিত চুন লবন পটাশিয়াম  ও খাদ্য প্রয়োগ না করা ,অত্যাধিক খাদ্য প্রয়োগ করা , বাহিরের দূষিত জল ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া ,অধিক পরিমানে পোনা মজুত করা , ইত্যদি ভুল গুলি মাছের রোগ বয়ে নিয়ে আসে। 

    ৩) মাছের জীবানুনাশক ও ঔষধের নাম কি কি ?

    পটাসিয়াম পারমেঙ্গানেট ,এক্রিফ্লোভিন (Acriflavin), কপার সালফেট ,মেলাচাইট গ্রিন (Malachite green ) ,ফরম্যালিন ,ক্লোরামাইসিটিন , সিফ্যাক্স ( CIFAX ) , ইত্যাদি মাছের জীবাণুনাশক ও ঔষধ হিসাবে ভালো কাজ করে।  

    ৪) মাছের উকুন নাশক ঔষধ কি ?

    মাছের উকুন নাশক ঔষধ হিসাবে মালাথন (Malathon ), নুভান (Nuvan ) ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

    ৫) মাছের রোগের নাম কি কি ?

    মাছের রোগের কিছু প্রচলিত নাম রয়েছে  সেগুলি হল লেজ ও পাখনা পচা রোগ ,পেট ফোলা রোগ , চোখ সাদা হওয়া রোগ ,শিঙ্গি মাগুর মাছের শুর খসা রোগ, ফুলকো পচা ও গলা রোগ , মাছের মাথা ঘোড়া রোগ , হোয়াইট স্পট বা সাদা দাগ রোগ , সাদা গুটি রোগ , মাছের উকুন ও কৃমি ঘটিত রোগ , মাছের ক্ষয় বা ক্ষত ভাইরাস জনিত রোগ ইত্যাদি। 

    ৬) মাছের ভিটামিন ঔষধের নাম কি ?

    মাছের জন্যে ভিটামিন বি ,ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি ঔষধের প্রয়োজন হয় ,যেগুলি বাজারে বিভিন্ন নামে পাউডার এবং ক্যাপসুল মোড়কে পাওয়া যায়।  তবে ঔষধের দোকানে ভিটামিন বি ,সি ,ডি জেনেরিক ঔষধ খোঁজ করলে কিছু জেনেরিক ক্যাপসুল ২০-৩০ টাকা দিয়ে ১ পাতা পাওয়া যায়। 

    ৭) মাছের এন্টিবায়োটিক ঔষধের নাম কি ?

    মাছের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন এবং টেট্রাসাইক্লিনের মতো ওষুধগুলি  বিক্রি করা হয় তবে  এই ঔষধগুলিকেই  মানুষের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ বলে দিয়ে থাকে। 

    ৮) মাছ চাষে ব্যবহৃত প্রোবায়োটিক এর নাম কি ?

    মাছ চাষে ব্যবহৃত প্রোবায়োটিকগুলির মধ্যে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া যেমন ব্যাসিলাস-এসপি,ল্যাকটোব্যাসিলাস-এসপি, এন্টারোকক্কাস-এসপি, এবং ইস্ট, স্যাকারোমাইসিস সেরেভিসিয়া ইত্যাদি। 

    আরও দেখুন - 

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    1মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন