মাশরুম চাষ। মাশরুম কি ? মাশরুম চাষ পদ্ধতি, জাত, উৎপাদন খরচ, বিক্রি, লাভ ও উপকারিতা এবং মাশরুম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কোথায় ?

Didibhai Agrofarm
0

মাশরুম অনেকের কাছে একটি পরিচিত শব্দ এবং পরিচিত উদ্ভিজ ছত্রাক। প্রাচীন কাল থেকেই মাশরুম বন থেকে সংগ্রহ করে খাদ্য ও বিভিন্ন ঔষধি কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে।  এদের মধ্যে অনেক মাশরুম বিষাক্ত এবং অনেক মাশরুম আছে যেগুলি ঠিক করে পরিশোধনের মাধ্যমে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে আসছেন বিশেষ করে বনাঞ্চলে বসবাসরত মানুষরা। তবে মাশরুমের জন্মানো নির্ভর করে বাসস্থান এবং জলবায়ুর উপর। 

মাশরুমের চাহিদা নিশ্চিত করতে কৃত্রিম মাশরুম উৎপাদনের উপর ঝোক দেখা যায় এর পর চিনে ধানের খড় মাশরুম ও " ভলভেরীলা ভলবাসী " ও কালো কানের মাশরুম " অরিকুলারিয়া পলিট্রিকা " চাষ শুরু হয়ে ছিল। যদিও অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সের সাদাপাথর গুহায় সাদা বোতাম মাশরুম  " আগরিকাস বিসপোরাস" এর চাষ এর প্রবর্তন হয়ে ছিল বলে জানা যায় এবং নিঃসন্দেহে সেটি ছিল সেই সময়ে মাশরুম উৎপাদনে ইতিহাস সৃষ্টিকারী মাশরুম উৎপাদন। বর্তমান বিশ্বের ভোজ্য মাশরুম চাহিদার ৯০% বোতাম মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে। 

এর পর 1932 সালে পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি প্রথম মাশরুম উৎপাদন এর জন্যে বীজ উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন এবং 1962 সালে স্টলারের দ্বারা শস্যের বা ফসলের  থেকে মাশরুম স্পন তৈরির প্রক্রিয়াটি নিখুঁত ভাবে শুরু হয়। এর পর থেকে কৃত্রিম ভাবে উদ্ভাবিত মাশরুম বীজ থেকে ভোজ্য ও ঔষধি মাশরুম উৎপাদন শুরু হয়। এর পর থেকে ২০০ টির বেশি ভোজ্য ও ঔষধি মাশরুম ঘরের ভেতরে উৎপাদন হচ্ছে ও বাণিজ্যিক প্রসারতা বৃদ্ধি পেয়েছে মাশরুম থেকে বিভিন্ন ঔষধ ও খাদ্য পণ্য উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে। 

    ১) মাশরুম কি ?

    "মাশরুম" শব্দটির অর্থ ছত্রাক কে বুঝায় যা কালচার ছত্রাক থ্রেড মাইসেলিয়াম যে  নিজেই নিজের একটি ফলদায়ক দেহ গঠন করে। এই মাইসেলিয়া ভূগর্ভ উপরিভাগে বা পচা গাছের ডাল ইত্যাদিতে নিজের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে একটি একক বীজ হিসাবে। 

    মাশরুমকে  টোডস্টুল বলা হয়। মাটির উপরে মাটির খাদ্য উৎসে একটি ছত্রাকের মাংসল স্পোর বহনকারী ফলদায়ক একটি দেহ। একেই  টোডস্টুল বলে এবং এই টোডস্টুল গুলি বিষাক্ত হয়। ১৪০০ শতকে ইংল্যান্ডে টোডদের জন্য এটি "মল" হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল সম্ভবত এটিকে অখাদ্য বিষাক্ত ছত্রাককে বোঝাতে । যদিও  প্রথিবীতে ১৪০০০-১৬০০০  প্রজাতির মাশরুম তথ্য মজুত আছে যার মধ্যে ২০০০ প্রজাতি বিভিন্ন ঔষধিও কাজে ব্যবহৃত হয় এর বাইরে ৩০ টি প্রজাতি আছে যা বিষাক্ত এবং সেবনে প্রাণঘাতী হতে পারে।  

    ২০০ প্রজাতির মাশরুম বাণিজ্যিক চাষ করে ঔষধি তৈরী ও ভোজ্য ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এদের মধ্যে সাদা বোতাম মাশরুম প্রথম থেকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।তাই সেই সব ছত্রাকের ক্ষেত্রেই মাশরুম শব্দটি ব্যবহৃত করা যায় যাদের একটি স্টেম , ফুলকা ও বোতামের মতো টুপি আছে। এটি প্রথমে বোতামের মতো পিন হেড তৈরী হয় যার ব্যাস দুই মিলিমিটারের কম যা সাধারণত সাবস্ট্রেটের পৃষ্ঠে পাওয়া যায় এবং এটি মাইসেলিয়ামের মধ্যে থ্রেডের মতো হাইফাইয়ের জাল বিন্যাসে ছত্রাক গঠিত হয়। এটি  দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে ও স্বল্প সময়ের মধ্যে তার জীবনকাল শেষ হয়ে যায় বিভিন্ন রং পরিবর্তনের মাধ্যমে। 

    "মাশরুম" শব্দটি একটি  ফরাসি শব্দ মৌসারণ ( mousseron ) থেকে মস ( mousse ) এর  থেকে উদ্ভব হয়েছে বলে জানা যায়। ১৫০০ -১৬০০  শতাব্দীতে, মুশরম, মুশরাম, মুশেরন, মুশেরম, মুশেরন বা মুসারুন শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে মাশরুম শব্দটি সর্বজনে ব্যবহৃত হয়। 

    ২) মাশরুম চাষ  :-

    বিশ্বজুড়ে মাশরুম উৎপাদন ও তার ব্যবহার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মোট ১৪০০০ - ১৬০০০ মাশরুম তথ্য রেকর্ড আছে বলে জানা যায় । এদের মধ্যে সারা বিশ্বে মোট ৩০০০ টি প্রজাতির প্রাথনিক ভোজ্য মাশরুম বলে বিবেচিত হয়েছে জানা যায়। সারা বিশ্বে ২০০ টি প্রজাতি চাষ হয় তার মধ্যে ৬০  টি প্রজাতি বাণিজ্যিক গুরুত্ব পেয়েছে ও ১০ টি প্রজাতি নিয়ে শিল্প গড়ে উঠেছে ।  মাশরুম তার সুস্বাদ এবং ঔষধি গুনের জন্যে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। 

    ভারতে ১৯৬০ সালে বাণিজ্যিক ভাবে মাশরুম উৎপাদন শুরু হয় এবং ১৯৭০ সালে ভারতে  মোট মাশরুম উৎপাদন ছিল ৩০০০ টন পরবর্তীতে তা বেড়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ২৪৭০০০ টন।  ভারতে মাশরুমের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ৮৫ % বোতাম  মাশরুম উৎপাদন হয়। ভারত প্রতিদিন ২০০ টন মাশরুম উৎপাদন করছে যা মার্কিন আমদানির প্রায় ২৫% রপ্তানি করে।  বিশ্বে মাশরুম উৎপাদন এর হার ৮ শতাংশ আর ভারত দেরিতে মাশরুম উৎপাদন  শুরু করলেও বার্ষিক উৎপাদন ১৫% অবদান রাখে। 

    মাশরুম চাষ এমনটি একটি চাষ পদ্ধতি যা কম সময়ে এবং কম খরচে গৃহে উৎপাদন করা যায় এর জন্যে বড় কোনো জমির প্রয়োজন হয় না। যে কেউ শ্রমিক ,ভূমিহীন কৃষকরা এই চাষ করতে পারেন এবং মাশরুম কাটার পর অবশিষ্ট অংশগুলি দিয়ে বিভিন্ন সার তৈরী করে মাটিতে ব্যবহার করে কম খরচে ফসল উৎপাদন করতে পারেন। মাশরুম সুস্বাদু ও নিরামিষ খাদ্য কিন্ত এর গন্ধ আমিষের মতো হওয়ার কারণে ক্রমশই মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন রেসিপি এবং খাদ্য পণ্য উৎপাদন হচ্ছে যার ফলে মাশরুম চাষে লাভের পরিমান ও চাষের চাহিদা বাড়ছে। 

    ৩) মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয়তা :-

    মাশরুম বাণিজ্য ও পুষ্টির কারণে এর খাদ্য সচেতনতা বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ভূমিহীনতা এবং বেকারত্ব বাড়ছে সেই সাথে খাদ্যে পুষ্টির অভাবে ক্রমশ মানুষের রোগের সম্মুখীন হচ্ছে। সব দিক দিয়ে সাধারণ মানুষ ও গ্রামীণ ক্ষুদ্র কৃষক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। 

    অপরদিকে খাদ্য সচেতনতার কারণে বিশ্ব বাজারে মাশরুমের এর প্রতি খাদ্য চাহিদা বেড়ে চলেছে। মাশরুম ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ ফসল হিসাবে খাদ্য তালিকায় ব্যবহার বাড়ছে। ফলে মাশরুমের অপর্যাপ্ত উৎপাদন খাদ্য চাহিদা মেটাতে অক্ষম, এই সময়ে মাশরুম চাষ প্রান্তিক মানুষদের কম মূলধন ও জায়গার মধ্যে বেশি মুনাফার পথ দেখাচ্ছে। 

    মাশরুম একটি কম ক্যালোরি যুক্ত উচ্চ প্রোটিন খাদ্য। উচ্চ ফাইবার। বি কমপ্লেক্স ,বি ১২ ,আয়রন ইত্যাদি দিয়ে পূর্ণ যা অন্য নিরামিষ খাদ্যে পাওয়া যায় না। গর্ভবতী মহিলাদের রক্ত স্বল্পতা ,হাইপার এসিডিটি  

    মাশরুম ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে কার্যকরী নিরামিষ সব্জী হিসাবে কাজ করে তাই এর চাহিদা বাজারে প্রচুর এবং নিজে উৎপাদন করে নিজের খাদ্য গ্রহণ করলে অনেকটা সাশ্রয় হয়। মাশরুমের চাষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। বোতাম ,খড় ,মিল্কি ও ঝিনুক মাশরুমের চাষ ক্রমশ বাড়ছে খরচ কম ও নিশ্চিত উর্পাদনের মাশরুম চাষের প্রয়োজনীতা আছে।

     দরিদ্র মানুষদের কর্মসংস্থান ও পরিবারের আয় বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে ১৯৮৩ সালে ভারতীয় কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মাশরুম এর সব দিক নিয়ে গবেষণা করে মাশরুম চাষ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে হিমাচল প্রদেশের সোলানে জাতীয় মাশরুম গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত করে। যা মাশরুম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম দেশ যে কিনা মাশরুম নিয়ে সবচেয়ে বেশি গবেষণা চালিয়ে মাশরুম এর নতুন বিভিন্ন প্রজাতির অনুসন্ধান এবং মাশরুম থেকে বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য তৈরির গবেষণা চালিয়েছে। 

    মাশরুম এর সেলফ লাইফ কম হাওয়ায় কাঁচা  মাশরুম সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন রেসিপি ও পণ্য তৈরী করে মাশরুম চাষে নতুন দিশা দেখিয়ে ছে ও মাশরুম বর্জ দিয়ে চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহার প্রক্রিয়াকরন সহজ করে মাশরুম চাষে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।  

    ৪) মাশরুম স্পন বা বীজ কি :-

    প্রাকৃতিক ভাবে মাশরুম উৎপন্ন হয় ভূপৃষ্ঠের উপরে যার মধ্যে কিন্তু সেগুলি সব খাদ্য হিসাবে গ্রহণীয় নয় অনেক বিষাক্ত মাশরুম আছে। এক কোথায় ছত্রাকের পুনঃনবীকরণ হল মাশরুম। মাশরুমকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বিশুদ্ধভাবে উৎপাদনের একটি প্রয়াস চালু হয় এবং পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি 1932 সালে প্রথম মাশরুম উৎপাদন এর জন্যে বীজ উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন এবং 1962 সালে স্টলারের দ্বারা শস্যের বা ফসলের  থেকে মাশরুম স্পন তৈরির প্রক্রিয়াটি নিখুঁত ভাবে শুরু হয়। 

    মাশরুম বীজ বা স্পন তৈরীর জন্যে টিসু কালচার করা হয় এটি করতে আলুর টুকরো বয়েল করে আগার আগার ,ডেক্সট্রোরোজ মিশিয়ে autoclave মেশিন এ 15 PSI বা 121 ডিগ্রি সেলসিয়াস সেট করে 15 মিনিট স্টেরিলাইজ করে PDA তৈরী করা হয় । এর পর  মাশরুম  টিসু সংমিশ্রণ করে রেখে দিয়ে কয়েকদিন পর UV যুক্ত লাইট টেবিলে সব ফরমালিন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে ধান , গম  স্টেরিলাইজ করে পিপি কীটে ভোরে তার মধ্যে টিস্যুকালচার করা PDA মিশিয়ে মাদারসপন তৈরী করা হয়। পরবর্তীতে সেই মাশরুম বীজ দিয়ে মাশরুম উৎপাদন করা হয়। 

    আরও দেখুন - mushroom spawn মাশরুম স্পন তৈরি পদ্ধতি

    ৫) মাশরুম এর জাত ও বৈশিষ্ট :-

    সারা বিশ্বে ২০০ টির বেশি মাশরুম এর জাত আছে তার এখানে কয়েকটি প্রধান ভোজ্য ও ঔষধি মাশরুম জাত ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে -

    ক) সাদা বটম বা বোতাম মাশরুম (White button Mushroom):-

    বোতাম মাশরুম এর বৈজ্ঞানিক নাম Agaricus bisporus. এই প্রজাতির মাশরুম পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে।এগারিকাস বাইসপোরাস প্রজাতির সাদা বোতাম মাশরুম এর মাইসেলিয়াম বৃদ্ধির জন্যে ২২-২৫°C এবং ফল দেওয়ার জন্যে ১৪ - ১৮°C তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় এবং বাতাসে আদ্রতা ৮০% -৮৫% প্রয়োজন হয়। 

    এটি দেখতে সাদা রং এর হয় এবং যখন ফসল তোলা হয় তখন ২.৫ -৪ সে.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। উৎপাদন সময় কাল ৮০ -৯০ দিন।

    খ) ওয়েষ্টার বা ঝিনুক মাশরুম ( Oyster Mushroom) :-

    বিজ্ঞান সম্মত নাম  Pleurotus spp। ওয়েষ্টার মাশরুম ২০ - ৩০°C পর্যন্ত মধ্যবর্তী  তাপমাত্রায় ও ৫৫ -৭০% আর্দ্রতাতে  বছরে 6 থেকে 8 মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চাষ করা হয়।  এটি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে সাদা ,হলুদ ,পিঙ্ক ,কালো ধূসর ইত্যাদি এবং আকার ফুলকার মতো হয়ে থাকে । এই মাশরুম উৎপাদন সহজ বেশি ৩০-৩৫ দিন পর থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। শুধু খড় দিয়ে তৈরি করা যায় কেজি প্রতি ৩০ - ৩৫ টাকা খরচ হয় এক কেজি উৎপাদনে। 

    ওয়েসটার বা ঝিনুক মাশরুমের ৬ টি প্রজাতি রয়েছে যেমন -

    ১) গোলাপি ঝিনুক  মাশরুম (Pleurotus djamor var. roseus )

    চাষের জন্যে ২২-২৫°C  তাপমাত্রা এবং ৮০-৮৫% আদ্রতার প্রয়োজন হয়। এটি ফুলকার আকার হয় ও রং গোলাপি রঙের হয়। 

    ২) Pleurotus sajor-caju  ঝিনুক মাশরুম :-

    এটি দেখতে ঝিনুকের মতোই কালো ধূসর বর্ণের হয়। চাষ করার জন্যে প্রথম ১০ দিন ২৫-৩০°কি তাপমাত্রা এবং ফল বের হওয়ার পর ২২-২৬°C তাপমাত্রা ও ৮০-৮৫% আদ্রতার প্রয়োজন হয়। 

    ৩) Pleurotus florida ঝিনুক মাশরুম :-

    চেপ্টা সাদা রঙের হয়। পিন হেড বের হওয়ার আগে পর্যন্ত  ২২-২৮°C এবং ফল বের হওয়ার পর ১৫ - ২২°C তাপমাত্রা এবং ৮০-৮৫%আদ্রতার প্রয়োজন হয়। 

    ৪) Pleurotus ostreatus ঝিনুক মাশরুম :-

    নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এটি চাষ করা যায়। চাষের জন্যে ১৪ -২৪ °C তাপমাত্রা এবং ৮০-৮৫% আদ্রতার প্রয়োজন হয়। এর রং ধসর সাদা থেকে নীলাভ হয়। 

    ৫) Pleurotus citrinopileatus  হলুদ ঝিনুক মাশরুম :-

    এর রং হলুদ হয় এবং ১৮ - ২৮°C তাপমাত্রা এবং ৮০-৮৫%আদ্রতার প্রয়োজন হয়। 

    ৬) Pleurotus eryngii কাবুল বা রাজা ঝিনুক মাশরুম :-

    এর জন্যে ১০-২৫°C তাপমাত্রা এবং ৮০-৮৫%আদ্রতার প্রয়োজন হয়। এর জীবনকাল অন্য ঝিনুক বা ওয়েস্টের মাশরুমের থেকে বেশি। উত্তর আফ্রিকা ,ইউরোপ ,এশিয়ার অনেক জায়গায় এর ব্যাপক চাষ হয়।  

    গ)  মিল্কি বা দুধ মাশরুম (White milky Mushroom) :-

    মিল্কি মাশরুম এর বিজ্ঞান সম্মত নাম Calocybe indic . এই মাশরুম ২৮° C থেকে ৩৮°C এর মধ্যে চাষ হয় এবং আদ্রতা ৮০%-৯০% | মূলত গরম কালে এই মাশরুম চাষ ভালো হয় অন্তত 2 বার এর ফলন নেওয়া যায়। এটি সাদা এবং বড়ো হয়। পিন হেড টি বোতাম মাশরুম এর থেকো ছোট কিন্তু কান্ড টি অনেক বড়ো ও মোটা হয়। এটি ৪৫ দিন পর ফল ছেঁড়া যায় এবং ৬০ দিন পর্যন্ত এর জীবন কাল থাকে।

    ঘ) প্যাড্ডি স্ট্র বা খড় মাশরুম (Paddy straw Mushroom) 

    এর বিজ্ঞান সম্মত নাম Volvariella volvacea। এটি মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাষের উপযোগী। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫ - ৩৫°C পর্যন্ত উৎপাদন ভালো হয়। এই জাতের মাশরুম ১০ -১২ দিনের মধ্যে উৎপাদন পাওয়া যায়। খরচ ও ঝামেলা কম কিন্তু উৎপাদন কম হয়। 

    ঙ) শীতকে মাশরুম ( Shiitake Mushroom ) 

    শীতকে মাশরুম এর বৈজ্ঞানিক নাম Lentinula edodes . এটি উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করে।  শীতকে মাশরুম উৎপাদনের  জন্যে ১২ -২৫°C তাপমাত্রা এবং ৮০% আদ্রতার প্রয়োজন হয়।এর ফুলকা গুলো  বাদামি রং এবং ডালপালা সাদা হয়। এর জীবন কাল ১১০-১২০ দিনের হয় এবং ৩ - ৪ বার ফসল সংগ্রহ করা যায়। 

    চ) কালো পপলার মাশরুম (black poplar Muushroom ) 

    কালো পপলার মাশরুম Agrocybe aegerita  . এই মাশরুম উৎপাদনের জন্যে ২৫ - ২৮°C তাপমাত্রা এবং ৮৫% আদ্রতার প্রয়োজন হয়। এটি সবচেয়ে সুস্বাদু মাশরুম গুলির মধ্যে একটি। এটি বসন্ত থেকে শরৎকাল পর্যন্ত উইলো কাঠে বেশি জন্মায়। এর একটি আলাদা গন্ধ ও পুষ্টিগুণ রয়েছে যা ঔষধি কাজে লাগে। 

    ছ) ঋষি মাশরুম (Reishi mushroom ) :-  

    ঋষি মাশরুম এর বৈজ্ঞানিক নাম Ganoderma lucidum।  এই মাশরুম উৎপাদনের জন্য সর্বোত্তম তাপমাত্রা ৩০-৩২°C, আর্দ্রতা 80-85%, আদ্রতা প্রয়োজন। এই মাশরুমটির ফুলকার সাইড গুলি সাদা ও মাঝে সপূর্ণ অংশ বাদামি  রং হয়। এটি একটি ঔষধি গুন্ সপূর্ণ মাশরুম এটিকে শুকিয়ে ৬ মাস রাখা যায় গুঁড়ো করে। এটি  ১২০ -১৫০  দিনের মধ্যে চাষের জীবনকাল সমাপ্ত হয় এবং ৩ বার ফসল সংগ্রহ করা যায়।  

    জ) ফেলামমুলিনা শীতকালীন মাশরুম Winter mushroom:-

    শীতকালীন মাশরুম এর বৈজ্ঞানিক নাম ফ্ল্যামুলিনা ভেলুটাইপ্স। এটি মূলত শরৎকাল থেকে বসন্ত কাল পর্যন্ত চাষ করা যায়। এটি চাষের জন্যে ১০ - ২৫°C তাপমাত্রা এবং ৮০ -৮৫%  আদ্রতা ও আলোর প্রয়োজন হয়। এটি আকারে ১৪ - ১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয় এবং দেখতে ক্যাপটি সাদা হলুদ ও ডাটা গুলি হলুদ হয়। এটির জীবনকাল ৫০ -৬০ দিন এবং দুবার ফসল সংগ্রহ করা যায়।  এটি চী। সাইবেরিয়া ,উত্তর আমেরিকা ,অস্ট্রেরিয়া ইত্যাদি দেশে সারাবছর উৎপাদন হয়।  এটি যকৃৎ এর এবং গ্যাস্ট্রো এন্টেরিক আলসার নিরাময়ে ভালো কাজ করে। 

    ঝ) Auricularia polytricha কালো কানের মাশরুম :-

    এটি দেখতে কানের মতো হয়। এটি সব মাশরুম উত্পাদনের মধ্যে চতুর্থ পজিসন এ রয়েছে। ২৫ -২৬°C তাপমাত্রা এবং ৮০ -৮৫%  আদ্রতা ও আলোর প্রয়োজন হয়। এটি নিয়মিত খেলে গলার ব্যাথা ,রক্তস্বল্পতা , হজম জনিত সমস্যা , পাইলস ইত্যাদিতে ভালো কাজ করে বলে জানা যায়।  

    ৬) মাশরুম চাষ পদ্ধতি :-

    পশ্চিমবঙ্গ ,ত্রিপুরা ,আসাম ,বাংলাদেশের আবহাওয়ায় রিতু পরিবর্তন অনুযায়ী সকল ভোজ্য  মাশরুম চাষের উপযোগী অঞ্চল। মাশরুম চাষ গুলি প্রজাতি ভেদে তাদের চাষের ধরণ আলাদা হয়ে থাকে। মাশরুম চাষের জন্যে মাশরুম বীজ বা স্পন প্রয়োজন যা প্রজাতি ভেদে আলাদা কালচারের হয়ে থাকে।  সাধারণত বাণিজ্যিক ভাবে মাশরুম চাষ ভোজ্য মাশরুম গুলি বেশি করা হয়ে থাকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে যেমন বোতাম মাশরুম ,মিল্কি মাশরুম উৎপাদন করতে কপোস্ট এর ব্যবহার হয় আবার ওয়েষ্টার মাশরুম ও খড় মাশরুম এর ক্ষেত্রে কম্পোস্ট ব্যবহার হয় না তাই এগুলি উৎপাদনের জন্যে শুধু সেই প্রজাতির উৎপাদন পদ্ধতির তথ্য গুলি জেনে মাশরুম উৎপাদন শুরু করতে হবে। 

    আরও দেখুন -

     মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি ? মিল্কি মাশরুম থেকে উৎপাদিত পণ্য কি ? মিল্কি মাশরুম এর প্রোটিন গুনাগুন্ এবং উপকারিতা ? মিল্কি মাশরুম উৎপাদন এ লাভের পরিমান কি?

    ওয়েস্টার/ঝিনুক মাশরুম চাষ পদ্ধতি  

    ৭) মাশরুম চাষে রোগ পোকা আক্রমণে সাবধানতা :-

    • মাশরুমের প্রধান শত্রু স্কয়ারডিস , ফোরিডস ,স্প্রিংটেল , মাইট। স্কয়ারডিস এবং  ফোরিডস  মাশরুমের মাইসেলিয়াম কে ক্ষতি করে কম্পোস্ট সুবস্ট্রেট লার্ভা দ্বারা খাওয়ার ফলে PH লেবেল ঘাটতির মাধ্যমে। 
    • এছাড়াও মাছি প্যাথোজিক ছত্রাক , ভাইরাস সংক্রমিত ছত্রাক ,নিমাটোড এর স্পোর বহন করে নিয়ে আসে মাশরুম গৃহে। এই জন্যে আগাম সতর্কতা হিসাবে মাছি প্রবেশ যেন না করে এবং ছত্রাক ও ভাইরাস দ্বারা মাশরুম ক্ষতিগ্রস্থ না হয় তার জন্যে মশারি নেট দিয়ে মাশরুমের ঘরের চারদিকে ঘিরে রাখতে হয় এবং মাছি পোকা নিধনের জন্যে ফেরোমোন লিওর ফাঁদ ব্যবহার করা হয় এবং ভাইরাস ও ছত্রাক নাসের জন্যে নিয়মিত ফার্ম ঘর জীবাণু মুক্ত রাখতে হয়। কম্পোস্ট ও সাবস্ট্রেট গুলি জীবন মুক্ত করে নিতে হয়। ম্যালাথিয়ন ,ব্যাভিস্টিন ব্যবহার করা যেতে পারে। 
    • সতর্কতা হিসাবে ফার্মে প্রবেশের আগে এবং ফার্মের কাজ করার পর্বে হাত পা স্যানিটেশন করে নেওয়া উচিত। 
    • স্প্রিংটেল ওয়েস্টের ,বোতাম ও মিল্কি মাশরুমের ক্ষতি করে তাই আগাম সতর্কতা পালন করা উচিত। 
    • ফার্মের থেকে ব্যবহৃত মাশরুম কম্পোস্ট গুলি ফার্ম ঘর থেকে দূরে রাখা নয়তো সেগুলিকে কম্পোস্ট সার হিসাবে জমিতে ব্যবহার করে কমিয়ে ফেলতে হয়। এগুলি জমা থাকলে সেখানে তৈরী হওয়া বিভিন্ন রোগ মাছি বহন করে ফার্মে নিয়ে আসে। 
    • মাশরুম উৎপাদনের সাথে যুক্ত সমস্ত ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ,মেঝে ,সেলফ ইত্যাদি এবং ফার্ম ঘরের বাহিরে ও দেওয়াল গুলি নিয়মিত ৪% ফরমালিন দিয়ে ধোয়া ও স্প্রে করা উচিত। 
    • মাশরুম উৎপাদনে ব্যবহৃত খড় ও কম্পোস্ট উপাদান গুলি পরিষ্কার পরিছন্ন জায়গায় রাখা উচিত ঢেকে। এর ফলে রোগ বাহি ছত্রাক ও নিমাটোডের আক্রমণ থেকে মাশরুম কে সুরক্ষিত রাখা যায়। 
    • খামারে কোনো বেক্তি বা শ্রমিক কে যথাযথভাবে তার হাত এবং পা জীবাণুমুক্তকরণ না করে ঢুকতে দেওয়া যাবে না , এতে রোগ বাহি জীবাণু থেকে মাশরুম কে সরক্ষিত রাখা যায়। 
    • মাশরুম উৎপাদন চলা কালীন মাইসেলিয়াম শুরু থেকে পিনহেড বের হওয়ার পর পর্যন্ত নিয়মিত জীবাণুনাশক ফরমালিন ২% দিয়ে স্প্রে করলে রোগ জীবাণু আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। 
    • মাশরুম চাষ করতে হলে সাবধানতা অবলম্বন করে চাষ করলে ভালো ফল পাওয়া যায় তাই এর জন্যে রোগ জীবাণু পোকা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও মাশরুমের প্রজাতি অনুযায়ী তার প্রয়োজনীয়  পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা আদ্রতা বজায় রাখা ও মাটিতে স্যাতস্যাতে ভাব থাকলে নিয়মিত জীবাণু নাশক দিয়ে শোধন করে রাখা। 

    ৮) মাশরুম বর্জ্যের ব্যবহার :-

    মাশরুম কাটার পর যে বর্জ্য কম্পোস্ট গুলি বের হয় সেগুলিকে কৃষি ক্ষেত্রে পুনঃব্যবহারের জন্যে নিয়ম মতো কম্পোস্ট তৈরী করা।  মাশরুম সংগ্রহের মাশরুম এর প্রজাতির অনুযায়ী সেগুলি থেকে অবশিষ্ট বর্জ বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন বোতাম মাশরুম থেকে নির্গত বর্জ্য কম্পোস্ট গুলি জমিতে সরাসরি ব্যবহার করা যায়।  আবার কিছু মাশরুম আছে যাদের ফল সংগ্রহের পর কম্পোস্ট তৈরী করে ব্যবহার করা যায়। 

    এই কম্পোস্ট গুলি ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি হয় ,জলস্তর উপরে ওঠে ,ছত্রাক বাহি রোগ ,নিমাটোড ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধী কার্যকারিতা বেড়ে যায় এবং মাটিতে হিউমাস তৈরী হয় ও জীবাণু এবং কেঁচোর সংখ্যা বাড়ে ফলে বাহির থেকে কম সার প্রদান করেই ভালো ফসল উৎপাদন করে লাভ বেশি করা যায়। টমেটো ,কপি ,বেগুন , লাউ কুমড়ো আলু ,পেঁপে ইত্যাদি সবজি এবং ভুট্টা,ধান ,গম ইত্যাদিতে ভালো ফল পাওয়া যায়। 

    ৯) মাশরুম ভিটামিন এবং পুষ্টিগুণ :-

    মাশরুম ভিটামিন ,প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ সম্পূর্ণ খাদ্য। মাশরুমে বিভিন্ন ভিটামিন উৎস থাকে যেমন - ভিটামিন বি ও ডি , রিবোফ্লাভিন ,নিয়াসিন ,থিয়ামিন , বায়োটিন ,প্যান্টোথেনিক ও  অ্যাসকরিবক অ্যাসিড। নিরামিষ খাদ্যের মধ্যে মাশরুম একমাত্র ভিটামিন ডি পরিপূর্ণ ও কোলেস্টরল মুক্ত নিরামিষ খাদ্যের উৎস হওয়ায় ক্রমশই মানুষের মধ্যে মাশরুমের চাহিদা বাড়ছে। 

    মাশরুমে  চিনি ও চর্বি কম থাকায় সুপার ফুড হিসবে বিবেচিত হয়। মাশরুমে ভালো মানের প্রোটিন ৩০ -৪০ শতাংশ শুকনোতে থাকে এবং সুস্বাস্থের জন্যে  প্রয়োজনীয়  লাইসিন ও লিউশন অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ যা অন্যান্য সব্জীতে পাওয়া যায় না। এতে প্রোটিনের উচ্চ মাত্রা ২.৫ -৩% থাকে ,উচ্চ ফাইবার ১% থাকে ,কম মাত্রায় ফ্যাট ১% থাকে , কম মাত্রায় ক্যালোরিস ৩০-৪০ Kcal /১০০ গ্রাম থাকে। 

    এছাড়াও মাশরুমে জিঙ্ক ,কোপার , ফসফরাস ,ম্যাঙ্গনিজ , ম্যাগনেসিয়াম কম মাত্রায় (৪-৫ মি.গ্রাম /১০০ গ্রাম)  ,পটাসিয়াম, আয়রন  ইত্যাদি খনিজ পদার্থ থাকে। 

    ১০) মাশরুমের উপকারিতা :-

    • মাশরুম ভিটামিন ডি পরিপূর্ণ  ও কোলেস্টেরল মুক্ত খাদ্য। মাশরুমে  চিনি ও চর্বি কম থাকায় যারা ডায়বেটিস এবং হৃদ রোগ সমস্যাতে ভুগছেন তাদের জন্যে একটি উপকারী সুস্বাদু খাদ্য। 
    • মাশরুম একটি ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য তাই যারা কুষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন তাদের জন্যে একটি উপকারী খাদ্য। 
    • মাশরুমে উচ্চ প্রোটিন , ম্যাক্রো এবং কম ক্যালোরি উপাদান কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী তুলে। 
    • মাশরুমে বি ১-৩ পর্যন্ত গ্লুকোনের মতো বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে , যে গ্লুকানগুলির ইমুইনি মডেলেটরি বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের জন্যে সংমিশ্রণ  থেরাপি হিসাবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। 

    ১১) মাশরুম খাওয়ার নিয়ম :- 

    মাশরুম নিরামিষ ভোজী মানুষদের কাছে একটি জনপ্রিয় ও চাহিদা পূর্ণ খাদ্য  যেমন আমিষ ভোজীদের কাছেও প্রিয় খাদ্য কারণ মাশরুম নিরামিষ হলেও এর যে ফ্লেভার পাওয়া যায় সেটি আমিষ এর মতোই গন্ধপূর্ণ। মাশরুমে উপস্থিত  পুষ্টিমান অতিরিক্ত সুস্বাস্থ প্রদান করতে সহযোগিতা করে। মাশরুমের ডায়োটরি ফাইবার ,পলি- আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (PUFA ) ,প্রোটিন ,ভিটামিন ,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুন্ একটি স্বাস্থকর খাবার তৈরী করে। শিশু ,নারী ,বৃদ্ধা সকলের জন্যে মাশরুম একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থকর খাবার হয়ে উঠছে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাশরুম দিয়ে খাবার তৈরী করে।  

    মাশরুমকে বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া হয় এবং সেগুলিকে দুটি ভাগে করা যায়।  ক) কাঁচা মাশরুম রেসিপি এবং খ) শুকনো মাশরুম পণ্য তৈরী।

    আরও দেখুন -

    মাশরুম প্রোডাক্ট ডাল বড়ি , মাশরুম পাঁপড় ,মাশরুম বিস্কুট তৈরী পদ্ধতি

    ক)  কাঁচা মাশরুম রেসিপি :- 

    কাঁচা মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন সুস্বাদু খাদ্য তৈরী করে বাড়িতেই পরিবেশন করে যেমন খাওয়া যায় তেমনি মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন ধরণের মুখোরোচক খাদ্য তৈরী করে ব্যবসা করা যায়। 

    মাশরুম বিভিন্ন সব্জীর সাথে মিশিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়।  এছাড়াও মাশরুমের প্রজাতি ভেদে মাশরুম দিয়ে মাশরুম আচার ,মাশরুম পকোড়া ,মাশরুম পাপের , মাশরুম দম বিরিয়ানী , মাশরুম কোপ্তা ,মাশরুম কাটলেট ,মাশরুম টমেটোর সুপ্ ,মাশরুম নুডুলস , মাশরুম সস , মাশরুম মুরব্বা ,মাশরুম ক্যান্ডি ,মাশরুম জ্যাম ,মাশরুম দই,  মাশরুম ডাল বড়ি ইত্যাদি তৈরী করা যায়। 

    খ) শুকনো মাশরুম পণ্য তৈরী :-

    মাশরুম শুকিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরী করে খাদ্য হিসাবে নিজে খাওয়া ও বাণিজ্য করা যায়। মাশরুম শুকিয়ে মাশরুম বিস্কুট ,মাশরুম ঝুড়ি , মাশরুম জলে গুলানো পাউডার , মাশরুম কেক ও রুটি , মাশরুম স্নাকবার , মাশরুম বাজরা বা Millet প্রোটিন খাদ্য ও কুকিস  ইত্যাদি তৈরী করা যায়। 

    ১২) মাশরুম চাষে লাভ :-

    মাশরুম চাষে লাভ অনেক হয়। মাশরুম চাষ করতে বেশি শ্রম ,জায়গা ও পুঁজির প্রয়োজন হয় না। কম পুঁজি ও জায়গা দিয়েই সাধারণ মানুষরা এর ব্যবসা শুরু করতে পারেন এবং মোটা টাকা আয় করে নিজেকে সাবলম্বী করা যায় এবং ধীরে ধীরে বড়ো ব্যবসা স্থাপন করা যায় কাঁচা মাশরুম প্যাকেজিং  বিক্রি ও পণ্য তৈরী করে বিক্রি করা যায়। 

    ১ কেজি ভোজ্য মাশরুম তৈরী করতে প্রজাতি ভেদে সর্বোচ্চ ৪০ -৫০ টাকা খরচ হয় এবং কাঁচা মাশরুম বিক্রি করলে ১ কেজি মাশরুম ১০০ -৪০০ টাকা কেজি বিক্রয় হয় এলাকা বা শহর বাজার অনুযায়ী। একজন বেক্তি কম পরিশ্রমে ১০ কেজি মাশরুম উৎপাদনের কাজ করতে পারে। ১০ কেজি মাশরুম উৎপাদন সর্বোচ্চ খরচ ৫০ টাকা হলে ১০ কেজি উৎপাদন খরচ ৫০০ টাকা এবং বিক্রি সর্বনিন্ম দাম ১০০ টাকা কেজি বিক্রয় করলে ১০ কেজি ১০০০ টাকা এবং গড় বিক্রি দাম ২০০ টাকা কেজি ধরলে দিনে ২০০০ টাকা বিক্রি ও খরচ ৫০০ টাকা বাদে লাভ ১৫০০ টাকা ও মাসে ৪৫০০০ টাকা আয় করা যায়। 

    ১৩) মাশরুম কোথায় বিক্রি করা যায় :-

    মাশরুম বর্তমানে যে কোনো শহরে বিক্রি হয়। বিক্রির পূর্বে বিক্রেতাকে ঠিক করতে হবে কাঁচা বিক্রি করবে , নাকি পণ্য তৈরী করে বিক্রি করবে। যদিও মাশরুম চাষের পূর্বে মাশরুমের বাজার কোন শহরে কেমন সেটা যাচাই করে মাশরুমের প্রজাতি ও ব্যবসার ধরণ ঠিক করে ব্যবসা শুরু করা উচিত। মাশরুম শুধু নিজ শহরে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবসা শুরু করা ঠিক নয়। মাশরুম ব্যবসা শুরু করলে ৩-৪ টি বিক্রির বাজার খুঁজে নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায়। কাঁচা মাশরুমের স্থায়িত্ব কম ফ্রিজ করে সংরক্ষণ করলেও ৩ দিনের বেশি রাখা কঠিন হয় তাই মাশরুমের ব্যবসা শুরু করলে ধীরে ধীরে উৎপাদন বাড়ার সাথে কাঁচা মাশরুম ক্যানিং যেমন বোতাম মাশরুম এর ক্ষেত্রে করা যায় এছাড়াও পণ্য তৈরী করে বিক্রি করা যায়।  

    মাশরুম মূলত দেখা যায় পাহাড়ি জনজাতি অধ্যুষিত এলাকা এবং নিরামিষ ভোজী ও স্বাস্থসচেতন শহর গুলিতে ছাড়াও বড়ো শহর শিলিগুড়ি ,কলকাতা ইত্যাদি এলাকায় বেশি বিক্রি করা যায় এবং বাংলাদেশে বনানী, গুলশান, বসুন্ধরা, উত্তরা, ধানমন্ডি ইত্যাদি শহর গুলিতে মাশরুমের ভালো বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

    আরও দেখুন -

    কাচা মাশরুম প্যাকেজিং , সংরক্ষণ বা স্টোরেজ পদ্ধতি

    ১৪) মাশরুম বীজ বা স্পন সংগ্রহ :-

    মাশরুম বীজ বা স্পন সরকারি এবং বেক্তিগত ব্যবসা যারা করেন তাদের কাছে পাওয়া যায়। তবে মাশরুম বীজ ক্রয়ের পূর্বে সে প্রতিষ্ঠানের বীজের গুণগত মান কেমন তা যাচাই করে ক্রয় করতে হয়। মাশরুম বীজ সরকারি ভাবে সারাভারতে তথা পশ্চিমবঙ্গ ,ত্রিপুরা আসাম , রাজ্যগুলির প্রতিটি জেলায় অবস্থিত কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র বা KVK  , মাশরুম গবেষণা কেন্দ্র গুলিতে পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গে কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র গুলি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত  CADC  অফিস বা ওয়েস্ট বেঙ্গল কমপ্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন অফিস গুলিতে যোগাযোগ করলে কম দামে গুণগত মানের পাওয়া যায় এছাড়াও ভারত সরকার এর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ হর্টিকালচার রিসার্চ  বেঙ্গালোর (IIHR )  অনলাইন অর্ডার করে কম মূল্যে মাশরুম বীজ সংগ্রহ করা যায়। বাংলদেশে মাশরুম বীজ বা স্পনের জন্যে উপজেলা কৃষি অফিস গুলিতে যোগাযোগ করলে কম মূল্যে গুণগত মানের মাশরুম বীজ পাওয়া যাবে। 

    ১৫) মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ :-

    ভারতে মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণের জন্যে একটি দীর্ঘ পরিসর বা সুবিধা রয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র বা KVK গুলিতে যোগাযোগ করলে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র , জলপাইগুড়ি কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র ,দিনাজপুর কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র ,গয়েশপুর কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র কল্যাণী ,অশোক নগর কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র , নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রম ও কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র , মুর্শিদাবাদ রামকৃষ্ণ আশ্রম এবং হুগলি বৈচি CADC অফিস ইত্যাদি জায়গায় প্রশিক্ষণ পাওয়া যায়।

     বাংলদেশে মাশরুম বীজ বা স্পনের জন্যে উপজেলা কৃষি অফিস গুলিতে যোগাযোগ করলে প্রশিক্ষণ পাওয়া যাবে। 

    ১৬) উপসংহার :-

    মাশরুম চাষ নিজ কর্মসংস্থান তৈরী করে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে। মাশরুম চাষ হল একটি অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপের অংশ যা উৎপাদন করতে বেশি জায়গার প্রয়োজন নেই বাড়িতেই ঘরের ভেতর করা যায়। ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষক ও শ্রমিকরা সহজেই কম খরচে মাশরুম উৎপাদন করে খেয়ে পুষ্টির যোগান দিতে পারেন অপর দিকে ব্যবসা করতে পারেন। বাড়িতেই অনেক কৃষি বর্জ দিয়ে কম্পোস্ট এবং শুকনো কৃষি বর্জ দিয়ে সুবস্ট্রেট তৈরী করে কাঁচা মাশরুম উৎপাদন করতে পারেন এবং উৎপাদিত মাশরুম সংগ্রহের পর মাশরুম বর্জ কে কৃষি ক্ষেত্রে পুনঃব্যবহার করে মাটির স্বাস্থ রক্ষা করে মানসম্পূর্ণ ফসল ঘরে তুলে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে সাহায্য করে। সুতরাং মাশরুম উৎপাদনকে জীবিকা নির্বাহের উৎস হিসাবে ধরে নিলে পরিবারের পুষ্টি ঘাটতি ও আর্থিক দুরাবস্থা দুটোই কাটানো সম্ভব হবে আর এর জন্যে মাশরুম উৎপাদনে আমাদের উৎসাহ প্রদান করে যেতে হবে।  

    ১৭) FAQ (প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর )

    ১) মাশরুম কি ধরনের খাদ্য? 

    মাশরুম নিরামিষ ও উচ্চ প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ  কোলেস্টেরল মুক্ত খাদ্য। 

    ২) মাশরুম কত দিনে হয়?

    মাশরুমের প্রজাতি অনুযায়ী উৎপাদনের সময় লাগে যেমন ওয়েস্টার বা ঝিনুক মাশরুম এবং মিল্কি মাশরুম ৩৫-৪৫ দিন সময় লাগ।, প্যাডি স্ট্র  মাশরুম ১২-১৪ দিন , বোতাম মাশরুম ৫০-৬০ দিন লাগে। 

    ৩) ভারতে মাশরুম শহর কাকে বলা হয় ?

    হিমাচল প্রদেশের প্রবেশদ্বার সোলান শহরকে ভারতের মাশরুম শহর বলা হয়। এখানে ভারতের জাতীয় মাশরুম গবেষণা কেন্দ্র অবস্থিত।  

    ৪) মাশরুম চাষ লাভ জনক কেন ?

    মাশরুম চাষে খরচ এবং পরিশ্রম কম। উৎপাদন খরচের ২-৪ গুন্ বেশি লাভ করা যায়।

     

    ১৮) তথ্যসূত্র 

    • জাতীয় মাশরুম গবেষণা কেন্দ্র ভারত সরকার। 
    • ভারতীয় উদ্যানপালন গবেষণা কেন্দ্র ,বেঙ্গালোর  ভারত সরকার। 

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)