মিঠা জলের জলজ চাষ রাজ্য তথা দেশের অর্থনীতির উন্নতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এবং গ্রামীণ উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি পুষ্টি সমস্যা সমাধান করা। শোল মাছকে সবচেয়ে লাভজনক স্বাদু জলের মাছের প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় যা চাষ করা যায়। এরা "চারিডি" পরিবারের অন্তর্গত এবং এদেরকে সাপের মাথার মাছও বলা হয়। শোল দেশীয় বায়ু নিঃশ্বাস নেওয়া মাছের মধ্যে একটি; শোল মাথায় একটি সুপাররাকিয়াল আনুষঙ্গিক শ্বাসযন্ত্রের অঙ্গ রয়েছে। এমনকি এটি কম দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রায়ও বেঁচে থাকতে পারে।
শোল মাছ ভারতের জনপ্রিয় মিষ্টি জলের এবং সুস্বাদু মাছগুলির মধ্যে একটি।বিশাল গ্রামীণ দরিদ্রদের,বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদানের বিপুল সম্ভাবনা আছে অর্থনৈতিকভাবে শীর্ষস্থানীয় শোল মাছ চাষে এবং এটি ঝুঁকিহীন নিরাপদ চাষ। থাইল্যান্ড, তাইওয়ানে দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিকভাবে শোল চাষ করা হচ্ছে এবং ফিলিপাইনে। কিন্তু ভারতের সব রাজ্যের মাছ চাষিরা শোল চাষের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নন চাহিদার সাথে শোলের প্রজনন, খাদ্য প্রয়োগ এবং চাষ কৌশল নিয়ে ।
এটি ভারতের তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, হরিয়ানাএবং বিহার এবং উত্তর পূর্ব অঞ্চলের মতো অনেক রাজ্যের লোকেরা অন্যান্য মাছের চেয়ে শোল পছন্দ করে এবং বাংলাদেশেও জনপ্রিয় একটি মাছ । অন্ধ্রপ্রদেশ হল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাছ চাষ অঞ্চল যেখানে ০.৮ মিলিয়ন হেক্টর অভ্যন্তরীণ জলাশয় বার্ষিক ১.২৪ মেট্রিক টন উৎপাদন করে।
১) শোল মাছ পরিচিতি :-
শোল আফ্রিকা ,উত্তর আমেরিকা ,দক্ষিণ চীন ,এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত এবং উচ্চ মূল্যের পছন্দের মাছ। শোল মাছ সকলের কাছে অতিপরিচিত মিষ্টি জলের একটি সুস্বাদু পুষ্টিগুণ সপূর্ণ মাছ। শোল চান্নিদি পরিবারের স্ট্রিয়াটা প্রজাতির চান্নি জেনাস মাছ। শোল মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম চান্নিদি স্ট্রিয়াটা। এটি সাধারণত মিষ্টি জলের খাল ,বিল ,পুকুর ,নদী,নালা ধান ক্ষেতের মধ্যে থাকতে দেখা যায়।
শোল বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন নামে পরিচিত ,যেমন ইংলিশে মুরেল স্নেকহেড , হিন্দিতে মুরাই ,তেলুগুতে কোরামাণু ,কোরামাট্টা ,মালয়ালম তে কোরাভা, ভাটন,ভারাল , বাংলায় শোল ,ওরিয়াতে গদিশা,অসমীয়াতে হাল ,মারাঠিতে মারাল নাম পরিচিত। এরা উভচর ও জলজ জীবন্ত প্রাণীর লার্ভাদের জীবন্ত খেতে পছন্দ করে।ছোট অবস্থায় এরা শেওলা ,প্ল্যাঙ্কটন ও ছোটোজোয়ানকে খাদ্য হিসেবে খায়।
২) শোল মাছের বৈশিষ্ট্য :-
শোল মাছের শরীরের রং উপরে ধূসর সবুজ এবং পাশে হলুদ ফ্যাকাশে রঙের হয়ে থাকে। পাখনা গুলো মেরুদন্ড ছাড়া হাইলাইন থাকে। গাঢ় ছোপযুক্ত পৃষ্ঠীও ও পায়ুর পাখনা গুলি দীর্ঘ হয়। পুচ্ছ পাখনা গুলি আকৃতিতে গোলাকার হয়। জোড়া পাখনা গুলি ফ্যাকাশে হয়।
শোল দেখতে সাপের মতো বড়ো মাথাটি এবং মাথার পৃষ্ঠে বড়ো প্লেটে মতো অ্যাশ রয়েছে তাই একে সাপের মাথার মাছও বলা হয়ে থাকে । এটি ৩ ফুট লম্বা ও ৩ কেজি ওজন পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাশ ও প্রস্বাসের যন্ত্রাংশ আদ্র থাকে ততক্ষন পর্যন্ত শুকনায় বেঁচে থাকে। শোল পূর্বাভাসযুক্ত ও অত্যন্ত মাংসাশী একটি মাছ।
৩) শোল মাছের প্রজনন ও চাষ প্রযুক্তি :-
শোল মাছের প্রজনন ও চাষ দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
ক) স্বাভাবিক প্রজনন ও চাষ এবং খ) প্রনোদিত বা কৃত্রিম প্রজনন ও চাষ।
ক) শোল মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ও চাষ :-
শোল মাছের স্বাভাবিক প্রজননের উপযুক্ত সময় চৈত্র মাসের শুরু থেকে ভাদ্র মাসের শেষ পর্যন্ত ধরা হয়। এই সময়ের মধ্যে প্রজনন উপযুক্ত এক বছর এর অধিক বয়সের ৮০০ গ্রামের বেশি ওজনের মাছকে প্রজননের জন্যে বেছে নিলে ভালো হয়। এর জন্যে দুটি মাছ কে সংগ্রহ করতে হয় একটি পুরুষ ও মহিলা এবং দুটি ভিন্ন জায়গার মাছ হলে আরও ভালো হয়।
আরও দেখুন-শোল মাছের উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য
১) ব্রুড সংগ্রহ ও পরিচর্যা :-
- শোল মাছের পুরুষ ও মহিলা ব্রুড চেনার উপায় হিসাবে মাছের তল পেটে ছোট পাখনার উপর দিকে একটু ঘষে চাপ দিলে দেখা যাবে যে হলুদ লালা বা সাদা লালা রস বেরিয়ে আসছে। যে মাছের হলুদ লালা বেরিয়ে আসবে সেটি মহিলা এবং যেটির সাদা লালা রস বেরিয়ে আসবে সেটি পুরুষ শোল মাছ বলে গণ্য হয়।
- শোল মাছের স্বাভাবিক প্রজনন এর জন্যে ১ কাঠার বড়ো এবং এক মিটারের অধিক জল থাকে এমন পুকুর বেছে নেওয়া হয় স্বাভাবিক প্রজনন এবং পালনের জন্যে।
- পুকুরের চারিদিকে নেট দিয়ে ঘিরে দেওয়া অবশ্যিক। প্রজননের জন্যে ব্রুড মজুতের পূর্বে জলে কাঠা প্রতি ২ কেজি চুন দেওয়া হয় এবং ৩ দিন পর ১০ কেজি করে গোবর দেওয়া হয়। প্রজননের পরে রেনু গুলোকে অন্য কিছু খেয়ে না ফেলে তার জন্যে নেট দিয়ে ঘিরে দেওয়ার পর পুকুরের ভেতর সাপ,ব্যাঙ শামুক এবং তেলাপিয়া মাছের উপস্তিতি না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রেখে ব্রুড মজুত করতে হবে।
- একটি পুকুরে এক জোড়া ব্রুড মজুত রাখা হয় একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বেশি থাকলে অন্যরা আর একজনের বাচ্চা খেয়ে ফেলে।
- ব্রুড মজুত করার পর তাদের খাদ্য দিতে হবে বডি ওজনের ৩% হারে। খাদ্য হিসেবে শুকনো মাছ বা কাঁচা মাছ সেদ্ধ করে অথবা মুরগির অন্ত্র আধা সেদ্ধ করে দেওয়া হয় এতে রোগ বহন করে আনার সুযোগ থাকে না।
- খাদ্য পরিবেশন করতে হবে রোজ দু টাইম নির্দিষ্ট সময়ে একটি পাত্রে খাদ্য গুলোকে দলা করে পুকুরের ধারে জলের নিচে বসিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও লাইভ খাদ্য হিসাবে কার্প মাছের রেনু পোনা দেওয়া যেতে পারে।
আরও দেখুন
২) শোলের বাচ্চার পরিচর্যা ও চাষ :-
- একটি মাছ ৬০০০ এর বেশি বাচ্চা হয় এবং যত্ন নিলে ৮৫-৯০% মর্টালিটি ধরে ৫০০০ সুস্থ সবল মাছ পাওয়া যায় এবং সেগুলি ২ কাঠার অধিক বড় পুকুরে এক সাথে চাষ করা যায়। পরবর্তীতে বাছাই করে একই সাইজের মাছগুলি অন্যপুকুরে স্থানান্তর করে মজুত সংখ্যা কমিয়ে দিলে মাছের বৃদ্ধি ভালো পাওয়া যায়।
- মাছ বাচ্চা দেওয়ার পর ৭ দিন পর্যন্ত দুটি হাঁসের ডিম্ ভেঙে ভালো করে গুলিয়ে নিয়ে বাচ্চাদের উপর দেওয়া হয় এমনি অথবা দূরে থাকলে ইনজেকশন এর সিরিজ এর মাধ্যমে। লক্ষ্য রাখতে হবে ডিম্ এর দ্রবণ গুলি যেন বাচ্চাদের উপরে পড়ে এতে পোনা গুলি যেটুকু খাবে খাবে বাকি গুলো দিয়ে বাচ্চাদের পুষ্টিকর স্নান হয়ে যাবে।
- পোনা গুলির বয়স ৭ দিন হলে পিঁপড়ের ডিম্ খাদ্য হিসাবে দেওয়া যেতে পারে অথবা শুটকি বা কাঁচা ছোট মাছ বয়েল করে কাটা ও জল ছাড়িয়ে দলা বানিয়ে পাত্রে রেখে নির্দিষ্ট জায়গায় পরিবেশন করা হয়। এভাবেই নিয়মিত খাদ্য দিতে হবে।
- মুরগির অন্ত্র বয়েল করে দেওয়া যেতে পারে। এতে 70% প্রোটিন থাকে তাই মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয় কিন্ত সে ক্ষেত্রে ১ মাস পর ৫০% জল কমিয়ে পুনরায় জল দেওয়া আবশ্যক।
- মাস পর পোনাগুলি অন্যত্র সরানো হয়। তবে দেখা গেছে পোনা গুলি বাবা মায়ের সাথে থাকলে ভালো থাকে তাই তাদের সেখান থেকে না সরিয়ে সেখানেই লালন করা ভালো মা বাবা পোনা গুলোর প্রতিপালন ভালো করে। পোনার ওজন ১০০ গ্রাম হলে তখন বাচ্চাদের থেকে বাবা মা কে আলাদা করলে ভালো হয় তখন মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্যে অন্য পুকুরে কিছু মাছ স্থানান্তর করলে ভালো হয়।
- লালনের সময় ৩ মাস পর থেকে পুকুরে মাসে একবার ৩ ফুট জলের গভীরতায় কাঠা প্রতি ২০০ করে চুন ও ২০০ গ্রাম লবন প্রয়োগ করা হয় এতে রোগের সম্ভাবনা কম থাকে ও জল পরিশোধিত থাকে।
- সঠিক ভাবে যত্ন ও খাদ্য প্রয়োগ করলে বছরে ৯০০ গ্রাম - ১ কেজি ওজনে মাছ পাওয়া যায় এবং বাজারে পাইকারি ৪০০ টাকা কেজি দামে বিক্রয় হয়।
খ) শোলের কৃত্রিম বা প্রনোদিত প্রজনন ও চাষ :-
শোল মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি অন্যান্য মাছের থেকে আলাদা। এই মাছের প্রজননের ক্ষেত্রে মা বাবা দুজনেরই প্রয়োজন হয় লার্ভা উৎপাদন থেকে শুরু করে নার্সিং পর্যন্ত।
শোলের স্পন গুণমান বজায় রাখার জন্যে সঠিক খাদ্য প্রয়োগ অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন যুক্ত খাওয়ার পরিবেশন করতে হয়। এই ক্ষেত্রে শোল মাছকে পুকুর এবং পাকা ট্যাঙ্কে দুটি ভাবেই চাষ করা যায় কিন্তু পুকুরে স্বাভাবিক চাষের তুলনায় মর্টালিটি% বেশি থাকে। তবে সমস্তটাই নির্ভর করে মাছ পালকের যথার্থ জ্ঞান এবং প্রযত্নের উপর।
১) প্রনোদিত প্রজনন এবং ডিম্ উৎপাদন :-
প্রনোদিত প্রজননের জন্যে একটি আয়তাকার আকৃতির ৬ মিটার লম্বা ৫ মিটার চওড়া ও ১.৫ মিটার গভীরতার ট্যাঙ্কে নিচে ১০ ইঞ্চি মাটি রেখে ৩ ফুট জল দিয়ে ব্রুড মজুত করা হয়।
নরম এবং ফোলা পেটের মহিলারা প্রজননের জন্য উপযুক্ত। তবে ডিম ফোটার জন্য পেটে মৃদু চাপ দিলে তা প্রাথমিক পরিপক্কতা পরীক্ষা করতে পারে। পুরুষদের যৌনাঙ্গের প্যাপিলার বাহ্যিক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করা হয় কারণ তারা চাপে গলিত হয় না। প্রাকৃতিক (পিটুইটারি, হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন) বা সিন্থেটিক (ওভাপ্রিম, ওভাটাইড, ওভাসিস ইত্যাদি) হরমোন ইন্ট্রামাসকুলারভাবে ইনজেকশনের মাধ্যমে শোল গুলিকে স্পন করতে প্ররোচিত করা হয়। সিন্থেটিক হরমোন 0.5 মিলি/কেজি একক ডোজে সুপারিশ করা হয়।
প্রতিটি প্রজনন সেটে একজন মহিলা এবং দুটি পুরুষ থাকে। অবিলম্বে প্রতিটি ইনজেকশন পরে প্রজনন সেটটি একটি ৬ মিটার লম্বা ৫ মিটার চওড়া ও ১.৫ মিটার গভীরতার প্রজনন ট্যাঙ্কে নিচে ১০ ইঞ্চি মাটি রেখে ৩ ফুট জল দিয়ে ব্রুড মজুত করা হয়। লুকানোর উদ্দেশ্যে প্রজনন ট্যাঙ্কে জলজ আগাছা (যেমন জলের হাইসিন্থ) প্রবেশ করানো হয়।
হরমোন ইনজেকশনের ৬-১০ ঘন্টা পরে স্পনিং কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়। ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু সম্পূর্ণ বের না হওয়া পর্যন্ত (২৪-৩০ ঘন্টা) প্রেমের আচরণ অব্যাহত থাকে। নিষিক্তকরণ হয়ে বের হয় এবং নিষিক্ত ডিম সাধারণত ভাসমান হয়। প্রায় ৬-১৪ সেন্টিমিটার ব্যাসের একটি ডিমের ভর ৫,০০০-১০,০০০ ডিম থাকে (ব্যাস ১.২ মিমি ১.৫ মিমি)। নিষেকের রেঞ্জের হার ৭০-৯০% এর মধ্যে। নিষিক্ত হওয়ার ২৪-৩০ ঘন্টা পরে হ্যাচিং হয় এবং হ্যাচলিংস (২.৮ মিমি -দৈর্ঘ্যে ৩.২ মিমি) পিতামাতার দ্বারা বিশেষ করে পুরুষ পিতামাতার দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। একটি স্প্যানিং থেকে ৪০০০-৮০০০ টি হ্যাচলিং পাওয়া যায়।
২) লার্ভা পালন :-
কুসুমের থলিটি 3য় দিনে সম্পূর্ণরূপে শোষিত হয় এবং মুখ সম্পূর্ণরূপে গঠিত হয়। সেই সময়ে লার্ভা বিশেষ করে রোটিফারের মতো ছোট প্ল্যাঙ্কটনে বহির্মুখী খাবার শুরু করে। বাচ্চাদের এক বা দুই সপ্তাহের জন্য প্রজনন ট্যাঙ্কে পিতামাতার সাথে থাকতে দেওয়া হয়। বাবা মা থেকে নরখাদক এড়াতে রেনু দুই সপ্তাহ পর প্রজনন ট্যাঙ্ক থেকে সরানো হয়। শুটকি মাছ বা মাছের বর্জ্য বয়েল করে খাওয়ানো হয়। এক মাস পর রেনু (১৫ মিমি দৈর্ঘ্য) লাল বর্ণ ধারণ করে।
রেনু সিমেন্ট ট্যাঙ্কে নিচে মাটি রেখে (৩মি: x ১মি: x ১মি:) প্রতি বর্গ মিটারে ৫০০ টি এর স্টকিং ঘনত্ব সহ পালন করা হয়। যখনই বাচ্চাদের লালন-পালন করা হয়। বাচাদের মধ্যে ছোট বড়ো হলে নরখাদক এড়াতে তাদের সমান আকারের হওয়া উচিত। সিমেন্ট ট্যাঙ্কে রেনু বেঁচে থাকার ৬৫-৮০% হতে পারে। জলের গুণমান (২৯ ± ১০C, ০.০৬ -৬.৫২mgO2/ লি: H ৭.৫ - ৮.২) এবং খাওয়ানো হল বাচ্চাদের বেঁচে থাকার সিদ্ধান্তকারী কারণ। সিস্টেমের মাধ্যমে একটি প্রবাহ সর্বদা ভাল বেঁচে থাকার জন্য পছন্দ করা হয়। রেনু মাঝারি (৩মি: x ১মি: x ১মি:) বা বড় সিমেন্টের (৫মি: x ৪মি: x ২মি:) ট্যাঙ্কে ফিঙ্গারিং স্টেজ পর্যন্ত পালন করা হয়। রেনু ২ মাস পরে ৪ থেকে ৫ সেমি পর্যন্ত পৌঁছায় এবং বাণিজ্যিক চাষের জন্য সিমেন্টের ট্যাঙ্কগুলি থেকে আঙুলগুলি সংগ্রহ করা হয়।
আরও দেখুন - গলদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম
৩) শোল এর চারা তৈরী :-
আঙুলগুলি তৈরির পর দুটি ভাবে শোল চাষ করা যায়। পূর্বে আলোচিত স্বাভাবিক প্রজননে যেভাবে পুকুরে মাছ চাষ করা হয় সেই ভাবে অপরটি ফিঙ্গারলিং তৈরির কালচার অ্যাকুয়া ফার্ম হিসেবে প্রস্তুত করে আঙুলগুলি কে ৩- ৪ ইঞ্চি চারা তৈরী করে পুকুরে চাষের জন্যে স্থানান্তরিত বা বিক্রয় করা হয়।
আরও দেখুন পুকুরে মাছ চাষে প্রাকৃতিক খাদ্য এবং পরিপূরক খাদ্য তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতি
৪) অ্যাকুয়া কালচারে শোল চারা তৈরী :-
মাছ চাষি এবং বেকার যুবকদের মধ্যে বাণিজ্যিক শোল চাষকে জনপ্রিয় করতে, বিভিন্ন মাত্রার মাটির পুকুর বিশেষ করে (১৫ মি: x ৫মি: x ১মি:) কালচার অ্যাকুয়া ফার্ম হিসেবে প্রস্তুত করতে হবে। এই মাটির পুকুরগুলোর পাশে সিমেন্ট পেস্ট করা হয় এবং নীচে ১০ ইঞ্চি মাটি দিয়ে ভরা হয়। এগুলি সর্বাধিক 1 মিটার গভীরতার জন্য জলে ভরা থাকে। অক্টোবর মাসে এই পুকুরে সমান আকারের আঙ্গুলের আঙুল মাপের শোল গুলি (৪ সেমি-৫ সেমি; সাইজের ) প্রতি স্কয়ার মিটারে ১৫ টি হিসাবে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং সেদ্ধ মুরগির অন্ত্রে , শুকনো মাছ বা কাঁচা মাছ বয়েল করে মাছের ওজনের ১০% দিয়ে খাওয়ানো হয়।জলের গুণগতমান বজায় রাখতে সাপ্তাহিক আংশিক জল পরিবর্ত করে নতুন জল সরবরাহ করা হয়। ৩-৪ মাসে আঙ্গুল গুলি ১০০ গ্রাম হলে একবার জল সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা হয় এবং শোলগুলির রোগ এবং বিকৃতির জন্য পরিলক্ষিত হয়। সুস্থ মাছ গুলির নমুনা সংগ্রহের পর একই সাইজের মাছ বাছাই করে ভিন্ন ভিন্ন চাষের পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
৫) পুকুরে শোলের চাষ :-
- ২ কাঠার বড় ৫ ফুট এর অধিক জল থাকে এমন পুকুর ,ডোবা নির্বাচন করে নেট দিয়ে চারিদিক ঘিরে পুকুরে প্রতি কাঠার জন্যে ১ কেজি চুন দিয়ে ৩ দিন পর ১০ কেজি করে গোবর দিয়ে জলে খাদ্য মজুত বা প্ল্যাঙ্কটন হলে ১০০ গ্রামের চারা গুলি মজুত করা হয়।
- নিয়মিত খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে মাছের ওজনের ৩% হিসাবে সেদ্ধ মুরগির অন্ত্র(70% প্রোটিন) /শুকনো মাছ /কাঁচা মাছ(56% প্রোটিন) বয়েল করে জল ঝরিয়ে একটি পাত্রে বল বানিয়ে দিয়ে জলের নিচে বসিয়ে দিতে হবে রোজ নির্দিষ্ট সময়ে। অথবা শুরু থেকে বাজারে পাওয়া যায় গুণগতমানের ভাসমান মাছের খাদ্য খাওয়াতে পারে।
- প্রতি মাসে একবার কাঠা প্রতি ২০০ গ্রাম লবন এবং ২০০ গ্রাম চুন দিয়ে তার পর ৪ কেজি গোবর দেওয়া হয় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। এতে পুকুরে প্রাণী কোন মজুত হয় এবং মাছের ক্ষত হওয়ার সুযোগ কমে যায়। (বিশেষ করে শীতের সময় প্রয়োগ আবশ্যিক হয় )
- এই ভাবে ৮ মাস কালচার পিরিয়ডের পরে ৯০-৯৫% বেঁচে থাকার সাথে সর্বাধিক 800-900 গ্রাম ওজনে পৌঁছায়। একজন বেকার যুবক বাণিজ্যিক শোল মাছ শুরু করে বছরে 50,000/- টাকার উর্ধে আয় করতে পারে। তাদের জমি ও জলের সম্পদ না থাকলে তারা সমবায় গ্রুপ গঠন করে তাদের এলাকার অবহেলিত জলাশয়গুলোকে কাজে লাগাতে পারে।
তথ্যসূত্র
- জাতীয় মৎস উন্নয়ণ বোর্ড ভারত সরকার।
- স্বাভাবিক প্রজনন এবং চাষ পদ্ধতি ( জাকির হোসেন অর্থনীতিতে স্নাকোত্তর প্রগতিশীল মৎস চাষী , সাতক্ষীরা ,বাংলাদেশ )
FAQ (প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর )
১) শোল মাছের উপকারিতা কি কি ?
শোল মাছে ভিটামিন এ , ভিটামিন ডি,এমিনো এসিড ,ছাই , ক্যালোরিস,খনিজ পদার্থ ইত্যাদি পাওয়া যায়। শোল মাছের চামড়ার তেল এবং খাদ্য দুটোই কাজে লাগে। ক্ষত শুকিয়ে পুনরায় চামড়া জুড়ে যায় আগের মতো। অসুস্থতার পরে দুর্বল শরীরে এই মাছ সেবন করলে পুনরায় শক্তি সঞ্চয় হয় দ্রুত। বাতের ব্যাথা ও হার্টের রোগীদের জন্যে উপকার পাওয়া যায়। গর্ভ মহিলাদের বাচ্চা প্রসবের পর শোল মাছ সেই ক্ষত শুকোতে কাজে লাগে।
২) শোল মাছ কোন সময়ে বাচ্চা দেয় ?
শোল মাছ চৈত্রের শুরু থেকে ভাদ্র মাসের শেষ পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে বাচ্চা দিয়ে থাকে।
৩) শোল মাছের প্রধান খাবার কি ?
শোল মাছ একটি নরখাদক মাছ। মাংসাশী খাদ্য বেশি পছন্দ করে। মুরগি সেদ্ধ। শুকনো মাছ বা কাঁচা মাছ সেদ্ধ এবং জলজ পোকামাকড় শোল মাছের প্রধান খাদ্য।
৪) শোল মাছ পুরুষ /মহিলা চেনার উপায় কি ?
প্রাপ্ত বয়স্ক শোল মাছের তল পেটে হাত দিয়ে টিসু বা সুতির কাপড় দিয়ে মুছে হালকা ঘষলে হলুদ ও সাদা লালা রস বেরিয়ে আসে। হলুদ লালা রস বের হলে মহিলা এবং সাদা রস বের হলে পুরুষ সেটি বোঝা যায়।
আরও দেখুন
- কার্প মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতি ও পরিচর্যা
- কার্প ফিশ/মাছ ফ্যাটেনিং কৌশল
- পুকুরে মাছ ভাসার সম্ভাব্য কারন কি? এবং করনীয় কি ?
- পাবদা মাছের চাষ ও প্রজনন
- মুক্তা চাষ পদ্ধতি । সরকারিভাবে মুক্তা চাষের প্রশিক্ষণের জন্যে আবেদন-
- মাছ চাষে পুকুরে চুন প্রয়োগের সঠিক পদ্ধতি ? কোন চুন কিভাবে কখন কতটা ব্যাবহার করলে মাছের ওজন ভাল হবে?
- পুকুরের জল বাদামি রং ,সবুজ রং ,দুর্গন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি -
- মাছ ও হাঁসের যৌথ খামার তৈরী পদ্ধতি
- পুকুরে মাছ চাষে প্রাকৃতিক খাদ্য এবং পরিপূরক খাদ্য তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতি