মাছ সংরক্ষণ কৌশল

Didibhai Agrofarm
0

 

এটা সবচেয়ে আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মাছের নাড়ীভুঁড়ি বাদ দিয়ে পরিস্কার জলে ধুয়ে লবণ মাখানো হয়। এরপর জলে কম তাপমাত্রায় মাছকে অল্প পরিমাণে সিদ্ধ করা হয়। এরপর জল থেকে মাছ তুলে একটি পাত্রে রেখে জল ঝরিয়ে নেওয়া হয় এবং টিনের কৌটোয় মাছ ভর্তি করা হয় ।

মাছ মরে যাওয়ার কিছক্ষণের মধ্যেই তাদের দেহের কোষের মধ্যে থাকা উৎসেচক ও বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া কোষকে নষ্ট করতে শুরু করে। এছাড়া কোষে অভিস্রাবণ প্রক্রিয়ায় জল ঢুকে পড়ে। এইসব মিলে মাছের শরীরে পচন শুরু হয়। ব্যবসার প্রয়োজনে বা বাড়িতে খাদ্য গ্রহণের জন্যে মাছকে খাদ্য উপযোগী করে রাখার প্রয়োজনীয়তার কারণে জল থেকে তোলার পর নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে হয -

    ১) বরফ দিয়ে সংরক্ষণ :-

     হালকা কাঠের বাক্সে বরফ ও মাছ স্তরে স্তরে সাজিয়ে পাঠান হয়। বরফ ও মাছের অনুপাত থাকে ১ঃ ১। এই ভাবে ৩-৪ দিন মাছ ভালো থাকে। মাঝে মাঝে বরফ পাল্টে দিতে হয়। বরফ দেওয়ার ফলে জীবাণু ও উৎসেচকের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ০.০৫ শতাংশ থেকে ০.১ শতাংশ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট বরফের জলের সঙ্গে মিশ্রিত করলে সহজে ক্রিয়াশীল হতে পারে না। এছাড়া নিকটবর্তী স্থানে পরিবহণের ক্ষেত্রে মেশিনে প্রস্তুত গুঁড়ো বরফ ভালো কাজ দেয়। আবার শুষ্ক বরফ, যা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস জমিয়ে তৈরী হয় - তাও মাছ সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়। শুষ্ক বরফ পরিমাণেও অনেক কম লাগে।

    ২) কোল্ড স্টোরেজ সংরক্ষণ :-

     কোল্ড স্টোরেজে মাছকে প্রায় শূন্য ডিগ্রী তাপমাত্রার কাছে সংরক্ষণ করা হয়। বাড়তি মাছ সাময়িকভাবে কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা যায়। তবে মাছ বরফে সংরক্ষণ করলে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে জলে জীবাণুর সংক্রমণ না থাকে এবং বরফ গলে জল হলে তৎক্ষণাৎ বরফ পাল্টে দিতে হবে।

    ৩) ফ্রিজিং :-

     ডিপ ফ্রিজের মধ্যে মাছ রাখলে মাছকে দীর্ঘদিন অবিকৃত অবস্থায় রাখা যায়। এই ডিপ ফ্রিজের মধ্যে মাছ খুব কম(-18°C থেকে -32°C) তাপমাত্রায় থাকে ফলে মাছের কোষের মধ্যে থাকা জল জমে বরফ হয়ে যায় এবং মাছের পচন হয় না।

    আরও দেখুন- শোল মাছের উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য

    ৪) শুকনো মাছ :-

     সাধারণতঃ সামুদ্রিক মাছ শুকনো করে বিক্রি করা হয়। শুকনো মাছের সংরক্ষণের নীতি হল মাছ থেকে জলীয় অংশ সূর্যের তাপে বার করে দেওয়া। মাছ সূর্য কিরণে শুকাতে ৪ - ৫ দিন সময় লাগে। মাছকে ভালোভাবে শুকনো করার পদ্ধতি হল -

    ক) প্রথমে মাছ ভাল করে জলে ধুয়ে নিতে হবে। 

    খ) মাছের নাড়ীভুঁড়ি কেটে ফেলে দিয়ে পুনরায় জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। 

    গ) মাছের ওজনের ৫ শতাংশ হারে লবণ মাখিয়ে নিতে হবে যাতে মাছের দেহ থেকে কিছু জল বেরিয়ে যায়। 

    ঘ) এরপর মাছকে সূর্যকিরণে শুকানোর জন্য বাঁশের খুঁটিতে তিন চারদিন ঝুলিয়ে রাখতে হবে। 

    ঙ) এরপর মেঝে বা চাটাইয়ের উপর মাছের বাকি শুষ্ক করণের কাজ শেষ করা হয়।

    ৫) কলম্বো পদ্ধতি :-

     দক্ষিণ ভারতে কলম্বো পদ্ধতিতে বড় বড় পিপাতে মাছের সঙ্গে লবণ, হলুদ গুঁড়ো ও তেঁতুল মিশিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।

    আরও দেখুন- মুক্তা চাষ পদ্ধতি । সরকারিভাবে মুক্তা চাষের প্রশিক্ষণের জন্যে আবেদন-

    ৬) ধোঁয়া দিয়ে সংরক্ষণ :-

     ধোঁয়া দিয়ে সংরক্ষণের প্রথা প্রায় উঠে গেছে। এই পদ্ধতিতে মাছকে ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে পেট কেটে নাড়ীভুঁড়ি বাদ দিয়ে লবণ জলে ডুবিয়ে রৌদ্রে রাখা হয়। এরপর জল ঝরে গেলে ইঁটের তৈরী উনানের উপর চিমনীর মধ্যে ছিদ্র করা তাকে মাছগুলি রেখে কাঠের আগুনের ধোঁয়ায় ৪ - ৫ ঘন্টা রাখলে মাছ শুকিয়ে যায়।

    ৭) টিনের কৌটায় সংরক্ষণ বা ক্যানিং :-

     এটা সবচেয়ে আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মাছের নাড়ীভুঁড়ি বাদ দিয়ে পরিস্কার জলে ধুয়ে লবণ মাখানো হয়। এরপর জলে কম তাপমাত্রায় মাছকে অল্প পরিমাণে সিদ্ধ করা হয়। এরপর জল থেকে মাছ তুলে একটি পাত্রে রেখে জল ঝরিয়ে নেওয়া হয় এবং টিনের কৌটোয় মাছ ভর্তি করা হয় । কৌটোর মধ্যে টমেটোর রস, লবণ জল, মশলা ইত্যাদি দিয়ে উত্তাপের সাহায্যে টিনের হাওয়া বের করে কৌটো ‘সিল' করে উত্তপ্ত করা হয়। গরম কৌটো ঠান্ডা জলে ফেলে দ্রুত ঠান্ডা করা হয়। এইভাবে সংরক্ষিত মাছ দীর্ঘদিন অবিকৃত অবস্থায় থাকে।

    তথ্য সূত্র -

    মৎস বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ সরকার। 

    আরও দেখুন- 

    FAQ

    ১। মাছ সংরক্ষণের কয়টি উপায়ে করা যায় এবং কি কি ?

    মাছ সংরক্ষণ আদি থেকে এখন পর্যন্ত সাধারণত ৭ টি পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। ধুয়া পদ্ধতি ,শুকনো পদ্ধতি ,কলম্বো পদ্ধতি ,বরফ পদ্ধতি ,কোল্ড স্টোরেজ পদ্ধতি ,ফ্রিজিং পদ্ধতি এবং টিনের কোটায় সংরক্ষণ বা ক্যানিং পদ্ধতি। 

    ২। শুটকি  মাছ কিভাবে তৈরী করা হয় ?

    শুটকি বা শুকনো মাছ তৈরী করতে ৪-৫ দিন সময় লাগে। প্রথমে মাছের নাড়িভুড়ি বের করে ধুয়ে নিয়ে মোট মাছের ওজনের ৫% লবন মাখিয়ে বাঁশে ঝুলিয়ে ৪ দিন শুকনো হয় এরপর মেঝে বা চাটাইয়ের উপর মাছের বাকি শুষ্ক করণের কাজ শেষ করা হয়।

    ৩। ফ্রিজে মাছ কিভাবে সংরক্ষণ হয় ?

    ডিপ ফ্রিজের মধ্যে মাছ খুব কম(-18°C থেকে -32°C) তাপমাত্রায় থাকে ফলে মাছের কোষের মধ্যে থাকা জল জমে বরফ হয়ে যায় এবং মাছের পচন হয় না।

    আরও দেখুন

  • কার্প মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতি ও পরিচর্যা
  • পুকুরে মাছ ভাসার সম্ভাব্য কারন কি? এবং করনীয় কি ?
  • কিভাবে বায়োফ্লক মাছ চাষ হয় ? বায়োফ্লক মাছ চাষ সরকরি ঋণের আবেদন পদ্ধতি। বায়োফ্লক মাছ চাষে সরকার ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে।
  • মাছ চাষে পুকুরে চুন প্রয়োগের সঠিক পদ্ধতি ? কোন চুন কিভাবে কখন কতটা ব্যাবহার করলে মাছের ওজন ভাল হবে?
  • পুকুরের জল বাদামি রং ,সবুজ রং ,দুর্গন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি -
  • মিশ্র মাছ চাষে পুকুরে পোনা মজুত আদর্শ পদ্ধতি এবং নিয়মিত খাদ্য দেওয়ার পদ্ধতি এবং পরিমান ۔
  • পুকুরে মাছ চাষে প্রাকৃতিক খাদ্য এবং পরিপূরক খাদ্য তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতি
  • শোল মাছের চাষ ও প্রজনন প্রযুক্তি -পুকুরে/ট্যাঙ্কে

  • একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)