পাবদা মাছের চাষ ও প্রজনন

Didibhai Agrofarm
0

 

পাবদা মাছ  ২৮-৩২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড জলের তাপমাত্রা, জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন ৪-৫ মিলি গ্রাম/লিটার এবং জলের ক্ষারকীয়তা ১২০-১৫০মিলি গ্রাম/লিটার থাকা জলজ পরিবেশে থাকতে স্বাছন্দ অনুভব করে।

পাবদা একটি উচ্চমূল্যযুক্ত, অত্যন্ত সুস্বাদু জনপ্রিয় মিষ্টি জলের মাছ। মৎস্যপ্রিয় বাঙালীর কাছে এই মাছটির অতুলনীয় স্বাদ-গন্ধ এবং স্বল্প কাঁটাযুক্ত হওয়ায় বিশেষভাবে সমাদৃত ও বাজারে এর চাহিদা অপরিসীম। পূর্বে খাল-বিল, নদী-নালা প্রভৃতি মিষ্টি জলের বড় বড় জলাশায়ে সহজলভ্য হলেও বর্তমানে কালের বিবর্তনে জলদূষণ, কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, জলাভূমি সংকোচন অর্থাৎ উপযুক্ত খাদ্য ও প্ৰজনন স্থান সংকুলান ইত্যাদি বিবিধ সামাজিক ব্যাধির প্রভাবে প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে এই দেশীয় মাছটি আজ বিলুপ্তির পথে হলেও বর্তমান সময়ে এই উচ্চ মূল্যের মাছ চাষে মৎস দপ্তর গুলি উৎসাহ প্রদান করছে তাই যুব সমাজ এগিয়ে আসছে এবং সফলভাবে পুকুরে ট্যাঙ্কে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাছ চাষ করছে। 

পাবদা মাছ  ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ,প্রোটিন ,ভিটামিন B12, আয়রন ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি ভালো উৎস। 100 গ্রাম পাবদা মাছে  প্রায় 19 গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা ভিটামিন B12, আয়রন এবং জিঙ্ক সমৃদ্ধ। এটি পেশী টিস্যু তৈরি ও মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয়।

    ১)  পাবদা মাছের পরিচিতি :-

     পাবদা মাছ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশেষ করে ভারত,বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের নদী, পুকুর এবং হ্রদের মতো মিষ্টি জলে পাওয়া যায়। পাবদা মাছের বিজ্ঞান সম্মত নাম ওমপোক পাবদা। এটি অ্যাক্টিনোপটেরিজি শ্রেণীর  সিলুরিডি পরিবারের ওমপক জেনাস এবং পাবদা প্রজাতির মাছ। 

    পাবদা মাছ চেপ্টা মাথা ও লম্বাটে শরীরের একটু সরু মাছ যা সর্বোচ্চ 30 সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে এবং গড়  আকার প্রায় 1 সেন্টিমিটার হয়ে থাকে ও গড় ওজন ৭০-৮০ গ্রাম হলে বাজারের উপযোগী হয়ে থাকে। 

    পাবদা মাছ ক্যাটফিশ প্রজাতির মতোই একটি  নিশাচর প্রজাতি  এবং রাতে সবচেয়ে সক্রিয় থাকে এবং খাদ্য গ্রহণ করে । 

    এটি একটি শক্ত মাছের প্রজাতি যা সহজেই পুকুর বা ট্যাঙ্কে বড় করা যায়। মাছটি দ্রুত বৃদ্ধির হার এবং উচ্চ প্রজনন হারের জন্য পরিচিত। এঁরা একসাথে ৪০০০ বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে।

     বর্ষাকালে কোন নদীর সংস্পর্শে আছে এমন খাল-বিল বা মিষ্ট জলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক জলাশয় পাবদা মাছের স্বাভাবিক বাসস্থান। এই জলাশয়গুলিতে ভাসমান ও নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ এদের লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে। আবার এই জলজ উদ্ভিদগুলি পোকামাকড়ের আশ্রয়স্থল। এই সমস্ত পোকা পাবদা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য।

    পাবদা মাছ  ২৮-৩২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড জলের তাপমাত্রা, জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন ৪-৫ মিলি গ্রাম/লিটার এবং জলের ক্ষারকীয়তা ১২০-১৫০মিলি গ্রাম/লিটার থাকা জলজ পরিবেশে থাকতে স্বাছন্দ অনুভব করে। 

    আরও দেখুন- পুকুরে সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি পদ্ধতি ,, জু প্লাংকটন,ফাইটো প্লাংকটন তৈরি পদ্ধতি ,

    ২) পাবদা মাছ প্রজনন :-

    পাবদা প্রজনন স্বাভাবিক ও কৃত্রিম বা প্রনোদিত দুটি ভাবে করা হয়ে থাকে। 

    ক) পাবদা মাছের স্বাভাবিক প্রজনন -

    পাবদা মাছের স্বাভাবিক প্রজননের জন্যে পুকুর প্রস্তুতি ,প্রজননক্ষম মাছ সংগ্রহ ও তাদের পরিচর্যা এবং প্রজননক্ষম মাছের পরিচর্যা ও প্রতিপালন। 

    ১) পুকুর প্রস্তুতির :-

    • প্রজননের জন্যে পাবদা মাছ সংগ্রহ করে মজুতের পূর্বে পুকুরকে বিভিন্ন ধাপে  যথা পাড় মেরামতি, পাঁক পরিস্কার, আগাছা ও আমাছা নিধন প্রভৃতি যথাযথ হওয়ার পর কাঠা প্রতি ২ কেজি চুন দেওয়ার ৩-৪ দিন পর ৫০ কেজি গোবর দিলে পুকুর উর্বর হয়। পুকুরে কচুরীপানা জাতীয় জলজ উদ্ভিদ ও ধারের দিকে কলমী শাক লাগালে পাবদা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব হয় না।
    • পুকুরের গভীরতা ১-১.৫ মিটার ও ২-৫ কাঠা মাপের হওয়া বাঞ্ছনীয়। পুকুরে বিভিন্ন রাসায়নিক সার যেমন- ইউরিয়া, সুপার ফসফেট ইত্যাদি সটিক মাত্রায় জল - মাটির গুণাগুণের উপর নির্ভর করে মৎস্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।
    •  মজুত করা মাছের বাড় ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রাথমিক ভাবে ১৫ দিন এবং পরের দিকে প্রয়োজন অনুযায়ী জাল টানতে হবে।
    •  মুরগীর সিদ্ধ করা নাড়িভুঁড়ি মোট দৈহিক গড় ওজনের ৫-১০ শতাংশ হারে দিলে পরিপক্কতা তাড়াতাড়ি আসে। সেক্ষেত্রে ৫০-১০০ শতাংশ জল পরিবর্তন বাঞ্ছনীয়।
    • এছাড়াও  বাজারে গুণগত মানের ভাসমান ফিশ ফিড পাওয়া যায় সেগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে পাবদার প্রোটিন খাদ্য হিসেবে । 

    ২) প্রজননক্ষম মাছ সংগ্রহ ও তাদের পরিচর্যা :-

     মোটামুটি ১১-১২ মাস বয়সে পাবদা মাছ প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে। এই সময়ের মাছের দৈহিক গড় ওজন ৩-০-৫০ গ্রাম হয় এবং দেখা গেছে যে পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছের আগে পরিণত হয়ে ওঠে। এরা সাধারণতঃ বছরে একবার মাত্র ডিম পাড়ে। প্রজননের সময় বর্ষাকাল (জুন-আগষ্ট) এবং জুলাই মাসে সর্বোচ্চ।

    প্রজনন উপযোগী পুরুষ-স্ত্রী পরিণত ও পরিপকস্ত্রী মাছের উদর প্রজনন ঋতুতে স্ফীত, নরম ও ডিমভর্তি থাকে ঈষৎচাপ দিলেই ডিম বেরিয়ে আসে। রেচন-জনন ছিদ্রটি লাল ফোলা গোলাকার হয়ে থাকে। তুলনায় পুরুষ মাছের উদর চাপা ও রেচন-জনন ছিদ্রটি লম্বাটে আকৃতির হয়ে থাকে। ২) স্ত্রী মাছের বক্ষ পাখনার কাঁটা পুরষের তুলনায় কম খাঁজকাটা থাকে। ৩) এছাড়া প্রজননক্ষম পুরুষ মাছটি স্ত্রী মাছটির তুলনায় আকারে ছোট হয়ে থাকে।

    ৩) প্রজননক্ষম মাছের পরিচর্যা ও প্রতিপালন :-

     গুণগত মানসম্পন্ন চারা উৎপাদনের জন্য প্রজনন ঋতুর ৪-৫ মাস আগে থেকেই ব্রুড মাছগুলিকে বিশেষভাবে লালন - পালন করা উচিৎ। এ সময় খাবার হিসাবে ফিসমিল, চালের কুঁড়ো, গমের ভূষি সয়াবিন মিল, সরষের খোল, তিলের খোল, আটা ও ভিটামিন প্রিমিক্সের মিশ্রণ (৪০ভাগ চালের কুঁড়ো ৩০ভাগ সরষে খোল : ৩০ ভাগ ফিস মিল) মজুতকৃত মাছের মোট ওজনের ৩শতাংশ-৫শতাংশ হারে দৈনিক দুভাগে ভাগ করে দিতে হবে। উল্লেখ্য খাবারে ৩০-৩৫ শতাংশ প্রোটিন এবং ১শতাংশ ফ্যাট থাকা বিধেয়, যাতে মাছগুলিতে চর্বি না জমে, এতে ডিম উৎপাদন ক্ষমতা সঠিক থাকে।

     মজুত ঘনত্ব অধিক হলে শারীরিক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে এবং বৃদ্ধির হার ও কম হবে। দেখা গেছে প্রতি শতকে ৫০-৭০ গ্রাম ওজনের ৫০-৬০ সংখ্যক মাছ মজুত করা যেতে পারে। সুস্থ ও সবল পুরুষ ও স্ত্রী মাছ ১:১ অনুপাতে মজুত করতে হবে।

    খ) প্রণোদিত বা কৃত্রিম প্রজনন :-

    প্রনোদিত প্রজনন হল কত্ৰিম পদ্ধতিতে ঔষধের মাধ্যমে স্ত্রী মাছের ডিম্বাণু বা ডিম্ ও পুরুষ মাছের শুক্রাশয়ের নির্যাস বের করে দুটিকে মিশিয়ে  নিষেক করে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে রেনু ডিম্ উৎপাদন করা নিন্মের পদ্ধতি গুলি অনুসরণের মধ্য দিয়ে -

    ১) ওভাপ্রিম প্রয়োগমাত্রা

    স্ত্রী পাবদা মাছ ১.৫-২ মিলি / কেজি দৈহিক ওজন। 

    পুরুষ পাবদা মাছ ০.৫-১ মিলি / কেজি দৈহিক ওজন। 

    ২) পিট্যুইটারি গ্রন্থি নির্যাস প্রয়োগমাত্রা : স্ত্রী পাবদা মাছ ১৮ মিগ্রা/কেজি দৈহিক ওজন। 

    ৩) পুরুষ পাবদা মাছ ১২ মিগ্রা / কেজি দৈহিক ওজন

    সংখ্যায় স্ত্রী ও পুরুষ ১৪১ রাখতে হবে।

    ৪) ইনসুলিন সিরিঞ্জের সাহায্যে বক্ষ পাখনার ঠিক গোড়ায় ইঞ্জেকশন প্রয়োগকরলে সুফল মেলে। এছাড়া পৃষ্ঠপাখনার নিচে ৪৫ ডিগ্রী কোণে ও দেওয়া যেতে পারে। ইঞ্জেকশন প্রয়োগের সময় ভিজে কাপড় নিয়ে মাথা জড়িয়ে নিতে হয়।

    ৫) এই অবস্থা স্ত্রী ও পুরুষ মাছগুলিকে ছায়াযুক্ত ও জলজ উদ্ভিদ যক্ত চৌবাচ্চায় রাখতে হবে। উপর থেকে ফোয়ারার ব্যবস্থা করলে কৃত্রিম প্রজননে সাড়া মেলে।

    ৬) ৮-১০ ঘন্টা পর স্ত্রী মাছের পেটে আলতো চাপ দিলেই ডিম বেরিয়ে আসে যা পরিস্কার এনামেলের প্লাসটিক ট্রে তে তৎক্ষণাৎ সংগ্রহ করতে হবে এবং সাথে সাথেই পুরুষ মাছের পেট কেটে শুক্রাশয়ের নির্যাস ডিম গুলির উপর ফেলতে হবে। (শুক্রাশয়টিকে ছোট ছোট অংশে কেটে মশারির জালের সাহায্যে চেপে পুরো রস বের করতে হবে, বলা বাহুল্য পুরুষ মাছটিকে মেরে ফেলতে হয়)

    ৭) ০.৯ শতাংশ সাধারণ লবণের দ্রবণে ডিম ও শুক্রাশয়ের নির্যাস পাখির পালকের সাহায্যে ভালোভাবে মেশালে ডিমগুলির নিষেকের হার ভালো হয়। প্রায় ৩০ মিনিট পর সামান্য বিশুদ্ধ জল নিয়ে ধুয়ে হ্যাচারিতে (এ্যারেটর যুক্ত) হাপার মধ্যে বা শোলার সাহায্যে খানিক নিমজ্জিত ও ভাসমান প্লাস্টিক চালুনিতে (চালুনির উপর ১ ইঞ্চি জল রাখতে হবে) ডিমগুলি রেখে দিলে পরীক্ষায় দেখা গেছে ২৪ ঘন্টা পর চালুনির ছিদ্র দিয়ে হ্যাচলিং বেরিয়ে আসে। জলের প্রবাহ রাখতে হবে যাতে নোংরা জল বেরিয়ে যেতে পারে।

    ৮) সতর্কতা - মনে রাখতে হবে ৩দিন কুসুমথলি থাকলেও হ্যাচলিং এর ১ দিন বয়সেই মুখছিদ্র খুলে যায়। এরা স্বগোত্রভোজী, তাই ৩-৪ ঘণ্টা অন্তর অন্তর লার্ভার মোট ওজনের ২৫ শতাংশ হারে মিক্সিতে পেস্ট করা টিউবিফেক্স বা শুষ্ক রেশম গুটির গুঁড়ো দিনে দুভাগে দিতে হবে, মোটামুটি ১০-১২ দিন পর ১ ইঞ্চি সাইজ হলে নার্সারী বা আঁতুড় পুকুরে ছাড়তে হবে।

    ৩) পাবদা মাছের ডিমপোনা, ধানীপোনা ও চারাপোনার পরিচর্যা :-

    পাবদা মাছের প্রজননের পর ডিম্ পোনা গুলিকে ৩ টি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে পুকরের আয়তন ,প্রস্তুতি ও খাদ্য প্রয়োগ ও পরিচর্যার মধ্য দিয়ে বাজারজাত করার উপযোগী করে তুলা হয়। যথা -

    ক) নার্সারী পুকুরে পাবদা ডিমপোনা চাষ :-  

     ২ থেকে ৩ কাঠা আয়তনের নতুন জলের পুকুর পাবদা ডিমপোনা চাষের আদর্শ পুকুর বলে বিবেচিত হয় পুরোনো হলে পুরোনো মাছ নিধন করে নিতে হবে ।  পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রতি শতকে ২০ কেজি গোবর এবং ইউরিয়া ১০০ গ্রাম , সুপার ফসফেট ১০০ গ্রাম ,পটাশ ১০ গ্রাম প্রভৃতি সার জলের গুণাগুণ পরীক্ষার পর নির্দিষ্ট হারে দিনে পুকুরে দিলে জলে  প্ল্যাঙ্কটন আদর্শ মাত্রায় থাকবে অথবা নিকটবর্তী মৎস অফিসে যোগাযোগ করে সার প্রয়োগ নির্ধারণ করতে হবে। 

     সার প্রয়োগের ১৫ দিন খাদ্য মজুত পরীক্ষা করে প্রতি শতকে ৮-১০ মিলিমিটার আকারের ৫০০ থেকে ৬৫০ টি  ডিমপোনা মজুত করা যায়। 

     ১:১ হারে চালের কুঁড়ো ও শুটকি মাছের গুঁড়ো একত্রে মিশিয়ে মোট ওজনের ২০ শতাংশ হারে দিনে দুবার করে খাবার দিতে হবে। উল্লেখ্য, এরা রাতে খেতে পছন্দ করে, তাই রাতে খাদ্য প্রদানের হার বেশী হবে। ৭-৮ দিন পর জাল টেনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। ১৫ তম দিনে জাল টেনে ধানী পোনাগুলিকে সংগ্রহ করে পালন পুকুরে ছাড়তে হবে।  

    এছাড়াও  বাজারে গুণগত মানের ভাসমান ফিশ ডাস পাউডার  পাওয়া যায় সেগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে পাবদার প্রোটিন খাদ্য হিসেবে । 

    আরও দেখুন-  পুকুরে দেশি মাগুর মাছের চাষ

    খ) রেয়ারিং বা পালন পুকুরে পাবদা ধানী পোনা চাষ :-

     পাবদা মাছের রেয়ারিং বা পালন পুকুরের আয়তন ২-৫ কাঠা ও  বছরে ৭-৮ মাস জল থাকে এমন হলে ভালো হয়। পোনা মজুতের পূর্বে নার্সারি পুকুরের মতোই পুকুর প্রস্তুত করে নিতে হবে।  ১-২ সেমি আকারের ০.৬২ গ্রাম ওজনের ধানীপোনা প্রতি কাঠা পুকুরে  ৩০০-৪০০ সংখ্যক ছাড়া হয়। 

    প্রতিদিন মাছের মোট শরীরের ওজনের ১০ শতাংশ ১২ শতাংশ হারে দুবারে চালের গুঁড়ো, সরষে খোল, ফিস মিল এর মিশ্রণ (৪০:৩০:৩০) বা মুরগীর নাড়ি ভুঁড়ি ৩০ শতাংশ প্রোটিনযুক্ত খাবার। এর তিন থেকে চার মাস পর মাছের আকার ৫-৬ সেমি ও ওজন ৩-৫ গ্রাম হলে মজুত পুকুরে ছাড়তে হবে।

    বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করলে বাজারে গুণগত মানের ভাসমান ফিশ ফিড পাওয়া যায় সেগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে পাবদার প্রোটিন খাদ্য হিসেবে । 

    গ) পাবদা স্টকিং বা মজুত পুকুর :-

     আয়তন প্রায় সারা বছর জল থাকে ১-১.৫ মিটার গভীরতার ১০-১২ কাঠা বা তার বেশি পর্যন্ত হতে পারে। তবে পুকুর ছোট হলে চাষ সুবিধাজনক।

    মজুত ঘনত্ব  প্রতি কাঠা পুকুরে  ২০০-২৫০ সংখ্যক মজুত করলে ভালো হয়। (তবে এরিয়েটর লাগিয়ে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন ৪-৫ মিলি গ্রাম/লিটার এর উপরে রাখতে পারলে এর কয়েকগুন বেশি পোনা মজুত করা যায়)  

    পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রতি শতকে ২০ কেজি গোবর এবং ইউরিয়া ১০০ গ্রাম , সুপার ফসফেট ১০০ গ্রাম ,পটাশ ১০ গ্রাম প্রভৃতি সার জলের গুণাগুণ পরীক্ষার পর নির্দিষ্ট হারে দিনে পুকুরে দিলে জলে  প্ল্যাঙ্কটন আদর্শ মাত্রায় থাকবে 

     সম্পূরক খাদ্য হিসাবে মুরগীর সিদ্ধ নাড়ি ভুঁড়ি, সরষে খোল, ভুট্টা খোল, বা অল্প দামের সেদ্ধ করা মাছ, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের মিশ্রণ দিয়ে খাবারের মন্ড তৈরী করে সকালে ও সন্ধ্যায় ২:৩ অনুপাতে খাদ্য দেওয়া যেতে পারে। ৩৫ শতাংশ প্রোটিনযুক্ত খাদ্য মোট ওজনের ১০ শতাংশ হারে দিতে হবে। ১৫-২০ দিন অন্তর জাল টেনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

    বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করলে বাজারে গুণগত মানের ভাসমান ফিশ ফিড পাওয়া যায় সেগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে পাবদার প্রোটিন খাদ্য হিসেবে । 

    পুকুরে  প্রাকৃতিক খাদ্যের যোগান পর্যাপ্ত রাখার জন্য চুন, গোবর ও রাসায়নিক সার (যথা- কাঠা প্রতি ৪ কেজি চুন ৩দিন পর ২০-২৫ কেজি গোবর এবং ১৫ দিন অন্তর ৪ কেজি গোবর) জলের গুণাগুণের উপর নির্ভর করে প্রয়োগ করতে হবে।

    রোগ যেন না আসে তার জন্যে নিয়মিত ১ মাস অন্তর পটাসিয়াম পারমেঙ্গানেট ১ মিটার জলের গভীরতার জন্যে কাঠা প্রতি ৬০ গ্রাম ব্যবহার করতে হবে। কাঠাপ্রতি ১৫০ - ২০০ গ্রাম লবন ১ মাস অন্তর ও ৫০ গ্রাম মোলাসেস ব্যবহার করতে হবে এতে এমোনিয়ার আধিক্য কমবে এবং ক্ষত জনিত রোগের সৃষ্টি কম হবে। 

     এক বছরে মোটামুটি মাছের ওজন ৬০-৮০ গ্রাম হলে বাজার জাত করা যেতে পারে।

    আরও দেখুন  পুকুরের জল বাদামি রং ,সবুজ রং ,দুর্গন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি -

    তথ্য সূত্র -

    মৎস বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ সরকার। 

    FAQ (প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর)

    ১) পাবদা মাছ কোথায় পাওয়া যায়?

    পাবদা মাছ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশেষ করে ভারত,বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের নদী, পুকুর এবং হ্রদের সংস্পর্শে আছে এমন খাল-বিল বা মিষ্ট জলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক জলাশয় পাবদা মাছের স্বাভাবিক বাসস্থান। এই জলাশয়গুলিতে ভাসমান ও নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ এদের লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে। 
    ২) পাবদা মাছ কিভাবে চাষ করা যায়?  

    পাবদা মাছ সংগ্রহ করে ৫ থেকে ১০ কাঠা পুকুরে লালন করে স্বাভাবিক প্রজনন অথবা কৃত্রিম বা প্রনোদিত প্রজনন ঘটিয়ে ডিম্ থেকে রেনু ,ধানী, চারা উৎপাদন করে ২-৫ কাঠা আয়তনের পুকুরে অথবা প্লাস্টিক ,পাকা ট্যাঙ্কে ২৮-৩২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড জলের তাপমাত্রা, জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন ৪-৫ মিলি গ্রাম/লিটার এবং জলের ক্ষারকীয়তা ১২০-১৫০মিলি গ্রাম/লিটার থাকা জলজ পরিবেশে রেখে জলাশয়ের আয়তন সাপেক্ষে  নির্দিষ্ট পরিমানে পোনা মজুত করে প্রয়জনীয় প্রযুক্তির ব্যবহার করে চাষ করা হয়। 

    ৩) পাবদা মাছ কি সামুদ্রিক?

    পাবদা মাছ মূলত মিষ্টি জলের সুস্বাদু একটি মাছ। এটি মূলত মিষ্টি জলের নদী,হ্রদ ,খাল,বিল এর জলাশয়ে জন্মায়। সমুদ্রের জল লবনাক্ত তাই সমুদ্র পাবদা মাছের উপযুক্ত বাসস্থান নয়।


    আরও দেখুন

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)