কার্প মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতি ও পরিচর্যা পদ্ধতি

Didibhai Agrofarm
0

কার্প মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতি ও পরিচর্যা

রেনু  পোনা চাষ পদ্ধতি  ,ধানি পোনা পুকুর প্রস্তুতি ,খাদ্য প্রয়োগ ,পরিচর্যা  এবং  মিশ্র মাছ চাষ এর পুকুর প্রস্তুতি  ,খাদ্য তৈরী ও পরিচর্যা
 

কার্প মাছের পুকুর ৩ ধরণের হয়ে থাকে। আতুর পুকুর ,রেয়ারিং বা পালন পুকুর এবং  মজুত বা লালন পুকুর। গভীরতা এবং আয়তনে একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। আতুর পুকুর রেনু উৎপাদনের জন্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাই তার প্রস্তুতি আলাদা কিন্তু পালন ও লালন পুকুরের প্রস্তুতি ও পরিচর্যা প্রায় একই রকমের হয়ে থাকে। 

    ১. আতুর পুকুর -

    ডিম্ পোনা থেকে রেনু পোনা উৎপাদন করা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে শুরু থেকে নিয়মানুবর্তিতা পালন করে চাষ শুরু করা উচিত -

    ক.আতুর পুকুর  প্রস্তুতি

    •  পুকুরের  চারিদিক আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে গর্ত থাকলে তা বন্ধ করে দিতে হবে। পুকুরে ঢাল থাকা আবশ্যক ৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে। এতে মাছ তার প্রয়োজন অনুসারে জলে চলাচল ও রেস্ট করতে পারে। পুকুরের গভীরতা ৪ থেকে ৬ ফুট থাকলেই যথেষ্ট এবং জল জল ৩.৫ ফুটের উপরে থাকা আবশ্যক। 
    • পুকুরের অবাঞ্চিত মাছ তুলে ফেলতে হবে এবং ডিম্ ছাড়ার ১ দিন আগে পোকামাকড় সব মেরে ফেলতে হবে  অর্থাৎ জলে কিছু থাকবে না নইলে ডিম্ পোনা ছাড়লে সব খেয়ে ফেলতে পারে বা নষ্ট করে ফেলতে পারে। 
    •  পুকুরে মাছ তুলে ফেলার জন্যে যদি সেচ ব্যবস্থা থাকে তবে যতটা সম্ভব জল কমিয়ে ১ ফুট গভীরতাতে নিয়ে আসতে হবে। এর পর মাছ নিধনের জন্যে মহুয়া খৈল অথবা গ্যাস ট্যাবলেট অথবা ব্লিচিং পাউডার যে কোনো একটি  ব্যবহার করতে হবে পরিমান মতো। 
    • ১ ফুট গভীরতা জলে ১ শতক জায়গা জলের জন্যে ৩.৫০০ গ্রাম মহুয়া খৈল দিয়ে মাছ নিধন করা যেতে পারে এবং ৭ দিন পর শতকে ১-২ কেজি চুন দিয়ে নেমে ঘেটে দিয়ে ২ দিন পর প্রতি শতকে ১৫ কেজি শুকনো গোবর বা কম্পোস্ট ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।  মহুয়া খৈল ব্যবহারে জলে বিষাক্ততা তৈরী হয় সেটি ২১ দিনে কেটে যায়। 
    • যদি মহুয়া খৈল প্রয়োগ না করে গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড এর  যেমন ফসটক্সিন গ্যাস ট্যাবলেট ৩ গ্রাম ওজনের প্রতি শতকে  ১ ফুট জলের গভীরতা হলে ১ টি দিতে হয় এবং ৩ ফুট জলের গভীরতা হলে ৩ টি দিতে হয়। 
    • যদি ব্লিচিং ব্যবহার করা হয় মাছ নিধনের জন্যে তবে প্রতি শতকে ১  ফুট জলের গভীরতায় ৯০০ গ্রাম দিতে হবে এবং ব্লিচিং দিলে চুন প্রয়োগ করতে হবে না। ৭ দিন পর শতকে ১৫ কেজি গোবর ছড়িয়ে দিতে হবে এবং ১৫ দিনের মাথায় ডিম্ ছাড়ার জন্যে পুকুর রেডি।  
    •  পুকুরে ব্যাঙ এর উপদ্রব দেখা যায় তবে চারিদিকে কেরোসিন স্প্রে করা যেতে পারে বিঘা প্রতি ১ লিটার।
    • মহুয়া খৈল অথবা গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করলে ৭ দিন পর শতকে ১-২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে এবং জল ঘেটে দিতে হবে । তবে  ব্লিচিং দিলে চুন প্রয়োগ করতে হবে না। 
    • মহুয়া খৈল প্রয়োগ করলে প্রতি শতকে ১৫ কেজি কাঁচা গোবর এবং প্রয়োগ না করলে প্রতি শতকে ৩০ কেজি কাঁচা গোবর পুকুরে ছড়িয়ে দিতে হবে চুন প্রয়োগের পরের দিন। সার প্রয়োগ যথা যথা না করলে প্রাণী কোন তৈরী কম হবে এবং রেনু পোনার উৎপাদন ব্যাহত হবে। প্রাণী কোনার অধিক্যের উপর ডিম্ পোনা মজুত নির্ভর করে। গোবর সার প্রয়োগের ১৫ দিন পর ডিম্ পোনা ছাড়তে হবে। 
    • মাছ নিধনের পর পুকুরে জল কম থাকলে পাম্পসেট দিয়ে ৩.৫ ফুট জল দিতে হবে এবং ব্যবস্থা না থাকলে জল হলে তবেই ডিম্ ছাড়তে হবে।  জল কমে ডিম্ ছাড়লে জল গরম হয়ে ডিম্ পোনার মৃত্যু ঘটে। 
    • ডিম্ ছাড়ার ২৪ ঘন্টা আগে পুকুরে জলের উপর ভাসমান হাঁস পোকা ,কাটি পোকা ইত্যাদি  পোকা মেরে  ফেলার জন্যে ৩ ফুট জলের গভীরতায় প্রতি  শতকে ৮০ গ্রাম কাপড় কাঁচা সাবান গুঁড়ো গরম জলে দ্রবীভূত করে তার সাথে  ২.২০ গ্রাম সর্ষের তেল মিশিয়ে পুকুরে জলের উপরিভাগে ছড়িয়ে দিতে হবে । 
    • অথবা  সাইপার মেথ্রিন গ্রূপের সুপার কিলার ০.৮ এম.এল প্রতি শতকে ৩ ফুট জলের গভীরতায় দিতে হবে এবং ডিম্ ছাড়ার আগে নেট দিয়ে জলের উপরের সব পোকা তুলে ফেলতে হবে। 
    • ডিম্ ছাড়ার ১০ দিন পর পুকুরে যদি কোনো অবাঞ্চিত পোকা জন্মায় তা মেরে ফেলার জন্যে ০.২ এম এল সুপার কিলার প্রতি শতকে দেওয়া যেতে পারে। 

    খ .ডিম্ মজুতের  পরিমান -

    • ডিম্ পোনা মজুত নির্ভর করে পুকুরে প্রাণী কোনার উপস্থিতির উপর তাই অধিক পরিমানে প্রাণী কণা থাকলে এই পরিমান ডিম্ পোনা ছাড়া যাবে। 
    • প্রতি শতকে ২০ হাজার পোনা মজুত করা যেতে পারে। ১৪ গ্রাম ডিমপোনা থেকে ১০০০০ পোনা পাওয়া যায়। 
    • প্রতি শতকে ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ডিম্ পোনা মজুত করা যেতে পারে।  ডিম্ পোনা ক্রয় করার পূর্বে ভালো গুণগত মানের রেপুটেশন ভালো এমন হাচেরি থেকে সংগ্রহ করা উচিত।  দাম এর চিন্তা করে কম দাম দিয়ে ক্রয় করলে সেটির ফলাফল ভালো নাও হতে পারে ফলে সামান্য টাকা বাঁচাতে গিয়ে অনেক লসের সম্মুখীন হতে হবে এবং পোনা উৎপাদন  করে বিক্রয় করলে নিজের রেপুটেশন ও খারাপ হয় যা ব্যবসার জন্যে ভালো নয়। 
    • যদি পোনা উৎপাদন করে বিক্রি করা হয় তবে শতকে ১৫ গ্রাম ডিম্ ছাড়াই ভালো দ্রুত বৃদ্ধি হবে এবং যদি পুকুর একের অধিক থাকে তবে পালন লালনের জন্যে বেশি করা যেতে পারে। 
    • পুকুরে সরাসরি ডিম্ পোনা ছাড়লে হঠাৎ করে পরিবেশের তারতম্যের কারণে ডিম্ পোনার মৃত্যুর হার বেশি হতে পারে। তাই ডিম্ পোনা ডিম্ পোনার পলিথিন ব্যাগ বা পাত্র এনে প্রথমে যে পুকুরে ছাড়া হবে সেই জলে ১০-১৫ মিনিট ভাসিয়ে রাখতে হবে এতে করে পুকুরের জলের সাথে পলিথিন ব্যাগ বা পাত্রের জলের তাপমাত্রা সমতা আসে এবং মৃত্যুর হার কমে যায়। 
    • ডিম্ পোনা  ছাড়ার সঠিক সময় সকাল ৯ টার আগে এবং বিকেলে। মাঝের সময় রোঁদের মাত্রা বেশি থাকে ফলে জলে গিয়ে মারা যেতে পারে। বৃষ্টি বা বৃষ্টি হবে এমন হলে ছাড়া যাবে না। 
    আরও দেখুন-  শোল মাছের চাষ ও প্রজনন প্রযুক্তি -পুকুরে/ট্যাঙ্কে

    গ.খাদ্য ব্যবস্থাপনা -

    • রেনু পোনার খাদ্য চাহিদা বেশি এবং ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য দেওয়া উচিত। 
    • প্রথম দিন থেকে ৭ দিন পর্যন্ত ডিমপোনার ওজনের ৪ গুন্ এবং পরের ৭ দিন ডিমপোনার ওজনের ৮ গুন্ খাদ্য তিন বেলা ভাগ করে দিতে হবে অর্থাৎ যেদিন ডিমপোনা ছারা হবে সেদিন যদি ডিম্ পোনার ওজন ১ কেজি হয় তবে ৪ কেজি এবং পরের ৭ দিন ৮ কেজি খাওয়ার কে ৩ ভাগে ভাগ করে ৩ বেলা দিতে হবে। ১৫ দিন পর ০.৩ - ০.৫ গ্রাম হয়ে গেলে ধানি পোনার মতো খাদ্য দিতে হবে।  
    •  ৩ দিন পর থেকে প্রতি শতকের জন্যে ১৫০ গ্রাম খৈল ৩ গুন্ জলের সাথে ৪৮ ঘন্টা পচিয়ে প্রতিদিন দেওয়া যেতে পারে এতে করে জলের রং ঠিক থাকবে এবং প্রাকৃতিক খাদ্য মজুত থাকবে। 
    • যে পরিমান ডিম্ পোনা ছাড়া হয় তার ৫০ থেকে ৬০ % পোনা পাওয়া যায় সঠিক প্রয়োগ বিধি মেনে চললে। 

    ঘ.পুকুর পরিচর্যা -

    • ১৫ দিন পর রেনু পোনা ধানি পুকুরে স্থানান্তর করতে হবে এবং সম্ভব না হলে ডিম্ পোনার ৬০% পোনা মজুত আছে হিসেবে ধরে নিয়ে তার ওজনের ২০% খাদ্য দিতে হবে। যদি শতকে ২০০০০ ডিমপোনা ছাড়ার সময় থাকে তবে তার ২০% মজুত আছে ধরলে হবে ১২০০০ পোনা এবং যদি ০.৩ গ্রাম করে পোনার ওজন হয়  তবে পোনার সংখ্যার  একটি পোনার ওজন গুণন করলে ৭২০ দৈনিক খাদ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে জাল টেনে ১০০ গ্রাম মাছ ধরে কয়টি ওঠে সে সংখ্যা দিয়ে ১০০ কে ভাগ করলে একটি মাছের গড় ওজন বেরিয়ে আসবে আবার যদি সংখ্যা ওজনের থেকে বেশি হয় ওজন দিয়ে বা ১০০ দিয়ে সংখ্যা কে ভাগ করতে হবে ,যেমন যদি ১০০ গ্রামে 300 টি মাছ হয় তবে একটি মাছের ওজন ০.৩ গ্রাম হবে আবার যদি সংখ্যা ২০ টি হয় তবে ৫ গ্রাম হবে। 
    • খাদ্য দিতে দিতে অধিক পরিমানে শ্যাওলা জমলে খাদ্য বন্ধ রাখতে হবে। কারণ খাদ্যে প্রচুর ভিটামিন থাকে সেগুলি জল সবুজ করে তোলে তাই আগে থেকে জল সবুজ করার জন্যে আলাদা খাদ্য প্রয়োগ করতে হয় না। 
    • জলে শ্যাওলা হলে তাতে পোনা পেঁচিয়ে মারা যেতে পারে।  
    • অধিক রোদ দেখা দিলে পুকরের জলের  পাড়ে এ তালপাতা ,খেজুর পাতা বা কুচুরি পানা রাখা যেতে পারে অধিক গরমে ঠান্ডার জন্যে। 
    • প্রথম ৭ দিন পর গামছা টেনে দেখা যেতে পারে রেনুর উপস্থিতি পরে ৭ দিন পর পর জাল টানতে হবে এতে নিচের গ্যাস বেরিয়ে আসবে এবং পোনা চঞ্চল হবে।
    আরও দেখুন - মাছের ২৫ টি রোগ এর লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ ও প্রতিকার ব্যবস্থাপনা

    ২. পালন  বা ধানি পুকুর  প্রস্তুতি-

    শুকনো পুকুর হলে বা সামান্য জল থাকলেও মাছ না থাকলে তার জন্যে করণীয় কাজ গুলি - 

    ক.ধানি পুকুর প্রস্তুতি

    • পুকুরের পার মেরামত করতে হবে। 
    • পুকুরে কোনো গর্ত থাকলে সেগুলি বন্ধ করে দিতে হবে , মাছ চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে প্রয়োজনে নেট লাগিয়ে দিতে হবে।  নেটের নিচ দিকে সেলাই করে দড়ি ঢুকিয়ে এবং এক ফুট পর পর ওই দড়িতে গরুর খুটার মতো খুট বানিয়ে মাটিতে টান টান করে গেথে দিতে হবে। 
    • পুকুরে আগাছা থাকলে সেগুলি তুলে ফেলতে হবে। ঘাস মারা কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা যাবেনা। সাইড এ গাছ পালা থাকলে ডাল কেটে দিতে হবে। অন্তত উত্তর পূর্ব দিকে ফাঁকা রাখার চেষ্টা করতে হবে। পাড়ে কলাগাছ  না রাখাই ভালো এতে করে কলাগাছ কাটার পর মাথা পচে গিয়ে গর্ত তৈরী হয় পার দূর্বল হয় ইঁদুর সাপের উপদ্রব হয়। 
    • পুকুরে জলের গভীরতা ৪ ফুট থেকে ৬.৫ ফুট ভালো তবে এক একরের বেশি হলে ৮ ফুট থেকে ১০ ফুট হলেও চলবে কারণে মাঝে গভীরতা বেশি হলে পাড়ের দিকে কম থাকে এবং জায়গা বেশি থাকে তাই মাছ তার প্রয়োজনীয় জায়গায় চলাচল করতে পার। 
    • নতুন পুকুর খনন করলে পুকুর ৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ঢাল রেখে করবেন অযথা গভীরতা বাড়াবেন না এতে করে মাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। 
    • পুকুরে যে অংশ পর্যন্ত সর্বোচ জল উঠবে সেই পর্যন্ত চুন ছিটিয়ে রাখতে হবে এতে করে মাটির পচা গ্যাস নষ্ট হবে। প্রতি শতকে ১-২ কেজি বা পাক বেশি থাকলে তার বেশি দিলেও অসুবিধে নেই। 
    • পুকুরে অপ্রয়োজীয়ন মাছ তুলে ফেলতে হবে এবং মহুয়া খৈল বা গ্যাস ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হবে আতুর পুকুরের নিয়ম অনুসারে। 
    • জলে খাদ্য তৈরী করলে অন্তত প্রাকৃতিক ভাবে ১৬-১৭ % মজুত হয়ে যায় মাছের জন্যে তাই পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য না তৈরী করে পোনা ছাড়বেন না। 
    • পুকুরে প্রতি শতকে ৮ থেকে ১০ কেজি গোবর ছড়িয়ে দিতে হবে। পুকুরে গোবর প্রয়োগ করলে পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা বাড়ে। মাছের চাহিদা মতো খাদ্য তৈরী হয়। প্রাণীকণা ও তলাবাসি প্রাণী বা কেঁচো জাতীয় মাছের খাদ্য তৈরী হবে।  যদি পুকুর অনেক দিন শুকনো পড়ে থাকে তবে ধঞ্চে বীজ ছড়িয়ে রাখলে ভালো এবং প্রস্তুতির সময় মাটিতে মিশিয়ে দিলে পুকুরে সার ও নাইট্রোজেন বৃদ্ধি হয় যা মাছ চাষের জন্যে খুবই লাভ জনক। 
    • প্রাকৃতিক খাদ্য হয় দুই ধরণের জু প্ল্যাঙ্কটন ও ফাইটো প্ল্যাঙ্কটন। এই দুটি খাদ্য তৈরী হলে জল স্বচ্ছ বাদামি সবুজ রং এর হবে। 

    জু প্ল্যাঙ্কটন -

    জু প্ল্যাঙ্কটন হল জৈব খাদ্য যা প্রয়োগ করলে পুকুরের জল হালকা বাদামি রং ধারণ করে এবং প্রাণী কনার সৃষ্টি করে।  যদি গোবর সার ছড়িয়ে দেওয়ার পর জলের রং না পরিবর্তন হয় তবে নতুন করে খাদ্য তৈরী করে দিতে হবে। এই খাদ্য গুলি নিয়মিত মাসে প্রয়োগ করতে হয়। এই খাদ্য তৈরির জন্যে প্রতি শতকে ৬০০ গ্রাম কাঁচা গোবর ,১৫০ গ্রাম সর্ষের খৈল বা বিঘাপ্রতি ২০ কেজি গোবর ও ৫ কেজি সরিষার খৈল একত্রে ৫  দিন পচিয়ে দেওয়া যেতে পাড়ে। এতে পর্যাপ্ত প্রাণী কণা তৈরী হবে। 

    ফাইটো প্ল্যাঙ্কটন -

    এটি হল একটি অজৈব উপাদান দিয়ে তৈরী জলজ প্রাকৃতিক খাদ্য। এই খাদ্য প্রয়োগ করলে জল স্বচ্ছ সবুজ হয়। উদ্ভিদ কণা তৈরী করে যা মাছের পর্যাপ্ত খাদ্য হয় এবং সূর্যালোকে সালোকসংলেস ঘটিয়ে অক্সিজেন তৈরী হয় পুকুরে। 
    এই খাদ্য তৈরীর জন্যে প্রতি শতকে DAP ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ৫০ গ্রাম অথবা ফসফেট ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ১০০ গ্রাম ও পটাশ মিশিয়ে জলে গুলে পুকুরে ছড়িয়ে দিতে হবে।  এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে DAP ও ফসফেট জলে গুলতে সময় লাগে তাই দুটি ক্ষেত্রেই আগে এগুলি ২-৩ ঘন্টা ভিজিয়ে নিয়ে পড়ে প্রয়োগ করার ৩০ মিনিট আগে ইউরিয়া মিশিয়ে দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। 
    জলে তিন চারদিন পর রং চলে আসবে এবং পোনা ছাড়ার উপযুক্ত হবে। 

    খ.ধানি পোনা মজুত বিধি -

    • পালন পুকুরে ধানি পোনা থেকে চারা পোনা তৈরি করা হয় সাধারণত।  রেনু পোনা ১ মাস পর বা পরিচর্যা ঠিক হলে তার আগেই  ধানি পোনা তৈরী  হয়।  কেজিতে ৪০০০-৫০০০ টি  বা প্রতিটির ওজন ৩-৫ গ্রাম হলে  সেটি কে চারা  পোনা তৈরির জন্যে অথবা ধনী পোনা থেকে ৪-৬ ইঞ্চি মাপের চারা পোনা উৎপাদন করা হয়। 
    • প্রতি শতকে সর্বোচ্চ ১০০০ টি ধানি  পোনা মজুত করা যেতে পারে। পুকুর থেকে তুলে অন্য পুকুরে মজুত করলে আগের দিন খাওয়ার বন্ধ রাখতে হবে এবং বাড়ির বা বাইরের থেকে ক্রয়কৃত পোনা হলেও শোধন করে তবে পুকরে ছাড়বেন যা নিচে বলা হয়েছে।  
    1. এক্ষেত্রে মাছের রেশিও হবে -
    2. কাতলা :রুই :মৃগেল =২:৪:৪ 
    3. কাতলা :রুই :মৃগেল :কমন কার্প =৩:৪:১:২ 
    4. কাতলা :রুই :মৃগেল :গ্রাসকার্প =৩:৩:৩:১ 
    5. কাতলা :রুই :মৃগেল:সিলভার কার্প : গ্রাসকার্প :কমন কার্প =২:২:১.৫:২:১:১.৫
    • উপরের সেট গুলির মধ্যে যে কোনো একটি সেট এই হরে মজুত করা যেতে পারে। সংখ্যা গুলি ১০ টি পোনার মধ্যে হিসেবে করে ভাগ করা হয়েছে।  ধরা যাক প্রথম টি  কাতলা :রুই :মৃগেল =২:৪:৪  আছে তবে  প্রতি শতকে  প্রতি ১০০০ টি পোনার ক্ষেত্রে  সংখ্যা নির্ণয় হবে- কাতলা ২ টি =২০০ টি ,রুই ৪ টি =৪০০ টি এবং মৃগেল ৪ টি =৪০০ টি। সব ক্ষেত্রেই এই ভাবে সংখ্যা নির্ণয় করতে হবে এবং যে কোনো একটি সেট মজুত করতে হবে। 
    আরও দেখুন - পুকুরে মাছ ভাসার সম্ভাব্য কারন কি? এবং করনীয় কি ?

    গ.পালন পুকুর পরিচর্যা -

    • বাজার থেকে ভাসমান ফিশ ফিড ক্রয় করে খাওয়ালে প্রতিদিন মাছকে তার দৈহিক ওজনের ২০% শতাংশ ০.০৫ এম এম এর ৩০% প্রোটিনযুক্ত খাদ্য ২-৩ বেলা ভাগ করে দিতে হবে এবং মাছের বৃদ্ধি হিসেবে  ফিড এর সাইজ বাড়িয়ে দিতে হবে। 
    • অথবা হাতে তৈরী খাদ্য দিলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে  দু বেলা পুকুরে  হাতে তৈরী খাদ্য দিতে হবে মাছের দৈহিক ওজন ৩-৫ গ্রাম হলে তার ২০% পরিমান খাদ্য দিতে হবে। অর্থাৎ পুকুরে এই সাইজ এর মোট মাছের ওজন যদি ১০ কেজি হয় তবে তার  ২০% হলে ২ কেজি  খাদ্য দুবেলা ভাগ করে দিতে হবে। একই ভাবে ১০ দিন পর পর  মাছের ওজনের ২% খাদ্য কমিয়ে কমিয়ে পোনার ওজন ২৫ গ্রাম এর উর্ধে হলে  ৩%  দৈনিক খাদ্য দিতে হবে।
    • সরিষার খৈল ও রাইস ব্রান (রাইস ব্রান না পেলে চালের কুরো) সমপরিমাণ ১ :১ হারে মিশিয়ে দিতে হবে।  অর্থাৎ ১০ কেজি খাদ্য তৈরী করলে ৫ কেজি সরিষার খৈল+রাইস ব্রান ৫ কেজি + লবন ১০০ গ্রাম দিয়ে খাদ্য তৈরী করে দিতে হবে অথবা সরিষার খৈল, রাইস ব্রান বা চালের কুরো,খেসারি ভুসি ,গমের ভুসি ১:১:১:১ হারে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। 
    • প্রথম ১ মাস সব কিছু ভালো করে গুঁড়ো করে ছেঁকে নিয়ে পুকুরে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।  ১ মাস পর  প্রয়োগের জন্যে আগের দিন সরিষার খৈল ভিজিয়ে রাখতে হবে পরের দিন সরিষার খৈল+রাইস ব্রান+ লবন ১৫০ একত্রে মিশিয়ে লাড্ডুর মতো বোরো বোরো বল বানিয়ে পুকুরের দু তিন জায়গায় একটি বাসের ঝুড়িতে বা প্লাস্টিকের ঝুড়ি যুক্ত ট্রে তে বসিয়ে জলের নিচে   বসিয়ে দিতে হবে রোজ নির্দিষ্ট সময়ে।   
    •  চুন ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে প্রয়োগ করতে হবে। সকাল ১০ টার পর রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশে।  মেঘলা আকাশ বা বৃষ্টি থাকলে প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। 
    • প্রতি মাসে একবার ৩ ফুট জলের গভীরতা শতকে ১00 গ্রাম এবং বিঘা প্রতি ৩কেজি ৩০০ গ্রাম লবন জলে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে সমস্ত পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। এর ফলে তলায় রোগ জীবাণু কম কম জন্মাবে। মাছের ফুলকা পরিষ্কার থাকবে এবং মাছের রোগ কম হবে। একধরণের নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে মাছ থাকবে। 
    • পুকুরে মাসে এক বার ৩ ফুট জলের গভীরতা প্রতি শতকে ৫০ গ্রাম মোলাসেস বা চিটে গুড় জলে গুলিয়ে সমস্ত পুকুরে ছড়িয়ে দিতে হবে। 
    • পুকুরে জলে খাদ্য উপস্থিতি বা সবুজ বাদামি জলের রং বজায় রাখতে হলে প্রতি মাসে একবার জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করতে হবে চুন লবন প্রয়োগের ৩ দিন  পর। 
    • ৩ ফুট জলের গভীরতা প্রতি শতকে ৬.৫০ গ্রাম গোবর ১.৫০ গ্রাম সরিষার খৈল বা বিঘা প্রতি ২০ কেজি গোবর ও ৫ কেজি সরিষার খৈল এর ৩-৪ গুন্ জলে  ৫ দিন ভিজিয়ে রেখে ৬ দিনের দিন সকাল ১০ টার পর প্রয়োগের দু ঘন্টা আগে আলাদা একটি পাত্রে অজৈব সার প্রতি শতকে ১.৫০ গ্রাম বা বিঘা প্রতি ৫  কেজি DAP এর ৩ গুন্ জল মিশিয়ে ভিজিয়ে রেখে জৈব ও অজৈব সার মিশিয়ে পুকরের চারি দিকে জলে ছড়িয়ে দিতে হবে। ৩ দিন পর জলের রং স্বচ্ছ বাদামি সবুজ দেখা যাবে । বৃষ্টি বা মেঘলা আকাশে প্রয়োগ করবেন না। 
    • ৩ ফুট জলের গভীরতা প্রতি শতকে ৪ কেজি শুকনো গোবর দিতে হবে।  এই জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগের মধ্যে ১৫ দিন অন্তর রাখতে হবে। 
    • ৭ দিন অন্তর জাল টানা উচিত হবে এতে মাছ সুস্থ সবল ও পুকুরের পরিবেশ ভালো থাকবে। 
    • মাছ স্থানান্তরিত করতে হলে অবশ্যই আগের দিন  মাছের খাদ্য দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। 

    ৩.লালন পুকুর -

    কার্প মাছ চাষ করতে হলে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে একক চাষ নাকি  মিশ্র চাষ করা হবে। একক চাষ সাধারণত দেশীয় ৩ প্রজাতির মাছ গুলি নিয়ে করা হয় যেমন রুই ,কাতলা ,মৃগেল এবং মিশ্র চাষ দেশীয় ও বিদেশী মিলিয়ে ৬ প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। দেশীয় প্রজাতির মাছ গুলির থেকে বিদেশী প্রজাতির মাছ গুলির বৃদ্ধির হার দ্রুত হয় যেমন কাতলার থেকে সিলভার কার্প এর বৃদ্ধি দ্রুত হয়। গ্রাসকার্প মাছ কে তার কাঙ্খিত খাদ্যের যোগান দিতে পারলে তার বৃদ্ধির হার বেশি হয়। মৃগেল এর থাকে সরপ্রিনার্স মাছ এর বৃদ্ধি দ্রুত হয়।  এই ক্ষেত্রে উৎপাদন বেশির কথা ভাবলে মিশ্র চাষ করলে একই সময়ে উৎপাদন বেশি পাওয়া যায় একক চাষের তুলনায়। 
    পালন পুকুর ধরণের মিশ্র চাষ বা একক চাষ করতে হলে কতগুলি পদ্ধতি অনুসরণ করে মাছ চাষ করতে হয়। 
    A.লালন বা মজুত পুকুর নির্বাচন 
    B.লালন পুকুর প্রস্তুতি
     C.পোনা মজুতের হার 
    D.পোনা ছাড়ার পর পরিচর্যা 

    ক. লালন বা মজুত পুকুর নির্বাচন-

    • যে সব পুকুর সারা বছর জল থাকে ৪.৫ -৬ ফুট। পুকুরের পাড় উঁচু বর্ষায় সহজে প্লাবিত হবে না। 
    • পুকুরের মাটি এঁটেল দোআঁশ এবং পাক বা কাদা কম সেই সব পুকুর এই চাষের জন্যে বেঁছে নেওয়া উচিত। 
    • পুকুর আয়তাকার ও আয়তনে ১ বিঘার থেকে বড় ৬০ ডিগ্রি কোণে ঢাল আছে ও বর্ষায় ৮ থেকে ১০ ফুট জল থাকে এক একরের বেশি হলে ভাল। 
    • পুকুরের জলে বিনা বাধায় যেন সূর্যালোক পড়তে পারে এমন ব্যবস্থা থাকা ভালো। তবে নারকেল সুপারি এই জাতীয় গাছ থাকলে অসুইবিধে নেই। 

    খ. লালন পুকুর প্রস্তুতি -

    • পুকুরের আগাছা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। গ্রাসকার্প খাদ্য এমন কিছু আগাছা রাখা যেতে পারে। 
    • পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে। যে কোনো খাল বন্ধ রাখতে হবে। অতিরিক্ত জল বাইরে বের করার ব্যবস্থা রাখতে হবে কিন্তু সেটি দিয়ে যেন বাইরের জল ভেতরে প্রবেশ না করে সেভাবে ব্যবস্থা করতে হবে। 
    • অবাঞ্চিত মাছ তুলে ফেলতে হবে। 
    • মাছ নিধনের জন্যে ২৫ পি পি এম হারে ৩ ফুট জলের গভীরতায় প্রতি শতকে ৯ কেজি মহুয়া খৈল ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা একই জলের গভীরতায় শতকে তিনটি গ্যাস ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে। 
    • মহুয়া খৈল বা গ্যাস  ট্যাবলেট ব্যবহারের ৭ দিন পর ৩ ফুট জলের হভিরুতার প্রতি শতক জলে ১-১.৫ কেজি চুন দিতে হবে। কাদা বেশি থাকলে শতকে ২ কেজি চুন দিয়ে ঘেটে দিতে হবে। 
    • মহুয়া খৈল ব্যবহার করলে চুন দেওয়ার ৩ দিন পর প্রতি শতকে ১৫ কেজি এবং মহুয়া খৈল ব্যবহার না করলে শতকে ৩০ কেজি গোবর দিতে হবে। 

     গ. পোনা মজুতের হার -

    • একক কার্প মাছ চাষের জন্যে বিঘা প্রতি ১০০০ টি মাছের জন্যে কাতলা ৪০০ টি,রুই ৩০০ টি ,মৃগেল ৩০০ টি।  
    • মিশ্র কার্প মাছ চাষের ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ১০০০ টি মাছের জন্যে কাতলা কাতলা ১০০ টি ,রুই ৩০০ টি ,মৃগেল ১৫০ টি ,সিলভার কার্প ২০০ টি ,গ্রাসকার্প ১০০ টি ,সরপ্রিনার্স কার্প ১৫০ টি। 
    •   পুকুর জলে স্তর অনুযায়ী মাছ চলাচল ও খাদ্য গ্রহণ করে -
    • জলের উপরের  স্তরে কাতলা ,সিল্ভারকার্প মাছ থাকে। কাতলা মাছ সাধারণত প্রাণী কোন বেশি খায় এবং সিলভার কার্প মাছ উদ্ভিদ কোন বেশি খায়।  তাই  কম করে হলেও শতকে ৩ টি সিলভার কার্প মাছ রাখলে উদ্ভিদ কন্যাকে বেশি বাড়তে দেয় না ,অতিরিক্ত উদ্ভিদ কন্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। 
    • মধ্যম স্তর এ রুই মাছ ও গ্রাসকার্প মাছ থাকে। রুই মাছ ছোট অবস্থায় প্রাণী কণা,বড় হলে উদ্ভিদ কণা খায় ,জলজ উদ্ভিদ এর নরম পাতা খায়। গ্রাসকার্প ঘাস ,ঝাঁঝি ও জলজ উদ্ভিদ খায় তাই এদের মধ্যে কম্পিটিশন নেই।। 
    • নিচের স্তর মৃগেল ও সরপ্রিনার্স কার্প থাকে এঁরা মূলত নিচে মাটিতে লেগে থাকা খাদ্য ,প্রাণী কণা ,ও উদ্ভিদ খায়। এঁরা এক প্রকার সর্বভুক মাছ। 
    • পোনার সাইজ যতটা সম্ভব বড় নেওয়া যায় নেওয়া উচিত। ১০০ গ্রামের উর্ধে হলে ভালো এবং মাছের সাইজ সমান হতে হবে , অন্তত সব সমান না হলেও একই প্রজাতির  মাছ যেন সমান হয় তাহলে তাদের মধ্যে খাদ্য আহার সমান হারে হবে প্রতিযোগিতা কম হবে এবং ওজন পরিমাপ করে খাদ্য পরিবেশন সুবিধা হবে। 
    • পোনা আহরণের পর পোনার প্যাকেট বা পাত্র গুলি পুকুরের জলে কিছুক্ষন ভাসিয়ে রাখতে হবে পুকুর ও পাত্রের জলের  তাপমাত্রা সমান করার জন্যে। 
    • পোনা ছাড়ার পূর্বে প্রতি লিটার জলে ১ মিলি গ্রাম পটাসিয়াম পারমেঙ্গানেট বা প্রতি লিটার জলে ২০ গ্রাম লবন গুলিয়ে পোনা গুলি নেট এ নিয়ে ৩০ সেকন্ড চুবিয়ে পুকুর ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে।
    আরও দেখুনপুকুরের জল বাদামি রং ,সবুজ রং ,দুর্গন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি -

    ঘ.পোনা ছাড়ার পর পরিচর্যা - 

    • হাতে তৈরী খাদ্য দিলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে  দু বেলা পুকুরে  হাতে তৈরী খাদ্য দিতে হবে মাছের দৈহিক ওজন ২৫-১০০ গ্রাম হলে তার ৩% পরিমান খাদ্য দিতে হবে। মাছের দৈহিক ওজন ১০০-২৫০ গ্রাম হলে ২.৫-২%, মাছের দৈহিক ওজন ২৫০-৪৫০ গ্রাম হলে ২-১.৫%,মাছের দৈহিক ওজন ৪৫০-৭০০ গ্রাম হলে ১.৫-১.২% খাদ্য দিতে হবে এবং মাছের বাঁচার সংখ্যা ১০০০ টির মধ্যে সব শেষে ৯০০ টি ধরে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।  অর্থাৎ পুকুরে এই সাইজ এর মোট মাছের ওজন যদি ১০ কেজি হয় তবে তার  ৩% হলে ৩০০ গ্রাম  খাদ্য দুবেলা ভাগ করে দিতে হবে। 
    • সরিষার খৈল ও রাইস ব্রান (রাইস ব্রান না পেলে চালের কুরো) সমপরিমাণ ১ :১ হারে মিশিয়ে দিতে হবে।  অর্থাৎ ১০ কেজি খাদ্য তৈরী করলে ৫ কেজি সরিষার খৈল+রাইস ব্রান ৫ কেজি + লবন ১০০ গ্রাম দিয়ে খাদ্য তৈরী করে দিতে হবে অথবা সরিষার খৈল, রাইস ব্রান বা চালের কুরো,খেসারি ভুসি ,গমের ভুসি ১:১:১:১ হারে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। 
    •  আগের দিন সরিষার খৈল ভিজিয়ে রাখতে হবে পরের দিন সরিষার খৈল+রাইস ব্রান+ লবন ১৫০ একত্রে মিশিয়ে লাড্ডুর মতো বোরো বোরো বল বানিয়ে পুকুরের দু তিন জায়গায় একটি বাসের ঝুড়িতে বা প্লাস্টিকের ঝুড়ি যুক্ত ট্রে তে বসিয়ে জলের নিচে   বসিয়ে দিতে হবে রোজ নির্দিষ্ট সময়ে।   
    • গ্রাসকার্প মাছের জন্যে তার দৈহিক ওজনের সমপরিমাণ উদ্ভিদ খাদ্য দিতে হবে।  যদি মাছের ওজন ১ কেজি হয় তবে ১ কেজি খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।  খাদ্য হিসেবে ঘাস ,এজলা ,কুটি পানা উপর থেকে দেওয়া যেতে পারে এবং পুকুরের সাইড  কলমি ,হ্যালেঞ্চে শাক রাখতে হবে। 
    • পুকুরে মাসে একবার (৩ ফুট জলের গভীরতার জন্য) প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম এবং বিঘা প্রতি ৬.৫০০ গ্রাম  চুন ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে প্রয়োগ করতে হবে। সকাল ১০ টার পর রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশে।  মেঘলা আকাশ বা বৃষ্টি থাকলে প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। 
    • পোনা ছাড়ার ২ মাস পর থেকে  প্রতি মাসে একবার (৩ ফুট জলের গভীরতার জন্য) প্রতি শতকে ১00 গ্রাম এবং বিঘা প্রতি ৩কেজি ৩০০ গ্রাম লবন জলে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে সমস্ত পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। এর ফলে তলায় রোগ জীবাণু কম কম জন্মাবে। মাছের ফুলকা পরিষ্কার থাকবে এবং মাছের রোগ কম হবে। একধরণের নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে মাছ থাকবে। 
    • পুকুরে মাসে এক বার (৩ ফুট জলের গভীরতার জন্য) প্রতি শতকে ৫০ গ্রাম মোলাসেস বা চিটে গুড় জলে গুলিয়ে সমস্ত পুকুরে ছড়িয়ে দিতে হবে। 
    • পুকুরে জলে খাদ্য উপস্থিতি বা সবুজ বাদামি জলের রং বজায় রাখতে হলে প্রতি মাসে একবার জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করতে হবে চুন লবন প্রয়োগের ৩ দিন  পর। 
    • (৩ ফুট জলের গভীরতার জন্য) প্রতি শতকে ৬.৫০ গ্রাম গোবর ১.৫০ গ্রাম সরিষার খৈল বা বিঘা প্রতি ২০ কেজি গোবর ও ৫ কেজি সরিষার খৈল এর ৩-৪ গুন্ জলে  ৫ দিন ভিজিয়ে রেখে ৬ দিনের দিন সকাল ১০ টার পর প্রয়োগের দু ঘন্টা আগে আলাদা একটি পাত্রে অজৈব সার প্রতি শতকে ১.৫০ গ্রাম বা বিঘা প্রতি ৫  কেজি DAP এর ৩ গুন্ জল মিশিয়ে ভিজিয়ে রেখে জৈব ও অজৈব সার মিশিয়ে পুকরের চারি দিকে জলে ছড়িয়ে দিতে হবে। ৩ দিন পর জলের রং স্বচ্ছ বাদামি সবুজ দেখা যাবে । বৃষ্টি বা মেঘলা আকাশে প্রয়োগ করবেন না। 
    • (৩ ফুট জলের গভীরতার জন্য) প্রতি শতকে ৪ কেজি শুকনো গোবর দিতে হবে।  এই জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগের মধ্যে ১৫ দিন অন্তর রাখতে হবে। 
    • যদি প্রথম পদ্ধতিতে জল সবুজ না হয় তবে প্রতি শতকে ৭৫ গ্রাম আটা এবং ৪ গ্রাম ইউরিয়া বা বিঘা প্রতি ২.৫০০ গ্রাম আটা এবং ১.২৫ গ্রাম ইউরিয়া জলে আধ ঘন্টা ভিজিয়ে নিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। 
    • প্রথম পদ্ধতিতে  যদি জলে বাদামি বা জু প্ল্যাঙ্কটন বা প্রাণী কণা তৈরী না হয় তবে প্রতি শতাংশের জন্যে  ২০০ গ্রাম রাইস ব্র্যান , রাইস ব্র্যান এর ১০ ভাগের ১ ভাগ ২০ গ্রাম মোলাসেস এবং রাইস ব্র্যান এর ২০০ ভাগের ১ ভাগ বা ১ গ্রাম ইস্ট একত্রে করে তার ৩-৪ গুন্ জল মিশিয়ে  ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরের দিন অন্য একটি পাত্রে ঢেলে প্রয়োজনীয় জল মিশিয়ে পুকুরে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং ভিজিয়ে রাখা পাত্রে যেগুলি জমে থাকবে সেগুলিতে আবার জল ভোরে রেখে দিয়ে পরের দিন ছড়িয়ে দিলে পর্যাপ্ত কাজ হয়ে যাবে। 
    • এছাড়াও জু প্ল্যাঙ্কটন এর জন্যে যদি গোবর খৈল জল প্রয়োগ না করা হয় তবে প্রতি শতাংশে ৪০০ গ্রাম বা বিঘা প্রতি ১৩ কেজি ধানের  খড় পুকুরের সাইডে জলে   ভিজিয়ে রেখে ব্যবহার করলে ৪ঘন্টা পর থেকে নির্যাস তৈরী হতে থাকে এবং জু ও ফাইটোপ্লাঙ্কটন পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া যায়। 
    • গ্রাস কার্প মাছ থাকলে মাছের দৈহিক ওজন যা সেই পরিমান ঘাস বা জলজ আগাছা প্রতিদিন প্রয়োজন। যদি মাছের ওজন এক কেজি হয় তবে ১ কেজি পরিমানে দৈনিক খাদ্য গ্রাসকার্প মাছের প্রয়োজন এজন্যে আলাদা করে ঘাস কেটে কুটিপানা ,এজলা বা পারের দিকে পর্যাপ্ত কলমি শাক ,হেলেঞ্চা গাছের উপস্তিতি রাখতে হবে। 
    • মাসে একবার জাল টানতে হবে মাছের অবস্থা এবং কাঙ্খিত ওজন হচ্ছে কিনা দেখা যেতে পারে এবং চুন লবন প্রয়োগের পর করলে তলার  গ্যাস বেরিয়ে এসে পরিশোধিত হবে। 

    ৪. তথ্য সূত্র -  

    ক. মৎস পালন বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ সরকার। 

    খ. কাজী আবেদ লতীফ -  বাংলাদেশ উপজেলা মৎস বিভাগ প্রাক্তন আধিকারিক। 

    ৫.FAQ-

    ক. কোন কোন মাছ দেশিও প্রজাতির কার্প মাছ কয়টি ও কি কি ?
    দেশীয়  কার্প মাছ হয় ৩ টি প্রজাতির। রুই ,কাতলা এবং মৃগেল এই ৩ টি প্রজাতির মাছ একত্রে চাষ কে একক চাষ বলে ও বিদেশি প্রজাতির কার্প মাছ হল সিলভার কার্প ,গ্রাসকার্প। এই দেশীয় ৩ টি ও বিদেশী ৬ টি মাছকে একত্রে চাষ করলে তাকে মিশ্র কার্প মাছ চাষ বলে। 
    খ. পুকুর প্রস্তুতিতে কিভাবে অবাঞ্চিত  মাছ পরিষ্কার করা যায় ?
    ৩ টি ভাবে পোনা উৎপাদন বা চারা পোনা ছাড়ার আগে পুকুরের মাছ নিধনের জন্যে মহুয়া খৈল ,গ্যাস ট্যাবলেট ফসটক্সিন ,ব্লিচিং পাউডার এদের যে কোনো একটি নিয়ম মত ব্যবহার করে পুকুরের অবাঞ্চিত মাছ মারা যায়। 
    গ. কিভাবে মাছের খাদ্য হাতে তৈরী করা যায়?
    মাছের খাদ্য তৈরী করতে হলে মাছ এর সাইজ অনুসারে খাদ্য প্রোটিন নিশ্চিত করতে হয়। অন্তত ৩০% খাদ্য প্রোটিন নিশ্চিত করে খাদ্য তৈরি করা যেতে পারে। রাইস ব্র্যান অথবা চালের কুড়া ,সরিষার খৈল ,খেসারি ভুসি ,গমের ভুসি ১:১:১:১ সমপরিমাণ নিয়ে এবং সাথে ডি.ও .আর .বি ও সামান্য লবন মিশিয়ে দিলে মাছের পরিপূর্ণ খাদ্য প্রোটিন অনেকটা নিশ্চিত করা যায়। 

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)