শতমূলী চাষ পদ্ধতি Shatamuli cultivation method

Didibhai Agrofarm
0
শতমূলী চাষ  পদ্ধতি

শতমূলী একটি ঔষধি গুন্ সম্পূর্ণ অর্থকারী ফসল। বর্তমান সময়ে শতমূলীর চাহিদা বাড়ছে কিন্তু চাহিদার তুলনায় চাষ অত্যন্ত কম। শতমূলিকে অনেকে শতমূল বা সতাভরী বলে থাকে। বাজারে এটি আয়োর্বেদিক ঔষধি দোকানে বহুমূল্যে বিক্রয় হয়ে থাকে ।

    ১.জাত:  

    দেশী, লতাভরী

    ২.বোনার সময়:

    বীজ পড়ে এমনিতেই হয় ,তবে বর্ষাকালে বীজ থেকে চারা তৈরী করে লাগানো যায়। মূল থেকে খুব ভালো চারা তৈরী হয়। এছাড়া ছোট ছোট শাখা কেটে বেডে বসিয়ে বর্ষাকালে চারা তৈরী করা হয়। বিঘা প্রতি চারা লাগে ১২০০-১৩০০/ ।

    ৩.জমি/মাটি:

    যে কোন মাটিতে হয় তবে দোঁয়াশ মাটিতে ভালো হয়। জমিতে কোন অবস্থাতে জল না দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

    ৪.সেচ:

    সেচ লাগে না বললেই চলে, তবে বীজ থেকে চারা লাগানোর পর এক দু'বার জল দিতে হয় এবং মাঝে মধ্যে খুব গরমের সময় চারা যদি ঝিমিয়ে যায় তবে এক দুবার সেচ দেওয়া যেতে পারে।

    ৫.গাছের/সারির দূরত্ব:

     সারি থেকে সারি ও গাছ থেকে গাছ ১ মিটার দূরত্বে লাগানো হয়। ৩০ সেমি দৈর্ঘ্য, ৩০ সেমি প্রস্থ এবং ৩০ সেমি গভীর গর্ত করতে হয়। প্রতি গর্তে আড়াই থেকে তিন কেজি গোবর অথবা আবর্জনা সার দিয়ে গর্ত ভর্তি করে রাখতে হবে। চারা লাগানোর ১৫ দিন আগে থেকে। বর্ষার শুরুতে গর্তের ঠিক মাঝখানে চারা বা বীচন লাগাতে হবে।

    ৬.ফুল-ফলের সময়:

     ডিসেম্বর-এপ্রিল (শীতকাল -গরমকাল)।

    ৭.বীজ সংগ্রহের সময়: 

    ফেব্রুয়ারী - এপ্রিল (গরমকালে)।

    ৮.নার্সারী:

    ছোট ছোট মূল আলাদা করে প্যাকেটে বা বেডে বসাতে হবে এবং ঘন ঘন ঝারি দিয়ে জল দিতে হবে। ১০ দিনের পর থেকে শাখা মঞ্জুরী বের হতে থাকবে। এরপর মূল জমিতে সরাতে হবে।

    ৯.ফসল তোলা:

    শতমূলী গাছ থেকে তৃতীয় বৎসরে কন্দ আলু তোলা হয়। ভালো করে জলে পরিষ্কার করে, শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে এমনভাবে যেন কন্দ মূল ছত্রাকের দ্বারা আক্রান্ত না হয়৷ তিন শতাংশ বরিক অ্যাসিডের দ্রবণে ২০ মিনিট ডুবিয়ে, দ্রবণ ঝড়িয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিলে ছত্রাক আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।

    ১০.ফলন:

    প্রতি গাছে কন্দ আলুর ফলন ৫-৭ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়।

    বিঘা প্রতি আলুর ফলন প্রায় ১০,০০০-১৩,০০০ কেজি পর্যন্ত হয়।

    ১১.রোগপোকা -

    কাঠা প্রতি দেড় থেকে দুই কেজি নীম খোল লাগানোর ৪০-৪৫ দিন বয়সে প্রথমবার ও ৭৫-৮০ দিন বয়সে ২য় বার গোড়ায় মাটি ধরানোর সময় জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করলে সারের কাজও যেমন হয় তেমনি রোগ পোকাও সামাল দেওয়া যায়। কন্দ পচা (সফ্ট রট) মাঝে মধ্যে দেখা যায়। এ রোগ দেখা গেলে বিঘাপ্রতি ৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি নামে জীবাণুনাশক জৈবসারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষে মাটিতে মিশালে নিরাময় হয়৷ ট্রাইকোডারমা ভিরিডি অথবা সুডোমনাস ফ্লুরোসেন্স নামক রোগ নাশক স্প্রে করলে নিরাময় হয়৷

    ১২.শতমূলীর ব্যবহার -

    শতমূলী গাছের মূল, কান্ড উভয় অংশ ব্যবহার করা হয়। কচি ডগা খাদ্য হিসাবে, চিনি শিল্পে সুইটমিট হিসাবে, আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। মহিলাদের জিনিটাল সমস্যা, মুত্রনালীর সমস্যা, বাচ্ছা না হওয়ার সমস্যা, পাকস্থলীর আলসার, গাঁটের সমস্যা, রক্ত আমাশয়, ডাইবেটিস সমস্যা, ডাইরিয়া, বাতের ব্যাথা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সাবান শিল্পেও ব্যবহৃত হয়।

    শতমূলী মায়েদের বুকের দুধ বাড়ায়, বলকারক পিত্তনাশক, রক্ত শোধন করে৷ কন্দ মূলের রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে, বধ হজম ও পেট খারাপ সাড়ে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে৷

    ১৩.শতমূলী চাষে লাভ - 

    শতমূলী চাষে লাভ অনেক। বিঘা প্রতি  খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং বিক্রয় হয় ১২০০০০ টাকা থেকে ১৫০০০০ টাকা পর্যন্ত এবং প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকাতে বিক্রয় হয়। 

    তথ্য সূত্র - ড: বিবেকানন্দ সান্যাল -লোক কল্যাণ পরিষদ । 
    আরো দেখুন 

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)