আদা চাষের অধিক উৎপাদন কৌশল । লাভ হবে দ্বিগুন।

Didibhai Agrofarm
0
আদা চাষের অধিক উৎপাদন  কৌশল


অর্থকরি কন্দ ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। বৃষ্টি নির্ভর নিকাশীযুক্ত সরষ উঁচু জমিতে আদা সহজেই লাভজনকভাবে চাষ হয়৷ পাহাড়ী এলাকায় ধাপ চাষে উপযুক্ত ফসল। আদা একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলাজাতীয় খাদ্য সেই সাথে সর্দি কাশি ইত্যাদি রোগ ব্যাধিতে ব্যবহার করলে রোগের উপশম হয়। 
আদা চাষ পদ্ধতি -

    আদা মূলত দুটি ভাবে করা যায় -

    ক। মাটিতে আদা চাষ। 
    খ। বস্তায় আদা চাষ। 

    ক। মাটিতে আদা চাষ পদ্ধতি :

    ১।  ভালো আদার  জাত :

    উড়িষ্যার জাত সুপ্রভা, (ছিবড়ে কম)। কেরালার জাত- বিওডি জানেইরো (ছিবড়ে কম)। উত্তরবঙ্গের জাত- গরুবাথান, ভেঁসি (ছিবড়ে বেশী)।

    ২। আদা চাষের মেয়াদঃ

    আদা চাষ মূলত ৮-১০ মাস এর মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। 

    ৩। আদা বোনার সময়:

    বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে মূলত আদা চাষের ভালো সময়। 

    ৪। আদা চাষে জমি ও মাটিঃ

    উঁচু জমি, বেলে-দোঁয়াশ ও দোঁয়াশ মাটি। 

    ৫। আদা চাষে সেচ ব্যবস্থা :

    সেচ লাগে না। উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা থাকা দরকার৷ গোড়ায় জল সহ্য করতে পারে না। 
    ৬। আদা সারি ও গাছের দূরত্ব : 
    সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫ সেমি বা ১০ ইঞ্চি৷ সারিতে বীচনের দূরত্ব ২০ সেমি বা ৮ ইঞ্চি।

    ৭। আদা চাষে সার প্রয়োগ :

    জৈব সারের চাহিদা বেশি। বিঘাতে ১২০০ থেকে ১৫০০ কেজি দরকার হয়। এছাড়া ১৩-১৮ কেজি রাসায়নিক মিশ্র সার (১০:২৬:২৬) দিলে ভালো। জৈব সার লাগানোর সময় অর্ধেক ৪৫ দিন পর চার ভাগের এক ভাগ এবং ৬০ দিন পর অবশিষ্ট চার ভাগের এক ভাগ হিসাবে ভাগ ভাগ করে দিলে ভালো হয়। খড় কুটোর আচ্ছাদন দিলে ভালো। জমিতে সবুজ সার করে নিলে জৈব সারের খরচ কমে যায়।

    ৮। আদা চাষে বীচনের হার: 

    ১৬০-১৭০ কেজি বীচন প্রতি বিঘায় লাগে৷ | বীচন লাগানোর আগে শোধন করে লাগানো উচিত৷ ২০০-৩০০ গ্রাম ট্রাকইকোডারমা ভিরিডি ১০-১৫ লিটার জলীয় দ্রবণে ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে বীচন শোধন করে লাগানো যায়৷ তবে বাজারে না পাওয়া গেলে  ম্যাঙ্কোজের বা তাম্রঘটিত রাসায়নিক দিয়েও শোধন করা যায়।

    ৯। আদা চাষে রোগপোকা নিয়ন্ত্রন: 

    পোকার মধ্যে কন্দ ছিদ্রকারী পোকা (রাইজোম বোরার) প্রধানত দেখা যায়। কাঠা প্রতি দেড় থেকে দুই কেজি নীম খোল লাগানোর ৪০-৪৫ দিন বয়সে প্রথমবার ও ৭৫-৮০ দিন ব্যবহার করলে সারের কাজও যেমন হয় কন্দ ছিদ্রকারী পোকাও সামাল দেওয়া যায়।
     রোগের মধ্যে কন্দ পচা (সফ্ট রট) ও পাতা ধ্বসা রোগ সাধারণত: দেখা যায়। এরোগ দেখা দেওয়া মাত্র ১০-১১ দিন অন্তর টাকা গোবরের নির্যাস ৩-৪ বার স্প্রে করলে নিরাময় হয়। এছাড়া বিঘাপ্রতি ৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি নামে জীবাণুনাশক জৈবসারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষে মাটিতে মিশালে
    নিরাময় হয়৷
    বেড করে মালচ্ বা ঢাকনা দিয়ে বীচন লাগাতে হবে। পরের মরশুমের জন্য বীচন আলাদা করে তুলে না রেখে একই জায়গায় রেখে দেওয়া ভালো৷ লাগানোর সময় তুলে লাগাতে হবে। 

    ১০ ।  সাথী ফসল :

    ৪ সারি আদার পর ১০ সারি অড়হর ধনচে (বীজের জন্য) লাগানো যায়।

    ১১। আদা উৎপাদন: 

    প্রতি বিঘায় ৩০-৩২ কুইন্টাল কন্দ বা আদা পাওয়া যায়।

    খ। বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি :

    বস্তায় আদা চাষ করে বহু কৃষক সফলতা পেয়েছে এবং দেখা গিয়েছে প্রচলিতভাবে চাষের তুলনায় ৩-৪ গুন্ বেশি উৎপাদন হয় কম জায়গাতে। বৃষ্টির ফলে আদা পাচার সম্ভাবনা থাকে না। 

    ১। বস্তায় আদা চাষ কৌশল :

    বস্তায় আদা চাষ এর জন্যে মাটি উর্বর করে নিয়ে তার সাথে ঝুড়ি প্রতি 
     ২ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি জীবাণুনাশক, ৫ গ্রাম পটাশ ,১০ গ্রাম সিঙ্গেল সুপার ফসফেট   এবং জৈব সার  ২ কেজি দিয়ে মিশিয়ে ঢেকে রাখতে হবে  ২১ দিন। 
    এর পর সিমেন্ট এর বস্তায় নিচে প্রথমে শুকনো পাতা  ৬ ইঞ্চি ভোরে তার উপর দুই ঝুড়ি মাটি ভোরে উত্তর দক্ষিণ করে এক সাথে  বস্তা লম্বা সারি করে বসাতে হবে মাঝে যাতায়াতের রাস্তা রেখে একই ভাবে আবার সারি করে বস্তা বসাতে হবে। 

    ২। বস্তায় আদা বীজ রোপন :

     এক বস্তায় ৫০ -১০০ গ্রাম ওজন ৩ ভাগে ৪ ইঞ্চি দুরুত্বে ত্রিভুজ আকৃতিতে মাটি থেকে ১ ইঞ্চি নিচে বসিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। 

    ৩। বস্তায় আদা চাষে সেচ ব্যবস্থা :

    লাগানোর বৃষ্টি না হলে মাটি একদম শুকনো হয়ে পড়লে হালকা জল দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। 

    ৪।  বস্তায় আদা চাষে সার প্রয়োগ :

    রোপনের ২ মাস পরে বস্তা প্রতি ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে হবে এবং ১ মাস পর পর সর্ষের খোল বস্তা প্রতি ৫০ গ্রাম  ৬ দিন ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। 

    ৫। বস্তায় আদা উৎপাদন :

    প্রতি বস্তা ১ কেজি থেকে দেড় কেজি আদা উৎপাদন হয়। 
    আরও দেখুন  -

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)