ওল কচু বাজারে একটি উচ্চ মূল্যের ফসল হয়ে উঠছে। একটি সময় এটি অবহেলিত ফসল হিসাবে একে গণ্য করা হত। 'ফেমিন ফুড' অথবা দুর্ভিক্ষের খাবার হিসাবে মর্যাদায় ওল শ্রেষ্ঠ ছিল একটি সময় । বর্তমানে ওলকচু দিয়ে বিভিন্ন ভাবে খাদ্য তৈরী করে গ্রহণ করা হচ্ছে তাই এর চাহিদাও বাড়ছে। প্রতি কেজি ওল ৬০ -৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। চাষ পদ্ধতিতে কৃষিবিজ্ঞানীরা ফলন বৃদ্ধির নতুন কিছু পদ্ধতি যুক্ত করছেন এর ফলে উৎপাদন বেশি পাচ্ছে কৃষকরা এবং ৬ মাসে আয় করছেন লক্ষাধিক টাকা।
১.ওল কচুর জাতঃ
কাভুর, সি-৩, সি-৪, দক্ষিণ ভারতের উন্নত জাত ৷ স্থানীয় ভালো জাত সাঁতরাগাছি।
২.চাষের মেয়াদঃ
ওল কচু চাষ ৬ মাস এর মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
৩.বোনার সময়:
চৈত্র-বৈশাখ (এপ্রিল-মে)। রাজ্যের শুকনো পশ্চিমাঞ্চলে যেমন - জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রথম বৃষ্টির সাথে সাথে লাগানো ভাল ।
৪.জমি ও মাটিঃ
উঁচু জমি ও বেলে দোঁয়াশ মাটিতেও ভাল হয়। জলনিকাশি ব্যবস্থা ভালো থাকা দরকার।
৫.সেচ ব্যবস্থা :
এপ্রিল মাসে লাগালে বৃষ্টি না আসা পর্যন্ত ১০ দিন অন্তর হালকা সেচ দেওয়া ভাল৷
৬.সারি ও গাছের দূরত্বঃ
সারি ও গাছের দূরত্ব ৭৫ সেমি বা ২.৫ ফুট। মাদা করে লাগাতে হবে। গর্তের মাপ ১-১.৫ ঘন ফুট। অর্থাৎ ১৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীর গর্ত করে কাটা মাটির অর্ধেক পরিমাণ জৈব সার দিয়ে মাদার মাটি তৈরি করতে হয়।
পরিচর্যা খুব কম লাগে৷ ৬০-৮০ দিন পর ওল গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।
তবে বীচনের জন্য ওল চাষ করলে ১৫০ গ্রাম কাটা ওল গোবর জলে ডুবিয়ে ১ ফুট অন্তর লাগাতে হবে। ওলের সজাগ ও বাড়ন্ত অগ্রমুকুল (চোখ) যেন প্রতি কাটা অংশে ১-২টি থাকে৷ ২-৩ ইঞ্চির বেশী গভীরে বীচন লাগালে ফলন কমে যায়৷
আরও দেখুন -জৈব চাষে রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণে সবচয়ে ভালো 16 টি সহজ ও পরিবেশমুখী কীটনাশক , ছত্রাক নাশক টোটকা
৭.বীজের হার:
প্রতি গর্তে ৫০০-৭০০ গ্রাম বীজ ওল বসাতে হবে তবে বীজের সাইজ বেশি হলে ওলের সাইজ বেশি বড় হয় । প্রতি বিঘাতে ১০৫০ টি বীজ রোপন করলে ভালো। বীজের হার ৬০-৬২ কুইন্টাল প্রতি হেক্টরে বা ৮০০-১০০০ কেজি প্রতি বিঘায়।
৮.সার প্রয়োগ :
জৈব সার বেশি করে দিতে হবে। প্রতিটি গর্তে ২-২.৫ কেজি গোবর সার, ২০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫ গ্রাম সুপার ফসফেট, ১৫ গ্রাম পটাশ সার দিলে ভাল হয়।
৯.সাথি ফসল:
দুই সারি ওলের মাঝে এক সারি অড়হর, বরবটি, ঢেড়শ ও লাল শাক সাথি ফসল হিসাবে চাষ করে বাড়তি ফলন পাওয়া যায়৷
১০.ওলকচুর উৎপাদন:
৫৫-৬৫ কুইন্টাল প্রতি বিঘায়৷ ৪০০-৫০০ কুইন্টাল প্রতি হেক্টরে।
১১. রোগপোকা প্রতিরোধ :
রোগের মধ্যে কন্দ পচা (সফ্ট রট) ও পাতা ধ্বসা রোগ সাধারণত: দেখা যায়। এরোগ দেখা দেওয়া মাত্র ১০-১২ দিন অন্তর টাটকা গোবরের নির্যাস ৩-৪ বার স্প্রে করলে নিরাময় হয়। এছাড়া বিঘাপ্রতি ৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি নামে জীবাণুনাশক জৈবসারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষে মাটিতে মিশালে নিরাময় হয়।
১২.ওলকচু চাষে লাভ -
ওল কচু চাষের প্রধান খরচ হয় বীজ ক্রয় করতে। বাণিজ্যিক ভাবে ওল কচু চাষ করলে প্রথম বছর বিঘা প্রতি ৬০- ৭০ হাজার টাকা খরচ হবে এবং বীজ রেখে দিলে পরের বছর থেকে শুধু চাষ ,সার ও পারিশ্রমিক খরচ লাগে তখন সব খরচ বাদ দিয়ে ১ লক্ষ টাকার উপরে লাভ থাকে।
১৩. তথ্য সূত্র -
ড: বিবেকানন্দ সান্যাল -লোক কল্যাণ পরিষদ
আরও দেখুন
২.বীজ আলু উৎপাদনের পদ্ধতি । আলুর প্রকৃত বীজ থেকে আলু চাষ করে