ওয়েস্টার/ঝিনুক মাশরুম চাষ পদ্ধতি -

Didibhai Agrofarm
0

ওয়েস্টার মাশরুম 20 থেকে 30 ডিগ্রি সেলসিয়াস  পর্যন্ত মধ্যবর্তী  তাপমাত্রায় ও 55-70% আর্দ্রতাতে  বছরে 6 থেকে 8 মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চাষ করা হয় ।



ওয়েস্টার বা ঝিনুক মাশরুম ( Pleurotus sp।) মূলত Basidiomycetes শ্রেণীর  এবং Agaricaceae ফ্যামিলি এর অন্তর্গত যা ভারতে 'ধীঙরি' নামে পরিচিত। সাধারণত  নাতিশীতোষ্ণ এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় জঙ্গলে পড়ে থাকা জীর্ণ গাছ এবং মাটিতে বা গাছের ভগ্ন  চিকন চিকন ডাল গুলিতে জন্মাতে দেখা যায় এছাড়া এটি  ক্ষয়প্রাপ্ত জৈব বস্তুর উপরেও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এদের অনেক মাশরুম আছে যেগুলি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ যোগ্য নয় এগুলি  বিষাক্ত হয়। মাশরুম  বিভিন্ন প্রজাতির উপর নির্ভর করে সাদা, ক্রিম, ধূসর, হলুদ, গোলাপী বা হালকা বাদামী রঙের বিভিন্ন ছায়াযুক্ত খোল বা স্প্যাটুলা আকৃতির হ। মাশরুমের বিভিন্ন প্রজাতি   বিভিন্ন কৃষি-জলবায়ু অবস্থার অধীনে সারা বছর চাষ করা যায়।   দ্রুত বৃদ্ধির হার এবং আগাম ফসল পরিলক্ষিত হয়।  মাশরুম বছরে প্রায় 5 থেকে 6 বার উৎপাদন করা যায় এর কারণ এই ফসলের উৎপাদন কার্যকাল ৬০ দিনের হয়। এটি 48-96 ঘন্টার মধ্যে যে কোনও ধরণের মাইকোলজিকাল মিডিয়ায় খুব সহজেই অঙ্কুরিত হয়। এর ছত্রাকদেহ  Pleurotus রঙের বিশুদ্ধ সাদা হয়।

    1.মাশরুম  উৎপত্তি -

    1917 সালে জার্মানিতে ওয়েস্টার বা  ঝিনুক মাশরুম ( Pleurotus ostreatus )  পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে প্রথম গাছের গুড়ির উপর উৎপাদন শুরু হয়ে ছিল।   এর পর তা ধীরে ধীরে যুক্ত রাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় উৎপাদন  শুরু হয় এবং ষাটের দশকের গোড়ার দিকে ভারতে বিভিন্ন ধরণের ঝিনুক মাশরুমের চাষ শুরু হয়েছিল।  বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছিল সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ।

    এই মাশরুম উৎপাদনকারী ভারতের প্রধান রাজ্যগুলি হল হিমাচল প্রদেশ , ওড়িশা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর -পূর্ব পার্বত্য রাজ্যের অধিকাংশ।

    2.ওয়েস্টের মাশরুম চাষের উপযুক্ত পরিবেশ -

    ওয়েস্টার মাশরুম 20 থেকে 30 ডিগ্রি সেলসিয়াস  পর্যন্ত মধ্যবর্তী  তাপমাত্রায় ও 55-70% আর্দ্রতাতে  বছরে 6 থেকে 8 মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চাষ করা হয় । গ্রীষ্মের মাসগুলিতে এটি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত আর্দ্রতা সরবরাহ করে চাষ করা যেতে পারে। তবে সমতল থেকে   900 মিটার এর উপরে পাহাড়ি এলাকাগুলিতে মার্চ,এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর,অক্টোবর পর্যন্ত এবং নিম্ন অঞ্চলে সেপ্টেম্বর,অক্টোবর থেকে মার্চ,এপ্রিল পর্যন্ত চাষের জন্যে সর্বোত্তম সময় হিসাবে গণ্য করা হয়।

    আরও দেখুন -মিল্কি মাশরুম চাষ পদ্ধতি ? মিল্কি মাশরুম থেকে উৎপাদিত পণ্য কি ? মিল্কি মাশরুম এর প্রোটিন গুনাগুন্ এবং উপকারিতা ? মিল্কি মাশরুম উৎপাদন এ লাভের পরিমান কি?

       3.ওয়েস্টার এর বিভিন্ন     জাতের চাষ-

     মাশরুমের মধ্যে যেমন বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে যার মধ্যে ওয়েস্টার মাশরুম এর মধ্যেও আবার ভাগ আছে। 

    সমস্ত চাষ করা মাশরুমের মধ্যে প্লিউরোটাসে  সর্বাধিক সংখ্যক বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয়, যা সারা বছর চাষের জন্য উপযুক্ত। গ্রীষ্মকালে সারা বিশ্বে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা প্রজাতির মধ্যে রয়েছে পি-ফ্ল্যাবেলটাস, পি সজোর কাজো, পি সেপিডাস, পি। , P.cornucopiae, P.fossulatus, P.eryngii ইত্যাদি।

    4.খামার নির্মাণের গঠন

    মাশরুম চাষের জন্যে মাশরুম উৎপাদন স্থলটি নিয়ম মতো করতে হয়। এটাও একটি ভালো উৎপাদন প্রাপ্তির জন্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

    সেই কারণে অর্থনৈতিক এবং বিজ্ঞানসম্মত এই দুটি দিক মাথায় রেখে ফার্ম  নির্মাণ করতে হবে ।

    মাশরুম চাষএর একটি প্ল্যান 

    ধানের খড় রাখার শেড

    ভেজানো খড় স্তর রাখার জায়গা

    মজুত ঘর

    স্পনিং করার জায়গা

    অফিস ঘর

    পথ

    ফসল উৎপাদন রুম ১

     

     

     

     

     

     

    পথ

    ফসল উৎপাদন রুম ২

    ফসল উৎপাদন রুম ৩

    ফসল উৎপাদন রুম ৪


    নির্মাণ কার্যের আগে যে যেখানেই প্রশিক্ষণ নিন না কেন নিজের শহরে কেমন তাপমাত্রা থাকে সে ব্যাপারে কয়েক বছরের গড় তাপন্যাত্রা পর্যালোচনা করে ফার্ম নির্মাণ করা উচিত।  আবহাওয়া কেমন থাকে ? যেমন তাপমাত্রা ও আদ্রতা কেমন তা জানা।  তার পর আপনাকে সময় অনুযায়ী মাশরুম  প্রজাতি নির্ণয় করে ঘর নির্মাণ করতে হবে ।

    প্রথমত ۔۔যে জায়গায় ফার্ম নির্মাণ করবেন সেই জায়গাটা যেন পরবর্তীতে প্রয়োজনে বাড়ানো যায় সেই রকম জায়গা নির্বাচন করবেন।  যে ঘর নির্মার করবেন সেটি  ত্রিভুজ আকৃতির করবেন দোচালা খড় বা এডভেস্টর দিয়ে নির্ম্মাণ করবেন। এর ফলে সূর্যালোক একভাবে উপরের ছাউনি তাপ দিতে পারবে না ফলে ঘরে কম গরম অনুভুত হবে।

    কারণ সূর্যের আলো যদি সমস্ত চালে পরে তাহলে সমস্ত গরম নিচে এসে পড়ে। যদি ছোট আকারে করেন তাহলে অন্তত দুটি ঘরে 7 দিন অন্তর উৎপাদন এর লক্ষ্যে রেখে সেই হিসেবে দুটি ব্যাচ এর জন্যে দুটি ঘর নির্মাণ করবেন এবং বীজ ভরা  এবং মজুত  ও উৎপাদিত ফসল মজুত এর জন্যে ঘর নির্মাণ করতে হবে ।  এছাড়া পর্যাপ্ত বাতাস পর্যাপ্ত পরিমান বায়ু চলাচলর  জন্য 75% গ্রিন শেড নেট ,বাশ , পাটশোলা , ধানের খর / পোয়াল /বিচালি ,যে কোনো একটি  দিয়ে  ঘরের চার দিক  বেড়া দিয়ে  ঘিরে দিতে হবে। অধিক তাপ বের বের করে দেওয়ার জন্যে প্রয়োজনে এক্সিস্ট  ফ্যান ব্যাবহার করা যেতে পারে তবে সেটি মেঝে থেকে 1 ফুট উপরে ব্যবহার করতে হবে।

    তবে অবশ্যই তাপমাত্রা এবং আদ্রতা নির্ণয়ক যন্ত্র হাইগ্রোমিটার রাখতে হবে।  জল স্প্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে ফার্মের ভিতরে। এর জন্যে আধুনিক সিস্টেম অবলম্বন করতে হলে ফগার ব্যবহার করা যেতে পারে। দিয়ে ঘরের চারিদিক ঘিরে দিতে হবে এবং প্রথম 15 দিন অন্ধকারে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে অন্যথায় আলাদা ঘর নির্মাণ করতে হবে। 

    এটা হল আপনার ব্যবসা শুরুর প্রথম ধাপ তাই এটা যদি ভুল হয়ে যায় তবে ব্যবসায় ঝুঁকির সংম্ভাবনা থেকে যাবে। তাই ফার্ম এর ভেতর বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা এবং সব কিছু আলাদা আলাদা বিভাগে সাজিয়ে কাজ করতে হবে। ফার্ম এর ভেতরে সিলিন্ডার গুলোকে যদি বসিয়ে করেন তবে রেক বা সেলফ বানিয়ে নিতে হবে বাশ বা অন্য যে কোনো পদ্ধতিতে  যা একটির থেকে আর একটি যে উপরে থাকবে তা দেড় থেকে দুই ফুট  ফাঁকা থাকে তাহলে উৎপাদিত ফসল তুলতে সুবিধে হবে। মেঝেতে যেন বালু থাকে তাহলে জল স্প্রে বা জল দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়ার ফলে মাটিতে ড্যাম হবে আদ্রতা ভালো থাকবে।  তাপমাত্রা বৃদ্ধির সময় বা গ্রীষ্মকালে ভালো উপকার পাওয়া যায়। 

    5।Substrate prepare/ স্তর প্রস্তুতি :-

    আমরা এতক্ষন ঘর বিষয়ে জানলাম এবার আমরা জানবো  মাশরুম সিলিন্ডার এর জন্যে কী কী লাগবে ও প্রস্তুত করব কী ভাবে ?

    a . ১৬ ইঞ্চি চওড়া ১৮ ইঞ্চি লম্বা সাইজ এর পিপি বা প্লাষ্টিক ব্যবহার করতে হবে।  এর থেকে বড় নেওয়া উচিত নয়। যে সমস্ত অঞ্চলে সর্বদা তাপমাত্রা নিন্মগামী থাকে সেই সব অঞ্চলে সিলিন্ডারের ভেতরে তাপ ধরে রাখার জন্যে বড় প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় কিন্তু যেই সব অঞ্চলে সর্বদা তাপ ওঠানামা করে এবং স্বাভাবিক থাকে সেই সব অঞ্চলে উল্লেখিত সাইজ সঠিক।

    b . ১ নং সাইজের রাবার গার্ডার এবং তুলা। 

     c . ধানের খড় বা পোয়াল / গমের ডাটি বা আখের রস নিসৃত খোসা ।

    d. নিম কেক ( যদি পারেন তো দিলে ভালো )।

    e. কোকো পিট্ বা নারকেল কেক ( এটাও দিলে ভালো হয় আবশ্যিক নয় )।

    f. খড় কাটার মেশিন (যেটি নিজেস্ব বাজারে কিনতে পেয়ে যাবেন) ।

    সিলিন্ডার তৈরির জন্যে স্তর প্রস্তুতির জন্যে সবচেয়ে যেটি ভালো হয় সেটি হলো খড় বা পোয়াল দ্বিতীয় চয়েস হল গমের ডাটা , তবে খড় ই ভালো হবে এবং এগুলোকে দেড় থেকে 2 ইঞ্চি সাইজের কেটে নিতে হবে ।

    তবে একটি কথা বলে রাখা ভাল যদি এর সাথে নিম কেক এবং কোকোপিট্ ব্যবহার করতে পারেন 1 কেজি সিলিন্ডার এ 1.5 কেজির উপর উৎপাদন পেতে পারেন। এর জন্যে শুদ্ধিকরণ করার পূর্বে যে পরিমান ওজনের খড় কাটা নিবেন তার 5% ওজনের নিঁম কেক এবং কোকোপিট বা নারকেল কেক বা ডাস্ট  প্লাটিকে বীজ ভরার পূর্বে মিশিয়ে নিতে হবে। 

    6.নির্বীজকরণ বা জীবাণুমুক্ত করা :--

    খড় কাটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ভুসি গুলুকে জীবাণু মুক্ত করুন করতে হবে এটী 2 টি পদ্ধতিতে করা যায়

    a. ক্যামিক্যাল এর মাধ্যমে

    b. বয়েল এর মাধ্যমে

    a.  কেমিক্যাল এর মাধ্যামে জীবাণুমুক্ত করন۔

    ধানের খড়/পোয়াল শুদ্ধিকরণের জন্যে আপনার সুবিধা মতো জিনিস ব্যবহার করতে পারেন। 200 লিটারের প্লাস্টিক ড্রাম/ কংক্রিট দিয়ে তৈরী গোল রিং/ পাকা ট্যাঁক বা প্লাস্টিক দিয়ে চৌবাচ্চা তৈরী করে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। 

    খড়  ভুসি গুলোকে আগে ভালো করে ধুয়ে বালু নোংরা গুঁড়ো  ছাড়িয়ে নিয়ে আলুর/পেঁয়াজের নেট বস্তায় ভরতে হবে অথবা সরাসরিও ভেজানো যেতে পারে তবে বস্তায় ভোরে নিলে সময় কম লাগে কাজ সম্পর্ণ করতে অথবা নেট দিয়ে ভালো করে ছেঁকে নিয়ে ধুলো বালি ও অবাঞ্চিত খড় গুঁড়ো বের করে নেওয়া যেতে পারে।  

    ক্যামিক্যাল পদ্ধতিতে খড় শুদ্ধিকরণ করা যায় কয়েকটি পদ্ধতিতে যেগুলি নিচে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে যে কোনো একটি পদ্ধতিতে খড় গুলি শুদ্ধিকরণ করে নিতে হবে। 

    বুঝার সুবিধার্থে 200  লিটার জলের ড্রাম দিয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় গুলি করা হল -

    প্রথম জৈব পদ্ধতি - 

    এটি একটি সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতি।  এই পদ্ধতিতে রাসায়নিক কোনো ক্যামিক্যাল ব্যবহার হয় না। এই পদ্ধতিতে করলে বাজারে ডিমান্ড ভালো পাওয়া যায়। এর জন্যে প্রয়োজন হয় ওয়েস্ট ডিকম্পোজার। অনলাইন পাওয়া যায়। এটি ভারত সরকারের গাজিয়াবাদ জৈব গবেষণা কেন্দ্রে আবিষ্কৃত একটি জৈব কালচার যার দাম মাত্র 20 টাকা। 

    ওয়েস্ট ডিকম্পোজার দিয়ে খড় শুদ্ধিকরণের পূর্বে এটি দিয়ে কালচার তৈরী করতে হয় এবং একবার তৈরী করলে সারাবছর ব্যবহার করা যায় (ছানার জলের মতো )। একটি ড্রামে 200 লিটার জল নিয়ে তাতে 2 কেজি গুড় দিয়ে ভালো করে গুলিয়ে নিয়ে ওয়েস্ট ডিকম্পোজার সমস্তটা ঢেলে দিতে হবে এবং ছায়া জায়গায় ঢেকে রেখে দিতে হবে ও প্রতিদিন 2-3 বার নাড়িয়ে দিতে হবে। 

     7 দিন পর রেডি হয়ে যায় ব্যবহারের জন্যে। 7 দিন পর থেকে যে কোনো দিন এই কালচার ব্যবহার করা যায়। তবে পুনরায় তৈরির জন্যে এই কালচার থেকে 10 লিটার তুলে রেখে দিলে  পরবর্তীতে আবার এই 10 লিটার দিয়ে একই ভাবে জলে গুড় মিশিয়ে নতুন কালচার তৈরী করা যাবে এবং এই ভাবে চলতে থাকবে। 

    খড় শুদ্ধিকরণের জন্যে করণীয়- 

      একটি 200 লিটারের ড্রামে 100 লিটার জল নিতে হবে।

    ওই 100 লিটার জলের 15% অর্থাৎ 15 লিটার ওয়েস্ট ডিকম্পোজার কালচার যেটি আগে তৈরী করা হয়েছে সেটি ঢেলে দিয়ে ভালো করে নাড়িয়ে 10-15 কেজি খড় ঢেলে দিয়ে ভালো করে চেপে ভিজিয়ে দিয়ে 16-18 ঘন্টার জন্যে ড্রামের মুখ বেঁধে রেখে দিতে হবে। এর পর খড় গুলিকে সেখান থেকে তুলে এনে জল ঝরানোর জন্যে 24 ঘন্টা গরমের দিন হলে শেডের নিচে এবং শীতের দিন হলে হালকা রোদে একটি পলিথিনের উপর ছড়িয়ে দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে উলোট পালট করে দিতে হবে। যখন হাত দিয়ে চেপে ধরলে রস বের হয়না কিন্তু ভেজা আছে বুঝা যাবে তখন spawn  ভরার উপযোগী হবে। 

     দ্বিতীয় রাসায়নিক পদ্ধতি -

     একটি 200 লিটারের ড্রামে  100 লিটার জল নিতে হবে। 

     ফরম্যালিন 125 এম.এল এবং বেভিস্টিন (50% কার্বোন্ডাজিম ) 10-12 গ্রাম দুটি জলে ভালো করে গুলিয়ে নিয়ে তাতে 10-15 কেজি কাটা খড় গুলি ঢেলে দিয়ে ভালো করে জলে ভিজিয়ে দিয়ে উপরে ভার দিয়ে চাপ দিয়ে রাখতে হবে যেন খড় গুলির উপরে পর্যন্ত জল থাকে এর পর মুখ ঢেকে দিয়ে 16-18 ঘন্টা রেখে দিতে হবে। ভেজানোর পর ঠিক জৈব পদ্ধতির মতোই জল ঝরিয়ে ব্যবহার করতে হবে। তবে স্পন/বীজ ভরার পূর্বে 200 গ্রাম জিপসাম পাউডার মিশিয়ে উলোট পালট করে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। 

    তৃতীয় রাসায়নিক পদ্ধতি -

    একটি 200 লিটারের ড্রামে  100 লিটার জল নিতে হবে। 

    ব্লিচিং পাউডার 25 গ্রাম। 

    ক্যালসিয়াম কার্বনেট (চুন) 1 কেজি। 

    ফরম্যালিন 25 এম এল। 

    উপরোক্ত তিনটি ভালো করে জলে মিশিয়ে নিয়ে 10-12 কেজি খড় ঢেলে দিয়ে ভালো করে ভিজিয়ে চাপ দিয়ে রেখে ঢেকে রাখতে হবে 16-18 ঘন্টা। এর পর ভেজা খড় গুলিকে তুলে 24 ঘন্টা পলিথিনে মেলে দিয়ে জল ঝরিয়ে যখন হাত দিয়ে চেপে ধরলে জল বের হবে না কিন্তু ভেজা ভাব থাকবে তখন বেভিস্টিন (50% কার্বোন্ডাজিম ) 25 গ্রাম খড়ের সাথে মিশিয়ে উলোট পালট করে নিয়ে স্পন বা বীজ ভরতে হবে। তবে ভেজানোর সময় বস্তায় ভোরে ভেজানো ভালো এবং ভেজানো শেষ হয়ে গেলে বস্তা গুলোকে তুলে একটি বাসের ওপর বস্তাগুলি দু দিকে অর্ধেক করে দিয়ে ঝুলিয়ে রাখলে জল তাড়াতাড়ি ঝরে এবং এর পর পলিথিনে শুকোতে দিলে তারা দ্রুত প্রয়োজনীয় শুকনোভাব পাওয়া যায়। 

    চতুর্থ রাসায়নিক পদ্ধতি -

    তৃতীয় পদ্ধতির মতোই একই ভাবে 200 লিটারের ড্রামে 100 লিটার জলে 10-15 কেজি খড় গুলি ভিজিয়ে এবং জল ঝরিয়ে নিতে হবে। স্পনিং করবার পূর্বে শুদ্ধিকরণ করা খড়ের সাথে চুন জিপসাম বা ক্যালসিয়াম সালফেট 250 গ্রাম ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে , বেভিস্টিন (50% কার্বোন্ডাজিম ) 25 গ্রাম , হান্টার 50 দিতে হবে 10 গ্রাম এবং একটি প্যারাক্সিন (paraxin)500 ক্যাপসুল  ভেঙে সব একত্রে মিশিয়ে খড়ের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। 

     উপরোক্ত যে পদ্ধতি গুলি উল্লেখ করা হয়েছে সব পদ্ধতিতেই ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। 100 লিটার জলের মধ্যে মিশ্রণ গুলি বলা হয়েছে। নিজেরা করার সময় যে পরিমান জল নিবেন সেই হিসাবে ক্যামিক্যাল ও খড় পরিমান গুলি বাড়িয়ে কাজ করবেন।   তবে আমাদের সকলের উচিত বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন করা এক্ষেত্রে জৈব পদ্ধতি গ্রহণ করাই ভালো। 

    b. বয়েল পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত করন ۔۔

    এই পদ্ধতিটিকেও জৈব পদ্ধতি বলা হয় কারণ এই পদ্ধতি গ্রহণ করলে ক্যামিক্যাল এর প্রয়োজন হয় না এবং ক্যামিক্যাল পদ্ধতির তুলনায় 7-10 দিন আগে উৎপাদন শুরু হয় । স্পনিং করার 18-20 দিনে বের হতে শুরু করে। 

    এটিও দুটি পদ্ধতিতে খড় গুলিকে জীবাণু মুক্ত করা যায় - 

    80 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম জল করে তাতে ঝাড়াই করা খড় গুলিকে ভিজিয়ে নিয়ে জল ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত রেখে দিতে হবে।  এর পর খড় গুলিকে তুলে নিয়ে জল ঝরানোর জন্যে পলিথিনের ওপর মেলে দিতে হয়। গরমের দিন হলে শেডের নিচে এবং শীতের দিন হলে হালকা রোদে। এর পর যখন দেখা যাবে খড় গুলিকে হাতে নিয়ে চাপ দিলে জল ঝরে পড়ছে না বিন্দু পরিমাণও কিন্ত ভেজা ভাব আছে তখন এটিকে স্পনিং এর জন্যে ব্যবহার করা যাবে। 

    দ্বিতীয়টি হল স্ট্রিম পদ্ধতিতে এই পদ্ধতিতে খড় গুলিকে জলে ভেজাতে হয় না। এর জন্যে একটি লোহার ড্রাম নিতে হয় এবং কোনো দিকে যেন ছিদ্র না থাকে সেটি লক্ষ্য করতে হবে। যদি ছিদ্র থাকে তবে সেটিকে ঝালাই দিয়ে বন্ধ করে নিতে হবে। এর পর ড্রামের পেটে একটি 3×4" রিফিল পাইপ লাগাতে হয় চাবি দিয়ে ভেতরে কতটা জল আছে পরিমাপের জন্যে এবং আর একটি পাইপ ড্রামের উপরি তলা বা নিচ তলাতে ড্রামের পেটে যে সাইডে আগে পাইপ লাগানো হয়েছে ঠিক সেই  সাইডে 3×4" ইঞ্চি রিফিল লাগাতে হবে ও কিছু দূর পড়ে একটি একটি চাবি সহযোগে পাইপের উপরে T লাগিয়ে পাইপ রাখতে হবে যেন বাস্প প্রেসার তৈরী হয়েছে কতটা বুঝা যায় এবং প্রয়োজনে সেটি দিয়ে ড্রামে জল প্রবেশ করানো যায় । এবং ওপর একটি পাইপ প্লাস্টিক হলেও চলবে কিছু দূর রেখে দিতে হবে ওপর একটি একটি প্লাস্টিক ড্রামের নিচে 3×4" রিফিল লাগিয়ে তাতে পাইপ লাগিয়ে দিলে বাস্প গুলো সেই ড্রামে প্রবেশ করবে। 

    সব রেডি হয়ে গেলে ড্রামটিকে শুয়ে দিয়ে নিচে আগুন দিয়ে গরম করা যায় এমন একটি চুলা বানাতে হবে।  এর পর চুলার ওপর ড্রাম টিকে শুয়ে দিয়ে সেট করে নিতে হবে এবং যে পাইপ লাগানো হয়েছিল সেটি যেন ওপর দিকে থাকে। পাইপ দিয়ে জল ভরতে হবে ড্রামের অর্ধেক পর্যন্ত এবং বাকি অর্ধেক যেন ফাঁকা থাকে। এর পর আগুন দিয়ে গরম করা শুরু করতে হবে। 

    প্লাস্টিক রিফিল লাগানো ড্রামটিতে খড় ভোরে দিতে হবে এবং লোহার ড্রামের পাইপটি জুড়ে দিতে হবে প্লাস্টিকের ড্রামের সাথে। বাস্প প্রেসার তৈরী হয়েছে কি না তা দেখার জন্যে চাবি খুলে দেখতে হবে যদি প্রেসার তৈরী হয় তবে সেই পাইপ দিয়ে ধুয়ার মতো বের হতে থাকবে তখন প্লাস্টিকের ড্রামের পাইপের চাবি টি খুলে দিতে হবে এবং 1 ঘন্টা রেখে দিলে খড় গুলি বাস্পে অনেক গরম হয়ে ভেজা ভেজা হয়ে যাবে এবং শুকোতে দিলে দ্রুত শুকিয়ে যাবে। পদ্ধতি টি গ্রহণ করলে লাভ কম জ্বালানি খরচে এবং কম সময়ে অনেক কাজ সম্পূর্ণ করা যায়। 

    এই পদ্ধতি দেখার জন্যে যে কোনো বড় রাইস মিলে বা ধান সেদ্ধ করা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখতে পারবেন।

    এছাড়াও আরো কম খরচে একটি লোহার ড্রামের মুখ কেটে নিয়ে নিচে 6 ইঞ্চি জল রেখে তার 1 ইঞ্চি উপরে একটি নেট বসিয়ে রাখা যায় সেই মাপের স্ট্যান্ড বানিয়ে ভেতরে প্রবেশ করিয়ে তার ওপর খড় ভোরে দিয়ে ড্রামটির নিচে আগুন দিয়ে গরম করলেও খড় গুলি বাস্পে গরম হয়ে জীবাণু মুক্ত হয়ে যায়।

    খড় জীবাণু মুক্তের পরে যদি জল আর না থাকে তখন সরাসরি স্পনিং করা যায়। 

    বি:দ্রঃ -   10-15  কেজি শুকনো খড়ের জীবাণু মুক্ত খড়ের সাথে জিপসাম বা ক্যালসিয়াম সালফেট 150-200 গ্রাম  ভালো করে মিশিয়ে স্পনিং করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে এর ব্যবহার আবশ্যিক নয়।

    6. spawning /বীজ বসানো :--

    • ভালো স্পন অবশ্যই  ক্রয় করতে হবে বিস্বস্থ প্রতিষ্ঠান থেকে। যেখানে সেখানে থেকে ক্রয় না করাই ভালো। স্পন তৈরীর 7 দিন পর এবং 30 দিনের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে। যতক্ষণ স্পন সাদা থাকবে ততদিন পর্যন্তই সেই স্পন ব্যবহারের উপযোগী। তাই ক্রয়ের পূর্বে যাচাই করে নিতে হয়।  স্পন ভালো না হলে উৎপাদন ভালো পাওয়া যাবে না ।
    • যে পদ্ধতি অবলম্বন করে করে খড় গুলি বিশুদ্ধকরণ করবেন সেই পদ্ধতিতে করে নিয়ে স্পন ভরার কাজ শুরু করতে হবে। 10 কেজি শুকনো খড়ের জন্যে 1 কেজি স্পন এর প্রয়োজন হয় তাই ভেজানোর সময় কত কেজি খড় নেওয়া হয়েছিল সেটি মনে রাখা আবশ্যক। 
    • স্পনিং দুটি পদ্ধতিতে করা যায় - একটি খড়ের সাথে স্পন গুলি ভালো করে উলটপালট করে   মিশিয়ে নিয়ে প্যাকেটে ভরতে হয় । 
    • অপর পদ্ধতি হল লেয়ার তৈরী করে।  এই পদ্ধতিতে করলে প্রথমে প্লাষ্টিকের ভেতর প্রথমে কিছুটা খড় একটু চেপে ভরে দিয়ে যেন হওয়া বের হয়ে যায় তারপর আবার স্পন চারিদিক দিয়ে আবার খড় দিয়ে আবার স্পন এর পর আবার খড় দিয়ে পেকেট এর মুখ বেঁধে দিতে হয় চাপ দিয়ে হাওয়া বের করে দিতে হয়। 

    স্পনিং বা বীজ ভরানোর সময় সাবধানতা গুলি -

    • বীজ ভরানোর পূর্বে হাতে স্প্রিট বা স্যানিটাইজার মেখে শুরু করবেন ও যে পাত্রে বীজ ঢেলে রাখা হবে সেটিও জীবাণু মুক্ত করে নিবেন। 
    • 16×18 সাইজের যে প্লাস্টিক নেওয়া হবে তার নিচের অংশের দুটি কোনা অল্প কেটে দিতে হবে যেন জল নিঃসৃত হলে নিচ দিয়ে বেরিয়ে যায়। যদি বস্তার মতো প্যাকেট করা হয় তবে এটি করতে হবে। 
    • যদি প্যাকেটের নিচ গোল রাখতে চাওয়া হয় তবে প্রথমে প্যাকেটের নিচের অংশ কুচি করে গার্ডার লাগিয়ে বেঁধে নিতে হবে এবং পরে সেটিকে উলটিতে ভেতরের দিকে রাখলে গোল হয়ে যাবে এবং নিচে দু তিনটি ফুটো করতে হবে। 
    • খড় ভরার সময় চাপ দিয়ে ভেতরের হাওয়া বের করে দিতে হবে। 
    • প্যাকেটের বিভিন্ন জায়গায় 12-14 টি ফুটো করে দিতে হবে। ফুটো গুলো যেন নির্দিষ্ট দূরত্বে করা হয়। 
    • ফুটো করার পর ফুটো গুলো তে একটু করে তুলো ঢুকিয়ে রাখতে হবে এবং 15 দিন পর বের করে দিতে হবে। 
    • স্পন ভরা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে সেগুলিকে 15   দিনের জন্যে অন্ধকার ঘরে রাখতে হবে যেখানে এল বাতাস প্রবেশ করবে না। 

    আরও দেখুন  মাশরুম প্রোডাক্ট ডাল বড়ি , মাশরুম পাঁপড় ,মাশরুম বিস্কুট তৈরী পদ্ধতি

    7. উৎপাদন সময় পর্যবেক্ষণ -

    •  যে ঘরে মাশরুম উৎপাদন করা হবে সেই ঘরের মেঝেতে বালু রাখলে ভালো ফল পাওয়া যাবে বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন তাপমাত্রা উর্ধমুখী থাকবে তখন মেঝে ভিজিয়ে দিতে হবে। 
    • মাশরুম উৎপাদন কক্ষে প্রবেশের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। ধরার সময় হাতে স্প্রিট বা স্যানিটাইজার মেখে ধরতে হবে। যাকে তাকে বা যেখানে সেখানে থেকে ঘুরে এসে মাশরুম ঘরে প্রবেশ করা উচিত নয়। 
    • প্রবেশদ্বারে প্রয়োজনে পটাসিয়াম পারমেঙ্গানেট গুলানো জল রাখা উচিত এবং সেখানে পা দিয়ে তবেই প্রবেশ করা উচিত। সচেতন না হলে একবার রোগ লাগলে সমস্ত মাশরুম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 
    • ঘরের মেঝেতে ১ লিটার জলে ১ গ্রাম ব্লিচিং মিশিয়ে মাঝে মাঝে ব্যবহার করা উচিত। 

    a. রুমে হাইগ্রোমিটার ব্যবহার করতে হবে। 

    b. বীজ বা স্পন ভরার পর 15 দিনের জন্যে অন্ধকার ঘরে রাখতে হবে। এই সময়ে হাওয়া বাতাস ও আলো প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই সময় মাইসেলিয়াম জাল বিন্যাসের জন্যে প্রচুর কার্বনডাই অক্সাইড এর প্রয়োজন হয় তাই অন্ধকার রাখা আবশ্যক। যত সাদা হতে থাকবে বুঝতে পারবেন মাইসেলিয়াম ভালো বৃদ্ধি পাচ্ছে।  রুম এর তাপমাত্রা রাখার চেষ্টা করতে হবে 20 - 25°C এবং ব্যাগ এর ভেতরে থাকবে 20 - 28°C। ব্যাগ এর তাপমাত্রা সর্বদা রুম এর তাপমাত্রার থেকে 2-3°C বেশি থাকবে।

     তবে রুমের তাপমাত্রা 4-5°C উঠা নামা করলে তেমন সমস্যা হয় না কিন্ত যথাযথ তাপমাত্রা রাখার চেষ্টা করতে হবে। ব্যাগ এর তাপমাত্রা মাপার জন্যে তাপমাত্রা মাপক যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। মাপার সময় যদি সেলফ এ বা ঝুলিয়ে রাখা হয় তবে উপরের ব্যাগ এর এবং নিচের ব্যাগ এর তাপমাত্রা কত আছে মাঝে মাঝে কয়েকটি প্যাকেটে তাপমাত্রা মাপক যন্ত্র ঢুকিয়ে পরীক্ষা করলে হয়। 

    c. 15 দিন হয়ে গেলে 16 দিন থেকে মাশরুম পিন বের হওয়ার সময় তাই এই সময়ে প্যাকেট থেকে সব তুলো বের করে দিতে হবে। এই সময় রুমের তাপমাত্রা থাকবে 20-25°C এবং ব্যাগের তাপমাত্রা রুম এর বা মাশরুম কক্ষের তাপমাত্রার থেকে 2-3°C বেশি থাকবে । তবে ওয়েস্টার মাশরুম প্রজাতি ভেদে কিছুটা তারতম্য হয়। এই সময়ে দিনে 6 ঘন্টা হাওয়া বাতাস রুমের ভেতরে প্রবেশ প্রয়োজন হয়। 

    তবে মাথায় রাখতে হবে শীত এবং গ্রীষ্মকাল অনুযায়ী সময় টা আলাদা হয়। যদি গরম তাকে বা বাইরে তাপমাত্রা বেশি থাকে তবে তখন সন্ধ্যার পর হাওয়া খাওয়াতে হবে র যদি ঠান্ডা থাকে রুমের থেকে বাইরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে তখন দিনের বেলা হাওয়া খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। রুমের ভেতর যদি এক্সিস্ট ফ্যান সেট করা থাকে এবং মেঝে থেকে 6 ইঞ্চি থেকে 1 ফুট উপরে যেন থাকে তবে হাওয়া কিভাবে খাওয়াতে হবে এবং এক্সিস্ট ফ্যান কিভাবে চালাতে হবে নিচে উল্লেখ করা হল -

    • প্রথম এক ঘন্টা এক্সিস্ট ফ্যান চালাতে হবে এবং ভেতরে হাওয়া প্রবেশের জন্যে কিছুটা জানলা দরজা খুলে দিতে হবে। এই সময়ে অক্সিজেন এর প্রয়োজন হয় এবং কার্বনডাই অক্সাইড বের করে দিতে হয় রুম থেকে। 
    • দ্বিতীয় 1 ঘন্টা শুধু হাওয়া প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং এক্সিস্ট ফ্যান বন্ধ থাকবে। 
    • তৃতীয় 1 ঘন্টা জানালা দরজা এক্সিস্ট ফ্যান সব বন্ধ থাকবে। 
    • তৃতীয় 1 ঘন্টা জানালা দরজা খোলা রেখে হাওয়া বাতাস খাওয়াতে হবে। 
    • চতর্থ 1 ঘন্টা জানালা দরজা এক্সিস্ট ফ্যান সব বন্ধ থাকবে। 
    • পঞ্চম 1 ঘন্টা শুধু হাওয়া প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং এক্সিস্ট ফ্যান বন্ধ থাকবে। 
    • ষষ্ঠ এক ঘন্টা এক্সিস্ট ফ্যান চালাতে হবে এবং ভেতরে হাওয়া প্রবেশের জন্যে কিছুটা জানলা দরজা খুলে দিতে হবে। 

    d. ঘরে আদ্রতা 75% উপরে থাকবে। কম থাকলে ঘরের ভেতর স্প্রে করতে হবে তবে প্যাকেটের গায়ে স্প্রে করা আবশ্যক নয় , শুধু ফাঁকা জায়গা গুলোতে করতে হবে। হিউমিডিটি ফায়ার বা ফগার চালাতে হবে এর জন্যে অটোমেটিক মেশিন ব্যবহার করা যেতে হবে যখন প্রয়োজন হবে তখন চলবে। ফসলের গায়ে বেশি জল ব্যবহার হলে টেকসই কমে যায় এবং ভালো বাজার মূল্য পাওয়া যায় না। 

    e. যদি কোনো প্যাকেট এর ভেতরে কালো হতে থাকে বা পোকা দেখা যায়  তবে সেটি সেখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। 

    f. ঘরের ভেতর পোকার উপদ্রব দেখা দিলে রুমের যে কোনো দেওয়ালে একটি হলুদ কার্ড বা হলুদ কার্ডে আঠা লাগিয়ে কম আলো  লাইটের সাথে ঝুলিয়ে রাখতে হবে এবং পোকা হলুদে আকৃষ্ট হয়ে সেখানে বসে মারা যাবে। 

    g. ঘরের বাইরে চারিদিকে ইমিডাক্লোরোপিড গ্রূপের ঔষধ স্প্রে করতে হবে। 

    h. পিন বের হওয়ার 3-4 দিন পর চেরার উপযোগী হয় তাই সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। 

    8.মাশরুমে রোগ পোকার আক্রমণ -

     a.বিভিন্ন ধরণের মাছি ফ্লোরিড মাছি ,সেসিড মাছি ,স্কাইভ মাছি  মাশরুম এবং স্পন এর গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে সিলিন্ডার এর উপরে এসে বসে লার্ভা উৎপন্ন করে এবং পরবর্তীতে সেগুলি মাশরুম পিন গুলিকে খেয়ে ফেলে বা ছিদ্র করে দেয় এর ফলে উৎপাদন ও সৌন্দর্য্য ব্যাহত হয় এবং কাঙ্খিত দাম বাজার মুখ্য পাওয়া যায়না। 

    প্রতিকার হিসেবে -ঘরের চারিদিকে বা জানালা থাকলে নাইলন নেট টাঙিয়ে দেওয়া উচিত এবং মাছি নিধন ফাঁদ বেবহার করা উচিত। 

    b.অনেক সময় মাশরুম ব্যাগ গুলি ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয় । যেমন অ্যাসপারগিলাস এসপি, ক্ল্যাডোস্পোরিয়াম এসপি ইত্যাদি।  এগুলি দ্বারা চাষের জন্য ব্যবহৃত স্তরটিতে অনেক সময় আক্রান্ত হতে দেখা যায় ।   প্রতিকার এর জন্যে  ব্যাভিস্টিন বা অন্য ছত্রাক নাশক  দিয়ে পরিমাপ মত স্প্রে করে  নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।

    c.  মাশরুমে  হলুদ দাগ, বাদামী দাগ এবং ব্যাকটেরিয়া পচা রোগের আবির্ভাব দেখা যায়। এর কারণ ক্রমবর্ধমান সময়কালে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা যথাযথ ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকা। 

    প্রতিকার এর জন্যে প্রয়োজনে 3 - 5 দিনের ব্যবধানে 100 - 150 পিপিএম মুক্তভাবে ক্লোরিনযুক্ত জলের নিয়মিত প্রয়োগ করা যেতে পারে। 

    d.এছাড়াও ছোট শামুক এবং ইঁদুরের আক্রমণ দেখা যায় সিলিন্ডারে এর ফলে সিলিন্ডার ছিদ্র হয় ও মাশরুম চুষে খায়। 

    প্রতিকার হিসাবে প্রযোবেক্ষনে রেখে শামুক বাইরে ফেলে দিতে হবে এবং ইঁদুর ধরার জন্যে ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। 

    9.মাশরুম ফসল সংগ্রহ :-


    মাশরুম  দেহের আকৃতি ও আকার দেখে বাছাইয়ের সঠিক আকৃতি বিচার করা যায়।  ফলের দেহগুলি স্পোর মুক্তির আগে কাটা উচিত, মোচড় দিয়ে। একটি জায়গা  থেকে এক সময়ে সব মাশরুম একবারে বাছাই হয় এবং এই ভাবে ফসল আসার 5 দিন পর পর 3 বার ফসল সংগ্রহ করা যায় এবং 60 দিনের মাথায় সম্পূর্ণ রূপে উৎপাদন  শেষ হয়ে যায়। 


    10.মাশরুম স্টকিং :
    -


    মাশরুম উৎপাদন হয়ে গেলে নির্ধারিত সময়ে সংগ্রহ করতে হয় না হলে সেটি র গুণগত রং এবং মান থাকে না। কিন্তু ভালো মূল্যের জন্যে দু একদিন দেরি হয় সেই সময় কাঁচা মাশরুম সংরক্ষণ পদ্ধতি জেনে  নিয়ম মতো স্টক  করতে হয়। 

    11.প্যাকিং এবং পরিবহন:-

    তাজা মাশরুমগুলি ছিদ্রযুক্ত পলিথিন ব্যাগে ভরে রাখা হয়।  চূর্ণ বরফ ধারণকারী এবং কাগজে অবজার্ভ  করা পলি পাউচগুলি ট্রে/ঝুড়িতে রাখা হয় যা পর্যাপ্ত বায়ুচলাচলের জন্য পর্যাপ্ত ছিদ্রযুক্ত পাতলা পলিথিন শীট দিয়ে আবৃত থাকে। পরিবহনের পরিমাণের উপর নির্ভর করে প্রি-প্যাকেড পাউচগুলি (250 বা 500 গ্রাম) ট্রাক, বাসে সড়ক পথে পরিবহন করা যায়।


    12.মাশরুম বাজার মুখী করা -


    মাশরুম উৎপাদনের পর যদি মাশরুমকে সঠিক জায়গায় বিক্রয় করা যায় তাহলে লাভ বেশি হয় এবং তার জন্যে কোথায় ভালো চাহিদা আছে তার খোঁজ রাখা আবশ্যক। মাশরুম কাটার পর সাধারণ ভাবে বেশি দিন ঘরে রাখা যায় না। কাঁচা মাশরুম ভালো দামে বিক্রয় করতে না পারলে মাশরুম শুকিয়ে বা পেস্ট করে মাশরুম পণ্য ডাল বড়ি ,পাপর ,বিস্কুট ইত্যাদি তৈরী করে ভালো দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। 


    13.মাশরুমের বর্জ অবশেষ এর ব্যবহার :-


    ব্যবহার করার পর সিলিন্ডার প্লাস্টিক মুক্ত করে বর্জ গুলিকে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির পদ্ধতি জেনে নিয়ে  ট্যাংক করে বা পলিথিন ব্যাগ  পাওয়া যায় ভার্মিকম্পোস্ট এর জন্যে তাতে জমা করে কেঁচো ছেড়ে দিলে 4-5 মাসে কেঁচো সার হয়ে যাবে যার বাজার মূল্য ভালোই আছে | বলা যেতে পারে প্রকৃতিকে উপহার দেওয়া হল আপনার এবং খড়ের খরচ উঠে যাবে সার বিক্রয় করে ।


    14.মাশরুমের প্রোটিন গুনগুন :-


    মাশরুম একটি সহজ পাচ্য খাদ্য।  এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ,ভিটামিন সি থাকে এছাড়াও 18  ধরণের এমাইনো এসিড থাকে। সবজির মতো মাশরুমে 9 % আদ্রতা থাকে এবং কম ক্যালোরি (0 .3 %) থাকে। এটি সহজপাচ্য হাওয়ায় শিশু ,বৃদ্ধ সকলেই খেতে পারেন। এই খাদ্য গ্রহণের ফলে রক্তাল্পতা ,কৌষ্ঠকাঠিন্য ,ডায়বেটিস এবং হাইপারটেনশনে ভালো উপকার পাওয়া যায়। 


    15.বাণিজ্যিক মাশরুম চষে লাভ -


    মাশরুম চষে পরিকাঠামো নির্মাণ খরচ বাদ দিয়ে শুধু উৎপাদন খরচ ধরলে একটি সিলিন্ডার উৎপাদন খরচ হয় 30  টাকা এবং উৎপাদন হয় 1.5 -2কেজি (এলাকা ভেদে দাম কম বেশি হতে পারে)। কাঁচা মাশরুম সর্বনিন্ম দাম ১৫০ টাকা কেজি বিক্রয় হয় এবং উর্ধে 250 -300  টাকা কেজি। সুতরাং সর্বনিন্ম  উৎপাদন এবং  সর্বনিন্ম  দাম ধরলে একটি সিলিন্ডার এর ফসল 225  টাকা বিক্রয় হয়।  তাহলে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় 200 টাকা লাভ হয়। যদি  দৈনিক 5  টি করে মাসে 150  টি সিলিন্ডারে মাশরুম উৎপাদন  করা যায় তবে  30000  টাকা মাসে আয় হয়। দৈনিক করলে লাভ এটাই ফসল একদিনে বেশি উঠবে না প্রতিদিন 5 -10 কেজি চিন্তাবিহীন ভাবে ভালো দামে বিক্রয় করা যাবে।  আবার যদি মাশরুম প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পণ্য তৈরী করে লেবেল লাগিয়ে বিক্রয় করা যায় তবে লাভের পরিমান আরও বৃদ্ধি পাবে। 


    FAQ ( প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর )


    1.মাশরুম কি ?

    মাশরুম হল একধরণের ছত্রাক যাকে গ্রামাঞ্চলে ব্যাঙের ছাতা বলে থাকে। গ্রিক শব্দ মার্কোস থেকে মাশরুম শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। এটি খুব সুস্বাদু অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য। 

    2 .মাশরুম এর উপকারিতা কি ?

    মাশরুম একটি সহজ পাচ্য বা হজমশীল খাদ্য তাই ছোট বড়ো সকলেই খেতে পারে। এটি কোলেস্টরল ফ্রি খাদ্য এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ,ভিটামিন সি এবং 18 রকমের এমাইনো এসিড থাকে। ক্যালসিয়াম আয়রনের উপস্থিতি থাকে। মাশরুম সেবনে  ডায়বেটিস ,রক্তাল্পতা , হৃদরোগ , গ্যাস ,কোষ্টকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যাতে কার্য্যকরী ভূমিকা রাখে। 

    3 .মাশরুম দিয়ে কি কি রেসিপি তৈরী করা যায় ?

    রান্না করার পর মাশরুমের থেকে মাংসের ফ্লেভার পাওয়া যায় তাই এটিকে গরিবের মাংস বলা হয়ে থাকে। মাশরুম দিয়ে মাশরুম কারী,মাশরুম পোলাও ,মাশরুম আচার ,মাশরুম পকোড়া , মাশরুম ফ্রাই ইত্যদি রেসিপি তৈরী করা যায়। 

    4 .মাশরুম দিয়ে কি কি পণ্য তৈরী করা হয় ?

    মাশরুম কে শুকিয়ে বা কাঁচা অবস্থায় পেস্ট বানিয়ে নিয়ে  বিভিন্ন পণ্য তৈরী করা হয়ে থাকে যেমন -মাশরুম ডালবড়ি ,মাশরুম পাপর ,মাশরুম বিস্কুট ,মাশরুম নুডুলস ,মাশরুম দই ইত্যাদি। 


    তথ্য সূত্র - 

    1 .Directorate of Mushroom research -Indian council of Agriculture Research (DMR-ICAR )

     2 .Indian institute of Horticulture research  (IIHR-ICAR)

    3. National centre for organic and Natural farming (Govt.of India)

    4. International Mushroom Research & development.


    আরও দেখুন -

    1.কাচা মাশরুম প্যাকেজিং , সংরক্ষণ বা স্টোরেজ পদ্ধতি


    2.দেশি ,সোনালী ,ব্রয়লার মুরগির ঔষধ ও খাদ্য তালিকা


    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)