ভুট্টা চাষের পদ্ধতি-2022

Didibhai Agrofarm
0

 

ভুট্টা চাষের পদ্ধতি-2022


বিশ্ব কৃষি ক্ষেত্রে ভুট্টা একটি জনপ্রিয় উৎপাদনশীল ফসল। সবচেয়ে বেশি ভুট্টা উৎপাদন হয় ইউনাইটেড স্টেট্ অফ আমেরিকাতে। বিশ্বের মোট উৎপাদেনর প্রায় ৩৫% উৎপাদন করে আমেরিকা। ভুট্টা আমেরিকার অর্থনিতির চালিকা শক্তি। যার গড় উৎপাদনশীলতা ৯.৬ টন/ হেক্টর। ভারতেও ধান ,গমের পরেই তৃতীয় উৎপাদনশীল ফসল ভুট্টা। যার গড় উৎপাদন ২.৪৩ টন/ হেক্টর। ভারতে ভুট্টা খাদ্য সামগ্রী ও পশু খাদ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ভুট্টা দিয়ে নানা রকমের প্রোটিন খাদ্য ,পানিও দ্রব্য ,পশুখাদ্য ফিড তৈরির শিল্পে ব্যবহার বাড়ছে এবং কাঁচা পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। পোল্ট্রি ফিড শিল্পে ৫১ % ,মানুষের খাদ্য হিসাবে ২৩% এবং পশু খাদ্য ও শিল্প পণ্যে ২৪ শতাংশ এবং বীজ হিসাবে ১ শতাংশ ব্যবহার হয়ে থাকে। মানুষের চাহিদার সাথে সাথে ভুট্টার চাষ বাড়ছে এবং উৎপাদন পরিকল্পনায় নানা ধরণের পরিবর্তন আসছে। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে কৃষি গবেষকরা সময়ে সময়ে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পরিকল্পনা কৃষকের মাঝে বন্টন করছে ও নানা ধরণের রোগ পোকা প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণের উপায় উদ্ভাবন করছে।

    ১.মাটি - 

    লবনাক্ত মাটি ছাড়া প্রায় সব মাটি ভুট্টা চাষের জন্যে উপযুক্ত।তবে দোয়াস ,বেলে দোয়াস ,এঁটেল দোয়াস মাটিতে ভুট্টা ভালো জন্মে। জল জমে না এমন মাটিতে চাষের জন্যে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। 

    ২.ভুট্টা চাষের সময় -

    • ভুট্টা প্রায় সব ঋতুতেই চাষ করা হয় প্রজাতি ভেদে।  যেমন  -
    • খরিফ -জনের প্রথম সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ। 
    • রবি -অক্টবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। 
    • বসন্ত --ফেব্রুয়ারে পুরো মাস পর্যন্ত। 

    ৩.বীজের নাম 

    •  H বিবেক ২৭ খুব কম সময়ে পরিপক্ক হয়। 
    • H প্রকাশ, X ৩৩৪২ প্রারম্ভিক পরিপক্কতা থাকে। 
    • H মালভিয়া মক্কা ২ মাঝারি পরিপক্কতা। 
    • H: Pro 311, Bio 9681, Seed Tech ২৩২৪ দেরিতে পরিপক্কতা হয়।

    ৪.জমি প্রস্তুতি -

    ভুট্টা রোপনের জন্যে মাটির খোদাই ভালো হওয়া উচিত। এর জন্যে ভালো মাটি উর্বর করতে হবে এবং রোপনের ১৫ -২০ দিন আগে একর প্রতি ৬০ কুইন্টাল জৈব আবর্জনা গোবর সার দিতে হবে। ইউরিয়া -১৪  কেজি  ,ফসফেট ৩০ কেজি , পটাশ ২৫ কেজি ,জিঙ্ক -১০ কেজি একর প্রতি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে চাষ দিয়ে রাখতে হবে। গোড়া কাটার সমস্যা জমিতে উপলব্ধ থাকলে একর প্রতি ৯ কেজি ফিউরাডন ব্যবহার করতে হবে। 

    ৫. বীজ শোধন -

    অপরিশোধিত বীজকে বীজ ও মাটিবাহিত রোগ এবং কিছু কীট-পতঙ্গ থেকে রক্ষা করার জন্য বপনের আগে ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক দিয়ে শোধন করা উচিত।

    •  টারসিকাম লিফ ব্লাইট, ব্যান্ডেড লিফ এবং শিথ ব্লাইট, মেডিস লিফ ব্লাইট ইত্যাদির জন্য ব্যাভিস্টিন + ক্যাপ্টান 1:1 সমান অনুপাতে ২ গ্রাম দিয়ে প্রতি কেজি বীজ শোধন করতে হবে। 
    •  ভুট্টার  ব্রাউন স্ট্রাইপ ডাউনি মিলডিউর জন্য আপ্রান 35 এসডি৮  গ্রাম দিয়ে প্রতি  কেজি বীজ শোধন করতে হবে। 
    •  ভুট্টার পাইথিয়াম ডালপালা রটের জন্য ক্যাপ্টান 2.5 গ্রাম দিয়ে প্রতি কেজি বীজ শোধন করতে হবে 
    •  ভুট্টার বীজ উইপোকা এবং অঙ্কুর মাছির জন্য ইমিডাক্লোরপিট গ্রাম প্রতি কেজি বা ফিপ্রনীল  ৪ এম এল দিয়ে প্রতি কেজি বীজ শোধন করতে হবে। 

    ৬.বীজ রোপনের দুরুত্ব - 

    পূর্ব পশ্চিম দিকে সারি থেকে সারির দুরুত্ব ৬০ সেন্টিমিটার বা ২ ফুট এবং চারা থেকে চারার দুরুত্ব ১৮-২০ সেন্টিমিটার বা দেড় ফুট দুরুত্বে রোপন করতে হবে। 

    ৭.চাপান সার প্রয়োগ -

    • ভুট্টার ৪ পাতা হলে ইউরিয়া 17 কেজি /একর 
    • ভুট্টার ৮ পাতা হলে ইউরিয়া ২১ কেজি /একর 
    • ভুট্টার ফুল আসতে শুরু হলে  ইউরিয়া 14 কেজি /একর 
    • ভুট্টার ফল আশা পরিপূর্ণ হলে  ইউরিয়া 4 কেজি /একর 

    ৮.সেচ ব্যবস্থা -

    চাপান সার প্রয়োগের আগে প্রতিটি পর্যায়ে সেচ দিতে হবে এবং ফুল ও ফল আসার পর শেষ এটি আবশ্যক। যদি বৃষ্ঠটির কারণে মাটিতে আদ্রতা থাকে তবে -সেচের প্রয়োজন নেই।  তবে শীতকালে ভুট্টা চাষের সময় ঠান্ডা থেকে ভুট্টাকে বাঁচানোর জন্যে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত মাটি ভেজা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। 

    ৯.আগাছা দমন ব্যবস্থা -

    • ভুট্টা চাষে আগাছা একটি প্রধান সমস্যা ,আগাছার কারণে প্রাক খরিফ ও খরিফ মরসুমে প্রায় ৩৫ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়। এই সময় ভুট্টা ও আগাছার মধ্যে বেড়ে ওঠার প্রতিযোগিতা চলে ফলে খাদ্য সংকট তৈরী হয় জমিতে। 
    • আগাছা বের না  হওয়ার জন্যে বীজ রোপনের থেকে ২ দিনের মধ্যে  আগে হার্বিসাইড অ্যাট্রাজিন 50% উপ একর প্রতি 400 গ্রাম  স্প্রে করতে হবে। 
    • রোপনের 20-৩০ দিন  পর  টোপ্রেমজোন 33.6% SC একর প্রতি ১২ গ্রাম দিতে হবে। 
    • দ্বিতীয় আগাছা দমনের ২০-৩০ দিন পর আবার টেম্বোট্রিওন 34.4% SCএকর প্রতি ৫০ গ্রাম ব্যবহার করতে হবে।

    ৯.আন্তঃফসল - 

    ভুট্টা - আলু, ভুট্টা -পালং শাক বা অন্যান্য শাক ,ভুট্টা -ফুলকপি ,ভুট্টা -মটরশুটি ,ভুট্টা -গাজর ,ভুট্টা -বটবটি ইত্যাদি। 

    ভুট্টার সাথে কি কি ফসল এক সাথে চাষ করা যায় ?

    ভুট্টা - আলু, ভুট্টা -পালং শাক বা অন্যান্য শাক ,ভুট্টা -ফুলকপি ,ভুট্টা -মটরশুটি ,ভুট্টা -গাজর ,ভুট্টা -বটবটি ইত্যাদি। 

    FAQ(প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর) -

    ১।কিভাবে ভুট্টা রোপন করা উচিত ?

    ভুট্টা সারি  থেকে সারি  ৬০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারা টো সেন্টিমিটার দূরত্বে লাগালে ফলন ভালো পাওয়া যায়। 

    .২,।ভুট্টা চাষের জন্যে কোন মাটি ভালো ?

    ভুট্টা চাষের জন্যে লবনাক্ত মাটি ছাড়া যেকোনো মাটি ভালো। তবে বেলে দোয়াস  ,এঁটেল দোয়াস ভুট্টা চাষের জন্যে ভালো। 

    .৩।ভুট্টা ক্ষেতের ঘাস দমনের উপায় কি ?

    আগাছা বের না  হওয়ার জন্যে বীজ রোপনের থেকে ২ দিনের মধ্যে  আগে হার্বিসাইড অ্যাট্রাজিন 50% উপ একর প্রতি 400 গ্রাম  স্প্রে করতে হবে। 

    .৪।রোপনের 20-৩০ দিন  পর  টোপ্রেমজোন 33.6% SC একর প্রতি ১২ গ্রাম দিতে হবে। 

    দ্বিতীয় আগাছা দমনের ২০-৩০ দিন পর আবার টেম্বোট্রিওন 34.4% SCএকর প্রতি ৫০ গ্রাম ব্যবহার করতে হবে।

    তথ্য সূত্র -

    ভারতীয় ভুট্টা গবেষণা কেন্দ্র -ICAR

    আরও দেখুন -

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)