অ্যাকোয়ারিয়ামে রঙিন মাছ পালন পদ্ধতি

Didibhai Agrofarm
0

   

অ্যাকোয়ারিয়ামে   রঙিন  মাছ পালন  পদ্ধতি

আজ থেকে তিন চার  দশক আগেও অ্যাকোয়ারিয়াম বলতে বােঝাত লােহার ফ্রেমে চারদিক ঠেকে অ্যাসবেস্টস শিট লাগিয়ে তাতে রঙীন মাছ পােষ্য। তারপর এল অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার। এখন তার পরিবর্তে এসেছে সবদিক কাচে ঢাকা অ্যাকোয়ারিয়াম। এই অ্যাকোয়ারিয়ামে কোনাে ফ্রেম থাকে না। শুধু পাঁচটি কাঁচের ব্রাইড আঠা দিলেই হল। এই অ্যাকোয়ারিয়ামকে রাখা হয় একটি থার্মোকলের শিটের

     1.অ্যাকোয়ারিয়াম ডিসাইন তৈরী পদ্ধতি -

    অ্যাকোয়ারিয়াম তৈরীর প্রথম নিয়মটি হল এটি লম্বায় যতটা হবে, চওড়ায় তার অর্ধেক হবে। আকৃতিতে অ্যাকোয়ারিয়াম হওয়া উচিত প্রধানতঃ আয়তকার। অ্যাকোয়ারিয়ামের ঢাকনা সাধারণত অ্যালুমিনিয়ামের হয়। প্রাইউডের ঢাকনাও তৈরী করিয়ে নেওয়া যায়। যে কোনাে ধরনের ঢাকানাতেই ভেন্টিলেশন বাতাস চলাচলেরব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত আবশ্যক। অ্যাকোয়ারিয়ামের গঠন ও অবস্থান সবথেকে বেশী জনপ্রিয় হল ২ ফুট লম্বা, ১ ফুল চওড়া ও ১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট অ্যাকোয়ারিয়াম। ৪ মি. মি. পুরু কাঁচ ব্যবহার করাই সব থেকে ভাল। তবে বিভিন্ন আয়তনের অ্যাকোয়ারিয়ামের জন্য বিভিন্নরকম পুরু কাঁচের প্রয়ােজন হয়। কোন্ আয়তনের অ্যাকোয়ারিয়ামে কত পুরুকাচ ব্যবহারকাদরকার নীচে বিস্তারিতভাবে বলা হল-

    দৈর্ঘ্য(ইঞ্চি)

    প্রস্থ(ইঞ্চি)

    উচ্চতা(ইঞ্চি)

    কাচের বেধ (মি. মি.)

    18

    9

    9

    3

    24

    12

    12

    4

    28

    15

    18

    5

    30

    15

    18

    5

    36

    18

    18

    6

    48

    18

    18

    6

    60

    24

    24

    8

    72

    24

    24

    10


    2.অ্যাকোয়ারিয়ামে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও বৈদ্যুতিক বাতি  সংযোগ  পদ্ধতি 

    অ্যাকোয়ারিয়ামের কাছাকাছি বৈদ্যুতিক সংযােগ থাকা খুবই দরকারী। এতে এয়ার পাম্প বা এয়ারটের, ফিল্টার, বৈদ্যুতিক আলাে ইত্যাদি ব্যবহারের সুযােগ পাওয়া যাবে।

    অ্যাকোয়ারিয়ামে যে বৈদ্যুতিক ব্যবহার করা হবে তা সাদা হতে হবে। বাতি থাকবে অ্যাকোয়ারিয়ামের ভিতরে মাথার দিকে, যেন তাতে জল না লাগে সে দিকে নজর রাখতে হবে। বৈদ্যুতিক বাল্ব যত ওয়াটের হবে সেটি একটি বাল্ব ব্যবহার না করে দুটি বাল্ব লাগালে ভাল হয়। যেমন যদি 80ওয়াটের বাল্বের প্রয়ােজন হয়, সেক্ষেত্রে দুটি  40 ওয়াটের বাল্ব ব্যবহার করা ভাল।

    অ্যাকোয়ারিয়ামের আয়তন অনুযায়ী বৈদ্যুতিক বাল্বের শক্তির মাত্রা 25 ওয়াট থেকে 200 ওয়াট পর্যন্ত হতে পারে।

    3 অ্যাকোয়ারিয়াম রাখার উচ্চতাঃ-

     অ্যাকোয়ারিয়ামের রাখা উচিত এমন উচ্চতায় যাতে সেটি চেয়ার বা সােফার উপবিষ্ট মানুষের চোখের উচ্চতায় থাকে। 

    4.অ্যাকোয়ারিয়ামের জল গরম করার পদ্ধতিঃ-

    বৈদ্যুতিক বাল্বের সাহায্যে অ্যাকোয়ারিয়ামের জল কিছুটা গরম হয়। তবে এছাড়াও জল গরম করার পদ্ধতি রয়েছে। সেটি হল, জলের মধ্যে ডােবানাে বৈদ্যুতিক চুল্লির সাহায্যে জলকে প্রয়ােজনীয় তাপমাত্রায় নিয়ে আসা। ইংরেজিতে এই চুল্লীকে বলে অ্যাকোয়ারিয়াম ইমারস হিটার। এই হিটারে বৈদ্যুতিক শক্তি খুবই কম লাগে। 60 ওয়াটের হিটার হলেই অ্যাকোয়ারিয়ামের জল গরম হয়ে যায়। অ্যাকোয়ারিয়ামের ভিতর বালি ও পাথরের ওপর হিটারটি রেখে স্যুইচ টিপে হিটার চালু করে হয়। হিটার বন্ধ করার সময় প্রথমে স্যুইচ বন্ধ করে তবে ইমারস হিটারটিকে জল থেকে ভােলা উচিত। শীতকালেই প্রধানতঃ ইমারস হিটার দরকার, অন্য সময় বৈদ্যুতিক বাল্বের কাজ মিটে যায়। জলের উত্তাপ 35°সে. রাখা দরকার। 

    5. অ্যাকোয়ারিয়াম পরিচর্যা ও পরিষ্কারকরী- 


    •  প্রতিদিন মাছের খাবার দেওয়া এবং জলের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন দশ থেকে পনের মিনিট সময় দিতে হবে।
    • প্রতিদিন একবার মাছেদের খাবার দিয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে মাছেরা ঠিকমত খাচ্ছে কিনা। যদি দেখা যায় ঠিকমত খাবার খাচ্ছেনা তাহলে দেখতে হবে মাছের শরীরে কোনাে রােগ প্রকাশ পেয়েছে কিনা। সেরকম কোনাে চিহ্ন প্রকাশ পেলে ছােট হাত জালের সাহায্যে সেই মাছকে তুলে অন্য কোনাে ছােট ফায়ারিয়ামে রাখতে হবে এবং প্রয়ােজনীয় চিকিৎসা করতে হবে।
    • মাছেরা সবটা খাবার রােজ খায় না। কিছু অবশিষ্ট অংশ জলে ভিজে অ্যাকোয়ারিয়ামের তলায় বালি বা পাথরের  ফাকে গিয়ে জমা হয়। পরে সেটা পচে জল খারাপ করে দেয়। তাছাড়া মাছেরা যে "ম সেটাও অ্যাকোয়ারিয়ামের তলায় বালিতে অথবা পাথরের ফাঁকে জমা হয়ে জল নষ্ট কর। 
    • এসব কারণে সপ্তাহে একবার বা 15 দিন অন্তর অ্যাকোয়ারিয়ামের তলাটা ‘সাইফন’ কয়ে পরিষকার করতে হয়ে। অ্যাকোয়ারিয়ামের জল প্রতি মাসে পাল্টানাে দরকার। সম্পূর্ণ জল একসঙ্গে। পাল্টে, অর্ধেক পুরােনাে জল প্রতি মাসে পাল্টানাে দরকার। অ্যাকোয়ারিয়ামে নতুন জল ভরে প্রতি , গ্যালন জলে 1 ফোঁটা মিথিলিনর ঔষধটি দেওয়া দরকার।
    • যে সমস্ত জলজ উদ্ভিদ অ্যাকোয়ারিয়ামে লাগানাে রয়েছে সেইসব গাছ ও মাঝে মাঝে বের করে পরিষকার জলে কয়েকবার ধােয়া দরকার। কোনাে পাত্রে জল নিয়ে তাতে 100 মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট গুলে ঐ জলে 10 মিনিট সব জলজ উদ্ভিদকে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর আবার সেগুলিকে অ্যাকোয়ারিয়ামের বালিতে পুঁতে দিতে হবে।
    • অনেক সময় অ্যাকোয়ারিয়ামের কাঁচ ও তলার ছােট পাথরে সবুজ ও বাদামী শ্যাওলা জন্মায়। যে সব অ্যাকোয়ারিয়ামের কাঁচে ও তলায় ছােট পাথরে সবুজ ও বাদামী শ্যাওলা জন্মায়। যেসব অ্যাকোয়ারিয়ামের সূর্যের আলাে বেশী পড়ে, তাতে ঐ শ্যাওলা বেশী হয়। এই শ্যাওলা মাছের পক্ষে ক্ষতিকর নয়, কিন্তু এগুলির জন্য জল ঘােলা দেখায়, তাই দেখতে খারাপ লাগে। ঐ শ্যাওলা সরানাের পদ্ধতি হল, ছােট হাতজাল দিয়ে সমস্ত মাছ তুলে অন্য কোনাে জলভর্তি পাত্রে রাখতে হবে। এরপর অ্যাকোয়ারিয়ামের সব জল ফেলে দিয়ে বালি এবং পাথরকুচি ভালভাবে পরিষকার জলে ধুয়ে আবার অ্যাকোয়ারিয়ামে সাজাতে হবে।
    • অ্যাকোয়ারিয়ামের কাচে যদি দাগ ধরে থাকে, তাহলে ভিজে কাগজ বা কাপড় দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। এতেও দাগ না উঠলে কাপড়ের ফালিতে সামান্য লবণ দিয়ে ঘষলে দাগ পরিস্কার হয়ে যাবে। দাগ তােলার আধঘন্টা পরে অ্যাকোয়ারিয়ামে আবার পরিষকার জল ভরতে হবে।
    •  অ্যাকোয়ারিয়ামের তলায় পরিস্কার বালি এবং ছােট পাথর সামনের দিকে কিছুটা ঢালুভাবে। বিছিয়ে দিয়ে জল ভরতে হবে।

    6. ট্যাঙ্কের পি.এইচ -


    এটি জলে হাইড্রোজেনের মাত্রা বােঝাতে ব্যবহৃত হয়। পি.এইচ. এর মান আর জলে হাইড্রোজেন আয়নের মাত্রার সম্পর্ক বিপরীতমুখী অর্থাৎ, একটি বাড়লে অন্যটি কমে। পি.এইচ.স্কেল শুরু হয়ে শুন্যমান থেকে, শেষ হয় 14 তে।‘০’মানে চূড়ান্ত অম্লত্ব, 14 মানে চূড়ান্ত ক্ষারত্ব।

    মিষ্টি জলের মাছের জন্য দরকার সামান্য আদ্রিক জলের। পি.এইচ. সাড়ে ছয় হলে সব থেকে ভাল হয়। অ্যাকোয়ারিয়ামের জলে মাছের বর্জ্যপদার্থ ক্রমাগত মিশতে থাকে এবং জলে হতা। অ্যাসিডের পরিমান ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এর ফলে পি.এইচ, -এর মান কমতে থাকে। এই ভ” আংশিক জল পরিবর্তনের কথা বলা হয়। মার্বেল, ডালােমাইট ইত্যাদি পাথর জলের ক্ষারত্ব বাড়ায়, পি.এইচ.বেড়ে যায়। এইজন্য এই জাতীয় পাথর অ্যাকোয়ারিয়ামে ব্যবহার করতে নেই।

    7.অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইট ও নাইট্রেট -- 

    অ্যাকোরিয়ামে যেসব জৈব অশেষ জমা হয়, সেগুলির মধ্যে আছে তরিক্ত খাবার মাছের বর্জ্যপদার্থ পচা পাতা ইত্যাদি। ব্যাকটিরিয়া দ্বারা এই বর্জ্যপদার্থ পরিনত হয়।   
    নাইট্রাইটে এবং অ্যামােনিয়াতে, যেগুলি হল বিষাক্ত যৌগ, নাইট্রাইট আবার ব্যাকটিরিয়া দ্বারা নাইটেট পরিণত হয় যা অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত। এই নাইট্রেট আবার অ্যাকোয়ারিয়ামের গাছের সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। 

    8.ক্লোরিন-

     ক্লোরিনমুক্ত জল অ্যাকোয়ারিয়ামের ব্যবহার করতে গেলে কিছু সাবধানতার প্রয়ােজন। খােলা পাত্রে অন্ততঃ একদিন খােলা বাতাসযুক্ত জায়গায় জল রেখে দিলে সেটি ক্লোরিনযুক্ত জলে আকোয়ারিয়ামের জলে মেশালে এই ক্লোরিন ব্যাকটিরিয়া ধ্বংস করে এবং জলের অ্যামােনিয়ার সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে ক্লোরামাইনে পরিণত হয়, যা একটি জীবানুনাশক। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে জলে অন্ততঃ পাঁচদিন এয়ারেটরের সাহায্যে বাতাস চালনা করতে হবে।

    9.অ্যাকেয়ারিয়ামের বিভিন্ন উপাদান 

    9.1.জল -

     বৃষ্টির জল অ্যাকোয়ারিয়ামের পক্ষে সবথেকে ভাল। সাধারণ কলের জল বা পাতকুয়া ৰা গভীর নলকূপের জলও ব্যবহার করা যায়। তবে কুয়া বানলকূপের জলে লােহা ও অন্যান্য খনিজের পরিমান বেশী থাকে, তাই ওই জল রঙীন মাছেরা পছন্দ করে না। তবে ঐ জলকে ফুটিয়ে একদিন রেখে তারপর অ্যাকোয়ারিয়ামে ব্যবহার করা যায়।।
    পুকুর বানদীর জল ব্যবহারে নানাধরনের রােগজীবাণু সংক্রামিত হতে পারে। জলকে দূষণ থেকে মুক্ত রাখার জন্য প্রচুর পরিমানে জলজ উদ্ভিদ লাগাতে হবে। প্রতিবার আংশিক জল বের করে দেওয়া উচিত। 

    9.2.থার্মোমিটার- 

    এরদ্বারা অ্যাকোয়ারিয়ামের জলের উষ্ণতা মাপা হয়।

     9.3.এয়ারেটর -

     এটির কাজ হল জলে অক্সিজেন যােগান দেওয়া, আবার জলের মধ্যে উষ্ণতাকেও সমানভাবে বন্টন করা। কৃত্রিম আলােতে রাখা অ্যাকোয়ারিয়ামের আলাে থাকে সাধারণতঃ ওপর দিকে। তাই ওপরদিকের জল বেশী গরম হয়ে ওঠে। এয়ারপাম্প বা এয়ারেটর চালানাে থাকলে ওই জলে ওপর নীচে হতে থাকে, ফলে তাপের সমবন্টন হয়। তবে মাছের সংখ্যা খুব কম হলে এয়ারপাম্প ছাড়াও কাজ চলে। 

    9.4. অ্যাকোয়ারিয়ামে ফিল্টার - 

    জলকে পুরােপুরি দূষণমুক্ত করার জন্য ফিল্টার ব্যবহার করা হয়। ফিল্টার দুই ধরণের হয়। যথা-
    (1) যান্ত্রিক পরিস্রবণ, (2) জৈবিকফিল্টার ।
    জলকে পরিসুত করে প্রথমটি, আর বালি বা পাথরের নীচের ময়লাগুলিকে জৈবিক প্রক্রিয়ায় দ্রুত গাছের সার ও নাইট্রোজেনে পরিণত করে। দ্বিতীয়টি ফিল্টার হিসাবে প্রধানতঃ ব্যবহার করা হয় কাঠ কয়লার গুঁড়াে এবং নাইলনের তুলো।
    জৈবিক ফিল্টারের ক্ষেত্রে ব্যকিটিরিয়ার মাধ্যমে জলকে পরিসুত করা হয়। এই ফিল্টার অ্যাকোয়ারিয়ামের একেবারে তলায় লাগানাে হয়। এর উপরে পাথরকুচি বিছানাে হয়। ফিল্টারের  একপ্রান্ত দিয়ে হাওয়া ঢােকানাে হয়, অন্যদিক দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। এইভাবে তলদেশের বেডের নীচে অক্সিজেন চালনার ফলে উপকারী ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। এই ব্যাকটিরিয়াদের কাজ হল বিষাক্ত ও ক্ষতিকর পদার্থগুলিকে কাছের খাদ্য ও নাইট্রোজেনে পরিণত করা।

    9.5. বালি ও পাথর 

    অ্যাকোয়ারিয়ামের জন্য সাধারণ পাথরকুচিই ব্যবহার করা হয়। জলজ উদ্ভিদগুলিকে এর মধ্যে পুঁতে দিলে সহজে উপড়ে পড়ে যায় না অ্যাকোয়ারিয়ামের তলায় বালি থাকলে বালির নীচে পচনক্রিয়া বিঘ্নিত হয়, ফলে জল তাড়াতাড়ি দুষিত হয়ে পড়ে।
    পাথরকুচি ব্যবহারের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সেগুলি চুনামিশ্রিত না হয়, কারণ চুনাপাথর জলের খরতা বৃদ্ধি করে।
    পাথর বালি ব্যবহারের আগে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে, কারণ এর সঙ্গে ময়লা ও ক্ষতিকারক। রাসায়নিক পদার্থ মিশে থাকতে পারে। বেলেপাথর কোয়ার্টজ ও গ্রানাইট ব্যবহার করা যেতে পারে।

     9.6. ঝিনুক বা প্রবাল -

     প্রবাল ও ঝিনুক সাধারণতঃ সামুদ্রিক অ্যাকোয়ারিয়ামে ব্যবহার করা হয়। তবে মিষ্টিজলের অ্যাকোয়ারিয়ামে অনেক সময় সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এগুলি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

    10.অ্যাকোয়ারিয়ামের ভিতরের পরিবেশ সাজানো 

    10.1. বালি-

     অ্যাকোয়ারিয়ামের তলায় মােটাদানা বালি বিছিয়ে দিতে হবে। পিছনদিকে বালি  দেড় থেকে দু ইঞ্চি উঁচু থাকবে ও সামনের দিকে ঢালু হয়ে 1 ইঞ্চি উঁচু থাকবে। এর ফলে অ্যাকোয়ারিয়ামের ময়লা সামনের দিকে এসে জড়াে হবে, ফলে পরিস্কার করতে সুবিধা হবে।

     10.2.পাথর-

    অনেক সময় বালির সঙ্গে চার ভাগের একভাগ পরিমান ছােট ছােট রঙীন (সানা,নীল, লাল, সবুজ। ইত্যাদি রঙ) পাথর মেশানাে হয়। এতে অ্যাকোয়ারিয়াম দেখতে আরও সুন্দর লাগে। তবে 3-4মাস অন্তর ঐ পাথরগুলিকে সাবান জল বা ব্লিচিং পাউডার গােলা জলে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরিস্কার করে নিতে হয়। বালির ওপরে এই পাথরস্তরেস্তর সাজিয়ে দেওয়া হয়।
     ঝিনুক, শঙ্খ,গেঁড়ি -
    এগুলিকেও অ্যাকোয়ারিয়ামের সৌন্দর্য বাড়ানাের জন্য সাজানাে হয়। তবে এদের সংখ্যা বেশী হলে মাছেদের খাবার খুঁজতে অসুবিধা হয়। দুটি থেকে তিনটি গেঁড়ি অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখলে জল পরিস্কার থাকে, কারণ এরা ময়লা খেয়ে ফেলে, তবে বেশী সংখ্যায় গেঁড়ি থাকলে এরা জলজ উদ্ভিদ নষ্ট করে দেয়। 

    10.3. অ্যাকোয়ারিয়াম জলজ উদ্ভিদ-

     , বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ অ্যাকোয়ারিয়ামের বালির ওপর সহজেই লাগানাে যায়। এরা একদিকে যেমন অ্যাকোয়ারিয়ামের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে তেমনি জলে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি করে ।
    তবে ঐ সৰ উদ্ভিদকে অ্যাকোয়ারিয়ামে লাগানাের আগে জীবানুমুক্ত করা উচিত। এর জন্যে একটি বালতিতে লিটার প্রতি জলে 10 মি. গ্রঃ পটাশিয়াম পরিম্যাঙ্গানেট গুলে নিয়ে গাছগুলিকে 10-15 মিনিট  ডুবিয়ে  রেখে পরিস্কার জলে ধুয়ে নিয়ে তারপর অ্যাকোয়ারিয়ামে লাগাতে হবে। পটাশিয়াম পরিম্যাঙ্গানেট  না থাকলে  প্রতি লিটার জলে 15 গ্রাম খাবার লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে।
    | জলে যদি অ্যালগি বা শ্যাওলা খুব বেড়ে যায় তাহলে টোপা পানা জাতীয় গাছ ভাসিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে অ্যালগি আলো কম পাবে, ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আবার পানার ঝুলন্ত শিকড়ের মধ্যে ছােট মাছ বাচ্চা মাছ লুকিয়ে থাকতে পারবে। তবে পানার সংখ্যা খুব বেড়ে গেলে তা তুলে ফেলে দিতে হবে, না হলে মাছের ক্ষতি হবে।

    11. অ্যাকোয়ারিয়ামে হিটার বা ফিল্টার- -

     হিটার বা ফিল্টার অ্যাকোয়ারিয়ামের ভেতর এমনভাবে রাখতে হবে যাতে বাইরে থেকে দেখা যায়। গাছবা পাথরের আড়ালে এগুলি রাখা যেতে পারে।

     11.1.জল - 

    অ্যাকোয়ারিয়াম সাজানাে সম্পূর্ণ হলে তবে তাতে জল ভর্তি করা উচিত। জলতল অ্যাকোয়ারিয়ামের কানা থেকে ২ ইঞ্চি নীচে রাখা উচিত। অ্যাকোয়ারিয়াম সাজানাের পর খুব সাবধানে মগ বা কোনাে ছােটো পাত্র দিয়ে খুব আস্তে আস্তে জল ঢালতে হবে, অন্যথায় গাছ, বালি ইত্যাদি স্থানচ্যুত হতে পারে। সবথেকে ভাল হয় রাবারের নলের সাহায্যে জল ভরলে। 

    11.2.মাছ-

     অ্যাকোয়ারিয়ামে জল দেবার পর দু’দিন অপেক্ষা করা উচিত। জলের ঘােলা ভাব কেটে গিয়ে জল সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হলে তবেই মাছ ছাড়া উচিত। নতুন অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ ছাড়ার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে অ্যাকোয়ারিয়ামের জলের তাপমাত্রা এবং যে জলে মাছগুলি কিনে আনা হয়েছে, উভয়ের তাপমাত্রা যেন সমান থাকে। এরজন্য সহজ পদ্ধতি আছে। দোকান থেকে পলিথিন ব্যাগের জল ভরে তাতে করে মাছ বিক্রি হয়। খানিকটা বাতাস সহ ঐ পলিথিন ব্যাগের মুখ গার্ডার দিয়ে আটকে বাড়ীতে আনতে হবে এবং ঐ অবস্থায় অ্যাকোয়ারিয়ামের মধ্যে ব্যাগটি আধঘন্টা ডুবিয়ে রাখলে উভয় জলের তাপমাত্রা সমান হবে। তখন ব্যাগ খুলে সমস্ত মাছ অ্যাকোয়ারিয়ামের মধ্যে ছাড়তে হবে। জলের তাপমাত্রা যদি অসমান থাকে তাহলে মাছ মারা যেতে পারে বা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।]

    12.FAQ(প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর) 

    12.1. অ্যাকোয়ারিয়ামের কাঁচ কিভাবে পরিষ্কার করে ?

     অ্যাকোয়ারিয়ামের কাচে যদি দাগ ধরে থাকে, তাহলে ভিজে কাগজ বা কাপড় দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। এতেও দাগ না উঠলে কাপড়ের ফালিতে সামান্য লবণ দিয়ে ঘষলে দাগ পরিস্কার হয়ে যাবে। দাগ তােলার আধঘন্টা পরে অ্যাকোয়ারিয়ামে আবার পরিষকার জল ভরতে হবে।
     অ্যাকোয়ারিয়ামের তলায় পরিস্কার বালি এবং ছােট পাথর সামনের দিকে কিছুটা ঢালুভাবে। বিছিয়ে দিয়ে জল ভরতে হবে।

    12.2. অ্যাকোয়ারিয়ামের জল পরিষ্কার রাখে কিভাবে ?

    সপ্তাহে একবার বা 15 দিন অন্তর অ্যাকোয়ারিয়ামের তলাটা ‘সাইফন’ কয়ে পরিষকার করতে হয়ে। অ্যাকোয়ারিয়ামের জল প্রতি মাসে পাল্টানাে দরকার। সম্পূর্ণ জল একসঙ্গে। পাল্টে, অর্ধেক পুরােনাে জল প্রতি মাসে পাল্টানাে দরকার। অ্যাকোয়ারিয়ামে নতুন জল ভরে প্রতি , গ্যালন জলে 1 ফোঁটা মিথিলিনর ঔষধটি দেওয়া দরকার।

    12.3.কিভাবে অ্যাকোয়ারিয়াম সজ্জা করে ?

    অ্যাকোয়ারিয়ামের তলায় মােটাদানা বালি বিছিয়ে দিতে হবে। পিছনদিকে বালি  দেড় থেকে দু ইঞ্চি উঁচু থাকবে ও সামনের দিকে ঢালু হয়ে 1 ইঞ্চি উঁচু থাকবে। বালির সঙ্গে চার ভাগের একভাগ পরিমান ছােট ছােট রঙীন (সানা,নীল, লাল, সবুজ। ইত্যাদি রঙ) পাথর মেশানাে যেতে পারে। এতে অ্যাকোয়ারিয়াম দেখতে আরও সুন্দর লাগে। এছাড়াও ঝিনুক, শঙ্খ,গেঁড়ি -
    এগুলিকেও অ্যাকোয়ারিয়ামের সৌন্দর্য বাড়ানাের জন্য সাজানােতে ব্যবহার  হয়। থেকে দু ইঞ্চি উঁচু থাকবে ও সামনের দিকে ঢালু হয়ে ১ ইঞ্চি উঁচু থাকবে। এর ফলে অ্যাকোয়ারিয়ামের ময়লা সামনের দিকে এসে জড়াে হবে, ফলে পরিস্কার করতে সুবিধা হবে।

    12.4.অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ কোথায় পাওয়া যায় ?

    অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ প্রতিটি শহরে এখন পাওয়া যায়। অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছের চাহিদা এখন বাড়ছে তাই নিকটবর্তী  ছোট বড়ো শহরে পাওয়া যায়। তবে বড়ো শহরগুলিতে পছন্দ অনুযায়ী ভালোমানের অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ পাওয়া যায়। 

    12.5.অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছের দাম কত ?

    অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে 50  টাকা থেকে 2000 টাকা দাম একটি মাছের হয়ে থাকে। 

    12.6.অ্যাকোয়ারিয়াম মাছের নাম কি ?

     অ্যাকোয়ারিয়ামে ছাড়ার মাছগুলি হল -
    এঞ্জেল,বেটরা,খলসে,গোড়ামি,গোল্ড ফিস,প্লাটি ,মলি ,গাপ্পি ইত্যাদি।  


    তথ্য সূত্র -

    পশ্চিমবঙ্গ সরকার মৎস পালন বিভাগ 

    আরও দেখুন --

    সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থাপনা জৈব সারের গুরুত্ব

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)