বর্তমান বিশ্বে কৃষি ক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনের জন্যে জৈব সমাধানের উপর জোর দিচ্ছে রাসায়নিক বিষাক্ততা থেকে খাদ্য ও পরিবেশকে বাঁচাতে। অনেকেই বাড়িতে সবজি বিষমুক্ত ভাবে উৎপাদন করছেন আবার অনেকে করার চেষ্টা করছেন কিন্তু সঠিক পদ্ধতি জানা নেই। একটু পরিশ্রম করে একদিন তৈরী করলেই বিনা খরচে বাড়িতেই জৈব কীটনাশক তৈরী করা যায় ( সকলেই কীটনাশক বলে অভ্যস্ত তাই এখানে কীটনাশক বলা হয়েছে কিন্তু কীটনাশক নয় কীটবিতারক হবে কারণ এগুলি প্রয়োগে পোকা মরবে না কিন্তু পোকা ফসলে বসে ক্ষতি করবে না। এই পদ্ধতিগুলি জেনে নিয়ে বাড়িতে তৈরী করলে অর্থ অপচয় হবে না এবং ব্যবহার করলে ব্যবহারে সময় নিজের সিঁড়ির ঠিক থাকবে ,পরিবেশ ,মাটির স্বাস্থ ঠিক থাকবে ও উৎপাদনের পর বিষমুক্ত খাদ্য খেয়ে সকলের শরীর ভালো থাকবে।
1.জৈব কীটনাশক তৈরী পদ্ধতি এক -
শত্রু পােকার ধরণঃ
ডগা, পাতা খেকো পােকা, ফল, ডগা ছিদ্রকারী পােকা, নানা ধরনের চোষক পােকা ।
ফসলের প্রকার: যে কোনও ফসল :
শাজী , ডালবীজ, তেল বীজ, ফলমূল প্রায় সব রকমের ফসল।।
প্রয়ােজনীয় উপকরণ: ধুতুরা ফল ১ কেজি, করবী বীজ ১ কেজি, খইনী বা দোক্তা পাতার (তামাক পাতা) অব্যবহৃত অংশ (ভঁটা, নীচু মানের পাতা, পাতার গুঁড়াে) ১ কেজি, চুন ২৫০ গ্রাম, গােমূত্র ৫ লিটার, মাটির কলসি একটি (১০ লিটার মাপের)
প্রস্তুতি:
ধুতুরা, করবী ও দোক্তাপাতা মিহি করে পিষে নিয়ে ১-২ দিন জলে ভিজিয়ে ঠান্ডা করা। চুন ৫ লিটার গােমূত্রের সাথে ভাল করে মাটির কলসিতে মিশিয়ে মুখ বন্ধ করে ৭ দিন মাটিতে পুতে রাখতে হবে।
ব্যবহার -
৭ দিন পর মিশ্রনটি চেকে নিয়ে ১০ গুন জলের সাথে মিশিয়ে (১:১০)। বিকালে স্প্রে করতে হবে। দু’সপ্তাহ অন্তর দুবার ব্যবহারের সকল রকমের শত্রু পােকা নিয়ন্ত্রণে থাকে৷
2.জৈব কীটনাশক তৈরী পদ্ধতি দুই -
শত্রু পােকার ধরণ:
ডগা, পাতা খেকো, ফল, ডগা ছিদ্রকারী পােকা, শোষক পােকা।।
ফসলের প্রকার: যে কোনও ফসল শার্জী , ডালবীজ, তেল বীজ, ফলমূল প্রায় সব রকমের
ফসল।
উপকরণ:
বেড়া কলমি বা ঢােল কলমি পাতা ও কচি ডগা অথবা ছাগল কুঁড়ির ডগা পাতা ১কেজি, নীম বীজ ১কেজি (৬ মাসের বেশি পুরানাে নয়) ৫০০ গ্রাম দোক্তা পাতার ডাঁটা পাতা, ২৫০ গ্রাম আগে ভেজানাে ঠান্ডা চুন, ৫ লিটার গােমূত্র ও ১০ লিটার মাপের মাটির কলসী।
প্রস্তুতি: প্রয়ােজনীয় উপকরণ: ৬ মাসের বেশি পুরানাে নয় বেড়া কলমি বা ঢােল কলমি পাতা ও কচি ডগা অথবা ছাগল কুঁড়ির ডগা পাতা ১কেজি, ভাল নীম বীজ ১কেজি। ৫০০ গ্রাম দোক্তা পাতার ডাটা পাতা, ২৫০ গ্রাম আগে ভেজানাে ঠান্ডা চুন ও ৫ লিটার গােমূত্র ১০ লিটার মাপের। মাটির কলসী। বেড়া কলমি ও দোক্তাপাতা মিহি করে পিষে আগের দিন জলে ভিজিয়ে ঠান্ডা করা। চন ৫ লিটার গােমূত্রের সাথে ভাল করে মাটির কলসিতে মিশিয়ে মুখ বন্ধ করে ৭ দিন মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে।
ব্যবহার -
৭ দিন পর মিশ্রনটি ছেকে নিয়ে ১০ গুন জলের সাথে মিশিয়ে (১:১০)। বিকালে স্প্রে করতে হবে। দু’সপ্তাহ অন্তর দুবার ব্যবহারের সকল রকমের শত্রু পােকা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
3.জৈব কীটনাশক পদ্ধতি তিন -
আদা, রসুন ও লঙ্কার নির্যাস ব্যবহার
শত্রু পােকার ধরণ: ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পােকা, নানা রকমের শুয়ােপােকা, পাতা শুরঙ্গ পােকা (লিফমাইনার), পাতা কাটা পােকা, এফি বা জাড পােকা, গেছাে শামুক, পাতা খেকো লেদা পােকা।
উপকরণ ও প্রস্তুতি:
- ৫০ গ্রাম রসুন ১০ মিলি কেরােসিনে এক রাত ডুবাতে হবে।
- পরের দিন ছাল ছাড়িয়ে ওই তেলের সাথে বাঁটতে হবে।
- আলাদা পাত্রে ২৫ গ্রাম কাঁচা লঙ্কা ৫০ মিলি জলের সাথে বেটে লেই বানাতে হবে।
- ২৫ গ্রাম আদা বেটে নিতে হবে।
ব্যবহার -
৩ লিটার জলের সাথে উক্ত উপকরণগুলি ভালভাবে মেশাতে হবে।
ব্যবহারের আগে ভাল করে ঝাকিয়ে, ছেকে স্প্রে করতে হবে।' ১০-১২ দিন অন্তর ২-৩ বার ব্যবহার করতে হবে৷
4.জৈব কীটনাশক তৈরী পদ্ধতি - চার
আদা ও গােমূত্রের ব্যবহার শত্রু পােকার ধরণ: ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পােকা, শুয়ােপােকা পাতা শুরঙ্গ পােকা (লিফমাইনার), পাতা কাটা পােকা, এফিল বা জার পােকা, গেছাে শামুক, পাতা খেকো লেদা পােকা।
উপকরণ ও প্রযুক্তি:
৫০০ গ্রাম আদার নির্যাস বানাতে হবে।
ওই আদার নির্যাস ১লিটার গােমূত্র ও ১০ লিটার জলের সাথে মিশাতে হবে। + ব্যবহারের আগে ভাল করে ঝাঁকিয়ে স্প্রে করতে হবে।
১০-১২ দিন অন্তর ২-৩ বার ব্যবহার করতে হবে৷
5.জৈব কীটনাশক তৈরি পদ্ধতি -পাঁচ -
নিম, গােমূত্র ও গােবরের নির্যাস
প্রস্তুতি:
- ৫ কেজি নিম পাতা থেতাে করে ১০ লিটার জলে মেশান। •
- ২ কেজি টাটকা গােবর ৫ লিটার গােমূত্রে গুলে নিয়ে ওই নিম পাতার দ্রবনের সাথে মেশান।
- ১০০ লিটার মাপের ড্রামে ২৪ ঘন্টা রেখে ও মাঝে মাঝে দিনে ৩-৪ বার ঘুলিয়ে দিতে হবে।
- ২৪ ঘন্টার পরে নির্যাসটা হেঁকে নিয়ে ১০০ লিটার জলে মেশান। এবার জমিতে ফসলে স্প্রে করুন।
- সব ধরনের শােষক পােকা, মিলি বাগ বা দায় পােকা নিয়ন্ত্রণ হয়৷ ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বার ব্যবহার করুন। অত্যন্ত কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ হয়।
6.জৈব কীটনাশক পদ্ধতি ছয়-
শত্রুপোকা গান্ধী ,খেকো ফরিং দমন
“ধানের গান্ধীপােকা ২০-২৫টি ধরে থেঁতাে করে এক লিটার জলে মিশিয়ে গান্ধীপােকা আক্রান্ত ধান জমিতে স্ত্রে করলে পােকার আক্রমণ বন্ধ হয়। একবার স্প্রে করলে ৭-১০ দিন উপস্থিত পােকাগুলি খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং ফসল বেঁচে যায়। বােতলে ভরে ঘরােয়া তাপমাত্রায় (রুম টেম্পারেচার) – এ ২-৩ দিন রেখে নির্যাসটি ব্যবহার করা চলে।
FAQ(প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর) -
1.জৈব কীটনাশক কাকে বলে ?
রাসায়নিক বস্তু বা কেমিক্যাল এর ব্যবহার না করে প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন গাছের পাতা ,ফল ,মূত্র ইত্যাদি ব্যবহার করে প্রক্রিয়া করণের মাধ্যমে যে দ্রবণ তৈরী করা হয় এবং বিষমুক্ত খাদ্য পাওয়া যায় তাকে জৈব কীটনাশক বলা হয় ( বুঝার সুবিধার্থে কীটনাশক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু এটি কীটনাশক নয় কীটবিতারক হবে কারণ কীটনাশক দিলে শত্রু -বন্ধ সব পোকা মারা যায় কিন্তু কীটবিতারক ব্যবস্থার করলে ফসলে পোকা আসবে না ফলে বন্ধু পোকা মারা যায় না এবং সূত্র পোকা ফসলে না আসলে ফসলের ক্ষতিও হয় না।
2.কয়েকটি জৈব কীটনাশক এর নাম কি ?
বাড়িতেই জৈব পদ্ধতিতে তৈরী করা যায় কয়েকটি জৈব কীটনাশকের(কীটবিতারক) নাম নিমাস্ত্র,অগ্নিঅস্ত্র ,ব্রম্মাস্ত্র ,গোমূত্র দ্রবণ ,রসুন পেঁয়াজ লংকার দ্রবণ ,নিঁম বীজ নির্যাস ইত্যাদি।
3.কয়েকটি জৈব কীটনাশকের উদাহরণ কি ?
কয়েকটি জৈব কীটনাশকের(কীটবিতারক) নাম নিমাস্ত্র,অগ্নিঅস্ত্র ,ব্রম্মাস্ত্র ইত্যাদি।
তথ্য সূত্র -
1.সুসংহত সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থাপনা -আনন্দধারা -গ্রামোন্নয়ণ বিভাগ।
2.লোককল্যান পরিষদ।
:3.ড: বিভূতি ভূষণ সরকার, ত্রিপুরা
আরও দেখুন -
বাজারে পাব এমন জৈব কীটনাশক
উত্তরমুছুনবাজারে পাওয়া যায় না , বাড়িতেই যখন সহজে তৈরি করা যায় তখন বাজার থেকে ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমাদের মনে হয় না , চাষে খরচ কমানোর দিকে অগ্রসর না হলে বেশি লাভ করা সম্ভব নয় , ধন্যবাদ |
উত্তরমুছুন