চাষের জমি ও গাছে থেকে পিঁপড়ে ,ইঁদুর ,কাঠ্বেরালি তাড়ানোর পদ্ধতি

Didibhai Agrofarm
0
চাষের জমি  ও গাছে থেকে  পিঁপড়ে ,ইঁদুর ,কাঠ্বেরালি তাড়ানোর পদ্ধতি

 চাষের জমিতে পিঁপড়ের সমস্যা চাষের জমিতে বিশেষ করে, গ্রীস্মকালীন সঞ্জী চাষে পিঁপড়ের সমস্যার কথা চাষীদের কাছে প্রায়ই শােনা যায়। অলডিন, অলডেক্স, ফ্রাডেন ইত্যাদি নানা কীটনাশক চাষী, বাগানীরা যথেচ্ছ ব্যবহার করে থাকেন। তাও আবার এগুলির মধ্যে কয়েকটি আজকাল বাজারে পাওয়া যায় না। আর যেগুলি পাওয়া যাচ্ছে সেগুলিও অন্তবাহী বিষ হওয়ার ফলে খাদ্যে -শাক সবজিতে  অতিরিক্ত মাত্রায় থেকে যায় ফলে খাদ্য বিষাক্ত হয়। বাড়িতে, রান্নাঘরেও পিপড়ের উপদ্রব কমানাের জন্য ট্রামে, বাসে, টেনে নানা ধরণের বিষ বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন নামী দামী প্রস্তুত কারক নানা ধরণের বিষের প্রচার করে যাচ্ছে রেডিও, টিভি পত্র পত্রিকার মাধ্যমে। মা বােনেরা রান্না ঘরেও ঐসব ব্যবহার করছেন। গ্রামে গ্রামে অনেক বাড়িতেই রান্নাঘরে পিপড়ে দমনে বি.এইচ.সি ব্যবহার হতে দেখা যায়। 

 ঐসব প্রয়ােগের সময় ও পরে চাষী বা ব্যবহারকারী বিষের প্রভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। সাথে চাষীর অনেক বন্ধ, যেমন - কেঁচো, মাটিতে বসবাসকারী উপকারী জীবাণু ও বন্ধু পােকার দল ব্যাঙ, মাছ, শাপ ইত্যাদি মারা পড়ে। ফলে সমগ্র পরিবেশটি দূষিত হয়ে যায়।। কাজেই এর থেকে পরিবেশকে, চাষীকে, ভােক্তাকে বাঁচাতে প্রয়ােজন পরিবেশের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ব্যবস্থা গড়ে তােলা। অতি সহজে, হাতের কাছে পাওয়া যায়, পরিবেশের ও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর নয় অথবা কম ক্ষতিকর এমন কতগুলি ব্যবস্থাপনার উদাহরণ দেওয়া হল -এগুলি বহুকাল থেকে গ্রামে গঞ্জে আগে থেকেই ব্যবহার ছিল, আজকাল আমাদের অনেকেরই হয় মনে নেই বা চটকদারী বিজ্ঞাপনের চমকে ও অগাধ বিশ্বাসে যুগ যুগ ধরে পরীক্ষিত ও ব্যবহৃত ব্যবস্থাগুলিকে সেকেলে, অবৈজ্ঞানিক বলে অবহেলা করি।

    1.জমিতে পিঁপড়ের সমস্যা সমাধান 

     ক) শুকনাে ছাই : শুকনাে ছাই পিঁপড়ে পছন্দ করে না। মিহি শুকনাে ছাই ছড়িয়ে দিয়ে এদের দূরে রাখা যায়। ৬-৭ দিন পর পর ২-৩ বার দিলে পিঁপড়ে সরে যায়। 

    খ) ছাই কেরােসিন : কেরােসিনের গন্ধ পিপড়ে সহ্য করতে পারে না। শুকনাে ছাইয়ের সাথে সামান্য কেরােসিন মেখে ছড়িয়ে দিলে পিঁপড়ে কাছে আসে না। ১ কেজি ছাইতে ৮০-১০০ মি:লি: কেরােসিন ভালভাবে মিশিয়ে ১০-১২ দিন অন্তর ২-৩ বার ছিটিয়ে দিলে পিঁপড়ে আসে না (৮-১০% কেরােসিন ও ছাই এর মিশ্রণ)।

     গ) মাটির তলায় পিপড়ে যেখানে বাসা করেছে সেখানে ৭-১০ দিন অন্তর ৮-১০% কেরােসিনের জলীয় দ্রবণ (৮০-১০০ মি:লি: কেরােসিনে সম পরিমান জল নিয়ে ৪-৫ গ্রাম সাবান ভাল করে মিশিয়ে বা ফুটিয়ে নিয়ে ভাল করে মেশাতে হবে যাতে মােট এক লিটার জল মেশানাে হয়) ৫-৬ দিন অন্তর ২-৩ বার প্রয়ােজন মত ঢেলে দিলে পিপড়ে বাসা ছেড়ে পালিয়ে যায়। বেগুন, বরবটি ইত্যাদি ফসলে পিপড়ের ক্ষতিকর পৰ্য্যায়ে উপদ্রব হলে এই দ্রবণ ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করলে পিঁপড়ে পালিয়ে যায়।

    ঘ)০.৫% নিমতেলের জলীয় দ্রবণ (৫ মি:লি: নিমতেল +২.৫ গ্রাম সাবান (বার/কেক/গােলা সাবান)+১লি: জল, (জল-কেরােসিন যেভাবে মেশানাে হয় সেভাবে মিশিয়ে) ফসলে ৫-৭ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করলে পিপড়ে নিয়ন্ত্রন করা যায়। স্প্রে করার সময় গাছের গােড়ায়ও স্প্রে করতে হয়। স্প্রে বিকেলে করতে হয়। | 

    ঙ) ১০০ গ্রাম লঙ্কা গুঁড়াে, ১০০ গ্রাম হলুদ গুঁড়াে, ১০০ গ্রাম লবন ও ২.৫ গ্রাম সাবন ১ লিটার জলে ভালাে

    করে মিশিয়ে স্প্রে করলে পিপড়ের উপদ্রব কমে। প্রয়ােজন মত ৬-৭দিন অন্তর স্প্রে করা যায়। বিশেষ করে রান্না ঘরের জন্য বিশেষ উপযুক্ত। 

    চ) হিং ১ গ্রাম ও ৫ গ্রাম হলুদ গুঁড়াে প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে অথবা জমিতে গাছের গােড়ায় দিলে পিঁপড়ে ছড়ায় না। টমেটো, আলু, বেগুণ, লঙ্কা ইত্যাদি ফসলে পিঁপড়ের আক্রমণে গােড়ার মাটিতে কয়েকবার স্প্রে করলে আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

    2 .চাষের জমিতেহঁদুরের সমস্যা

     মাঠের ইদুর নিয়ন্ত্রণ: ১ ভাগ গ্লিরিসিডিয়া গাছের টাটকা ছাল ৫ গুণ ফুটন্ত জলে ৩০-৩৫ মিনিট সিদ্ধ করে। নির্যাসটি হেঁকে নিতে হবে। ছালের পরিমাণের ১০ গুণ গমের দানা ঐ নির্যাসে এমন ভাবে ফোটাতে হবে যেন নির্যাস গমের দানা সম্পূর্ণ শুষে নেয়। ঠান্ডা করে মাঠে যেখানে ইঁদুর বাসা করেছে অথবা যেখানে ইঁদুর যাতায়াত করে বিভিন্ন জায়গায় অল্প অল্প করে নারকেল মালা বা মাটির খুরিতে সন্ধেবেলায় রাখতে হবে। ভােরবেলা তুলে নিতে হবে। অন্যান্য পশুপাখি যেন খেতে না পারে। পরের দিন আবার ঐ টোপগুলি বসিয়ে দিন। এ ভাবে ২-৩ দিন ব্যবহার করা যায়। মাঠের সমস্ত চাষী একসাথে দল বেঁধে একাজ করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। ধান গােলার আশপাশে, মাটির দেয়ালের ধারে ইদুর গর্ত থাকলে সেখানেও একইভাবে এই টোপ ব্যবহার করা যাবে। 

    একটি গ্লিরিসিডিয়া গাছের ছবি গুগুল থেকে সংগৃহিত। 

    3.ফল বাগানে ইঁদুরের সমস্যা 

     বিশেষ করে নারকেল গাছে ইঁদুর, কাঠবিড়ালী বেশ ক্ষতি করে। গাছের কান্ডে মাটি থেকে ৪-৫ ফুট

    গাছে ইঁদুর /কাঠ্বেরালি তাড়ানোর ব্যবস্থা
    নারকেল গাছে ফানেল তৈরীর চিত্র 

    উঁচুতে ৮-১০” টিনের পাত দিয়ে উল্টো ফানেলের মত চোঙ্গ লাগিয়ে দিলে । ইদুর, কাঠবিড়ালী, গাছ বেয়ে উঠতে পারে না। তবে গাছ থেকে গাছের বা বাগান থেকে বাগানের দূরত্ব এমন থাকতে হবে যাতে অন্য গাছ থেকে ইঁদুর বা কাঠবিড়ালী লাফিয়ে আসতে না পারে। দুই গাছের পাতা থেকে পাতার দূরত্ব যাতে অন্তত: ৮-১০ ফুট থাকে। অন্যথায় সব গাছেই চোঙ লাগাতে হয়। শুধু ইঁদুরের সমস্যা হলে গাছে ৬ ফুট উপরে ২ ফুট টিনের পাত মুড়িয়ে লাগালে ইঁদুর আটকানো যায়। 

     সতর্কতাঃ

     পেরেক দিয়ে লাগানাে চলবে না। তার দিয়ে বা নাট বােল্ট দিয়ে লাগানাে যাবে।

    FAQ(প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর )

    1.কিভাবে রান্নাঘরে পিঁপড়ের সমস্যা সমাধান করা যায় ?

    ১০০ গ্রাম লঙ্কা গুঁড়াে, ১০০ গ্রাম হলুদ গুঁড়াে, ১০০ গ্রাম লবন ও ২.৫ গ্রাম সাবন ১ লিটার জলে ভালাে করে মিশিয়ে স্প্রে করলে পিপড়ের উপদ্রব কমে। প্রয়ােজন মত ৬-৭দিন অন্তর স্প্রে করা যায়। বিশেষ করে রান্না ঘরের জন্য বিশেষ উপযুক্ত। 

    2.চাষের জমিতে গাছের গোড়ায় পিঁপড়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিভাবে ?

    হিং ১ গ্রাম ও ৫ গ্রাম হলুদ গুঁড়াে প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে অথবা জমিতে গাছের গােড়ায় দিলে পিঁপড়ে ছড়ায় না। টমেটো, আলু, বেগুণ, লঙ্কা ইত্যাদি ফসলে পিঁপড়ের আক্রমণে গােড়ার মাটিতে কয়েকবার স্প্রে করলে আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

    3.চাষের জমিতে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিভাবে ?

    মাঠের ইদুর নিয়ন্ত্রণ: ১ ভাগ গ্লিরিসিডিয়া গাছের টাটকা ছাল ৫ গুণ ফুটন্ত জলে ৩০-৩৫ মিনিট সিদ্ধ করে। নির্যাসটি হেঁকে নিতে হবে। ছালের পরিমাণের ১০ গুণ গমের দানা ঐ নির্যাসে এমন ভাবে ফোটাতে হবে যেন নির্যাস গমের দানা সম্পূর্ণ শুষে নেয়। ঠান্ডা করে মাঠে যেখানে ইঁদুর বাসা করেছে অথবা যেখানে ইঁদুর যাতায়াত করে বিভিন্ন জায়গায় অল্প অল্প করে নারকেল মালা বা মাটির খুরিতে সন্ধেবেলায় দিয়ে ইঁদুর সমস্যা সমাধান হয়। 

    4.গাছে ইঁদুর /কাঠ্বেরালি তাড়ানোর উপায় ?

    গাছে ৫-৬ ফুট উপরে ২ ফুট টিনের  প্লেনসিট মুড়িয়ে দিয়ে লাগালে ইঁদুর আটকানো যায় এবং গাছের চারিদিক ঘিরে দিয়ে টিনের অংশটি নিচ দিকে উল্টো ফানেল এর মতো করে লাগালে ইঁদুর এবং কাঠ্বেরালি আটকানো যায়। 

     তথ্য সূত্র 

     (১) সুলতান এ.ইসমাইল, ভার্মিকোলজি, ওরিয়েন্টাল ম্যান লি:।

    (২) ড: বিভূতি ভূষণ সরকার, যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা, ত্রিপুরা।।

    আরও দেখুন --

    আধুনিক বেগুন চাষ পদ্ধতি। বেগুনের প্রধান রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণের সহজ পদ্ধতি 2022

    বাণিজ্যিকভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁপে চাষ করে লক্ষাধিক টাকা সহজেই আয় করছে প্রগতিশীল কৃষকেরা

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)