বাজরা অধিক কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার যুক্ত পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীন কাল থেকে। সম্ভবত ৫০০০ বছর আগে এশিয়া মহাদেশে এর উৎপত্তি হয়েছিল এবং চিনে সেটি পাওয়া গিয়েছিলো পরবর্তীতে মধ্য ইউরোপেও এটি প্রধান খাদ্য শস্য হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিল। ভারতে প্রাচীনকাল থেকেই এর চাষ হয়ে আসছে। আগে দেশের সর্বত্র চাষ হলেও বর্তমানে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখনো রাজস্থান ,কর্ণাটক ,মহারাষ্ট্র ,উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে এর চাষ হয় তার মধ্যে রাজস্থানে সর্বাধিক চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বে ভারত সর্বাধিক বাজরা রপ্তানি করে থাকে। বাজরার বিজ্ঞান সম্নত নাম লেপ্টোলোমা মিলিয়াসিয়া (এল) এবং এর ইংরেজি নাম মিলেট (millete )। তবে ১৮৮৩ সালে মি: জে .এম মিলেটস বাজরার মিলেটস নামটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভারত বাজরার গুনাগুনের কথা প্রকাশ করে রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ পরিষদ (UNGA) তে বাজরাকে আন্তর্জাতিক মিলেটস দিবস ঘোষণার জন্যে দাবি করে । ভারতের দাবি ৭২ টি দেশ সমর্থন করে। মিলেট কে আন্তর্জাতিক বছর (IYOM)-2023 হিসাবে ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ সংস্থা WHO এবং আগামী ২০২৩ সাল সারাবিশ্ব আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ উৎযাপিত হবে।
১।উদ্ভিদের বিবরণ:
20 টিরও বেশি বিভিন্ন ধরণের বাজরা রয়েছে । এদের মধ্যে মুক্তা বাজরা বা pearl millet সব থেকে বেশি চাষ হয়। এক থেকে আড়াই মিটার উচ্চতার ভুট্টা বা যােয়ারের মত ঘাস জাতীয় খাড়া উদি। নীচের গাঁট থেকে পাশকাটি বের হয়। শাখা প্রশাখাও হয়। মূল গুচ্ছাকার, মাটির উপরের গাঢ় থেকেও ঠেস মূল বের হয়। পাতা বল্লমের মতাে, উপরে ও নীচে অসংখ্য লােম থাকে। পুষ্পবিন্যাস গােল, লম্বা, নলাকৃতি।। পুস্পমঞ্জরীতে ফুলগুলি ঘনভাবে সন্নিবিষ্ট থাকে। মঞ্জরীর দৈর্ঘ্য ১৫-৩৫ সেমি পর্যন্ত হয়। মঞ্জরী গায়ে দানা মুক্তোর মত দেখতে হয়। তাই মুক্তাদানা বা নামে ডাকলে চিনতে সুবিধা হবে। বাজরা এমন। কঠিন পরিবেশে চাষ করা যায় যেখানে অন্যান্য দানা শষ্য ফলানাে বেশ কঠিন।
.২।বাজরার জাত:
খাদ্য পুষ্টি বেশি হিসেবে পি এইচ বি-১০,পি এইচবি-১৪,বি কে-২৩০, বি কে- ৫৬০, বি ডি-১১১, মল্লিকা,নাগার্জুনা খরা সহনশীল। টাটকা সবুজ গােখাদ্য হিসেবে। KF-665, KF-667 বেশি ফলন দেয়। পুষা কম্পােজিট ৪৪৩ নামে নতুন মিশ্র জাত বেড়িয়েছে-জাতটি জলদী উচ্চ ফলনশীল ও খরা সহনশীল।
ফসলের মেয়াদ: রোপনের ৯০-১০০ দিন এর মধ্যে উৎপাদন সম্পূর্ণ হয়ে থাকে।
রোপনের সময়: খরিফ-জুলাই মাসের ২য় সপ্তাহ -৩য় সপ্তাহ। রবি: সেচের সুবিধা থাকলে
(অক্টোবর থেকে নভেম্বর)।
.৩।বীজের হার:
বাজরা বীজ ৬০০ গ্রাম থেকে ৭৫০ গ্রাম প্রতি বিঘায় (৪-৫ কেজি প্রতি হেক্টরে)।
আরও দেখুন-NAIFF ২ কোটি টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋন দিচ্ছে। কিভাবে আবেদন করবেন
৪।জমি প্রস্তুতি
বাজরা যে কোনও মাটিতেহয়। বেলে ও নীরস মাটিতে চাষ করলে জৈব সার বেশি করে কম সেচ ও বিনা সেচে হতে পারে। জমি চাষ দিয়ে বিঘা প্রতি ১০০০ কেজি গােবর বা কম্পােস্ট সার (প্রতি হেক্টরে ৭-১০ টন) ব্যবহার করতে হয়। এর পর সারির দূরত্ব ৩০ সেমি বা ১ ফুট, সারিতে গাছের দূরত্ব ১০-১২ সেমি বা ৪-৫ ইঞ্চিতে লাগাতে হবে ।
সারি ও গাছের দূরত্ব: সারির দূরত্ব ৩০ সেমি বা ১ ফুট, সারিতে গাছের দূরত্ব ১০-১২ সেমি বা ৪-৫ ইঞ্চিতে লাগাতে হবে ।
সাথি ফসল: রবি মরশুমে মটর, সয়াবিন। খরিফ মরশুমে - বিউলি, কুলতি, অড়হর, সয়াবিন লাগানো যেতে পারে ।
.৫।বাজরা রোগ ও প্রতিকার ?
বাজরার পাতার দাগ ,ছত্রাকজনিত রোগ ডাউনি মিলডিউ ,পাতার ব্লাইট এর মতো রোগ হয় তবে জৈব কীটবিতারক দিয়ে এর সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায়। .
৬।উৎপাদন:
বৃষ্টি নির্ভর চাষে বিঘায় ১০০-১২০ কেজি ১২-১৫ কুইন্টাল প্রতি হেক্টরে) দানা হয়। সেচ, সার ও উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহারে বিঘায় ৩০০-৪০০ কেজি ২৫-৩০কুইন্টাল প্রতি হেক্টরে পর্যন্ত দানা হতে পারে।
৭। FAQ (প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী)
ক। বাজরার উপকারিতা কি ?
উত্তর -বাজরা অধিক ক্যালোরি ,কার্বোহাইড্ৰেট ৬৭-৭০% ,প্রোটিন ১১% ,ফাইবার ২.৩%,খনিজ উপাদানের একটি প্রধান উৎস। বাজরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাওয়া হয়ে থাকে। বিভিন্ন গবেষণামতে গবেষকরা দাবি করে থাকেন বাজরা থাইরয়েড ,কোলেস্টরল , ডায়বেটিস ,রক্তে শর্করা ব্যবস্থাপনার মতো বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে বাজরা খাদ্য সেবনে অধিক উপকারে আসে।
খ। বাজরা চাষ কোথায় ভালো হয় ?
উত্তর -বাজরা যেকোনো মাটিতে চাষ করা যায়। জলের চাহিদা কম , কম উর্বর ,অনুবর যুক্ত মাটি , খোঁড়া প্রবন এলাকা , অন্য ফসল চাষ অনুপযুক্ত জমি করা যায় এছাড়াও পাহাড়ি অঞ্চলেও এর চাষ ভালো হয়।
গ। বাজরা চাষে লাভ কেমন ?
উত্তর -বাজরা দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ধরনের খাদ্যতালিকাগত ফাইবার সমৃদ্ধ।এতে সর্বোচ্চ পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে (12.5%)।রান্না করা বাজরার এক কাপ পরিবেশন প্রায় 207 ক্যালোরি সরবরাহ করে।বাজরা রুটি, বিয়ার, অন্যান্য খাবার তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে । স্বাস্থ সচেতনার কথা মাথায় রেখে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে এবং রপ্তানি হচ্ছে । উৎপাদনের তুলনায় অধিক চাহিদা তৈরী হয়েছে বিশ্ববাজারে।