পুকুরে মাছ করতে গিয়ে মাছ চাষীদের একটি সময় সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হল পুকুরে মাছ ভাসে এবং মনে বার বার প্রশ্ন জাগে কেন ভাসছে? যারা জানেন তারা ভাবেন যে হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে বা খাবার খাওয়ার জন্য মাছ ভেসে ওঠা কিংবা চলাচলের প্রশ্নে ভেসে উঠছে যেটা হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু সময়ে মাছ ভেসে ওঠে এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে অনেকের মাছ মারা যায় ও ভুল কিছু প্রয়োগের ফলেও মারা যায়।
মাছ কেন ভাসে তার কারণ একটি উল্লেখ করে তাকে ১০০% ঠিক বলা যাবে না। মাছ ভাষার সম্ভাব্য অনেকগুলি কারণ হতে পারে সেগুলি সঠিক ভাবে জানলে এবং সেই সমস্যার সম্মুখীন হলে নিশ্চই তার সমাধান পাওয়া যাবে।
পুকুরে মাছ ভাষার কারণ গুলি -
প্রথমেই বলা হয়েছে মাছ খাবার খাওয়ার এবং চলাচলের জন্যে অনেক সময় ভেসে বেড়ায় যা স্বাভাবিক এছাড়াও মাছ কেন কি কারণে ভেসে উঠছে তা জেনে সমাধান করতে হবে। যে কারণ গুলি থাকে যার কারণে মাছ মারা যায় সেগুলির কারণ সমাধান গুলি হল -
গভীর রাত থেকে সকালে সূর্য উদয়ের আগপর্যন্ত বা মেঘলা আকাশ থাকলে বিভিন্ন অসুবিধায় মাছকে ভেসে বেড়াতে দেখা যায় মাছের কোনো রোগবালাই ছাড়াই -
১। কারণ - জলে যখন কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমান বেশী থাকে এবং অক্সিজেনের ঘাটতি থাকে তখন মাছ ভেসে বেড়ায় -
করণীয় - এক্ষেত্রে শতকে ২০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে পারেন।
ফলাফল - ক। চুন প্রয়োগ করলে জলের মধ্যেকার দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইড কে চুন ধরে ক্যালশিয়াম কার্বনেট রুপে পুকুরের তলায় জমা কর।
খ। সেই সাথে জলের মধ্যেকার আন্তঃআণবিক ক্ষেত্র গুলিকে ফাঁকা করে অক্সিজেনের প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
গ। পরবর্তীতে জমাকৃত ক্যালশিয়াম কার্বনেট আবার প্রয়োজন হলে বেরিয়ে এসে সালোক সংশ্লেষণের কাজে ব্যবহৃত হয়।
২। কারণ - জলে কার্বন ডাই-অক্সাইড সেই রকম নেই অথচ অক্সিজেনের উতপত্তির অভাবজনিত ঘাটতি দেখা যায় -
করনীয় - এক্ষেত্রে পুকুরে পরিমিত পরিমানে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে জলকে সবুজ করে তুলতে হবে।
ফলাফল - জল সবুজ হওয়ার কারণে সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি হয় পুকুরে মাছের জন্যে।
৩। কারণ - মাছকে অতিরিক্ত খাবার দেয়া; যা মাছের সহজে হজম হয় না ফলে মাছের এই অবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এবং মাছ ভেসে উঠতে পারে। এই ক্ষেত্রে অতিভোজন সহ অতিরিক্ত খাদ্যের পচন জনিত কারনে অক্সিজেনের ঘাটতি ঘটে।
করনীয় - ক। মাছকে অতিরিক্ত খাবার দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
খ । ডুবন্ত খাবার হলে খাদ্য দানীতে প্রয়োগ করে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে প্রয়োগ কৃত খাবার কতটা খাচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে।
গ। মাছের দৈহিক ওজনের সাথে মাছের খাদ্য প্রয়োজনের মাঝে সমতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
৪। কারণ -অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করার কারনে ফাইটোপ্লাংক্টন, জুওপ্লাংক্টন এবং পুকুরের তলদেশে বিভিন্ন প্রানীর উপস্থিতিতে অক্সিজেনের বেশী ব্যয় হওয়ায় মাছের ভেসে ওঠে -
করনীয় - ক। পুকুরের জলে অতিরিক্ত সার প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
খ। অনেক সময় জুওপ্লাংক্টনের অতিরিক্ত উপস্থিতি এবং কিছু জুওপ্লাংক্টনের সাইজ বেশ বড় হওয়ার কারনে মাছ এই গুলিকে খেতে পারে না । এই কারনেও ফাইটোপ্লাংক্টন শেষ হয়ে যাওয়ায় সালোক সংশ্লেষণ ব্যাহত হওয়ায় এক দিকে অপর্যাপ্ত অক্সিজেন অপরদিকে অক্সিজেনের জুওপ্লাংক্টন কর্তৃক গ্রহনের কারনে ঘাটতি দেখা যায় ফলে মাছ ভেসে উঠতে পারে।
করনীয় - ক। এক্ষেত্রে জুওপ্লাংক্টন নিয়ন্ত্রন করার জন্য সাইপার মেথ্রিন গ্রুপের ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
খ । এছাড়াও এক্ষেত্রে সেচিডিস্ক ব্যবহার করে জলে খাদ্য উপস্থিতি পরীক্ষা করে খাদ্য জলে খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৫। কারণ- হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস হলেও মাছ ভেসে বেড়ায় -
করনীয় - পুকুরে জলের তলা নাড়ানোর ব্যবস্থা সহ খাদ্যের পরিমান নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬ । কারণ -এ্যামোনিয়াজনিত বিষ ক্রিয়ায় বিশেষতঃ সিলভার কার্প চক্কর দিয়েই ছুট মেরেই শুন্যে লাফ দিয়ে পরে মরে যায় -
করনীয়- এমন হলে শতকে ২০০ গ্রাম লবন ছিটাতে হবে পুকুরে।
মাছ চাষ করতে গিয়ে মাছ ভেসে উঠলে তার উপযুক্ত কারণ গুলি নির্বাচন করে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিতে পারলে মাছ মোর যাওয়ার মতো বড়োসড়ো ক্ষতির সম্ভাবনা কে এড়িয়ে যেতে পারবেন।
তথ্য সূত্র - কাজী আবেদ লতীফ - বাংলাদেশ উপজেলা মৎস বিভাগ প্রাক্তন আধিকারিক।