ফসফো কম্পোস্ট কি ?ফসফো কম্পোস্ট সার তৈরী সহজ পদ্ধতি এবং ব্যবহার

Didibhai Agrofarm
0
ফসফো কম্পোস্ট কি ?ফসফো কম্পোস্ট সার তৈরী সহজ  পদ্ধতি এবং ব্যবহার

রাসায়নিক সার অতিরিক্ত ও অসম ব্যবহারে চাষের জমি তার নিজস্ব উর্বরতা অনেকটাই হারিয়েছে। জমির প্রাণশক্তি তলানীতে ঠেকেছে। হারিয়ে ফেলা উৎপাদন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে এবং যা আছে তা ধরে রাখতে বেশী বেশী করে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। একই সাথে কমাতে হবে অসম ও অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার। আপাত কঠিন কাজটা সহজেই করা যায় যদি বাড়িতেই সবুজ সার, কম্পােস্ট, ফসফো-কম্পােস্ট তৈরী করে জমিতে দেওয়া যায়। 

উৎকৃস্ট উচ্চমানের ফসফো কম্পোস্ট ফসফো কম্পােস্ট কি?

 আমরা চাষবাস ও গাছ গাছালীর আবর্জনা, গােবর, বাড়ি ঘরের ঝাট দেওয়া আবর্জনা, পশুপাখির মলমূত্র পচিয়ে সার বানালে তাকে কম্পােস্ট সার বলি। আর ঐ কম্পােস্ট বিশেষ অথচ সহজভাবে রক ফসফেট (ফসফেট সারের প্রাকৃতিক উপাদান), পাইরাইট (সালফার সমৃদ্ধ লৌহআকর), ইউরিয়া, জীবাণু সহযােগে বানালে তাকে বলি। ফসফো কম্পােস্ট। ফসফো কম্পােস্ট কমবেশী ১০০০ কেজি তৈরীর জন্য কি কি জিনিস এবং কি পরিমাণে লাগবে?

  • শুকনা জৈব আবর্জনা- (খড়সরষে,ভুট্টা ইত্যাদির কাঠিঝড়া পাতা ইত্যাদি) ৩৪০ কেজি।
  • কেজি কাঁচা জৈব আবর্জনা- (আগাছাগাছের পাতাকচুরী পানা ইত্যাদি)। ৪০০
  • গােবর সার কম্পােস্ট সার- (এর মধ্যে মজুত জীবাণু পচনে সাহায্য করে) ২৫ কেজি ।
  • কেজি রক ফসফেট (না পাওয়া গেলে সিঙ্গল সুপার ফসফেট) ৫০ কেজি ।
  • কেজি পাইরাইট (না পাওয়া গেলে সিঙ্গল সুপার ফসফেট) ২০ কেজি ।
  • গ্রাম পচনকারী জীবাণু- (ডিকম্পােসার ব্যাকটেরিয়া কালচার) ২৫০ কেজি ।
  • ইউরিয়া ১০ কেজি।
  • কাঁচা গোবর ২৫০
  • মাটি ২৫ কেজি ।
আরও দেখুন  পিএইচ (pH) কী ? চাষের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কী?

 ফসফো কম্পােস্ট তৈরী পদ্ধতি -

 ফসফো কম্পােস্ট বানানাের পদ্ধতি খুবই সহজ ও সরল। জল জমে না, দিনের বেশীরভাগ সময় রােদ পায় এমন জায়গা বাছতে হবে। প্রথমে জৈব ও অজৈব প্রতিটি জিনিসই ৭-৮ ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। এবার চার হাত চওড়া এবং পাঁচ হাত। লম্বা জায়গায় ছেড়া পলিথিন বা সারের বস্তা বিছিয়ে দিতে হবে, শান বাঁধানাে হলে ভালাে। এখন শুকনাে জৈব বস্তুর একটি ভাগ ঐ পলিথিনের উপরে বিছিয়ে দিতে হবে। এটি কমবেশী ৮-১০ ইঞ্চি উঁচু হবে। এবার সবুজ জৈব বস্তুরও একটি অংশ বিছাতে হবে(শুকনাে ও কাঁচা জৈব বস্তু একসাথে মিশিয়ে দিতে পাড়লে ভালাে)। এর পর কাঁচা। গােবর, মাটি ও গােবর সার বা কম্পােস্টের এক একটি ভাগ একসাথে জলে গুলে ছিটিয়ে দিতে হবে। এখন এর উপরে ইউরিয়া ও জীবাণ গােলা জল ছড়াতে হবে। জীবাণু না পেলে কেবল ইউরিয়াই জলে গুলে ছড়াতে হবে। তারপর রক ফসফেট ও পাইরাইটের একেকটি অংশ সমভাবে বিছিয়ে দিতে হবে। পূনরায় শুকনাে জৈব বস্তু থেকে শুরু করে ইউরিয়া ও জীবাণু জলে গুলে ছিটিয়ে পরপর ৭-৮টিস্তরে চেপেচেপে সাজিয়ে স্তুপ বানাতে হবে। তারপর স্তুপটির মাটি ও গােবর জলের কাদা করে লেপে দিতে হবে। এখন পলিথিন চাদর দিয়ে স্তুপটি পুরােপুরি ঢেকে দিতে ২০ কেজি হবে। যাতে জল না শুকোয় এবং বাইরের জল না ঢুকতে পারে। এক মাস বাদে পলিথিনের চাদর সরিয়ে স্তুপটি উল্টে পাল্টে প্রয়ােজন মত জল দিয়ে ভিজিয়ে আবার স্তুপ আকারে সাজিয়ে ঐ পলিথিন চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। দুই থেকে আড়াই মাস বাদে জমিতে ব্যবহার উপযুক্ত উন্নতমানের ফসফো কম্পােস্ট তৈরী হবে। 

ফসফো কম্পােস্টের গুণগত মান: 

 এই সারে শতকরা ২-৩ ভাগ নাইট্রোজেন, ৩.২-৪.৮ ভাগ ফসফোরাস ১.৮-২.৬ ভাগ পটাশিয়াম ও ১.৫-২.০ ভাগ সালফার ও পৰ্য্যাপ্ত পরিমাণে ফসলের প্রয়ােজনীয় অনুখাদ্যগুলি গাছের বা ফসলের গ্রহণযােগ্য অবস্থায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রতি ১০০ কেজি ফসফো কম্পােস্ট সারে ৪.৫-৬.৫ কেজি ইউরিয়া, ২০-২৫ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট ও ৩-৪.৫কেজি মিউরেট অব পটাশ ছাড়াও প্রয়ােজনীয় সালফার ও অনুখাদ্য পাওয়া যায়। সাথে থাকে প্রচুর জৈব কার্বন যা মাটির উপকারী জীবাণুদের প্রয়ােজনীয় খাদ্য। এর ব্যবহারে মাটি জীবন্ত হয়ে ওঠে৷ এই কম্পােস্ট উৎপাদনের সময় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপে জৈব পদার্থে বিভিন্ন আগাছার বীজ এবং ক্ষতিকারক জীবাণু কমে যায়।

তুথ্য সূত্র - ড: নীহারেন্দু সাহা -বিধানচন্দ্র  কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও দেখুন  


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)