আখ চাষের উন্নত পদ্ধতি কি ?। কিভাবে আখ চাষ করলে লাভ বেশি হবে ?

Didibhai Agrofarm
0
আখ চাষের উন্নত পদ্ধতি কি ?। কিভাবে আখ চাষ করলে লাভ বেশি হবে ?

বর্ষার শেষ দিকে উঁচু জমি নির্বাচন করে লাগানোর একটি উপযুক্ত সময়। দেশের  বিভিন্ন রাজ্যে আখ চাষ হয়ে থাকে তাদের মধ্যে ভারতের উত্তর প্রদেশে সর্বাধিক আখ চাষ হয়ে থাকে গত 2020 -২০২১ সালে সেখানে ২৭.৪০ লক্ষ হেক্টর আখ চাষ হয়েছে এবং ২২.৩২ কোটি টন আখ উৎপাদন হয়েছ। উত্তর প্রদেশের প্রায় ৪৫ লক্ষের অধিক  আখ চাষীরা আখ চাষ ই এপ ব্যবহার করে  আরো স্মার্ট হয়েছে  ।  আখ উৎপাদন মূলত বৃষ্টিপাত এবং জলবায়ুর নিরিখে হয়ে থাকে।  ভারতে আখ উৎপাদন অঞ্চল গুলিকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে - 

ক। উপক্রান্তীয় অঞ্চল - এই অঞ্চলের মধ্যে  উত্তর প্রদেশে,হরিয়ানা ,উত্তরাখন্ড,পাঞ্জাব বিহারে এই রাজ্য গুলিতে  বার্ষিক  বৃষ্টিপাতের পরিমান ১৮০ থেকে ২০০০মিলিমিটার। জলবায়ু আদ্র ,উপ -আদ্র এবং শুস্ক থেকে বিস্মৃত  উপ -আদ্র থেকে ঠান্ডা শুস্ক আদ্র ,শুস্ক এবং আধা শুস্ক । এই অঞ্চলে মোট উৎপাদনের প্রায় 55 থেকে 45 শতাংশ হয়ে থাকে তাই এই অঞ্চল গুলিকে আখ চাষের গুরুত্ব পূর্ণ অঞ্চল জন বলা হয়।  

খ। ক্রান্তীয় অঞ্চল -এই অঞ্চল গুলির মধ্যে মহারাষ্ট্র ,তামিল নাড়ু ,গুজরাট ,মধ্যপ্রদেশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যগুলি। এই অঞ্চলের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৬৫০ থেকে ৩৬০০ মিলিমিটার। এখানকার জল বায়ু আধা শুস্ক থেকে শুস্ক আধা এববং শুস্ক উপভুমিতে আদ্র। এই অঞ্চলে মোট উৎপাদনের প্রায় ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ হয়ে থাকে তাই এই অঞ্চল গুলিকে আখ চাষের গুরুত্ব পূর্ণ অঞ্চল জন বলা হয়।  

  পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে কম বেশি  আখ চাষ হয়ে থাকে রাজ্যের ৬ টি জলবায়ু অঞ্চলে আবহাওয়া এবং উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে। আখ চাষ পদ্ধতিগতভাবে এবং সঠিক বীজ নির্বাচন করলে লাভবান হওয়া যায় । পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বেথুয়াদাহোরিতে আখ গবেষণার শাখা রয়েছে তারাও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাত এবং উন্নত চাষ পদ্ধতি  উপস্থাপন করে থাকেন।

আখ চাষের জন্যে বীজ নির্বাচন থেকে বীজতলা এবং মূলজমিতে রোপন নির্দিষ্ট  পদ্ধতি অবলম্বন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। 

কোন কোন মাসে আখ চাষ এর সঠিক সময়   ?

আখ চাষের জন্যে শরৎকালে  ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টবর এবং বসন্তে ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চ মাসে। 

আখ চাষের জন্যে কেমন মাটির প্রয়োজন ?

আখ চাষের জন্যে ভালো জল নিষ্কাশন যুক্ত ভারী মাটিতে ০.৫% -০.৬% কার্বন উপাদান এবং মাটির পি এইচ ৬.৫ থেকে ৭.৫ লেবেলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। আখ মূলত ভারতে গাঙ্গেয় এবং অন্যান্য পলিমাটির দোআঁশ ,মাটির দোআঁশ ,বাদামি বা লালচে দোআঁশ ল্যাটেরাইট ও কালোমাটিতে ভালো জন্মায়।  

আখের বীজতলা তৈরী করবো  কিভাবে ?

মাটি ভালো নরম করে নিয়ে প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্যে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডে এবং সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স (১:১) অনুপাতে 20 গ্রাম বীজতলার মাটির সাথে  মিশ্রিত করতে হবে। বীজতলায় সার হিসেবে ভার্মি কম্পোস্ট ,গোবর সার ও যদি সম্ভব হয় ঘোড়ার গোবর এবং বালি ও পলি ১:১:১:৩:১ অনুপাতে মিশ্রণ করতে হবে।  এই পদ্ধতিতে বীজতলায় তৈরির করে ভালো ফল ভালো ফল পাওয়া গেছে। 

ডাবল চারা রোপন পদ্ধতি - এই পদ্ধতিতে ১০ সপ্তাহ বয়সী আখের চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারি ১৫ সেন্টিমিটার ব্যবধানে প্রাথমিকগ্রাউন্ড নার্সারিতে লাগানো হয় এর পর প্রথম রোপনের ৪ সপ্তাহ পর সেখান থেকে তুলে নিয়ে দ্বিতীয় জায়াগায় সারি থেকে সারি ও চারা থেকে চারা ৯০ সেন্টি মিটার দুরুত্বে লাগানো হয় এতে দেখা গেছে ১০সপ্তাহ বয়সে একক রোপনের তুলনায় জোরালো রোপনে আখের ভালো বৃদ্ধি  লক্ষ্য করা যায়। 

আখ এর বীজ লাগাবো  কিভাবে  ?

আখ চারা রোপনের জন্যে উন্নত পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। ট্রেঞ্চ পদ্ধত, জোড়া  সারি পদ্ধতি ,রিং পিট্ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। বীজ এর মুখ ৩ টি বের হলে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি দিয়ে শোধন করে ৮০ থেকে ৯০ স্কয়ার সেন্টিমিটার দূরত্ত্বে সারিতে লাগাতে হবে এবং বীজ লাগানোর পর ৫ সিন্টিমিটার মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। 

আখ চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি -

প্রায় ৮০%আখের শিকড় ৬০ সেন্টিমিটার মাটির গোচির পর্যন্ত যায় তাই অন্তত ৩০ সেন্টিমিটার  গভীর পর্যন্ত মাটি উর্বরের জন্যে অন্তত লাঙ্গল দিয়ে দুটি চাষ দিতে হবে এর পর যথা রীতি মাটি উর্বরের জন্যে ছোট চাষ করতে হবে। 

জমি তৈরির সময়  ২ টন গোবর ,১০০  কেজি রেড়ির খৈল ,৬০ কেজি রক ফসফেট ,৬০ কেজি চাই ,৯ কেজি করে এজেট ব্যাকটোর ও পি এস বি স্যারের সাথে ৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।  নাইট্রেজেন বা ইউরিয়া সার এর প্রয়োজন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন হয় যেমন উত্তর প্রদেশে একর প্রতি ৬০ কেজি আবার মহারাষ্ট্র , কর্নাটকে ১২০ কেজি লাগে তাই জমির প্রয়জোনীয়তা অনুসারে বা মাটি পরীক্ষা করে তার রিপোর্ট অনুসারে যা প্রয়োজন হবে তার তিন ভাগের একভাগ চাষের সময় এবং বাকি দুই ভাগ টেইলারিং এর সময় এবং এক ভাগ গাছের গ্রোথ বৃদ্ধির সময় প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে সালফার এর ঘাট টি দেখা যায় তাই বিঘা প্রতি ১০ কেজি সালফার প্রয়োগ করা যেতে পারে সেই এতে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে পটাশ ব্যবহার করতে হলে  করতে হলে করা যেতে পারে। 

 আখের  অঙ্কুরোদগম এবং গাছের বৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য জিবরেলিক   অ্যাসিড স্প্রে (35 পিপিএম) এবং  100 পিপিএম ইথ্রেল দ্রবণে রোপণের 90, 120 এবং 150 দিন পর প্রয়োগ করলে আখের ফল পাওয়া যায়।

আখ চাষের জলের প্রয়োজনা  কতটা ?

এক টন আখ উৎপাদনে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বার সেচে ২৫০ টন জলের প্রয়জন হয়। বৃষ্টিপাতের উপর ভিত্তি করে লাগানোর পর থেকে গাছের ২৭১ দিন বয়সে শেষবার সেচের প্রয়োজন হয়।  এর মধ্যে গাছের টেলারিং  এবং বৃদ্ধির পর্যায়ে  বৃষ্টি না হলে জল দেওয়া আবশ্যক। খোঁড়ার সময় ২.৫% ইউরিয়া এবং ২.৫% মিউরেট পটাশ ৩ থেকে ৪ বার পাক্ষিক ভাবে ফলিয়ার স্প্রে করলে খোঁড়ার প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। চাষের ক্রিটিকাল পর্যায়  হলো যখন জলের অভাবে প্রচুর পরিমানে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং পরবর্তীতে পর্যাপ্ত পরিমানে জল প্রয়োগ করলেও অবস্থার পরিবর্তন হয় না এগুলি অংকুরের সময় ,টেলারিং এবং বৃদ্ধির সময় প্রভাব দেখা যায়। তাই সময় মতো জলের প্রয়োজনীয়তা পর্যবেক্ষণ করে জল সেচ দেওয়া প্রয়োজন তাহলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। 

আখ চাষের জন্যে কি কি আগাছা নাশক ব্যবহার করতে হবে ?

আখ চাষে আগাছা বড়ো একটি সমস্যা। আগাছানাশক এর জন্যে  মেট্রিবুজিন @ ১.২৫ কেজি  /ভেক্টর   প্রয়োগের সাথে প্রাক-আবির্ভাব হিসাবে 75 দিন পর অ্যালমিক্স ২০ গ্রাম/হেক্টর   প্রয়োগ (ডিএপি) 30, 60 এবং 90 ডিএপিতে তিনটি ম্যানুয়াল হোয়িংয়ের চেয়ে বেশি কার্যকর এবং অর্থনৈতিক প্রমাণিত হয়েছে।

আখ চাষ একটি দীর্ঘ মেয়াদি ফসল তাই আখের সাথে আন্তঃফসল হিসেবে ঋতু অনুযায়ী যথা গম ,সয়াবিন ,চীন বাদাম ,সরিষা ,আলু লাগানো যেতে পারে এতে ঘাসের উপদ্রব কম হবে এছাড়াও মালচিং করে আগাছা দমন করা যায়।   বিশেষ করে দেখা দেখা গেছে গম চাষ করলে ফলন বেশি পাওয়া যায়। 

আরও দেখুন -

মাছ চাষে পি এইচ (PH ) এর গুরুত্ব। জলে Ph এর গুরুত্ব ও ব্যবহার -

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)