গােবর গ্যাস স্লারি কি ?এবং কৃষি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার -

Didibhai Agrofarm
0
গােবর গ্যাস স্লারি কি ?এবং কৃষি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার


 বায়ােগ্যাস বা গােবর গ্যাস উৎপাদন যন্ত্র থেকে যে জলীয় পরিত্যক্ত পদার্থ বেরিয়ে আসে তাকে স্লারি বা গােলাসার। সার বলে যা সার হিসাবে ব্যবহার হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে গােবর, পশুপাখীর মলমূত্র, আর্বজনা থেকে কম্পাে। সার তৈরী করতে প্রায় ছয়মাস সময় লাগে। আর এই দীর্ঘ সময়ে উপস্থিত সার বস্তুর (গাছের খাদ্য উপাদান) উল্লেখযােগ্য পরিমাণ ন হয়ে যায়। তাই এইসব জৈবপদার্থগুলােকে গােবর বা বায়ােগ্যাস তৈরীর যন্ত্রে পরিপাকের মাধ্যমে বিজারিত করে আরও কার্যকরী বা উন্নত সার পাওয়া সম্ভব। বিজারনের ফলে এই জৈব বর্জ্য পদার্থ থেকে যেমন শুদ্ধ জ্বালানী গ্যাস (বায়ােগ্যাস) রান্নার কাজের জন্য পাওয়া যায়, তেমনি পড়ে থাকা জৈব পদার্থের অবশেষ। (যেটা জেবসার হিসাবে ব্যবহার হয়) স্লারি-তাতে সার বস্তুগুলােও অনেক বেশি পরিমানে বজায় থাকে। 

এছাড়া স্লারিতে অণুখাদ্যগুলাে যেমন দস্তা, তামা , ম্যাঙ্গানীজ, লৌহ ইত্যাদি বেশি পরিমানে গাছের লভ্য অবস্থায় থাকে। জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকায় মাটিতে বসবাসকারী উপকারী জীবাণু, অণুজীবগুলাে বেশি পরিমাণ খাদ্য পায়। কার্বন-নাইট্রোজেনের অণুপাতসংঙ্কীর্ণ হওয়ায় গাছ বা ফসলের জন্য নাইট্রোজেন বেশি পরিমান সহজলভ্য হয়। এছাড়া এতে আগাছার বীজগুলাে ন হয়ে যায় ফলে মূলজমিতে আগাছা কম হয়। 

গােবর গ্যাস স্লারিব্যবহার 

বায়ােগ্যাস যন্ত্র বা প্ল্যান্ট থেকে পাওয়া স্লারি বা সারে যে নাইট্রোজেন থাকে তার ১০-১৫ ভাগ এ্যামােনিয়ারূপে গলা বা ভেজা অবস্থায় সরাসরি এই সার প্রয়ােগে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। (ধানে পরিমানমত ব্যবহারে ক্ষতি হবার সম্ভবনা কম)। এজন্য ছায়ায় শুকিয়ে প্রয়ােগ করাই ভাল। এতে নাইট্রোজেনের পরিমান কমে ১.৮-২ ভাগ হবে। আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় দেখা গেছে – হেক্টরে (২৫০শতক) দশহাজার কেজি স্নারির সাথে এ্যাজোস্পিরিলাম ও ফসফো ব্যাক্টেরিয়া প্রয়ােগে ধানের উৎপাদন ২৭% পর্যন্ত বাড়ানাে গেছে। (কেবলমাত্র – নাইট্রোজেন,ফসফেট ও পটাশ সুপারিশমত ব্যবহারের তুলনায়)। এইভাবে স্লারির ব্যবহার ধানের ক্ষেত্রে করার পর দ্বিতীয় ফসল বিউলির উৎপাদন ১৭% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা গেছে। শুকানাের ফলে এ্যামােনিয়া উবে গিয়ে যে ক্ষতি হয় সেটা বাঁচানাের জন্য অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিশেষ পদ্ধতির সুপারিশ করা হয়েছে। ক) টাটকা স্লারির সাথে সমপরিমান জল মিশিয়ে পাতলা করে নিয়ে তার সাথে ২% হারে এ্যাজোস্পিরিলাম, ফসফো ব্যাক্টেরিয়া এবং দস্তার লবন (জিংক সালফেট) মিশিয়ে ধানের চারার শিকড় ডুবিয়ে নিয়ে রোপন  করা যায়।

 আন্নামালাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় দেখা গেছে এতে ৬% পর্যন্ত ধানের উৎপাদন বেড়েছে। | টাটকা স্লারির সাথে ২% হারে এ্যাজোস্পিরিলাম, ফসফো ব্যাক্টেরিয়া এবং দস্তার লবন মিশিয়ে বীজের। সাথে মাখিয়ে নেওয়া যায়। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় দেখা গেছে ধানের ক্ষেত্রে ৬% এবং জোয়ারের ক্ষেত্রে ১৫% উৎপাদন বেড়েছে। যেখানে সবার বায়ােগ্যাস উৎপাদন ব্যবস্থা নেই বা স্লারি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাবেনা সেখানে উপরে বলা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।আবর্জনা কম্পাে তৈরীর সময় টাটকা স্লারি মিশিয়ে নিলে উৎপাদিত কম্পোস্টের  মান অনেক উন্নত হয় এবং তাড়াতাড়ি সারে পরিণত হয়। । স্লারির মান উন্নয়ন খুব সহজেই এর মান উন্নত করা যায়। টাটকা স্লারির সাথে সপারিশকৃত পরিমান রক ফসফেট বা সুপার ফসফেট মিশিয়ে গাদা করে রাখলে ৩০দিনের মধ্যে উন্নত সার তৈরী হয়। এতে ফসফেট বেশি মাত্রায় সহজলােভ্য হয়। দেখা। গেছে এভাবে উন্নত স্লারি প্রয়ােগে ধানের উৎপাদন ৮-১০% বৃদ্ধি পেয়েছে। সতর্কতা টাটকা স্লারি ধান ছাড়া অন্য ফসলে দেওয়া উচিৎনয় । ছায়ায় ১০-২৫ দিন শুকিয়ে দেওয়া ভাল ।

তথ্য  সূত্র : 

জয়বল ও কুপুস্বামী, আন্নামালাই কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়, 

-

আরও দেখুন - 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)