পুলিশ এর বৌ উদ্যোগক্তা হতে চায় তাই ছাগল পালন করে তৈরী করলেন নিজের পরিচয়,-দক্ষিণ ২৪ পরগনা

Didibhai Agrofarm
0


পুলিশ এর বৌ উদ্যোগক্তা হতে চায় তাই  ছাগল পালন করে তৈরী করলেন নিজের পরিচয়,-দক্ষিণ ২৪ পরগনা

ছাগল পালন একটা সময় শুধু গ্রামের লোকেরা পালন করলেও এখন সে ধারণা বদলেছে। এখন শহরেও ছাগল পালন করতে দেখা যায়। একজন শিক্ষিত বেকারও এখন ছাগল পালন এ নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে তাই গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই ছাগল পালন করতে চায়। উদ্যোগক্তা হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেন। অনেকে সাফল্য পেয়েছেন অনেকে আবার সঠিক পরিকল্পনা  এবং মনের জোর ও পরিশ্রম এর অভাবে ব্যর্থ হয়েছেন আর যারা সাফল্য পেয়েছেন তারা ছাগল পালন কে  হালকা ভাবে না নিয়ে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে ছাগল পালন করে একজন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগক্তা হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন এবং এলাকার অনেক বেকারকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।  চাকরির জন্যে  যতটা পরিশ্রম এবং সময় ব্যায় হয় তার থেকেও কম সময়ে ছাগল পালন করে চাকরির থেকেও অধিক অর্থ স্বাধীন ভাবে উপার্জন করছেন তাদের মধ্যে এই এম এ পাস্ অদম্য জেদি পুলিশ এর বৌ একজন। তিনি শুধু টাকার জন্যে নিজের পরিচয় নিজে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়ে আজ সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছেন তা নয় নিজে কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে যে বড়ো হয়েছেন সেটাকে বাস্তব রূপ দিতেই তার এই প্রচেষ্টা। 

পুলিশ এর বৌ ছাগল খামারি হবে এটা হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেন যে তার তো অর্থের দরকার নেই তাহলে তার কি দরকার এসব এর কিন্তু আর এক ভাবে যদি ভাবা যায় যে স্বপ্ন চোখে নিয়ে পড়াশুনো করলেন বড়ো হয়ে কিছু করার তা কি শুধু তার স্বামীর পরিচয়ে বাঁচার জন্যে নাকি নিজেরও একটি পরিচয় হবে সেই চিন্তাই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সোনারপুর থানা খেয়াডাঙার পুলিশ আধিকারিক এর এম এ পাস্ গৃহ বধূ চন্দনা নস্করকে ঘমোতে দেয়নি প্রতিনিয়ত ভাবতেন কিছু করতে হবে চাকরি না হোক একজন উদ্যোগক্তা হয়েও নিজের পরিচয় তৈরী করা যায় সেই স্বপ্ন নিয়েই ছাগল পালনকে নিজের পরিচয় তৈরী করার চাবি কাঠি হিসেবে বেঁচে নিয়েছেন। 

মানুষকে কিছু করার জন্যে লড়াই করতে হয় অর্থের জন্যে কিন্তু তাকে লড়াই করতে হয়েছে স্বামী ,পরিবার ,পাড়াপ্রতিবেশী আত্বিয়স্বজন সবার সাথে এবং শুরু করার পর অনেক ব্যঙ্গ বিদ্রুপ শুনতে হয়েছে তবু তিনি দোমে যান নি  এমনকি অর্থের অভাব না থাকা সত্ত্বেও বাড়ি থেকে অর্থ দেয়নি কারণ যেন সে ছাগল পালন করতে না পারে। অবশেষে তিনি লোন নিয়ে একটি অস্থায়ী ঘর তুলে ৩ টি চারটি করে কিনে মোট ১৩ টি ছাগল দিয়ে তিনি তার যাত্রা শুরু করেন বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল নিয়ে। 

আমরা অনেক ছাগল খামারি দেখেছি কিন্তু চন্দনা দেবীর মতো ছাগল খামারি এখনো দেখিনি কারণ ছাগল পালনে তার যে আগ্রহ তার জন্যে যে লড়াই নিজের সন্তানের মতো করে লালন পালন করা যা তার অভিজ্ঞতার  কথা জানলে বুঝতে পারবেন। 

আরও দেখুন -গাইঘাটা ব্লক এর ঠাকুর নগর এর ছাগল এবং বনরাজা মুরগি খামারি প্রদীপ রায় এর সাফল্য কথা

ছাগল পালনের অভিজ্ঞতা -

চন্দনা দেবী বলেন ছাগল পালনের জন্যে তিনি ৭ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করলেও তার মতে ৭ দিন একমাসের প্রশিক্ষণে শুধু ধারণা তৈরী হয়  কিন্তু প্রধান প্রশিক্ষণ হয় হাতে কলমে করতে গিয়ে। আমরাও যেটা সর্বদা বলে থাকি রোগ প্রতিরোধ হলে দুটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে কি কারণে হলো এবং তার প্রতিকার কিভাবে বা কোন ঔষধে  হলো তা খাতায় লিখে রাখতে হবে এটা একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা হয় যা কোনো প্রশিক্ষণ থেকে হয় না। চন্দনা দেবী ছাগল পালন এর পাশাপাশি তার জ্ঞানের পরিধিকে বৃদ্ধি করার জন্যে সর্বদা জানার চেষ্টা করতেন সমস্তটা ডাক্তার বা প্রাণী বন্ধুদের ভরষাতে রেখে দিতেন না। তাই তিনি নিজেই চেষ্টা করতেন বিনা ঔষধে কিভাবে ঠিক করা যায় ছাগল । 

চন্দনা দেবী বলেন তার ফার্মে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল আছে যেমন ব্ল্যাক বেঙ্গল ,যমুনা পারি ,তোতাপুরি ,শিহোরি , এক বছর আগে এগুলি মিলিয়ে মোট ১৩ টি ছাগল দিয়ে খামার শুরু করে।  

চন্দনা দেবী বলেন তিনি নিয়মিত ছাগলের টিকা গুলি সময় মতো দিতেন পিপি আর ,টিটেনাস  এবং ঠান্ডা লাগলে বাড়িতে তৈরী তেল ছাগল নাকে দিতেন  এর জন্যে কালোজিরা ,রসুন ,কাঁচা হলুদ ,মেথি ,জোয়ান গুঁড়ো করে নিয়ে সর্ষের তেল এক ঘন্টা গরম করে বোতলে ভোরে রাখেন এবং সিট্ বর্ষায় প্রতিদিন প্রতিটি ছাগলকে নাকে একটু করে দিয়ে দিতেন তাই তার ছাগলে ঠান্ডা লাগতো কম। 

তার ছাগলের পক্স হয়েছিল তখন তিনি তার সমস্ত ছাগলকে আলাদা করে রেখে দিতে না এবং আক্রান্ত ছাগল এর গায়ে নিঁম  হলুদ বেটে লাগিয়ে দিতেন এবং হোমিওপাথি ঔষধ খাওয়াতেন। 

গর্ভবতী ছাগলদের আলাদা করে রাখেন ,বাচ্চা ছাগলদের আলাদা করে রাখেন এবং ছাগল আক্রান্ত হলে সেগুলিকে আলাদা করে রাখেন। তার ছাগল ঘরে সব আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা আছে। নিচে তক্তা বিছিয়ে রাখেন অল্প উঁচু করে যাতে ঠান্ডা না লাগে এবং মাটি থেকে জীবাণু ছাগল এর শরীরে প্রবেশ না করে। যে ছাগল এর বেশি ঠান্ডা লাগে সেগুলিকে চিকিৎসা  চলা কালীন চারিদিক ঘেরা একটি জায়গায় রাখেন যাতে বাইরে থেকে হওয়া প্রবেশ না করে। 

চন্দনা দেবী ছাগল গুলিকে চড়িয়ে খাইয়ে নিয়ে আসেন দুবেলা করে এবং খামারে এনে আধা ঘন্টা পরে জল এবং শুকনো খাবার খেতে দেন যাতে ঠান্ডা না লাগে গরম থেকে এসে।  জলের সাথে মিনারেল ভিটামিন খাওয়ান এবং গম ছোলার  ভুসি,ভুট্টা ,গম ,কুচি, শুকনো খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন এতে তার ছাগল গা তেল তেল করে এবং ওজন ও ভালো আছে। মা ছাগলদের ভিটামিন খাওয়ান এবং বাচ্চা জন্মেরসময় বেশি যত্নবান হন। বাচ্চা জন্মেরপর মায়ের দুধ তারা তাড়ি ধরানোর  জন্যে বাচ্চার তালুতে গুড় বা মধু লাগিয়ে দেন যেন দুধ খায় তারা তাড়ি এবং মা ছাগলকে  গুড় লবন হলুদ উষ্ণ গরম জল করে দিনে ৩ চারবার খেতে দেন ২ দিন  এর পর কয়েকদিন ভিটামিন দেন  এবং বাচ্চা কে সরাসরি মায়ের দুধ খেতে দেন কম  কারণ তখন দুধ মোটা হয় ফলে বাচ্চা পাতলা পায়খানা করে এবং বেশির ভাগ সময় মারা যায়। ছাগল এর বাচ্চার নাভি নক কেটে দেন নাভিতে সুতো  বেঁধে দেন  এবং ১০-১৫ দিন পর্যন্ত শুকানোর জন্যে বেটাডাইন লাগান না হলে বেশির ভাগ সময় দেখা যায় ওই ভাবে ছেড়ে দিলে নাভিতে ইনফেকশন হয়ে ফুলে যায় এবং পোকা ধরে যায়। গ্যাস এর জন্যে জোয়ান গুলানো উষ্ণ জল এবং হোমিওপ্যাথি ঔষধ নাক্স ভূমিকা  দেন। 

তিনি বলেন যেকোনো কিছু করতে গেলে তার সাথে লেগে থাকতে হয় কারণ সেই বিষয়টা জানা নেই নতুন তার সাথে যত লেগে থাকা যাবে ততই  অভিজ্ঞতা হবে এবং একদিন সাফল্য আসবেই। 

চন্দনা দেবী বলেন তিনি কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে যখন শুরু করেছেন তখন তার জন্যে যতটা পরিশ্রম দেওয়া দরকার আমি দেই । এই ফার্মে শুরু করার আগে বিভিন্ন ভাবে জানার চেষ্টা করেছি যে ছাগল পালন এ লাভ কেমন। ছাগল এর বাচ্চার হিসেবে এবং মাংসের দাম হিসেবে করে দেখেছেন যে যদি এই ছাগল পালন করে কোনোদিন  সফল হই তবে মাসে ১ লক্ষ্য টাকা লাভ করা অসম্ভব নয় এবং সবচেয়ে বড়ো কথা আমি সফল হলে আমাকে দেখে আরো অনেকে আমাকে দেখে শুরু করে দিবে চাকরির অপেক্ষায় স্বপ্ন নষ্ট করে জীবন ক্ষয় না করে। অনেক আমার থেকে জানার চেষ্টা করবে কিভাবে আমি পালন করি তো কাউকে জানাতে বা বুঝতে হলে নিজেকে আগে সেই ভাবে দক্ষ হয়ে ওঠা দরকার আর আমি সেই চেষ্টা করছি। 

বর্তমান অবস্থা এবং পরিকল্পনা -

চন্দনা দেবী বলেন এক বছর দু মাস আগে একটি দুটি করে দেখে দেখে ১৩ টি ছাগল নিয়ে সকলের বিরোধিতা সত্ত্বেও নিজেকে কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে খামার শুরু করেছিলেন।  এখন তার খামারে ছোট বড়ো মিলিয়ে প্রায় ৪৮ টি ছাগল আছে এখন তার পুলিশ স্বামী ছোট বাচ্চা গুলো দেখে খুশি হন এখন আর কিছু বলে না ভাবছেন ও পারবে । ছোট ছাগল গুলির ওজন কিছু ৩ কেজি আছে এবং বড়ো ৩০কেজি 9০ কেজি ওজনের আছে এখন ভালো দাম পেলে বড়ো গুলি বিক্রি করে দিবেন। তার খরচ তেমন একটা হয়না দু বেলা মাঠে চড়িয়ে খায় এবং ঘরে খেতে দেন নিয়ম করে বেশি যেন না খায় সেই দিকে লক্ষ্য রাখেন এখন এই সব মিলিয়ে মাসে ৭০০-৮০০ টাকা খরচ হয়। 

চন্দনা দেবীর ইচ্ছে আগামী দিনে তার ফার্মটি আরো বড়ো হবে এবং মা ছাগল অন্তত ৩০০ রাখতে চান এবং সে অনেক বেকার কে আগামী দিনে ছাগল পালন এর মধ্যে দিয়ে নিজের পরিচয় তৈরী করবে তাই আজ তিনি নিজের পরিচয় তৈরির জন্যে ছাগল পালনকে বেছে নিয়েছেন। 

চন্দনা দেবীর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার সংগ্রামী লড়াই কেমন লাগলো মতামত দিয়ে জানাতে পারেন  |

আরও দেখুন 

১.উচ্চ ফলনশীল তিনটি রোগ প্রতিরোধী জাত আরকা রক্ষক হাইব্রিড F1 টমেটো চাষ পদ্ধতি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)