জারবেরা চাষ এখন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ফুলের ফসল যা থেকে ভারত বর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণ উদ্যোগক্তারা সরকারি সহযোগিতা প্রাপ্ত করে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা আয় করছেন এবং বেকারত্বের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিয়ে নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছেন তাদের মধ্যে একজন পশ্চমবঙ্গের কুচবিহার জেলার সাতমাইল এর সফল জারবেরা চাষী রঞ্জিত বর্মন।
ভারতের মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গুজরাট, তামিলনাড়ু, এবং হিমাচল প্রদেশ প্রধান জারবেরা উৎপাদনকারী রাজ্যগুলির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ প্রধান জারবেরা উৎপাদনকারী রাজ্য হয়ে উঠেছে এর কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে ভারতের বিশেষ কয়েকটি বড় শহরের মধ্যে কলকাতা এবং শিলিগুড়ি জারবেরার ভালো বাজার বা ডিমান্ড তৈরী হয়েছে।
জারবেরা মূলত বিভিন্ন রং হয়ে থাকে তার মধ্যে হলুদ, কমলা, ক্রিম-সাদা, গোলাপী, ইট লাল, লাল রঙ, পোড়ামাটির এবং অন্যান্য মধ্যবর্তী রং এর জারবেরা চাষ করা হয়ে থাকে। জারবেরার চাষ পলিহাউস বা গ্রিন হাউস এ মৃত্তিকা বিহীন কোকপিট বা মৃত্তিকার উপর করা হয়ে থাকে। তবে কোকপিট এ চাষ করলে ৩০% খরচ বেশি হয়। জারবেরা চাষ এর জন্যে লাল ল্যাটেরিটিক মাটি আদর্শ মাটি আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং মাটির PH ৫.৫ থেকে ৬.৫ উপযুক্ত। জারবেরার বিভিন্ন জাত রয়েছে যেমন প্যাগানিনি,উইন্টার কুইন, গ্লোরিয়া,ইনফার্নো, ক্যাচারেল, জাফা, ডানা এলেন, সাংরিয়া, ডায়ানা, ইম্পেরিয়াল, থালসা, , সোনসারা, ,অ্যানেকে, নেট, রোজালিন, রোজেটা, এদের মধ্যে জারবেরা বিশেষজ্ঞ নার্সারিগুলো বিশেষ একটি জাত চাষ করার জন্যেই পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
জারবেরা লাগানোর ৯০ দিন পর ফুল সংগ্রহ করা হয় এবং বছরে একটি গাছ থেকে ৪৫ টি ফুল পাওয়া যায়। প্রতিটি ফুল এর বাজার মূল্য ১০ থেকে ১৫ টাকা তে বিক্রয় হয়। গুণগত জারবেরার ফুলের নিচে ডাঁটার অংশ ৪০-৫০ সেন্টিমিটার এর হয়ে থাকে ফলে সংগ্রহ করে জলে ভিজিয়ে রাখলে ফুল সতেজ থাকে ১৫ দিন পর্যন্ত যে কারণে বাজারে এর চাহিদা বেশি থাকে।
একজন গরিব পরিবারের সন্তান যখন উচ্চ শিক্ষার দিকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে ঠিক তখনি তার পারিবারিক আর্থিক অনটন তাকে অর্থের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য করে দেয় ঠিক এমনি হয়েছিল কুচবিহার এর সাতমাইল এর এলাজান কুঠিতে বসবাস রত রঞ্জিত বর্মন এর সাথে। পড়া ছেড়ে তাকে কাজের সন্ধ্যানে ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল এবং একটি সময়ে কাজ না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরে ছিল। সে কৃষক পরিবারের সন্তান হলেও কৃষিতে সেই রকম লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে কৃষির দিকে আগ্রহী ছিল না। পরবর্তীতে তার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জারবেরা চাষ সম্পর্কে উপরোক্ত বিষয় গুলি জানার পর তার আগ্রহ জাগে জারবেরা চাষ এর উপর ,এর পর তিনি আর দেরি না করে চাকরির আশায় সময় নষ্ট না করে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করবেন বলে ঠিক করেন তাই তিনি সাতমাইল সতীশ ক্লাব ও পাঠাগারে এ যোগাযোগ করেন যারা এখন কুচবিহার তথা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও সুনিশ্চিত এর জন্যে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন গুলিকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে কৃষকের কাছে সরকার পরিষেবা গুলো পৌঁছে দিয়ে থাকেন। সেই সংস্থার সম্পাদক আমল রায় এর সাথে পরামর্শের পর জেলা হর্টিকালচার এর সহযোগিতায় ১২ লক্ষ্য টাকা দিয়ে একটি পলিহাউস নির্মাণ করে প্রশিক্ষণ নিয়ে জারবেরার চাষ শুরু করেন।
রঞ্জিত বাবুর বর্তমানে ছোট দুই সন্তান এবং স্ত্রী রয়েছে তাদের নিয়ে বেশ ভালো কাটছে। তিনি বলেন যে চাকরির আশায় থেকে কৃষি জমি ফেলে রেখে বসে থাকলে আজ হয়তো এই সাফল্য পেতাম না। পড়াশুনো করে কিছু করার স্বপ্ন থাকলেও তা সফল হলো না তখন মনে হলেও বর্তমান পরিস্থিতে যা দেখছি উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে আমি যে চাষের কাজে মনোযোগ দিতে পেরেছি তা আমায় সাফল্য এনেদিয়েছে। পরিকল্পনা মাফিক বিশিষ্ট কৃষিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করলে কম জায়গা তেই চাষ করে অনেক টাকা উপার্জন করা সম্ভব এর জন্যে শিক্ষিত যুব সমাজের এগিয়ে আশা উচিত বলে মনে করেন।
রঞ্জিত বর্মন এর সাফল্য দেখে বিভিন্ন কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং তারা চান এমন আরো অসংখ রঞ্জিত যেন এমন সাফল্য অর্জন করে কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য তুলে ধরতে পারেন।
সাতমাইল সতীশ ক্লাব এর সম্পাদক তথা কুচবিহার কৃষক সংগঠনের নেতা আমল রায় বাবু বলেন রঞ্জিত সাতমাইল এর কৃষকদের গর্ব তার চাষ কথা আমরা আমাদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম এ তুলি ধরি অন্যান্যদের ও অনুপ্রাণিত করবার জন্যে। রঞ্জিত এর পাশাপাশি এখন অনেকেই জারবেরার চাষ করছেন এবং প্রতিমাসে ভালো টাকা আয় করছেন।
রঞ্জিত বাবুর সাফল্যকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরোও কৃষক এবং যুব সমাজ পরিকল্পনা মাফিক চাষ কার্যে এগিয়ে আসুক এটাই আমাদের কাম্য।
আরও দেখুন