ভেষজ উদ্ভিদ অশ্বগন্ধা চাষ পদ্ধতি -

Didibhai Agrofarm
4
ভেষজ উদ্ভিদ  অশ্বগন্ধা চাষ পদ্ধতি


কৃষিকে লাভজনক জায়গায় নিয়ে যেতে হলে বর্তমান সময়ে পরম্পরাগত চাষ এর বাইরে নতুন কিছু চাষকে কৃষির অঙ্গ হিসেবে যুক্ত  করতে হবে কৃষকদের। চাষ এর জমির উঁচু নিচু বা সেচ প্রকারভেদ এবং জলবায়ু অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করতে হবে। চাষ এর সময় বুঝতে হবে সবাই একই ফসল উৎপাদন করে ফলে দাম পাওয়া যায়না , তাই বাজার মূল্য নিচে না নামিয়ে জানতে হবে  কোন ফসলটির বাজারে ডিমান্ড আছে বা বাজারে ডিমান্ড তৈরী করা যাবে। সেই দিক থেকে এখন ভেষজ উদ্ভিদ এর চাষ একটি লাভ জনক চাষ এ পরিণত হয়েছে বাজারে ডিমান্ড প্রচুর কিন্তু যোগান দেওয়া যায়না। অশ্বগন্ধা মূলত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রচুর আয়ুবেদিক ঔষধ এই অশ্বগন্ধা দিয়ে তৈরী হয়। মানুষ যেমন ধীরে ধীরে জৈব খাদ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তেমনি মানুষ আয়ুর্বেদিক ঔষধ এর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দেশের বাইরে বিদেশে অশ্বগন্ধা চাহিদা প্রচুর কিন্তু উৎপাদন কেবল চীন এবং ভারতেই বেশি হয়। অশ্বগন্ধা এমন একটি ফসল যার শিকড় থেকে শুরু করে কান্ড ,বীজ সবকিছুই বিক্রয় হয় এবং এর রোগবালাই কম ফলে চাষে ঝামেলা কম। 

 অশ্বগন্ধা গাছের বোটানিক্যাল নাম উইথানিয়া সোমনিফের। এই ভেষজ চাষ লাভজনক হয়ে উঠতে পারে যদি একটু খোঁজ খবর নিয়ে ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করে নেওয়া যায়। বেশিরবাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কোম্পানির  সাথে চুক্তিপত্র করে এই চাষ হচ্ছে ফলে বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই এবং সেই চাষী ধীরে ধীরে অশ্বগন্ধা চাষের পরিমান বাড়িয়ে তুলেছেন কারণ এই ফসল চাষে লাভের অনেক বেশি। 

অশ্বগন্ধা চাষের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ -

জল দাঁড়ায় না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।চাষের জন্যে উপযুক্ত মাটি বেলে দোয়াস ,দোয়াস ,এঁটেল দোয়াস ও লাল ল্যাটেরাইট মাটি।  মাটির পি এইচ ৬.৫  থেকে ৮ এর মধ্যে থাকতে হবে। গড় উষ্ণতা 7 ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি হবে এবং চাষের পর বিক্রির জন্যে আগেই কোম্পানি বা ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করতে হবে অর্থাৎ বাজার এর খোঁজ করতে হবে যা এখন খুব  সহজ ও  এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। 

অশ্বগন্ধা গাছের ব্যবহার্য বিষয় -

এই গাছের শিকড় কান্ড এবং বীজ সমস্তটাই বিক্রয় হয়। নিয়ম মতো সমস্ত কিছু সংগ্রহ করে মজুত করলেই হবে। 

অশ্বগন্ধা জাত ,বীজ ও রোপনের সময় -

অশ্বগন্ধার বিভিন্ন জাত রয়েছে তার মধ্যে এখন জওহরলাল নেহুরু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত জওহর বীজ ভালো বলে প্রমাণিত হয়েছে । এই বীজ ১৮০ দিনের ফসল ঘরে তুলে। এ ছাড়াও আছে নাগরী।  এই বীজ রোপনের কোথাও বিভিন্ন কোম্পানি বলে থাকে। 

রোপনের সময় নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং কাটার সময় এপ্রিল মাস। 

অশ্বগন্ধা লাগানোর পদ্ধতি -

অশ্বগন্ধা দুই ভাবে লাগানো যায় চারা করে এবং বীজ ছিটিয়ে। চারা করে করলে একর প্রতি ৫ থেকে ৬ কেজি বীজ  এর প্রয়োজন এবং ছড়িয়ে দিয়ে লাগালে একর প্রতি ৩থেকে ৪ কেজি প্রয়োজন হয় । চারা করে লাগালে লাইন থেকে লাইন ১৫ থেকে ১৮ ইঞ্চি  এবং গাছ থেকে গাছের দুরুত্ব ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি বা তার বেশি ও দেওয়া যেতে পারে।  এক একর জায়গায় ৪৩৫৬০ টি ছাড়ার প্রয়োজন হবে। যারা প্রথম বার করবেন তারা অন্তর্বর্তী ফসল হিসেবে বাঁধাকপি চাষ করতে পারেন এতে লাভ বেশি হবে এবং চিন্তা কম হবে।

চারা বা ছড়িয়ে দিয়ে লাগানোর জন্যে বীজকে থিরাম ৩ গ্রাম প্রতি কেজি বীজ এর জন্যে ব্যবহার করে শোধন করতে হবে অথবা বিজামৃত দিয়ে শোধন করে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে ৬ দিন বস্তা দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে অংকুর বের হবার জন্যে (যেমন ধান এর অংকুর বেড়া করা হয় ঠিক একই ভাবে। অঙ্কুরিত হয়ে যাওয়ার পর বীজতলা করে চারা তৈরী করে নেওয়া যেতে পারে অথবা ছড়িয়ে রোপন করা যেতে পারে তবে ছড়িয়ে দেওয়ার পর মোই দেওয়া যাবে না। বীজ সংগ্রহ করতে হলে যারা এই ফসল ক্রয় করবে তাদের কাছেই বীজ পাওয়া যেতে পারে। 

অশ্বগন্ধা জমি প্রস্তুতি -  

জমি প্রস্তুতির জন্যে প্রথমে দু চাষ দিয়ে তাতে একর প্রতি ১০ টন গোবর সার বা কম্পোস্ট সার দিতে হবে তার পর রোটারি দিয়ে মাটির উর্বর করতে হবে। একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে অশ্বগন্ধা চাষের জন্যে মাটিতে জলীয়ভাব থাকা আবশ্যক না হলে গাছ বাড়বে না তাই চারা লাগানোর আগে এবং লাস্ট চাষের আগে যদি জমতে রস না থাকে তবে জল দিয়ে নিতে হবে। ফাইনাল চাষের পূর্বে একর প্রতি ৩ বস্তা ফসফেট ,৩০ কেজি পটাস এবং গোড়া কাটা রোধের জন্যে ফোড়াডন দিতে হবে ৩-৪ কেজি। তবে জৈব ভাবে করলে এর বাজার মূল্য আরো বেশি পাওয়া যায় তার জন্যে দ্রবজীবাম্রিত ,ঘনজীবাম্রিত,কেঁচো সার ও কম্পোস্ট সার। জলের সাথে প্রত্যেকবার ২০০ লিটার  দ্রবজীবাম্রিত জমিতে জল দিয়ে তার সাথে দিতে হবে কে একরের জন্যে। কেঁচো সার একটন দিতে হবে। কম্পোস্ট সার ৬ টন দিতে হবে। জমি রেডি হয়ে গেলে চারা বা অঙ্কুরিত বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। জল নিকাশি বা দেওয়ার জন্যে আগেই না লা করে করে রাখতে হবে। 

অশ্বগন্ধা পরিচর্যা -

চারা লাগানোর পর ১৫ দিনে একদিন ঝরা দিয়ে বা পাইপ এ ফোয়ারা লাগিয়ে হালকা জল দিতে হবে। এর পর প্রয়োজন মতো রস কম থাকলে জল দিতে হবে। একমাস পর বীজ ছড়িয়ে  লাগালে যদি ঘন হয় তবে পাতলা করে দিতে হবে তুলে তুলে।  লাগানোর ৪৫ দিন পর ১০:২৬ :২৬ সার একরে ২০ কেজি দিতে হবে।  জৈব দিলে ভিটামিন বুস্টার ,দ্রবজীবাম্রিত ,ঘনজীবাম্রিত,দিতে হবে।  সময় মতো ঘাস নিড়িয়ে দিতে হবে দুবার দিলেই হবে। 

রোপোকা নিয়ন্ত্রণ - এই গাছ যেহুতু ঔষধি তাই ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে এবং কিছু পোকার উপদ্রব হয়। নিয়মিত  নিমতেল স্প্রে করলে আর কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় না । 

অশ্বগন্ধা ফসল কাটার সময় -

ফসল লাগানোর ৫ মাস হয়ে গেলে গাছের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। গাছের বীজ হয় প্রথমে সবুজ তার পর হলুদ এবং পরিপক্ক হলে লাল হয় তখন বুঝতে হবে যে তোলার সময় হয়েছে এছাড়াও গাছটি তুলে গাছের মূল যদি বাকালে গাজর বা মুলোর মতো ভেঙে যায় তাহলে বুঝতে হবে যে ফসল তুলার সময় হয়েছে। 

উৎপাদন খরচ এবং লাভ -

এই চাষ একর প্রতি ২০০০০ থেকে ২৫০০০ টাকা খরচ বা বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। 

অশ্বগন্ধার ভালো চাষ হলে একর প্রতি 9 কুইন্টাল এর একটু কম বা বেশি হয়। বাজার মূল্য কেজি প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। কান্ড একর প্রতি ১০ কুইন্টাল এর বেশি উৎপাদন হতে পারে যার বাজার মূল্য কেজি প্রতি ২০  থেকে ৩০ টাকা কেজি হয় এবং বীজ ১২০ কেজি উৎপাদন হয়ে থাকে যার বাজার মূল্য ১০০ টাকা কিলো পাওয়া যেতে পারে। 

সব কিছুই কেনার ক্রেতা পাওয়া যায়।  তবে কান্ড এবং বীজ বিক্রয় করে চাষের খরচ উঠে যায় এবং শুধু অশ্বগন্ধার মূল বিক্রয় করে ১২০০০০ থেকে ১৩০০০০ টাকা লাভ হতে পারে আর যদি কান্ড এবং বীজ নাও বিক্রি করতে পারে তবুও ১ লক্ষ্য টাকা লাভ থাকবে এক একর জমির ফসলে। 

বাজারজাতকরণ -

অশ্বগন্ধার ভালো মূল্য পেতে হলে সব কিছুকে আলাদা আলাদা কর সংগ্রহ করে শুকিয়ে নিতে হবে। মূল গুলিতে সরু শিকড় গুলিকে আলাদা করতে হবে এবং ৩ ইঞ্চি করে কেটে রাখতে হবে। কান্ডগুলিকেও ৩ ইঞ্চি করে কেটে রাখতে হবে এবং বীজ গুলিকে খোসা ছাড়িয়ে আলাদা করে শুকিয়ে রাখতে হবে।  তবে যদি কোনো ক্রেতার সাথে আগে থেকেই যোগাযোগ করে থাকেন তাহলে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ফসল সংগ্রহ করে রাখলে ভালো হবে। 

অশ্বগন্ধার ব্যবহার -

অশ্বগন্ধা যারা আয়ুর্বেদিক ঔষধ সেবন করেন তারা হয়তো ভালো জানতে পারবেন হিমালয়,ডাবর,বৈদ্যনাথ,মাসলব্লেজ,পতঞ্জলি,জৈব ভারত,কারমেল অর্গানিকস বিভিন্নও কোম্পানি পাউডার ,ক্যাপসুল আকারে বিক্রয় করে এবং অনেক দোকানে খোলা শিখর পাওয়া যায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা একশো গ্রাম বিক্রয় করে। এটি মূলত ইমুইনিটি বাড়ায় যা করোনা কালে অনেকেই শুনেছেন ,এছাড়াও মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে । এটি একটি সুস্থ যৌন এবং প্রজনন ভারসাম্য বজায় রেখে  প্রজনন সিস্টেমের কার্যকারিতা উন্নত করে। ভারতের বাজারে যা চাহিদা তা উৎপন্ন হয় না। সুতরাং এই চাষে লসের কোনো সম্ভাবনা নেই।  

এই চাষ কৃষকরা সংগঠিত হয়ে FPO এবং FPC গঠন করে বা যাদের আছে তারা এই ব্যবসা নিজেরা উৎপাদন করে নিজেরাই সাপ্লাই করতে পারেন খোলা বা প্রক্রিয়া করণের মধ্যমে এতে ডাবল লাভের সম্ভাবনা থাকে। 

যারা  এই চাষ করতে আগ্রহী এবং কোথায় বিক্রয় করবেন  যোগাযোগ করতে চান তারা আমাদের কমেন্ট করে  জানাতে পারেন আমরা কোম্পানির বা ক্রেতার  নাম এবং ফোন নং দিয়ে দিবো আপনারা নি দায়িত্বে  যোগাযোগ করে কথা বলে তার পর চাষ কার্যে আগ্রহী হতে পারেন। 

  আরও দেখুন 

গোবর দিয়ে নার্সারির জন্যে পরিবেশবান্ধব টব বা পট তৈরীর সহজ পদ্ধতি-

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন