ধনিয়া /ধনে পাতা চাষ পদ্ধতি বর্ষাকালে

Didibhai Agrofarm
0
ধনিয়া /ধনে  পাতা চাষ পদ্ধতি  বর্ষাকালে

চাষ কার্য  এমন একটি বিষয় যা সময় কাল বুঝে  করতে হয়,একটি ঋতু আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বাজার। বাজার ভালো না থাকলে চাষ  করলে লাভ নেই তাই সবাই যখন যে জিনিষটা বেশি করে চাষ করে তখন সেই চাষ থেকে বিরত থেকে অফ সিসন এ চাষ করা উচিত যদি তার সেই রকম  চাষ যোগ্য জমি থাকে। বর্ষার সময় যে কোনো ফসলেরই দাম থাকে তার মধ্যে ধনে পাতা একটি অন্যতম ফসল যদি এটা এই সঠিক  সময় সফল ভাবে চাষ করা যায় তবে শীতের সময় ১০ বিঘা জমিতে যে লাভ হবে তা বর্ষাকালে ১ বিঘা জমিতে সমো পরিমান লাভ হবে। কিন্তু বর্ষাকালে  করতে গেলে কিছু  নিয়মানুবর্তিতা মেনে চাষ  করা আবশ্যক তাহলে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং লস ও হয় না।  এই সময় যারা চাষী তারাও যেমন বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করতে পারেন এবং যাদের বাগান আছে তারাও বাড়ির খাদ্য যোগান এর জন্যে চাষ করতে পারেন। এই সময়ে এর ভালো  দাম থাকে এবং এই সময়ের ধনে পাতা যে কোনো রান্নাতে ব্যবহার করলে এর স্বাধ ও ভিন্ন পাওয়া যায়। বর্ষা কালে ধোনে পাতা কেজি হিসাবে বিক্রি হয় আর শীতে সাধারনত বোঝা হিসেবে বিক্রি হয়। ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিও বিক্রি হয় আবার ১০০ টাকাও বিক্রি হয় লসের কোনো সম্ভাবনা নেই বড়ো আকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আর যদি ভালো করে জেনে চাষ  করা যায়। ধোনে পাতা ১ মাসেই বাজারের জন্যে প্রস্তুত হয়ে যায় তাই একই জায়গায় অনেক কয়েকবার চাষ করা যায় যদি জ্যেষ্ঠ আসার মাস  থেকে শুরু করা যায় শেষ অশ্বিন মাস পর্যন্ত লাগানো যায়।  তখন পর্যন্ত ভালো দাম পাওয়া যায় এর পরে করে লাভ হবে না বেশি কারণ তখন সবাই চাষ  করে তাই তখন অন্য কিছু চাষের দিকে মনোজযোগ  দেওয়া ভালো।  

ধনে চাষ পদ্ধতি -

বর্ষাকালে ধোনে পাতা চাষ করতে হলে দুটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে - উঁচু জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে জল দাঁড়ায় না অর্থাৎ বৃষ্টি হলে সঙ্গে সঙ্গে জল বেরিয়ে যায়।  ভালো জল নিকাশি ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। 

দ্বিতীয়ত ভালো বীজ নির্বাচন -বিভিন্ন কোম্পানির বীজ পাওয়া যায়। বীজ কেনার সময় দেখবেন যেন বীজ প্যাকেটিং তারিখ ৬ মাস এর বেশি না হয় তবে যত কম সময়ের থাকবে ততো ভালো। যত কম দিনের প্যাকেটিঙ বীজ হবে ধনে পাতার গাছের অঙ্কুর বের হওয়ার নিশ্চয়তা ততো বেশি হবে এবং লাভবান হবে। এক বিঘা জমির জন্যে ৭ কেজির মতো বীজের প্রয়জন। বিভিন্ন কোম্পানির আর্লি ধনে চাষ বীজ পাও যায়। 

জমি প্রস্তুতি -

যে জমিতে চাষ করা হবে সেই জমি ৩ থেকে ৪ চাষ দিয়ে মাটি ভালো করে ঝুর ঝুরে করে নিতে হবে। শেষ চাষের আগে বিঘা প্রতি ১ ট্রলি ১ বছরের পুরোনো গোবর ব্যবহার করতে হবে তাতে ধনে পাতা গাছের খাদ্য হিসাবে গাছে লাগবে কারণ গাছের সময়সীমা খুবই কম যেহুতু ১ মাসের মধ্যেই বিক্রির উপযুক্ত হয়ে যায়। ফলে একই গোবর  সারে ৪ থেকে ৫ বার চাষ করা যাব।  যদি পুরোনো গোবর সার না থাকে তবে বিঘা প্রতি ৪ থেকে ৫ কুইন্টাল ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। সাথে বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৪০ কেজি সিঙ্গেল সুপার ফসফেট এবং এন পি কে ১০:২৬:২৬ বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ কেজি দিতে হবে সেই সাথে  বিঘা প্রতি ২ কেজি কার্বোফুরান ৩ জি দিতে হবে এতে গাছের গোড়া কাটা এবং পিঁপড়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে।  

চাষ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে মাটিগুলিকে একত্রে করে ৪ সর্বোচ্চ ৪ ফুট চওড়া এবং লম্বা জমির সুবিধা অনুসারে রেখে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি উঁচু করে বেড করতে হবে। জমিতে কোনোরকম  আগাছা  নাশক ব্যবহার করা যাবে না তাতে ধোনে পাতা হলুদ হয়ে যাতে পারে তাই ঘাস হাত দিয়ে ভালো করে বেছে দিয়ে বেড রেডি করা ভালো। 

বীজ বপন - 

বিঘা প্রতি ৮ কেজি বীজ লাগবে বা তার একটু কম বেশি। বীজ বপন এর আগে বীজকে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিয়ে  শোধন করতে হবে ছত্রাক নাশক দিয়ে। এরছাইল চাইলে বীজ সরাসরি লাগানো যেতে পারে ঝরিয়ে নিয়ে বা সুতির কাপুরে বেঁধে অন্দকার জায়গায় ঝুলিয়ে রেখে একটু একটু অঙ্কুর বের করে নেওয়া যেতে পারে অথবা সুতির কাপড়ে ভেদে কাঁচা গোবরের ভেতর ঢুকিয়ে রাখলেও ২ থেকে ৩ দিনে অঙ্কুর বের হয়ে যাবে। 

বেড রেডি হয়ে গেল সব বীজ একসাথে ছড়িয়ে না দিয়ে লাইন করে নিয়ে লাইন এর মাধ্যমেও লাগানো যেতে  পারে এর ফলে গাছের গোড়া পচার ভয় কম থাকবে এবং গোড়া  মোটা হবে ও ওজন ভালো পাওয়া যাবে। 

বীজ ছড়িয়ে দিয়ে মাটি দিয়ে হালকা করে ঢেকে দেওয়ার পরে জল দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে তাহলে বীজ তাড়াতাড়ি মাটি ফুঁড়ে  বের হবে।  তার উপর পাতলা করে খড় বিছিয়ে দিতে হবে যদি বৃষ্টির থেকে বাঁচানোর জন্যে উপরে পলিথিন ব্যবস্থা না করা হয়।  তবে পলিথিন ব্যবস্থা থাকলেও যদি খড় গুলো থেকে যায় তা ভেদ করেই গাছ গুলো বের হবে ,গাছ ঢোলে পর্বে না গোড়া শক্ত থাকবে দাম ভালো পাও যাবে। পলিথিন অবশ্যই সাদা হতে হবে।  বেড এর উপর দিয়ে ২.৫ ফুট উচ্চতায় গোল করে পলিথিন দিতে হবে এবং যদি বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকে তবে তখন পলিথিন নামিয়ে রাখাই ভালো। এর পর ২১ দিন পর থেকে থেকে ২ বার এক লিটার জলে ১৯:১৯:১৯ তরল সার ৩ গ্রাম গুলিয়ে স্প্রে করতে হবে এর ফলে গাছ তাড়াতাড়ি বাড়তে এবং গোড়া মোটা হবে। এর পর প্রয়োজন অনুসারে তুলে বিক্রি করতে পারবে। 

বগানে টবে ধনে চাষ পদ্ধতি-

যারা বাড়ির খাওয়ার জন্যে চাষ করবে  উঁচু জায়গা নেই তারা বাসের ধারাতে মাচা করে নিয়ে তার উপর সার মিশ্রিত মাটি দেড় থেকে দু ইঞ্চি উঁচু করে দিয়ে ধনে বীজ ফেলতে পারেন এতেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। যারা খব কম করবে ছাদে বা বাগানে তারা মাছের কাটুন অর্ধেক করে নিয়ে মাটি ভোরে বা কোকপিট দিয়ে বীজ ফেল বাড়ির খবর এর যোগান দিতে পারবেন। 

\আরও দেখুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)