কম সময়ে বাজারজাট করার মতো একটি সুস্বাদু মাছের মধ্যে অন্যমতম মাছ হল ভিয়েতনামি বা মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ। এই মাছ কেই এক কোথায় হাইব্রিড তেলাপিয়া মাছ বলা হয় কারণ এই মাছ দ্রুত বর্ধন শীল একটি মাছ।
আসলে এই হাইব্রিড বা ভিয়েৎনামিস তেলাপিয়া মাছকে মনোসেক্স তেলাপিয়া বলার কারণ এই মাছ গুলো সব পুরুষ শ্রেণীর হয়ে থাকে। তেলাপিয়া মাছ অতিদ্রুত প্রজননক্ষম হয় ও বাচ্চা দিয়ে পুকুরে মাছের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে ফলে চাষ বাণিজ্যিক ভাবে লাভ জনক হয় না এবং অন্যদিকে দেখা গেছে যে পুকুরে যেগুলি পুরুষ তেলাপিয়া থাকে সেগুলি দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। এই উপলব্ধি থেকেই পুরুষ তেলাপিয়া চাষকে নলাভবান করার জন্যে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের উৎপত্তি ঘটানো হয় হ্যাচারিতে সদ্য জন্ম নেয়া তেলাপিয়া লার্ভাকে হরমোন প্রয়োগ করে। এক কোথায় এগুলোকে হাইব্রিড মাছ ও বলা যেতে পারে। এঁরা দ্রুত বর্ধনশীল হয়। এগুলি ৫ থেকে ৮ টি 1 মাসে 500 থেকে ৮০০ গ্রাম হয়ে থাকে। এই হাইব্রিড মাছের চাষের সহজ ও লাভ জনক।
তেলাপিয়া মাছ চাষ পদ্ধতি-
হাইব্রিড /মনোসেক্স /ভিয়েতনামি চাষ পদ্ধতির ধরণ কিছুটা আলাদা -
১। কম কাদা যুক্ত ৪ থেকে ৬ মাস জল থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করা যেতে পারে।
২। নার্সারি পুকুর ১৫- টো ডেসিমেল আয়তনের ও লালন পুকুর 20 থেকে ১০০ ডেসিমেল আয়তনের হলে ভালো। তবে এর ছোট বড় হতে পারে।
৩। পুকুরে সেচ জল শুকিয়ে অবাঞ্চিত মাছ ও অন্যান্য প্রাণী দূর করতে হবে।
৪। পুকুরের তলার অতিরিক্ত কাদা তুলে দিতে হবে , পুকুরের তলায় কাদের পরিমান ১০.০ - ১৫.০ সেন্টিমিটার।
৫। পুকুরের পার মেরামত করতে হবে ও পাড়ে গাছ পালা থাকলে ডাল কেটে দিতে হবে।
৬। ডেসিমেল ১ কেজি হরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
৭। চুন প্রয়োগের ৩ থেকে ৪ দিন পর জল ভরতে হবে।
৮। চুন প্রয়োগের ৭ দিন পর ডেসিমেল ৬ কেজি গোবর অন্তত ৩ দিন পচিয়ে দিয়ে তারপর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ৭০ গ্রাম সিঙ্গেল সুপার ফসফেট দিতে হবে।
৯। সার প্রয়োগের দু তিন দিন পর জলের অবস্থা দেখে পোনা ছাড়তে হবে।
পুকুরে তেলাপিয়ার মাছের একক চাষ -
হাইব্রিড /ভিয়েতনামি /মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের মজুত ঘনত্ব নার্সারি পুকুরে ০.টো - ০.২৫ গ্রাম (৫০০০ - ৬০০০ টি / কেজি ) ওজনের মাছ প্রতি শতকে ১৫০০ থেকে ২০০০ টি পোনা মজুত করা যায় এবং পোনা ১০ - ১৫ গ্রাম ওজনের হলে লালন পুকুরে ২৫০ টি সুস্থ সবল পোনা মজুত করা যাবে।
তেলাপিয়া মাছের মিশ্র চাষ -
তেলাপিয়া ১০০ থেকে ১৫০ টি ,পাঙ্গাস ১০০ থেকে ১৫০ টি এবং ৫ থেকে ৭ টি মাগুর মাছ দিয়ে মিশ্র চাষ করলে কম সময়ে ভালো উৎপাদন পাওয়া যাবে।
তেলাপিয়া মাছের খাবার তালিকা-
মাছকে দুটি ভাবে খাদ্য প্রয়োগ করা যায়। সম্পূরক ভাসমান খাদ্য এবং হাতে তৈরী পরিপূরক খাদ্য।
সম্পূরক খাদ্য -
নার্সিং পুকুরে ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ এবং পরে লালন পুকুরে ২৫ থেকে ৪০% প্রোটিন সমৃদ্ধ ভাসমান খাবার প্রয়োগ করতে হবে।
তেলাপিয়া মাছের হাতে তৈরী খাবার --
এই খাবার বানানোর পদ্ধতি প্রথমে দেখে নিয়ে পরবর্তীতে নার্সিং এবং লালনে দুটি পর্যায়ে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
তেলাপিয়ার হাতে তৈরী খাদ্য পদ্ধতি
খাদ্য উপাদান |
শতাংশ |
চালের কুড়া/গমের
ভুসি |
৩০% |
খৈল |
৩৯% |
ফিশ মিল |
২৫% |
ময়দা |
৫% |
ভিটামিন
প্রিমিক্স |
১% |
মোট |
১০০% |
নার্সিং এ খাদ্য প্রয়োগ তালিকা
সংখ্যা প্রতি কেজি |
প্রয়োগহার (দেহওজনের) |
প্রয়োগ মাত্রা (সারা দিনে) |
১০০ |
১০% |
২ বার |
৮০ |
৮% |
২ বার |
৬০ |
৭% |
২ বার |
৫০ |
৬% |
২ বার |
লালনে খাদ্য প্রয়োগ তালিকা
সংখ্যা প্রতি কেজি |
প্রয়োগহার (দেহওজনের) |
প্রয়োগ মাত্রা (সারা দিনে) |
৫০০০ |
১০০% |
৪ বার |
৪০০০ |
৭৫% |
৪ বার |
৩০০০ |
৫০% |
৩ বার |
২০০০ |
৪০% |
৩ বার |
১০০০ |
৩৫% |
৩ বার |
তেলাপিয়া মাছের পর্যবেক্ষণ -
১। প্রতি ৭ থেকে ১০ দিন পর পর জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং খাবারের পরিমান নির্ধারণ করতে হবে। খাবার প্রয়োগের ১ ঘন্টা পর পুকুর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি পুকুরের খাবার পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে পুকুরে বা ম্যাচকে কোনো সমস্যা হয়েছে অথবা খাবার বেশি প্রয়োগ হয়েছে তাহলে আগে খাবার এর পরিমান কমিয়ে দেখতে হবে।
২। পোনা মজুতের ১ মাস পর থেকে প্রতি শতকে এক মিটার জলের গভীরতায় ১০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে এবং জলের পি এইচ দেখে পরিমান কম বেশি করতে হবে।
৩। জলজ পাখি এক পুকুর থেকে অন্য পুকুরে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে দেয় তাই পাখির অনুপ্রবেশ বন্ধের জন্যে আড়াআড়িভাবে রশ্মি বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া যেতে পাড়ে।
তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন -
আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করলে ৩ থেকে ৪ মাসে হাইব্রিড /ভিয়েতনামি বা মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের গড় ওজন ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম হবে এবং মোট উৎপাদন ৩ থেকে ৪ মাসে ৫ থেকে ৬ টন হবে একরে।
তথ্য সূত্র -পশ্চিমবঙ্গ সরকার মৎস বিভাগ
আরও দেখুন
G9 Banana জি নাইন কি। জি নাইন কলা চাষ পদ্ধতি। জি 9 কলা চাষের পরিচর্যা। জি ৯ কলা চাষে লাভ
\\