ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য তাই ধান বাংলা ও বাঙালির প্রধান ফসল। প্রতি নিয়তি জনসংখ্যা যেমন বেড়ে চলেছে তেমনি খাদ্য চাহিদা বাড়ছে কিন্তু জমির উর্বর শক্তি যেমন কমে যাচ্ছে তেমনি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে একদিকে আর দিকে চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে ফলে চাষীরা উৎপাদন বিমুখ হচ্ছেন বাধ্য হয়ে আর এক দিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য চাহিদা বাড়লেও চাষ যোগ্য জমির পরিমান কমে যাচ্ছে এবং জলস্তর নিচে নেমে যাচ্ছে যা চাষের জন্যে ভালো দিক নয়। এই অবস্থাতে আগামীতে যদি জল সংরক্ষন করে ধান চাষের উৎপাদন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানো না যায় তাহলে খাদ্য নিরাপত্তা সংকটের মুখে এসে দাঁড়াবে।
খাদ্য নিরাপত্তার জন্যে কৃষক বন্ধুদের উচিত এখন বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিকে গ্রহণ করে কম জল অপচয় করে কম জমিতে অধিক উৎপাদন ব্যবস্থা করা খরচ কমিয়ে এনে তাহলেই কৃষক এবং সাধারণ জনগণের খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এবং লাভ বেশি হবে।
১। বীজতলা তৈরী -
শ্রী পদ্ধতিতে বীজতলা একটি গুরুত্ব পূর্ণ ক্ষেত্র। এর জন্যে ভালো পুষ্ট বীজ নির্বাচন এবং উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে বীজতলা করতে হয়।
জেনে নেওয়া যাক বীজ তলা ও পুষ্ট বীজ নির্বাচন পদ্ধতি --ধান বীজ শোধন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি
আরও দেখুন আমন ধানের বীজতলা তৈরী পদ্ধতি ۔দিদিভাই এগ্রোফার্ম
২। মূল জমি তৈরীর পদ্ধতি -
বীজতলা তৈরির আগেই মূল জমি তৈরির কাজ শুরু করে দিতে হবে যেহুতু সময় কম তাই চারা তৈরির অপেক্ষাতে থাকা যাবে না। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে এই প্রযুক্তিতে ধান চাষ করলে গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমানে খাদ্য গ্রহণ করে শক্তি সঞ্চয় করে তাই গাছের পাসকাঠি বেশি হয়। তাই মাটির স্বাস্থ কে ঠিক রাখতে হলে বেশি পরিমানে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে । । তাই বীজ ফেলার এক মাস আগে মূল জমিকে একটি চাষ দিয়ে বিঘা প্রতি ৪ কেজি ধঞ্চে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। এর পর জমি তৈরির সময় জমিতে জল না থাকলে জল দিয়ে গাছ গুলোকে চাষ দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এর ফলে মাটিতে প্রচুর পরিমানে জৈব সার উৎপন্ন হবে এবং রাসায়নিক সার অনেক কম লাগবে।
শেষ চাষ দেওয়ার সময় বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১০ কুইন্টাল গোবর সার এবং কম্পোস্ট বা কেঁচো সার ১ কুইন্টাল দিলে ভালো হয়। ৬ কেজি ইউরিয়া সার ,১০ কেজি রোক ফসফেট, ৫ কেজি ফসফেট , ১০ কেজি পটাস , ৩০০ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি, এবং ৩০০ গ্রাম এজেটোব্যাকটোর
ও পি এস বি জীবাণু জমিতে ভালো ভাবে মিশিয়ে জমি সমান করে দিতে হবে।
৩। চারা রোপন পদ্ধতি -
১০ থেকে ১২ দিনের চারা তুলতে হবে তবে জাত বিশেষে কয়েকদিন বেশি বয়স এর চারা লাগাতে হবে। চারা তোলার পর ২ গ্রাম সুডোমনাস ফ্লুরেসেন্স প্রতি লিটার জলে চারার গোড়া ১ ঘন্টা ডুবিয়ে রেখে শোধন করতে হবে। জমিতে ছিপ ছিপে জল রেখে সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছ ১০-১২ ইঞ্চি দূরত্বে একটি করে চারা লাগাতে হবে সোজা সারিবদ্ধ করে লাগাতে হবে এর ফলে আগাছা পরিষ্কার সহজ হবে। উইডার চালানো সহজ হবে।
৪ / পরিচর্যা -
ক। চারা রোপনের ১৫ দিন পর থেকে ৭ দিন অন্তর গোবর জল দ্রবণ ( ১ লিটার জলে ১৫০ গ্রাম টাটকা গোবর ) সকালে দিন এবং ১ লিটার গোমূত্র ৪ লিটার জলে মিশিয়ে দিতে পারলে রোগপোকা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
খ। চারা লাগানোর থেকে ২১ দিন পর বিঘা প্রতি ৬ কেজি চাপান সার দিতে হবে এবং উইডার দিয়ে আগাছা দম করে ভালো করে ঘেটে দিতে হবে। যদি জমির জল শুকিয়ে মাটি চুল ফাটা হলে জল দিতে হবে।
গ। প্রথম চাপান সার প্রয়োগের ২৫ দিন পর আগাছা পরিষ্কার করে বিঘা প্রতি ৭ কেজি ইউরিয়া সার দিতে হবে অর্থাৎ চারা লাগানোর পর গাছের বয়স ৫০ দিন এর মধ্যে শেষ রাসায়নিক সার দিতে হবে এর পরে দিলে লাভ হবে না।
ঘ। রোগ পোকার আক্রমণে লক্ষ রাখতে হবে। ইছি পোকা , পাতা মোড়া চুঙ্গি পোকা ,এবং লেদা পাকা আক্রমণ করলে বিঘা প্রতি ৪০০ গ্রাম ৫০% বি এইচ সি অথবা ১০০-১৫০ মিলি ইকালাক্স/এন্ডোসালফান ১০০ লিটার জলে গুলি স্প্রে করতে হবে। কান্ড ,কন্দ ও মূল ছিদ্রকারী করি পোকা , মাইল ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে কথা প্রতি ২ কেজি নিঁম খোল প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
জৈব ভাবে পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্যে ব্যবহার করা যেতে পারেন নিমাস্ত্র,/ নিঁম তেল ,অগ্নিঅস্ত্র
ঙ । গান্ধী পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্যে পচা কাঁকড়া বা শামুক ফাঁদ উপযোগী। এছাড়াও ব্যবহার করা যেতে পারে আলোক ফাঁদ , পাখি বসার ব্যবস্থা করে যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে , এর জন্যে জমির আলে ধঞ্চে গাছ রাখা বা জমির মাঝে মাঝে পাখি বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে এতে লাভ পাখি বসে পোকা ধরে ধরে খাবে। এছাড়াও কীটশত্রু নিয়ন্ত্রণের জন্যে বিঘা প্রতি দুটি ফেরোমোন ট্রাপ বা লিওর ঝুলিয়ে রাখলেও পোকা নিয়ত্রনে আসে।
চ । ফসল কাটার ১০ দিন আগে যদি জমিতে জল থেকে থাকে এবং তা বের করার ব্যবস্থা থাকে তবে জল বের করে দিতে হবে। ফসল কাটার সময় যদি বীজ হিসেবে রাখতে হয় তবে যেটুকু জায়গায় বেশি ভালো ফলন হয়েছে এবং আগে পেকেছে সেটুকু আগে কেটে আলাদা করে রাখতে হবে।
ছ । যদি ধানের সাথে পয়রা পদ্ধতিতে রবি মরসুম এর জন্যে ছোলা ,মোটর ,মুসুরডাল চাষ করতে চান তাহলে জল বের করার ৩ দিন পরে এক বিঘাতে ফসল অনুযায়ী যে বীজ লাগে তার ৩০% বেশি বীজ ফেল বেন মাথায় রাখতে হবে জমিতে রস থাকতে হবে বীজ ফেলার সময় ।
সর্ষে ,গম করতে চাইলে ণর বোরো করে ধান কাটতে হবে এবং ২-৩ দিন পর ছড়িয়ে দিয়ে মোই দিয়ে ধানের ন্যাড়া শুয়ে দিতে হবে।
.৫। শ্রী প্রযুক্তিতে ধান চাষ করলে লাভ -
ক। প্রচলিত ধানের তুলনায় আগে ফসল তলা যায়। গাছ এর গুছি মোটা হয় পাসকাঠি বেশি হয় এবং গাছ শক্ত ও সারিবদ্ধ থাকার কারণে কীটপতঙ্গ আক্রমণ কম হয়। প্রচলিত চাষের তুলনায় জল কম লাগে। খরচ কম এবং উৎপাদন ২১- ২৫ শতাংশ বেশি হয় প্রচলিত ধান চাষের তুলনায়।
আরও দেখুন
বিজ্ঞান ভিত্তিক পাট পচানো পদ্ধতি এবং ক্রাইজাফ সোনা এর ব্যবহার