মাছ চাষ করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যা হয় তার মধ্যে কিছু কারণ হলো পুকুরের জলের আকস্মিক রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়া যার ফলে পুকুরের জলের ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। জলের অক্সিজেন মাত্রা ওঠানামা করে বেশি এবং বিশেষ কিছু সময়ে তা একদম কমে যায়। এছাড়াও জলের উদ্ভিদ ও প্রাণী কণার ঘাটতি দেখা যায় ফলে মাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং অনেক সময় এর ফলে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং মাছ মারা যায়।
তাই জেনে নেওয়া যাক পুকুরে জলের রং পরিবর্তন ঘটলে তার উপকারিতা এবং অপকারিতা কি এবং তার জন্যে কি করণীয় -
১। লালচে বাদামি রং -
জলে বিভিন্ন প্রাণী কণার উদ্ভব দেখা যায়।
উপযোগিতা -
এটি মাছ চাষের জন্যে উপযুক্ত এবং এই ধরণের অবস্থা বজায় রাখার জন্যে মাঝে মাঝে পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হয়।
২। পুকুরে গাঢ় সবুজ রং -
জলে শেওলা জাতীয় উদ্ভিদ কণার অত্যাধিক পরিমানে বাড়তে দেখা যায়। ফলে পুকুরে ব্লম দেখা যায় অধিক পরিমানে জেক আলগাল ব্লম বলে।
উপযোগিতা -
উপযোগিতা ভোরের বেলা অক্সিজেন মাত্রা কমিয়ে দেয় ফলে মাছ জলের উপরে খাবি খেতে থাকে। মাছের জন্যে ক্ষতিকারক।
করণীয় -
উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকলে পুকুরের জল বের করে দিতে হবে। জাল টেনে কিছু মাছ তুলে দিয়ে মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে কয়েকদিন। ঠিক হয়ে গেলে আবার খাদ্য প্রয়োগ করা যাবে। পুকুরে কিছু সিলভার কার্প মাছ ছেড়ে দিলে
ব্লোম এর কিছু পরিবর্তন ঘটে কারণ এরা অতি ক্ষুদ্র শ্যাওলা গিল রেকারের মাধ্যমে খেয়ে ফেলতে পারে।
৩। হালকা সুবুজ রং -
শ্যাওলা জাতীয় উদ্ভিদ কণার উদ্ভব দেখা যায়।
উপযোগিতা -
কম পরিমানে থাকলে ভালো , বেশি পরিমানে হলে ক্ষতি তবে কার্প জাতীয় মাছ চাষের জন্যে উপযুক্ত।
৪। জলের উপর লালচে বাদামি রং এর আস্তরণ -
জলে ইউগ্লিনা নামক এক ধরণের এককোষী প্রাণীর হঠাৎ পরিমানে বাড়তে দেখা যায়।
উপযোগিতা -
এগুলো খুব একটা উপকারী নয় কিন্তু বেশি দিন থাকলে পুকুরের জল খারাপ করে দেয়।
করণীয় -
মাঝে মাঝে পুকুরের জল ও তোলার মাটি ঘেটে দিতে হবে।
আরও দেখুন - মাছ চাষে পুকুরে চুন প্রয়োগের সঠিক পদ্ধতি ? কোন চুন কিভাবে কখন কতটা ব্যাবহার করলে মাছের ওজন ভাল হবে?
৫। জলের গাঢ় বাদামি রং -
বাদামি শ্যাওলার আধিক্য বেড়ে গেলে এমন হয় ।
উপযোগিতা -
মাছ চাষের জন্যে এই অবস্থা উপযুক্ত নয়। ভোরের দিকে অক্সিজেন এর মাত্রা কমে যেতে পারে। মাছের বৃদ্ধি হার কমে যাবে।
করণীয় -
মাছের ঘনত্ব কমিয়ে দিতে হবে এবং কিছু দিন খাদ্য দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
৬। ধূসর সাদা রং -
সাইক্লপস জাতীয় প্রাণী কণা প্রচুর বাড়তে দেখা যায়।
উপযোগিতা -
এগুলি নার্সারি পুকুরের জন্যে ভালো কিন্তু মজুত পুকুরে এর পরিমান বেশি হলে উদ্ভিদ কণাকে খেয়ে শেষ করে দিতে পারে এর ফল স্বরূপ জলের অক্সিজেন এর পরিমান কমে যেতে পারে।
৭। অস্বচ্ছ বা ঘোলা জল -
পলিকোনা বা মৃত উদ্ভিদ কণা এবং প্রাণী কণা অধিক পরিমানে বেড়ে যায়।
উপযোগিতা -
জলের মধ্যে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারেনা এর ফলে পুকুরের জলের ভৌত রাসায়নিক মাছের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।
করণীয় -
সম্ভব হলে জল পরিবর্তন করতে হবে এবং হালকা পরিমানে সার প্রয়োগ করতে হবে এবং মাঝে মাঝে চুন প্রয়োগ করে জল পরিষ্কার রাখতে হবে।
৮। পুকুরে টলটলে পরিষ্কার জল -
জলে উদ্ভিদ ও প্রাণী কণার অভাব থাকলে এমন হয়।
উপযোগিতা -
মাছ চাষের জন্যে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রয়জন কিন্তু একদম পরিষ্কার জল মাছ চাষের জন্যে একদম উপযোগী নয়। এর ফলে সঠিক সময়ে মাছের বৃদ্ধি ঘটবে না।
করণীয় -
পুকুরে জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক খাদ্য কণা তৈরী করতে হবে এবং যদি নতুন মাছ ছাড়া হয় তাহলে ছাড়ার আগে এই প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরী করে ছাড়তে হবে পোনা।
উপযুক্ত কারণ গুলির অনেকটাই মাছ চাষের জন্যে উপযুক্ত পরিবেশ নয় তাই নিজে না বুঝতে পারলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সমস্যার সমাধান করা উচিত তাহলে মাছ ছাসে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
আরও দেখুন
- Ornamental fish রঙিন মাছের নাম ,ছবি ,চাষ ,খাবার ও রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি -2022
- কার্প মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতি ও পরিচর্যা
- কার্প ফিশ/মাছ ফ্যাটেনিং কৌশল
- মাছের বীজ পোনা পরিবহন আধুনিক কৌশল
- পুকুরে দেশি মাগুর মাছের চাষ
- মাছ সংরক্ষণ কৌশল
- শোল মাছের উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য
- শোল মাছের চাষ ও প্রজনন প্রযুক্তি -পুকুরে/ট্যাঙ্কে
- পাবদা মাছের চাষ ও প্রজনন
- মুক্তা চাষ পদ্ধতি । সরকারিভাবে মুক্তা চাষের প্রশিক্ষণের জন্যে আবেদন-
- মাছ ও হাঁসের যৌথ খামার তৈরী পদ্ধতি
পুকুরে মাছ মরে যাইতেছে।কোন রোগ বালাই নেই।অক্সিজেন এর মাত্রা ঠিক আছে।এমোনিয়া মাত্রা ১.৫।কি করা দরকার।যদি দয়া করে পরামর্শ দেন।উপকৃত হব।
উত্তরমুছুনপুকুরের তলা ঘেঁটে দিন আগে জাল টেনে
মুছুনপানি দুর্গন্ধ হয়ে গেছে এবং রং গাঢ় সবুজ ধারন করেছে।পানি দেওয়ার সহজ কোনো উপায় নেই। এতে করনীয় কি
উত্তরমুছুনজল লাল ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়েগেছে এখন করনীয় কি
উত্তরমুছুন