মাছ ও শূকরের ইন্টিগ্রেটেড ফার্ম -

Didibhai Agrofarm
0
মাছ ও শূকরের ইন্টিগ্রেটেড  ফার্ম

বর্তমান সময়ে চাষের খরচ যেমন বেড়েই যাচ্ছে তেমনি দিন দিন চাষ যোগ্য জমির পরিমান কমে যাচ্ছে ফলে  এখন চিন্তার বিষয় সকলেরই যে কেমন করে কম জায়গায় এবং কম খরচে বেশি লাভ করা যায়।  তাই এখন সুসংহত চাষের দিকে কৃষকদের মনোনিবেশ করতে হবে , যদিও অনেক কৃষক এই পথ অবলম্বন করেই অধিক আয়ের দিশা দেখছেন।  শুকর এবং মাছ প্লান একটি লাভ জনক ব্যবসা কিন্তু খরচের কারণে অনেকেই পিছিয়ে আসছেন তার প্রধান কারণ খাদ্য ব্যবস্থাপনা।  যদি দুটোকে একত্রে করা যায় তাহলে খাদ্য খরচ অনেকটা কমে যাবে সেই সাথে উৎপাদন ও বেড়ে যাবে।  মাছ ও শূকর পালনের যৌথ খামারে বছরে দুবার বিক্রয়যােগ্য শূকর ও একবার মাছের ফলন পাওয়া যায়। শূকরের মল পুকুরে সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পুকুরে অন্য কোন সার ও মাছের পরিপূরক খাদ্য প্রয়ােগ করতে হয় না।

খামার নির্মাণ পদ্ধতি -

 শূকরের খামারটি পুকুরের পাড়ে এমন ভাবে তৈরী করা হয় যাতে খামারের যাবতীয় বর্জ্য পদার্থ সরাসরি পুকুরের জলে পড়ে বা সহজেই পুকুরের জলে ফেলা যায়। শুকরের বাসস্থান দুটি ভাবে করা যাবে একটি হলো পুকুরের উপরে ঘর নির্মাণ যা যথেষ্ট ব্যাবহুল হতে পারে কারণ শুকুরের একটি সময় এমন শক্তি হয়ে যায় যার ফলে নিচের মেঝে এবং দেওয়াল ঠিক না হলে ভেঙে ফেলতে পারে।  দ্বিতীয়টি হলো পুকুরের পাড়ে যেখানে ঘর নির্মাণ করে তার মূল মূত্র পরিষ্কার করলে সরাসরি নালা দিয়ে পুকুরে এসে পড়বে।  এবং মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করবে একদিকে মাছের খাদ্য খরচ কমবে আর দিকে শুকুরের মল জমে থাকার ফলে যে দুর্গন্ধ হয় সেটার পরিমান অমেকটাই কমে যাবে।  

শুকরের প্রজাতি -

দেশি প্রজাতির শুকর থাকলেও সেগুলির বৃদ্ধি কম তাই কম সময়ে লাভ কম হয়। বিদেশী উঁচু মানের ব্রীড যেন লার্জ হােয়াইট ইয়র্কশায়ার (Large White Yorkshire), মিডিল হােয়াইট ইয়র্কশায়ার (Middle White Yorkshire), বার্কশায়ার (Berkshire) প্রভৃতি এই ধরনের খামারে পালন করা উচিত কারণ এরা খুবই তাড়াতাড়ি বাড়ে এবং প্রজননও তাড়াতাড়ি করে। এরা ৬ মাসের মধ্যেই ৬০-৭০ কেজি ওজনের হয়ে যায় এবং প্রতি বছর ৬-১২টি বাচ্চা দেয়। 

শুকরের সংখ্যা নির্বাচন -

মাছ চাষ করতে গেলে পুকুরের জলে মাছের বাসযোগ্য পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।  শুকরের মল এ বা যে কোনো খাদ্য পুকুরের নিচে অবশিষ্ট হয়ে জমা হলে পুকুরে গ্যাস তৈরী হয়ে জল নষ্ট করে দেয় ফলে মাছের বিভিন্ন রোগ হয় এবং মাছ মারা যায়।  একটি শূকর বছরে ৫০০-৬০০ কেজিমল ত্যাগ করে, তাই এক বিঘা  পুকুরের জন্য ৪ টি শূকর পালন করলে মাছ চাষের জন্য প্রয়ােজনীয় সার ও খাদ্যের যােগানের সমস্যা মিটে যাবে।

খাদ্য ব্যবস্থাপনা -

শূকরের মল পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বাড়ায় এবং শূকরের মলে যে অপাচ্য খাদ্যবস্তু থাকে তা মাছ খাদ্য। হিসাবে গ্রহণ করে। শূকরের মল মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তেমনি পুকুরে যে সমস্ত অবাঞ্ছিত জলজ উদ্ভিদ যেমন কচুরী পানা, টোপাপানা, ক্ষুদে পানা, গুড়ি পানা, অ্যাজোলা প্রভৃতি এবং পুকুর পাড়ের ঘাস শূকরের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।  শূকরের তাড়াতাড়ি বৃদ্ধির জন্য বাজারে প্রাপ্ত শূকরের খাদ্য প্রত্যই প্রতি শূকরকে ১ কেজি করে খাওয়াতে হবে।

উৎপাদন এবং লাভ - 

 শূকর পালনের জন্য যে খাদ্য খরচ হবে সেই  খরচ শূকরের মাংস বিক্রি করে পুষিয়ে নিয়েও বাচ্চা বিক্রি অধিক লাভ করা যাবে । দু’মাস বয়সের শূকর ছানা ছয় মাসেই ৬০-৭০ কেজি ওজনের শূকরে পরিণত হয়। এবং এই সময় এদের বাজারে বিক্রি করা যেতে পারে। অর্থাৎবছরে দু’বার শূকর পালন করা যাবে। হাঁস বা মুরগীর সঙ্গে মাচ চাষের জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় সেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করে শূকরের খামারে সঙ্গে মাছ চাষ করে বছরে ৩০০০-৩৫০০ কেজি মাছ উৎপাদন সম্ভব। 

আরও দেখুন 

পুকুরের জল বাদামি রং ,সবুজ রং ,দুর্গন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি -

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)