বর্ষার /জলদি ফুলকপি চাষ পদ্ধতি ۔

Didibhai Agrofarm
0
বর্ষার /জলদি ফুলকপি চাষ পদ্ধতি ۔

ফুলকপি একটি সময় শুধু শীতকালীন ফসল হিসেবে পরিচিত থাকলেও বিপর্তনের পথে চলতে চলতে মানুষের খাদ্য চাহিদার পরিবর্তন এর সাথে সাথে দামের পরিবর্তন লক্ষ করা যায় ফলে শীত কালে যে দাম থাকে বর্ষা কালে তার দাম অনেকটা বেড়ে যায় । উৎপাদন কম থাকে ফলে বাজার উর্ধ মুখী থাকে । বর্ষাকালে ফুলকপি চাষ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও   বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে উঁচু জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো জায়গায় খোলা বা পলিথিন শেড বা প্লীহাউসে গুলিতে চাষ করলে এক একটি ফুল্উকপি উৎপাদন এ 5-7 টাকা খরচ করে 25-30 টাকা লাভ করা যায় ।

তবে চাষ করতে গেলে চাষ পদ্ধতির সঠিক বিষয় গুলি জেনে নিয়ে চাষ শুরু করা উচিত এই জন্যে বিস্বস্ত তথ্য প্রকাশক এর তথ্য গুলি সংগ্রহ করে চাষ করা যেতে পারে বা কৃষি সহায়ক সরকারি দপ্তর গুলির পরামর্শ নিয়ে চাষ করলে ক্ষতির থেকে লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে ।

ফুলকপি এখন সারাবছর যেমন চাষ হচ্ছে তেমনি সময়ের সাথে বিভিন্ন উন্নত বীজ এর সংকর জাত  উদ্ভাবন হচ্ছে ফলে সেই সব বীজগুলির সঠিক জাত নির্বাচন করলে মরসুমের আগে পরে সর্বদাই চাষ করা যায় ।

চাষের উপযোক্ত পরিবেশ নির্ধারণ ۔

চাষ এর পরিকল্পনা গ্রহণ এর  পূর্বে  আপনি কোথায় কিভাবে চাষ করবেন সেটা নির্ধারণ করে নেওয়া ভালো , মূলত বেলে দোয়াস মাটি অম্লত্ব মাত্রা 5.5 - 6.5  এবং উঁচু জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া যাবে এমন জায়গা নির্বাচন করা  প্রয়োজন । যদি মনে হয় সাধারণ পলিসেড বানিয়ে চাষ করা যেতে পারে তবে এই ধরণের কাজ করলে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করলে ভালো সাধারণ পলিসেড করলেও সেটি 4-5 বছর যাবে ,তাহলে খরচের পরিমান টা কম মনে হবে সেই সাথে যাদের পলিহাউসে আছে বা করতে চান তারা সরকারি সাবসিডি তে পলিহাউস করে চাষ করে মোটা টাকা লাভ করা যেতে পারে । 

সঠিক জাত নির্বাচন ۔۔

তাপমাত্রার সহনশীলতার উপর নির্ভর করে ফুলকপির জাত নির্বাচন করা উচিত তাহলে গাছের ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে এবং কাঙ্খিত উৎপাদন পাওয়া যায় । 

1. খুব জলদি যতগুলি যেগুলির জন্যে 20°-25° সেন্টিগ্রেড  তাপমাত্রা আদর্শ ۔۔ উন্নত জাত পন্থাগবি 3, পন্থাগবি 2, ও   পুসা দীপালি এবং হাইব্রিড জাত গুলি হল জুলি ও সীঘ্রা ।

2. মাঝারি জলদি জাত 16°- 20°সেন্টিগ্রেড  তাপমাত্রা ۔

উন্নত জাত পন্থাগবী 2, হিসার 1 এবং হাইব্রিড জাত গুলি হল ۔মেঘা ,বর্ষা ,পার্বতী , দিশা ,সবিতা প্রভৃতি ।

3. গ্রীষ্ম বর্ষা সহনশীল জাত যে গুলি ফাল্গুন থেকে শ্রাবন পর্যন্ত চাষের জন্যে প্রজেজ্য ۔সামার কুইন , ডন , জুলি , 1008 , ও মেরিট ।

4. নবী জাত 10°-16° সেন্টিগ্রেড  তাপমাত্রায় 

উন্নত জাত ۔ পুসা ,স্লোবল 1, 2, 16 এবং হাইব্রিড সুহাসিনী ,শীতল , সেন্টা । 

5. মাঝারি নবীজত  12°- 16° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা

মাঝারি জলদি জাতের বীজগুলি প্রজেজ্য ।

 উৎপাদন এবং বাজার ۔

চাষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাজার নির্বাচন করে নেওয়াটা জরুরি কোথায় বিক্রি করবেন ? বর্ষাকালীন ফুলকপির বাজার মূল্য বেশি তাই লাগানোর পূর্বেই যদি নিজ শহরের বাইরে সবজি আরদ গুলি তে খোঁজ নেওয়া যায় তাহলে ভালো দামে বিক্রয় করা যায় । সেই সাথে হিসেবে করে নেওয়া যেতে পারে যে একটি কপিতে খরচ কত এবং উৎপাদন অনুযায়ী বিক্রি কত হবে সেই জন্যে কোন সময়ে কোন জাতগুলুর উৎপাদন কত জেনে নিয়ে করলে মনে হতাশা তৈরির সম্ভাবনা থাকে না ।

সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ আগাছা দমন করে পরিচর্যা করলে মাঝারি  জাত বিঘা প্রতি 25-28 কুইন্টাল উৎপাদন হবে , মাঝারি হাইব্রিড জাত 26-33 কুইন্টাল , মাঝারি জলদি হাইব্রিড জাত 20-27 কুইন্টাল এবং নবী জাত 35-40 কুইন্টাল ফলন দেয় ।

বিঘা প্রতি চারার সংখা নির্ধারণ ۔

জলদি ও মাঝারি জলদি জাত  সারি থেকে সারির দূরত্ব 2 ফুট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব 1 ফুট দূরত্বে লাগাতে হবে ।

মাঝারি ও নবী জাত সারি থেকে সারির দূরত্ব 2 ফুট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব দেড় ফুট দূরত্বে লাগাতে হবে ।

বীজ এর পরিমান ۔

জলদি জাত বিঘা প্রতি 80-90 গ্রাম , মাঝারি জাত 60-70 গ্রাম বিঘা প্রতি নবী জাত ও হাইব্রিড জাত বিঘা প্রতি 50-60 গ্রাম প্রয়োজন ।

বীজতলা তৈরী ۔

1. উঁচু খোলা জায়গায় বীজ তলা করলে ভালো করে নরম করে নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমান কম্পোস্ট সার এবং সিউওডোমোনাস জীবাণুনাশক দিয়ে কয়েকদিন ঢেকে রেখে তার পর আবার নরম করে তার উপর বীজ শোধন করে বীজ লাগাতে হবে দেড় মিটার চওড়া বেড করে এবং জল নিকাশি ব্যবস্থা রাখতে হবে সেই সাথে বৃষ্টি তে যেন ক্ষতি না হয় সেই দিকটি লক্ষ রেখে উপরে বৃষ্টির সময় পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।

2. ঝুলন্ত বেড এ করলে পর্যাপ্ত পরিমান আলোবাতাস পাবে এমন জায়গা নির্বাচন করে বাশ দিয়ে মাটি থেকে 3 ফুট উপরে মাচা করে তার উপর 2 ইঞ্চি কম্পোস্ট মিশ্রিত মাটি দিয়ে বীজ বপন করতে হবে এবং নিয়মিত জল স্প্রে করতে হবে | উপরে অবশ্যই বৃষ্টি না পরে যেন সেদিকটি লক্ষ্য রেখে 4 ফুট উপরে শেড দিতে হবে ।,

4. প্রো ট্রে তে চারা উৎপাদন যা আরো ভালো বা সহজ উপলভ্য | এর জন্যে কোকোপিট এবং তার সাথে ভার্মি কম্পোস্ট মিশিয়ে তৈরী করা যেতে পারে এবং নিয়মিত জল স্প্রে করতে হবে । এগুলি যেকোনো জায়গায় রাখা যায় এবং বৃষ্টি হলে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনা যায় ।

প্রতিটি চারা তৈরির পদ্ধতির ক্ষেত্রেই নিয়মিত ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে এবং দু পাতা বের হওয়ার পর 19:19:19 সার প্রতি লিটার জলে 3 গ্রাম  গুলিয়ে স্প্রে করলে চারার বৃদ্ধি তারা তারি হবে এবং 20-25 দিনের চারা মূল জমিতে রোপন করা যাবে । 

ফুলকপির মূল জমি মূলত 4-5 টি চাষ দিয়ে মাটি ঝুর ঝুরে করে নেওয়া জরুরি । মাটিতে সারের প্রয়োগ করার পূর্বে মাটি পরীক্ষা করে নিয়ে সেই অনুযায়ী সার এবং অনুখাদ্য ও প্রয়জন বিশেষে চুন প্রয়োগ করা উচিত । জমি চাষের সময় ছায়া জায়গায় 2 বস্তা পচা সার এর সাথে 1 কেজি ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি মিশিয়ে 8 দিন রেখে  জমি চাষ দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী বিঘা প্রতি অন্তত 1 ট্রাক্টর গোবর সার দিলে ভালো বা 15-20 কুইন্টাল কম্পোস্ট সার না হলে কেঁচো সার এবং 50 কেজি নিঁম খোল এর সাথে সেগুলি মিশিয়ে দিয়ে চাষ  দিতে হবে এবং এবং ওই পোকার আক্রমণ এর ভয় থাকলে ওই পোকা নাশক শেষ চাষের আগে জমিতে দিতে হবে ।

রাসায়নিক সার প্রয়োগ ۔

জমি শেষ চাষের সময় বিঘা প্রতি ইউরিয়া 10 কেজি , ডি এ পি   30 কেজি অথবা ডি এ পি এর পরিবর্তে এন পি কে 10:26:26 সার 30 কেজি এবং পটাশ 12 কেজি দিতে হবে ।

চারা লাগানোর পূর্বে 1 দিন আগে ছত্রাক নাশক কার্বোন্ডাজিম প্রতি লিটার জলে 2 গ্রাম দিয়ে স্প্রে করতে হবে ।

চারা লাগানোর সময় সোহাগার খৈ গুড় জলে শেকড় ডুবিয়ে চারা লাগাতে হবে এর জন্যে বিঘা প্রতি 2 কেজি সোহাগা লাগে | সোহাগা প্রয়োগ করলে কান্ড ফাঁপা হবে না এবং ফুল সাদা হবে ।   

রোগ পরিচচর্যা

 ফুলকপিতে 1000 গ্রাম হামকো বরণ চাপান সার হিসেবে ব্যবহার করলে ভালো ফলন হয় প্রায় সকল  প্রকার

সবজির জন্য দেওয়া ভালো ।

ফুলকপিতে পাতা ধ্বসা রোগ হলে, কন্দ পচা পাতা ধসা রোগের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে 10 থেকে 12 দিন

অন্তর টাটকা গোবরের  নির্যাস তিন থেকে চার বার স্প্রে করা যায় তাছাড়া বিঘা প্রতি 300 গ্রাম ট্রাইকোডার্মা

ভিরিডি নামে জীবানুনাশক জৈব সারের সাথে মিশিয়ে শেষ চাষের মেশালে নিরাময় হয… এ সত্বেও রোগ নিয়ন্ত্রণ

না হলে ২.৫ গ্রাম শুধু ফ্লোরেন্স  সুমনা সিউডোমোনাস ফ্লোরেন্স প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে 7 থেকে 10 দিন

অন্তর 23 বার স্প্রে করুন ।

আরও দেখুন 

দ্রুত কম্পোস্ট সার তৈরী পদ্ধতি


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)