পরিবেশ বান্ধব চাষে পরিবেশ , গাছ ও জীবজাতিকে সুরক্ষিত রেখে পরিবেশ থেকেই প্রাপ্ত দ্রব্য দিয়ে উৎকৃষ্ট মানের সারগুলির মধ্যে অন্যতম হল ক্ষুদ্র অণুজীবের দ্বারা তৈরী তরল সার। এই সার প্রয়োগ করলে গাছকে দুটি ভাবে রক্ষা করে একটি গাছকে বেড়ে উঠতে পর্যাপ্ত খাদ্য যোগান দেয় এবং আর একটি গাছকে রোগপোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। বাজারে প্রাপ্ত বিভিন্ন রাসায়নিক সার এর পরিবর্তে এই সার ফসল এবং সবজি বাগানে প্রয়োগ করলে গাছের এটি টনিক হিসেবে কাজ করে যার মধ্যে নিউট্রিয়েন্টস কম পরিমানে থাকলেও উপকরণ গুলি পরিবেশ থেকে সহজেই পাওয়া যায়। এই সার গাছে ব্যবহারে করলে গাছ তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে এবং এর ভেতর যে অণুজীবগুলো থাকে তা মাটিকে উর্বর করে তুলতে সহায়তা করে।
ক। পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত সার তৈরির দ্রব্য গুলি-
এই সার তৈরির জন্যে যে দ্রব্যগুলোর প্রয়োজন হয় সেগুলি হল -
১। গভীর শিকড় ও গন্ধযুক্ত আগাছার শিকড় বা গন্ধ যুক্ত সুটি জাতীয় আগাছার পাতা ।
২। ছাগল ,গরু, বা অন্যান্য প্রাণী থেকে প্রাপ্ত মল।
৩। একটি মাটির হাড়ি /জালা বা একটি ড্রাম ও জল।
৪। একটি লাঠি এবং চোটের বস্তা ও একটি পাথর বা ইটের টুকরো।
৫। ৫০-১০০ গ্রাম ঝোলা বা চিটে গুড়।
আরো দেখুন
পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ধানের রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
খ। সার প্রস্তুত প্রণালী -
১। এই সার তৈরির জন্যে যে পরিমান গভীর শিকড় ও গন্ধযুক্ত আগাছার শিকড় বা গন্ধ যুক্ত সুটি জাতীয় আগাছার পাতা নিবেন একই পরিমানে ছাগল ,গরু, বা অন্যান্য প্রাণী থেকে প্রাপ্ত মল নিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে।
২। এর পর সেই মিশ্রণটিকে পুটলি বাধার পরিমান মতো বস্তার উপর রেখে বস্তার মুখ বেঁধে দিতে হবে যদি ড্রাম বা হারির মুখ দিয়ে না ঢুকে তবে আগেই বস্তার টুকরোকে এর ভেতর বিছিয়ে নিয়ে মিশ্রণটিকে দিয়ে সেখানেই বেঁধে দিতে হবে।
৩। এর পর যে পরিমান মিশ্রণ পুটলি টি হয়েছে তার আয়তনের ২১ গুন্ জল ড্রামের ভেতর ঢুকিয়ে দিন এবং পুটলির উপর একটি ইটের টুকরো বা পাথর বসিয়ে দিন যাতে পুটলি টি জলের উপরে ভেসে না থাকে।
৪। এর পর ড্রাম বা হাঁড়ির মুখ মাটির ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ছায়া যুক্ত জায়গায় রেখে দিতে হবে। কয়েকদিন পর এটি থেকে খুব গন্ধ বের হতে পারে তাই অবশ্যই মুখটি ঢাকা রাখতে হবে।
৫। পাত্রটিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্যে মিশ্রণটিকে একটি লাঠি দিয়ে বাম ও ডান দিক করে ১০ বার ঘুরাতে হবে দুবেলা নাড়াতে হবে প্রতিদিন না নাড়ালে ভালো সার তৈরী হবে না।
৬। তরল সারটিকে গুণমান বৃদ্ধির জন্যে ৩ সপ্তাহ পর জলের মধ্যে ৫০-১০০ গ্রাম ঝোলা বা চিটে গুড় মিশিয়ে দিবেন।
৭। এর পর থেকে নাড়ানোর সময় লক্ষ রাখতে হবে যে কোনো গন্ধ বের হচ্ছে কিনা যদি গন্ধ না থাকে এবং দেখতে কালচে সবুজ রং এর হয় তবে বুঝবেন সার টি তৈরী হয়ে গেছে। এটি বুঝা যাবে মোটামুটি ২৫ থেকে ৩০ দিন এর মধ্যে।
গ। সার ব্যবহার পদ্ধতি -
তরল সার টি মূলত তিনটি ভাবে ব্যবহার করা যায় -গাছের পাতায় ,গাছের গোড়ায় এবং ভালো অঙ্কুর বের হবার জন্যে।
১। গাছের পাতায় ব্যবহার করলে সমপরিমাণ জল এবং তরল সার মিশিয়ে ভালো করে ছেঁকে নিয়ে স্প্রে করতে হবে।
২ । গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করলে জল মেশাতে হবে না তরল সার টি ভালো করে ছেঁকে নিয়ে সরাসরি গাছের গোড়ায় দেওয়া যেতে পারে।
৩। ভালো আঙ্কোর বের হওয়ার জন্যে তরল সার এর মধ্যে ৩ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ছায়াতে শুকিয়ে বপন করা যেতে পারে।
৪। এই সার এর গুন্ উৎপন্ন হওয়ার পর এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত থাকে এর পর ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে তাই এক দের মাসে যেটুকু প্রয়োজন সে পরিমান তৈরী করলেই ভালো।
আরও দেখুন -
- পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ধানের রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
- গােবর গ্যাস স্লারি কি ?এবং কৃষি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার -
- ফসফো কম্পোস্ট কি ?ফসফো কম্পোস্ট সার তৈরী সহজ পদ্ধতি এবং ব্যবহার
- সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থাপনা জৈব সারের গুরুত্ব
- জৈব কীটনাশক তৈরী পদ্ধতি
- বোর্দ্য দ্রবণ তৈরী পদ্ধতি। ভাইরাস নাশক তৈরী পদ্ধতি। SPNF
- জৈব চাষে রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণে সবচয়ে ভালো 16 টি সহজ ও পরিবেশমুখী কীটনাশক , ছত্রাক নাশক টোটকা
- দ্রুত কম্পোস্ট সার তৈরী পদ্ধতি
- সবুজ সার ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়িয়ে তোলা যায় সহজেই
- সবুজ সার কি? সবুজ সার তৈরী পদ্ধতি -
- কেঁচো সার তৈরী পদ্ধতি
- গোবর দিয়ে নার্সারির জন্যে পরিবেশবান্ধব টব বা পট তৈরীর সহজ পদ্ধতি-
- জৈব কীটনাশক অগ্নিঅস্ত্র কি ? কিভাবে তৈরি করবেন ? কিভাবে ব্যাবহার করবেন ? চাষের জন্যে কতটা লাভদয়ক ?
- জীবান্মৃত কিভাবে তৈরি করব ? জৈব চাষে জীবান্মৃত কিভাবে কাজ করে ? এবং এর ব্যাবহার কিভাবে হয় ?
- অমৃত জল বা মিরাক্কেল জৈব তরল সার তৈরী পদ্ধতি
- নিমাস্ত্র কিভাবে তৈরি করে ? ব্রম্মাস্ত্র কিটনাশক কিভাবে তৈরি করে ?
- বিজামৃত তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতি
- ঘনজীবামৃত জৈব সার তৈরি পধতি
- পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ধানের রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি