প্রকৃতিতে যা কিছু বেড়ে ওঠে সবকিছুই প্রকৃতি থেকেই পাওয়া যায় এর জন্যে বাড়ির থেকে আলাদা কিছুর প্রয়োজন হয় না যার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ বনভূমি যেখানে গাছগুলি এমনি বেড়ে ওঠছে। সেই গাছের পাতাগুলি মাটিতে পড়ছে , সেগুলি সার হয়ে যাচ্ছে সেগুলিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে বেড়ে উঠছে। এর থেকে বুঝা গেসিলো গাছের বৃদ্ধির জন্যে যদি নিয়মিত সবুজ সার ব্যবহার করা যায় তবে একটা সময় রাসায়নিক সার এর পরিমান অনেকটাই কমে যাবে। একটি গবেষণায় গবেষকরা প্রকাশ করেছেন যে যদি মাটিতে সুটি জাতীয় গাছ বা পাতা নিয়মিত জমিতে চাষ কার্যে ব্যবহার করা হয় তবে ৩০ থেকে ৫০% পর্যন্ত উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে।
ক। চাষ কার্যে সবুজ সার এর গুরুত্ব -
চাষের জন্যে মাটিতে যেগুলি থাকা আবশ্যক তার মধ্যে জৈব কার্বন ,নাইট্রোজেন ,হিউমাস ,জল ধারণ ক্ষমতা এবং বায়ু চলাচল ব্যবস্থা এই সবগুলি যদি মাটিতে থাকে তাহলে মাটি এমনি উর্বর থাকে। এর ফলে মাটিতে উপকারী জীবাণু ,কেঁচো সংখ্যা বেড়ে যায় এবং এই সব কিছু বিদ্যমান থাকলে গাছ ফসল তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠতে পারে। এই সব গুলির ব্যবহার করলে অনেকটাই গাছের প্রয়জনীয় শক্তির যোগান দেয়। কৃষিবিজ্ঞানীরা গবেষণায় বলেছেন সুটি জাতীয় সবুজ সার ব্যবহার করলে যে প্রতি একরে ১৮ থেকে ৪০ কেজি নাইট্রোজেন উৎপাদন করে এবং সেগুলির কিছু অংশ প্রায় ১৮ থেকে ৩৫ শতাংশ পরবর্তী ফসলে কাজে দেয়।
খ। সবুজ সার এর জন্যে ব্যবহৃত গাছ গুলি -
গাছ গুলি মূলত দুটি পদ্ধতির জন্যে নির্বাচন করা যেতে পারে - ১। উঁচু জমি ২। মাঝারি জমি ৩। নিচু জমি ।
১। উঁচু জমির জন্যে মাসকলাই ,মুগ ডাল এবং বরবটি গাছ ব্যবহার করা যাবে।
২। মাঝারি উঁচু জমির জন্যে ধঞ্চে ,বারসীম, খেসারি, ভুট্টা ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩। নিচু জমি বা জলা জমির জন্যে জল ধঞ্চে ,নীল সবুজ শ্যাওলা ,ও এজোলা ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে।
গ। সবুজ সার উৎপাদন ও ব্যবহার -
এই পদ্ধতি অবলম্বনের জন্যে বাইরে থেকে কিছু প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না জমিতে উৎপন্ন অবশিষ্ট দিয়েই সবুজ সার এর কাজ করে। ফসল উৎপাদনের পর ফসল অবশিষ্ট গুলিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয় যদি কাদা করে রাখা যায় তবে আরো ভালো। বর্ষার সময় যে কোনো ফসল অবশিষ্ট বা ধঞ্চে এজোলা চাষ দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে একমাস রেখে দিলে প্রথমেই সেখান থেকে গাছ নাট্রোজেন প্রাপ্ত করতে পারে। তাই ধান লাগানোর পূর্বে ধঞ্চে,এজোলা এবং দিয়ে যদি চাষ করে রাখা যায় পচনের ফলে ৫০% উৎপন্ন নাইট্রোজেন ধানের গ্রহণ করার উপযুক্ত হয়ে যায় ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বাকিটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এছাড়াও পরবর্তী ফসল গুলিতে এই পচনের ফলে উৎপন্ন গুনাগুন গুলি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে অর্থাৎ খাদ্য স্টক হয় এই পদ্ধতিতে এবং একই হরে প্রয়োগ করলে জমির কার্বন সোর্স এবং অন্যনয়ন অনুখাদ্য গুলির পরিমান বেড়ে যায় যা রাসায়নিক এর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।
আরও দেখুন -
- পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ধানের রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
- গােবর গ্যাস স্লারি কি ?এবং কৃষি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার -
- ফসফো কম্পোস্ট কি ?ফসফো কম্পোস্ট সার তৈরী সহজ পদ্ধতি এবং ব্যবহার
- সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থাপনা জৈব সারের গুরুত্ব
- জৈব কীটনাশক তৈরী পদ্ধতি
- বোর্দ্য দ্রবণ তৈরী পদ্ধতি। ভাইরাস নাশক তৈরী পদ্ধতি। SPNF
- জৈব চাষে রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণে সবচয়ে ভালো 16 টি সহজ ও পরিবেশমুখী কীটনাশক , ছত্রাক নাশক টোটকা
- দ্রুত কম্পোস্ট সার তৈরী পদ্ধতি
- তরল জৈব সার তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতি -
- সবুজ সার ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়িয়ে তোলা যায় সহজেই
- কেঁচো সার তৈরী পদ্ধতি
- গোবর দিয়ে নার্সারির জন্যে পরিবেশবান্ধব টব বা পট তৈরীর সহজ পদ্ধতি-
- জৈব কীটনাশক অগ্নিঅস্ত্র কি ? কিভাবে তৈরি করবেন ? কিভাবে ব্যাবহার করবেন ? চাষের জন্যে কতটা লাভদয়ক ?
- জীবান্মৃত কিভাবে তৈরি করব ? জৈব চাষে জীবান্মৃত কিভাবে কাজ করে ? এবং এর ব্যাবহার কিভাবে হয় ?
- অমৃত জল বা মিরাক্কেল জৈব তরল সার তৈরী পদ্ধতি
- নিমাস্ত্র কিভাবে তৈরি করে ? ব্রম্মাস্ত্র কিটনাশক কিভাবে তৈরি করে ?
- বিজামৃত তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতি
- ঘনজীবামৃত জৈব সার তৈরি পধতি
- পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ধানের রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি