গোলমরিচ লাভজনক মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে একটি যা কম খরচে উৎপাদন করা যায় এবং চাষ করার জন্যে আলাদা কোনো জায়গার প্রয়োজন হয় না। গোলমরিচ মূলত দক্ষিণ ভারত এর রাজ্যগুলি যেমন তামিল নাড়ু ,কর্ণাটক ,কেরালা তে সুপারি ,নারকেল , মাদার প্রভৃতি গাছের সাথে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হয়ে থাকে সেই সাথে আসাম, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গে সেই ভাবে চাষ না হলেও চাষ এর সম্ভাবনা অনেক বেশি।বাণিজ্যিক ভাবে এখন গাছ ছাড়াও সিমেন্ট এর খুঁটি তৈরী করে চাষ হচ্ছে। এক একটি ৫-৬ বছরের পুরোনো গাছ থেকে ৫-৬ কেজি গোলমরিচ পাওয়া যায় যা প্রতি কেজি ৪০০ টাকা দামে বিক্রয় হয়। গোলমরিচ গাছ যেহুতু একটি লতানো ফসল তাই এর জন্যে আলাদা কোনো জায়গার প্রয়োজন হয়না বাগান বা বাড়ির গাছের গোড়ায় লাগালে তাকে অবলম্বন করেই গাছ বেড়ে ওঠে এবং একসাথে দ্বিগুন লাভ করা যায়। এছাড়াও উন্নত জাত হলে টবেও চাষ করা যেতে পারে এবং কম সময়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। টবে দ্বিতীয় বছর থেকে ফল উৎপাদন শুরু হয়ে যায় গাছ পিছু ৫০-১০০ গ্রাম করে এবং গাছের বয়স এর সাথে সাথে এর ফলন বাড়তে থাকে।
গোলমরিচ এর জাত এবং কাটিং নির্বাচন পদ্ধতি -
গোলমরিচের বিভিন্ন জাতের মধ্যে কম সময়ে ফলন ভালো উৎপাদন কারী জাতিগুলির মধ্যে করিমুনডা , কুথিয়া ভাল্লি ,শুভকরা ,শ্রীকরা জাতগুলি বেছে নেওয়া যেতে পারে বা ভালো মানের চারা সংগ্রহ করতে পারেন বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুলি থেকে অনুমনিক ২৫-৩০ টাকা মূল্যে।
গোল মরিচ গাছের চারা করতে হলে মূলত গাছের গোড়া থেকে উৎপন্ন শাখা বা ফল উৎপাদন কারী শাখা থেকে কলম তৈরী করে চারা হিসবে লাগানো হয়। ফল উৎপাদন কারী শাখা গুলি থেকে কলম করলে গাছগুলি দ্রুত ঝোপানো হয় বেশি এবং এবং সঠিক ভাবে সার জল প্রয়োগ করে রোগ ব্যাধির পরিচর্যা করলে গাছ গুলি প্রথম বছর থেকেই ফল উৎপাদন শুরু করে এবং প্রত্যেক ঋতুতেই নিয়মিত ফল উৎপাদন হতে থাকে। বাণিজ্যিক ভাবে চাষ না করতে পারলেও বাড়ির একদুটি গাছের সাথে লাগিয়ে বা টবে লাগিয়ে বাড়ির দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে।
চারা তৈরী পদ্ধতি -
সেপ্টেম্বর অক্টবর মাসে বালি ,বাগানের মাটি ও গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরী করে প্যাকেট এ ভোরে রেডি করে নিতে হবে এর পর গোলমরিচ এর জাত এবং গাছের শাখা নির্বাচন করে সংগ্রহ করার পর ৪-৫ টি গিঠ যুক্ত শাখা গুলির একটি পাতা ছাড়া সব পাতা ফেলে দিয়ে কাটিং বা কলম গুলির মাথায় অক্সিক্লোরাইড ছত্রাক নাশক মাথায় এবং গোড়ায় সেরাডেক্স লাগিয়ে কলম গুলি একটি দুটি পাতার গিঠ যুক্ত অংশ মাটি ভরা প্যাকেটে গেথে দিয়ে কলম গুলি এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত ছায়া যুক্ত জায়গায় রেখে দিয়ে নিয়মিত পরিচর্যা করে মূল জায়গা তে নিয়ে লাগাতে হবে।
গাছের গোড়ায় লাগানোর পদ্ধতি -
মূলত বৃষ্টির সময় গোলমরিচ এর চারা রোপণ করা উচিত সুপারি ,নারকেল , মাদার আম ,কাঁঠাল ইত্যাদি গাছের পাশে. যে গাছের পাশে লাগানো হবে তার উত্তর-পূর্ব দিকে গাছ থেকে 30 সেমি দূরে গর্ত করে 5 কেজি কম্পোস্ট ও স্টার্টার হিসেবে রং অথবা সুপার ফসফেট 200 গ্রাম সালফেট 100 গ্রাম পটাশ ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে প্রতিবর্ত শিখর রয়েছে এমন কাটিং লাগাতে হবে । উইপোকার উপদ্রব থাকলে প্রতি গর্তে 150 গ্রাম নিম , মহানিম , করঞ্জ পাতা অথবা খোল মিশিয়ে গোলমরিচ কাটিং লাগানোর আগে প্রয়োগ করতে হবে ।
টবে লাগানোর পদ্ধতি -
টবে কলম লাগানোর আগে টব নির্বাচন করতে হবে কি সাইজ হবে এর জন্যে ১২ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের টব উত্তম হবে। মাটি তৈরির সময় বাগানের মাটির সাথে ২৫০ গ্রাম গোবর সার ২৫০ গ্রাম ,নিমখোল ,২৫ গ্রাম বাদাম খোল এবং পাতাপঁচানো কম্পোস্ট সার ১ কেজি দিয়ে মিশিয়ে নিয়ে কলম চারা লাগাতে হবে।
রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ -
কান্ড ও কন্দ মূল ছিদ্রকারী পোকা মিলিবাগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে নিম খোল ব্যবহার করা দরকার কাঠা প্রতি 2 কেজি মাত্রায় । পোকা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করতে পারেন নিম তেল নিমপাতা নিমপাতা আতা পাতা পাটবীজ তামাক পাতা ইত্যাদি ভেষজ উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশের নির্যাস বা নিমাস্ত্র ও আগ্নঅস্ত্র তৈরি করে ব্যবহার করা দরকার ।
পাতা বা কান্ড পচা রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্যে রাসায়নিক ভাবে করলে অক্সিক্লোরাইড ছত্রাক নাশক বর্ষার আগে স্প্রে করতে হবে এছাড়াও পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্যে ইমিডাক্লোরপিড/ডাইমেথোয়েট উপযুক্ত মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।
ফলন্ত গোল মরিচ গাছে দুই গ্রাম সুডোমোনাস ফ্লোরোসেন্স ছত্রাক নাশক 1 লিটার জলে গুলে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমে সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আরও দেখুন
মাছ ও হাঁসের যৌথ খামার তৈরী পদ্ধতি