আউস ধান চাষ পদ্ধতি

Didibhai Agrofarm
0
আউস ধান কাকে বলে যদি সঠিক ভাবে বুঝতে হয় আমাদের তাহলে ১৫ অক্টবরের মধ্যে যে সব ধান কেটে ঘরে তুলতে হয় তাকে বলে আউস ধান, এটি একটি মরসুমি ধান

আউস ধান কাকে বলে যদি সঠিক ভাবে বুঝতে হয় আমাদের তাহলে ১৫ অক্টবরের মধ্যে যে সব ধান কেটে ঘরে তুলতে হয় তাকে বলে আউস ধান, এটি একটি মরসুমি ধান যা ভারতের কিছু রাজ্যে ও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে মূলত এই আউস ধান গ্রীষ্ম ঋতুতে বৈশাখ জ্যেষ্ঠ মাসে চাষ শুরু করা হয়ে থাকে এবং ১৫ অক্টবরের পরে যেগুলি কাটা হয় তাকে আমন ধান বলে |

মাটির ধরণ - 

বেলে বা বেলে দোয়াস বা এঁটেল মাটি উপযুক্ত উঁচু মাঝারি জমি উপযুক্ত | যেগুলি ৯০ থেকে ১০০ দিনের হয় |

আউশ ধানের জাত সমূহ ۔۔

MTV ১০০৪ ও ১১৫৩ , গোট্টা বিধান ১ ও ৩  এবং DRR ৪৪,৪৫ ,৪৩  ভালো ফলন দেয় | 

বীজতলার জন্যে বীজ এর প্রয়োজন ۔۔

যদি জমিতে ছিটিয়ে সরাসরি ধান লাগানো হয় তাহলে বিঘাপ্রতি ১২-১৪  কেজি প্রয়োজন এবং ড্রাম সিডার দিয়ে করলে ৮-১০  কেজি প্রয়োজন | 

সারিতে রোয়া করে করলে ১ বিঘা জমির জন্যে ৫-৬  কেজি বীজ প্রয়োজন ১  শতক জায়গায় বীজতলা করতে হবে |  তবে যদি জমির অবস্থা জানা থাকে নোনাযুক্ত তবে সেখানে বীজতলা না করা ভালো | 

বীজ তলা করার সময় সমস্ত জায়গা জুড়ে না করে দেড় মিটার চওড়া  এবং লম্বা যতটা হয় সেই মাপে বেড  করে জল নিকাশি ব্যবস্থা রাখতে হবে তাহলে চারা ভালো পাওয়া যাবে |

বীজ তলায় সার প্রয়োগ ۔۔

শুকনো বীজতলার ক্ষেত্রে  শতকে ১  কুইন্টাল গোবর দিতে হবে  এবং শতকে পটাশ ২০০ গ্রাম দিতে হবে এবং চারা লাগানোর ১০ দিন পর জল দেওয়ার পর শতকে 200 গ্রাম নাইট্রোজেন দিতে হবে | 

কাদা বীজতলার ক্ষেত্রে ۔۔শতকে ১ কুইন্টাল গোবর এবং ২০০  গ্রাম নাইট্রোজেন ও ২০০  গ্রাম পটাশ দিতে হবে ۔

তবে দুটি ক্ষেত্রেই জৈব তে করলে  ঘন জীবান্মৃত এবং  জীবান্মৃত দিলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে |

রোগ মুক্ত বীজতলা ۔

রোগ মুক্ত বীজ তোলার জন্যে ২০-২২  দিনের মাথায় এসিফেট ০.৭৫  গ্রাম প্রতি লিটার জলে অথবা  কাটার্ফ হাইড্রোক্লোরাইড প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে | পাতায় বাদামি রং হলে ট্রাইকোলাজল ৫  এম এল প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে |

শোষক পোকা ,মাজরাপোকা বা টুংরো রোগ আক্রমণ করলে কাঁদানো বীজতলায় দানাদার ঔষধ কাটার্ফ হাইড্রোক্লোরাইড ৪  জি প্রতি শতক এর জন্যে ১৫০  গ্রাম প্রয়োগ করে ৩  দিন জল ধরে রাখতে  হবে |

জৈব পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিয়মিত গোবর জল নির্যাস এবং নিঁম তেল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে |

বীজতলা তৈরী ۔۔

বীজ তলা করে বীজ ফেলার আগে বীজ শোধন পদ্ধতিতে জেনে শোধন করতে হবে | ১০ লিটার জলে 1 কেজি ৬৫০  গ্রাম লবন গুলিয়ে বা জলে একটি ভালো আলু বা ডিম্ দিয়ে ততক্ষন লবন দিয়ে জল নাড়াতে হবে যতক্ষণ ঐ ডিম্ বা লবন জলে ভেসে না ওঠে | ভেসে উঠলে তাতে ধান বীজ দিয়ে যেগুলো ধান ভেসে উঠবে সেগুলোকে সরিয়ে নিচে যেগুলো পরে থাকবে সেগুলোকে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে শুকনো বীজতলার জন্যে হলে প্রতি কেজি বীজের জন্যে ৩  গ্রাম কার্বোন্ডাজিম দিয়ে শোধন করতে হবে ۔۔۔

আর কাদা বীজতলার জন্যে হলে ট্রাইসাইক্লজল ৩  এম .এল  প্রতি দেড় লিটার জলে গুলে বা  কার্বোন্ডাজিম ৪  গ্রাম ১ কেজি বীজ জন্যে জলে দিয়ে ৮-১০  ঘন্টা ভিজিয়ে যথা রীতি জাগ্ দিয়ে বীজ ফেলতে হবে | 

মূলজমি তৈরী ۔

আউশ ধান শুকনো ভাবে লাগানোর ক্ষেত্রে চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে মাটি ঝুর ঝুরে করে নিয়ে বীজ ফেলতে হবে |

কাদা করে রোঁয়া করে চাষের ক্ষেত্রে ৫  চাষ দিয়ে শেষ চাষের সময় জৈব ও অজৈব সার দিয়ে ভালো করে মই দিয়ে নিতে হবে | 

সার প্রয়োগ ۔۔

উচ্চ ফলন শীল ধান হলে সারের মাত্রা বেশি দিতে হয় এর জন্যে কম্পোস্ট সার বিঘা প্রতি ৭-১০  কুইন্টাল দিলে ভালো হয় ۔

মাটি পরীক্ষা করে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে ভালো হয় ۔ তবে জমির শক্তি বুঝে সার প্রয়োগ করলে ভালো , 

লাগানোর সময় ۔7 কেজি নাইট্রোজেন , ১৪  কেজি ফাহসফেট , ও   ১৪ কেজি পটাশ দিতে হবে |

 চাপান হিসেবে - 

১৫  দিনের মাথায় ১৫ কেজি নাইট্রোজেন এবং ৩০-৩৫  দিনের মাথায় 7 কেজি নাইট্রোজেন দিতে হবে |

তবে বেলে দোয়াস মাটির ক্ষেত্রে ১০ কেজি পটাশ আগে এবং পরে চাপান এর সাথে ৪  কেজি দিতে হবে |

অনুখাদ্য ۔

বিঘা প্রতি ৩ কেজি জিঙ্ক সালফেট 

বিঘা প্রতি দেড় কেজি সালফার দিতে হবে তবে ফসফেট দিলে এটি প্রয়োগ করতে হবে না |

একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যেটি কৃষকেরা ভুল করে ۔ গাছে থোর বেরিয়ে গেলে চাপান দেওয়া যাবে না তাহলে চিটা ধান বেশি হবে |

জৈব ভাবে চাষ করতে হলে ۔

যারা প্রথম করবেন তারা ৫ কাঠা জমি তে চেষ্টা করে দেখতে পারেন | প্রথম চাষের সময় বিঘা প্রতি ১০০  লিটার জীবান্মৃত সম্পূর্ণ জমিতে দিয়ে ২১  দিন ভেজাতে হবে | এর পর লাগানোর সময় ফাইনাল চাষে বিঘা প্রতি ১০০  লিটার জীবান্মৃত দিতে হবে জলে সেই সাথে ঘন জীবান্মৃত ৫০ কেজি দিতে হবে এবং কম্পোস্ট বা কেঁচো সার ৫   কুইন্টাল দিলে ভালো হবে এবং এর পর ২১ দিন পর পর বিঘা প্রতি ১০০ লিটার জীবান্মৃত জলে দিতে হবে এবং ১৫  দিন পর পর দুইবার যথা ৪০  কেজি এবং ৩০ কেজি ঘন  জীবান্মৃত দিতে হবে তাহলে অন্য সারের প্রয়োজন হবে না |

রোঁয়া লাগানোর সময় ۔ 

  • ১৫  থেকে ২০ দিনের চারা লাগানো যেতে পারে 
  • জলদি জাতের ক্ষেত্রে লাইন থেকে লাইন এর দুরুত্ব ৮  ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪ ইঞ্চি রাখতে হবে |
  • মাঝারি দিনের হলে  লাইন থেকে লাইন এর দূরত্ব এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৬  ইঞ্চি রাখতে হবে |
  • নবি জাতের হলে সেক্ষেত্রে ৮ , ইঞ্চি রাখতে হবে |

পরিচর্যা 

  •  আগাছা মুক্ত করতে হবে |চারা লাগানোর ১৫  থেকে ২০ পর বিঘা প্রতি ১২০  লিটার জলে ১২০০  গ্রাম ইফকো এপিকে 20 শতাংশ দ্রবণ স্প্রে করতে হবে আগাছা বেছে পোল্ট্রী লিটার বিঘা প্রতি ১৫ কেজি দিয়ে জল না থাকলে সেচ দিয়ে ঘেটে দিতে হবে |
  •  সরাসরি লাগানো ধানে ১৫ দিন পর বিঘা প্রতি ১১ কেজি ইউরিয়া চাপান সার হিসেবে দিতে হবে এবং ৩৫  দিন পরে বিঘা প্রতি ১৪০  লিটার জলে ১০  শতাংশ ইফকো এপিকে দ্রবণ মিশিয়ে স্প্রে করে ঘেটে দিন | পেটে থোর এলেও  বিঘা প্রতি ১৪০  লিটার জলে ১০ শতাংশ ইফকো এপিকে দ্রবণ মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে হবে | মাজরা পোকার আক্রমণ হলে ০.৫  এম এল ডিমোক্রেন প্রতিলিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করুতে হবে অথবা বিঘা প্রতি ৩ কেজি ফুরাডন প্রয়োগ করতে হবে | এবং পোকা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা যেতে পারেন নিমাস্ত্র ,অগ্নিঅস্ত্র ,ব্রহ্ম্মাস্ত্র এর মতো জৈব কীটবিতারক গুলি |
  • ঝলসা  রোগের আক্রমণ হলে প্রতিলিটার জলে ১  এম এল হিনোসেন অথবা ১ গ্রাম বেভিষ্টিন মিশিয়ে বিঘা প্রতি ১০০  লিটার দ্রবণ স্প্রে করতে পারেন | কন্দ পচা , পাতা ধ্বসা রোগের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে ১০  দিন অন্তর টাটকা গোবরের নির্যাস ৩-৪ বার স্প্রে করা দরকার |
  • রোগের আক্রমণ লক্ষ্য করলে বিঘা প্রতি ১০  গ্রাম সুডোমোনাস বায়োসিল্ড ১০০  লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে |
  • ধানের ফুল আসার পর গান্ধী পোকা ইত্যাদির আক্রমণ হলে বিঘা প্রতি দুটি ট্রাইকোকার্ড টাঙিয়ে দিন | গান্ধী পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্যে পচা কাঁকড়ার ফাঁদ খুবই উপযোগী | হেলিকো পারভা এন পি ভি (হেলি মাইড ১০০  এল ই ) ১০ এম এল প্রতি লিটার জলে গুলে ২-৩  বার স্প্রে করতে হবে | 
  • এছাড়াও জৈব ভাবে পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্যে নিমাস্ত্র ,অগ্নিঅস্ত্র ,ব্রহ্ম্মাস্ত্র , আলোক ফাঁদ এবং পাখি বসার ব্যবস্থার জন্যে জমিতে বাসের ঝিক গেড়ে দিতে পারেন বা আলে ধঞ্চে গাছ বা গ্লিরিসিডিয়া ইত্যাদি গাছ  এর ব্যবস্থা রাখতে পারেন |
  • শীষ কাটা লেদা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে জমির চার ধারের আলের আগাছা পরিষ্কার করুন | বিকালের দিকে ২০  শতাংশ সাবান কেরোসিন দ্রবণ গোড়া থেকে শীষ পর্যন্ত ভালো করে স্প্রে করুন | 
  • শীষে 80% ধান পেকে গেলে ধান কেটে ফসল ঘরে তুলুন |
তথ্যসূত্র - পশ্চিমবঙ্গ সরকার কৃষি বিভাগ। 

 আরও দেখুন 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)