মিশ্র মাছ চাষে পোনা মোজুতের আদর্শ পদ্ধতি
এই চাষের বৈশিষ্টগুলি হল
কাতলা ও সিলভার কার্প উভয়েই জলের উপরের স্তরে থাকে, কিন্তু এদের খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পার্থক্য । লক্ষ্য করা যায় । অনেকগুলাে রেকারযুক্ত ফুলকা সিলভারকার্পকে প্রধাণতঃ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদকণা গ্রহণ করতে সাহায্য করে । কাতলা মাছের ফুলকার অন্তর্গঠন প্রাণীকণা গ্রহণে বেশী উপযােগী । সেইজন্যে কাতলা ও সিলভার কার্প জলের একই স্তরে থাকলেও খাদ্যের জন্য তাদের মধ্যে খুব কম প্রতিযােগিতা আছে । পুকুরে অতিরিক্ত উদ্ভিদকণা জমা হওয়ার কারণে জলের উপর সবুজ বর্ণ ধারণ করে সেগুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য সিলভার কার্প পুকুরে থাকা আবশ্যিক ।
ক) পুকুর নির্বাচন
১) জলজ উদ্ভিদ নিয়ন্ত্রণঃ
২) ক্ষতিকারক মাছ নিধনঃ
৩) চুন প্রয়ােগঃ
৪) সার প্রয়ােগঃ
গ) চারাপােনা মজুতের হার
ঘ) পুকুরে চারাপােনা ছাড়ার পর করণীয় কাজগুলাে হল
১) সার প্রয়ােগ
২ চুন প্রয়ােগঃ
৩) জালটানা
৪) পরিপূরক খাদ্য পরিবেশনঃ
পরিপূরক খাদ্য প্রয়ােগের পদ্ধতি
পরিপূরক খাদ্যের পরিমাণ নির্ণয়ের পদ্ধতি।
মিশ্র মাছ চাষের একটি আনুমানিক খাদ্য তালিকা
দিন |
মাছের আনুমানিক ওজন (গ্রাম |
মাছ বাচার সংখ্যা |
দেহের ওজনের শতকরা খাদ্য পরিমাণ |
১-৯০ |
২৫-১০০ |
১০০০ |
৩-২.৫ শতাংশ |
৯১-১৮০ |
১০০-২৫০ |
৯৫০ |
২.৫-২ শতাংশ |
১৯১-২৭0 |
২৫০-৪৫০ |
৯০০ |
২-১.৫ শতাংশ |
২৭0-৩৬০ |
৪৫০-৭০০ |
৯০০ |
১.৫-১.২শতাংশ |
প্রতি সপ্তাহে পুকুরে পি এইচ দেখে চুন প্রয়ােগ করা ভালাে। সাধারণতঃ মাসে বিঘা প্রতি ৫১০ কেজি হারে চুন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সার প্রয়ােগের ২-৩ দিন আগে একবার চুন প্রয়ােগ করে পুকুরে অ্যালকালিনিটির মাত্রা বাড়িয়ে নিলে সুফল তাড়াতাড়ি আসে। চুন প্রয়ােগের পর জাল টেনে চুন ঘেঁটে দিলে ভালাে হয়।
১৫ দিন অন্তর একবার করে জাল টেনে মাছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে এবং সংগৃহীত মাছকে লবন জলে কয়েক সেকেন্ড ডুবিয়ে আবার পুকুরে ছেড়ে দিতে হয়। জাল টানার ফলে মাছের ব্যায়াম
পুকুরে মাছের বৃদ্ধি দ্রুত করার জন্য প্রত্যহ পরিপূরক খাদ্য প্রয়ােগ করতে হয়। চালের কুঁড়াের সঙ্গে সরষে, বাদাম, তিলের মধ্যে যে কোন এক প্রকার খােল সমান পরিমাণে মিশিয়ে মাছের খাদ্য তৈরী করা হয়। সাধারণতঃ সরষের খােল ও চালের কুঁড়াে সমহারে (১ঃ১ অনুপাত) মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। প্রত্যহ মাছের খাদ্যের পরিমাণ এমনভাবে নির্দিষ্ট করতে হয় যাতে খাদ্যের পরিমাণের সঙ্গে মাছের বৃদ্ধির একটা সমতা থাকে।
আরও দেখুন - মাছের ২৫ টি রোগ এর লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ ও প্রতিকার ব্যবস্থাপনা
১) খাদ্য শুকনাে অবস্থায় পুকুরের জলের উপরিভাগে ছড়িয়ে দিলে মাছ তা গ্রহণ করে।
২) সরষের খােল এবং চালের কুঁড়া সমপরিমাণে সামান্য জলের সঙ্গে মিশিয়ে গােল গােল ঢেলা করে জলের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় ঝুড়ি বা অন্য কোন ট্রেতে রেখে পরিবেশন করা যায়। এই ঝুড়ি যাতে জলের মধ্যে স্থানচ্যুত না হয় তাই ঝুড়িকে একটি দড়ির সঙ্গে বেঁধে পুকুর পাড়ের কোন খুঁটির। সঙ্গে আটকে রাখতে হয়। খাদ্য দেওয়ার এক থেকে দু'ঘন্টা পরে এই ঝুড়ি তুলে পরিবেশন করা খাদ্য কি পরিমাণে মাছ গ্রহণ করে তা অনুমান করা যায় এবং সেইমত খাদ্য কমানাে বা বাড়ানাে যায়। প্রতিদিনের মােট খাদ্যের অর্ধাংশ সকালে এবং বাকী অর্ধাংশ বিকালে প্রয়ােগ করলে ভালাে ফল পাওয়া যায়। একটি। এক বিঘা পুকুরে এরকম ৩-৪টি ঝুড়িতে করে প্রতি সময়ের খাদ্যকে সমপরিমাণে ভাগ করে করে প্রয়ােগ। করতে হয়।
উদাহরণ স্বরূপ যদি দেখা হয় - একটি পুকুরে ২০০০টি ২৫ গ্রাম ওজনের চারাপােনা ছাড়লে পুকুরে মোট মাছের ওজন হবে
মাছের মোট সংখ্যা X একটি মাছের ওজন
অর্থাৎ ২০০০ X ২৫ = ৫০০০ গ্রাম = ৫০ কিলােগ্রাম মাছের দেহের ওজনের ৩ শতাংশ হারে খাদ্য দিলে মাছ ছাড়ার প্রথম দিন থেকে যে পরিমান খাদ্য দিতে হবে
ধরাযাক প্রতিদিন ১০০ গ্রাম মাছের জন্য ৩ গ্রাম খাদ্য দিতে হয়
১ " " " " " " " " " " " " ৩÷ ১০০
৫০০০ গ্রাম ,,,, , ,, , ,,,,,,,,,,,,,,,,,,, (৩÷ ১০০) ×৫০০০
= তাহলে দের কেজি খাদ্য প্রতিদিন দিতে হবে।
৯ মাস পরে যদি মাছের ওজন গড়ে ৮০০ গ্রাম হয় তখন ২০০০টি মাছের জন্য পুকুরে মোট মাছের ওজন হবে
মাছের মোট সংখা x একটি মাছের ওজন।
২০০০ X ৮০০ = ১৬০০০০০ গ্রাম = ১৬০০ কেজি
মাছের দেহ ওজনের ১.২ শতাংশ হারে খাদ্য দিলে প্রতিদিন খাদ্য দিতে হবে
ধরাযাক প্রতিদিন ১০০ গ্রাম মাছের জন্য ১.২ গ্রাম খাদ্য দিতে হয় ।
তবে ১ ,গ্রাম , , , , , , ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,১.২÷১০০
১৬০০০০ গ্রাম , , , , ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,(১.২ ÷১০০)× ১৬০০০০
= ১৯ কেজি ২০০ গ্রাম খাদ্য প্রতিদিন দিতে হবে।
এতেই বোঝা যাচ্ছে যে মাছ যত বাড়ছে প্রতিদিন খাদ্যের শতকরা পরিমাণ মাছের দেহ ওজনের সঙ্গে কমতে থাকছে অথচ মােট খাদ্যের পরিমাণ বাড়ছে।
এই হিসেবে অনুযায়ী ১ বিঘা পুকুরে যদি ১০০০ পোনা ২৫ গ্রাম ওজনের এক একটি হয় তবে দৈনিক ৩ শতাংশ হরে ৭৫০ গ্রাম এবং ৯ মাস পরে দৈনিক ১.২ শতাংশ হরে ৯ কেজি ৬০০ গ্রাম খাদ্য দিতে হবে।
গ্রাসকার্পের জন্য নরম জলজ উদ্ভিদ যেমন উলফিয়া, লেমনা, হাইড্রিলা এমনকি কচুরীপানা, কপিরপাতা, ঘাস ইত্যাদি খাদ্য হিসাবে নেওয়া হয়। গ্রাসকার্পের যা ওজন তার সমপরিমাণ ওজনের খাদ্য প্রতিদিন দিতে হয়। যদি একটি পুকুরে ১০০ গ্রাম ওজনের ১০০টি গ্রাসকার্প থাকে তবে গ্রাসকারে মােট ওজন হবে ১০ কেজি এবং প্রত্যহ ১০ কেজি করে খাদ্য দিতে হবে। পুকুরে যদি জলজ উদ্ভিদ কিছু থাকে তাহলে খাদ্যের পরিমাণ কমানাে যেতে পারে। কোন ঝুড়ি বা ট্রেতে করে খাদ্য পরিবেশন করা দরকার। মনে রাখা দরকার পুকুরে অন্যান্য মাছের জন্য যে পরিপূরক খাদ্য পরিবেশন করা হয় তার একঘন্টা আগে গ্রাসকার্পকে খাদ্য দিতে হয়।
তথ্যসূত্র -পশ্চিমবঙ্গ সরকার মৎস্যবিভাগ।
আরও দেখুন
- Ornamental fish রঙিন মাছের নাম ,ছবি ,চাষ ,খাবার ও রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি -2022
- কার্প মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতি ও পরিচর্যা
- কার্প ফিশ/মাছ ফ্যাটেনিং কৌশল
- পুকুরে দেশি মাগুর মাছের চাষ
- মাছ সংরক্ষণ কৌশল
- শোল মাছের উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য
- শোল মাছের চাষ ও প্রজনন প্রযুক্তি -পুকুরে/ট্যাঙ্কে
- পাবদা মাছের চাষ ও প্রজনন
- মুক্তা চাষ পদ্ধতি । সরকারিভাবে মুক্তা চাষের প্রশিক্ষণের জন্যে আবেদন-
- মাছ ও হাঁসের যৌথ খামার তৈরী পদ্ধতি
- পুকুরের জল বাদামি রং ,সবুজ রং ,দুর্গন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি -