পুকুরে খাদ্য তৈরি পদ্ধতি -
আমাদের অনেকেরই অজানা যে
মাছের বৃদ্ধির
জন্য পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যকণা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা দরকার। এই সমস্ত প্রাকৃতিক
খাদ্যকণা অর্থাৎ উদ্ভিদকণা ও প্রাণীকণার বেঁচে থাকার জন্য এদেরও ঋদ্য সরকার।
বিভিন্ন প্রকার জৈব ও অজৈব সার প্রাকৃতিক খাদ্যকণার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য
প্রয়ােজনীর পুষ্টি সরবরাহ করে। তাই জমিতে ভালাে ফলন পেতে হলে যেমন সার প্রয়োগ
করতে হয়, তেমনি মাছের জন্য
ভালো পেতে হলে। পুকুরেও নির্দিষ্ট পরিমাণে সার প্রয়োগে করতে
হবে। পুকুরে সাধারণতঃ অজৈব সার বা রাসায়নিক সার এবং জৈব সার ব্যবহারকরাহয়।
অজৈব সার
কি ? কিভাবে ব্যাবহার করবেন -
পুকরে ফসফেট ঘটিত ও নাইট্রোজেন ঘটিত সার প্রয়োগে করা হয়। পটাশিয়াময়ও সার সাধারণতঃ পুকুরে
ব্যবহার করা হয় না। নাইট্রোজেনযুক্ত সারের মধ্যে ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়াম সালফেট এবং ফসফেটযুক্ত সারের মধ্যে
সিঙ্গেল সুপার ফসফেটের ব্যবহার বেশ। যে সমস্ত অজৈব সার পরে ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে
ফসফেটযুক্ত সারের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশ। কারণ উদ্ভিদকণার বৃদ্ধিতে এই ফসফেট জাতীয়
সার একান্ত দরকার। জলে ফসফেট ব্যবহার করলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে। উদ্ভিদকণা
তা শোষণ করে নিয়ে
নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। তবে এই ফসফেট জাতীয় বারের সঙ্গে নাইট্রোজেন জাতীয়
সার একসঙ্গে ব্যবহার করলে আরো বেশীসুফল পাওয়া যায়।
পুকুরে অজৈব সার কি ? ফাইটো
প্লাংকটন তৈরি পদ্ধতি-
নাইট্রোজেন জাতীয় সার সহজে জলে দ্রবীভূত হয় স্কিসকেট জাতীয়
সারের প্রধান সমস্যা হল এরা সহজে জলে দ্রবীভূত
হয় না। তাই জলে শুকনো অবস্থায় সার প্রয়োগে করা উচিত নয়। শুকনো অবস্থায় সার প্রয়োগে করলে
এরা পুকুরের জলে ভালোভাবে মেশার আগেই
মাটির তলায় সঞ্চিত হয় এবং মাটির দ্বারা শোষিত হয়। ফলে উদ্ভিদকণা
বা ফাইটোপ্লাংকটন এই সারকে শোষণ করে নিজেদের
পুষ্টি সাধন করতে পারে না। সেইজন্য ফসফেট সারকে প্রয়োগে এর ৩-৪ ঘন্টা আগে
জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর সকাল ৮-১০টার মধ্যে একটি বড় পাত্রে ইউরিয়া বা অন্য
কোন নাইট্রোজেন ঘটিত সারের সঙ্গে এই ফসফেটের জলীয় দ্রবণ মিশ্রিত করে আরও বেশী জল দিয়ে একদম পাতলা দ্রবণ তৈরী করে
পুকুরে ছড়িয়ে দিতে হয়।
আরও দেখুন - কার্প মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতি ও পরিচর্যা
পুকুরে অজৈব সারের প্রয়োগে এর মাত্রা
কি হবে
পুকুরে অজৈব সার কতটা পরিমাণে ব্যবহার ব্রা
যাবে তা নির্ভর করে পুকুরের জল ও মাটির প্রকৃতির উপর। পুকুরের জল ও মাটির প্রকৃতি
বিভিন্ন করে বিভিন্ন রকম হয়। তাই সৰ পুকুরে এই মাত্রায় সার প্রয়োগে করা যায় না। পুকুরে উদ্ভিদকণার প্রাচুর্যতার
পরিমাণ নির্ণয় করে সার প্রয়োগে করা উচিত। সারের প্রয়োজনীয়তা কতটা তা সেচি ডিস্কের দৃশ্যতার মাধ্যমে
নির্ণয় করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ
১) যদি সেচি ডিস্ক দৃশ্যতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটারের মধ্যে হয়
তবে পুকুরে সাধারণতঃ সার প্রয়োগে
এর দরকার হয় না। তবে এই দৃশ্যতাবজায়
রাখার জন্য মাসে একবার সার প্রয়োগে ভাল।
২) যদি সেচি ডিস্ক দৃশ্যতা ৪০ সেন্টিমিটারের উপরে চলে যায়
তবে ১৫ দিনে একবার করে সার প্রয়োগে করা দরকার।
৩) যদি সেচি ডিস্ক দৃশ্যতা ৬০ সেন্টিমিটারের উপরে চলে যায়
তবে সপ্তাহে অন্তত একবার করে কম মাত্রায় সার প্রয়োগে করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্তনা সেচি ডিস্ক দৃশ্যতা
৩০-৪০ সেন্টিমিটার হচ্ছে।
৪) যদি সেচি ডিস্ক দৃশ্যতা ৩০ সেন্টিমিটারর কম হতে তাকে তবে
পুকুরে সার একদম প্রয়োগে করা উচিত নয়, কারণ এতে শৈবাল
আধিক্য হয়ে পুকুরে অকসিজেনের সমস্যা হতে পারে। |
এছাড়া সেচি ডিস্ক দৃশ্যতার দ্বারা বোঝা যাবে পুকুরে সার প্রয়োগে ফলপ্রসু হয়েছে কি না। সার দেওয়ার কয়েকদিন
পর যদি দেখা যায় সেচি ডিস্ক দৃশ্যতার পরিমাণ কমে গেছে তবে বুঝতে হবে সারে কাজ
হয়েছে। আর যদি দেখা যায় সেচি ডিস্ক দৃশ্যতার পরিমাণের কোন পরিবর্তন হয়নি বা
দৃশ্যতা আরও বেড়ে গেছে তবে বুঝতে হবে সার প্রয়োগ কার্যকরী হয়নি। ধরে নিতে হবে এই সার প্রয়োগে ফলপ্রসু না হওয়ার জন্য পুকুরের জল ও মাটির
রাসায়নিকগুণগুলি দায়ী এবং সেইমত প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নিতে। হবে।বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা
করে দেখা গেছে প্রতি লিটার জলে ০.২-০.৫ মিলিগ্রাম (০.২-০.৫ পি পি। এম) অজৈব সার প্রয়োগে করলে উদ্ভিদকণা ভাল মত জন্মায়।
আরও দেখুন -কার্প ফিশ ফ্যাটেনিং কৌশল
পুকুরে অজৈব সার প্রয়োগে
কয়েকটি বিধি নিষেধ
১) কাদাযুক্ত বা পলিকণাযুক্ত ঘোলাটে জলে অজৈব সার ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়
না।মণ জল ঘোলা হওয়ার ফলে
সর্যালোক জলে ভালো মত প্রবেশ করতে না পারার জন্য উদ্ভিদ সারের পুষ্টি উপাদান
গ্রহণের জন্য সক্রিয় থাকেনা। ২) পুকুরে জলজ উদ্ভিদ থাকলে তাদের নির্মূল করে তবে
পুকুরে সার প্রয়োগে করতে হবে। তা
নাহলে। উদ্ভিদকণার পরিবর্তে এই সমস্ত জলজ উদ্ভিদ সারের পুষ্টি উপাদান শোষণ করে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে পুকুরে মাছ
চাষে অসুবিধা সৃষ্টি করবে। ৩) পুকুরের জল ঘন সবুজ হয়ে গেলে অর্থাৎ শৈবাল আধিক্য
হলে অজৈব সার একদম প্রয়োগে করা উচিত নয়।
৪) সূর্যা লোকের অনুপস্থিতিতে
যেহেতু উদ্ভিদকণারা শারীর বৃত্তীয় কাজের জন্য বিশেষ সক্রিয় থাকে।
সেইজন্য মেঘলা দিনে কিংবা সূর্য ওঠার আগে পুকুরে সার প্রয়োগে করতে নেই। ৫) পুকুরের গভীর অংশে সার প্রয়োগে করা উচিত নয় কারণ পুকুরের এই অংশে নীচের
স্তরে। সূর্যালোক প্রবেশ করতে না পারার জন্য উদ্ভিদকণারা সার থেকে
পুষ্টি উপাদান শোষণ করার জন্য সক্রিয়
থাকে না। পুকুরে সূর্যালালোক মোটামুটি প্রবেশ করে এরকম গভীর অংশে জলের ঢেউয়ের অনুকূলে
সার প্রয়োগে করতে পারলে ভাল ফল হয়। ধরা যাক, কোন পুকুরে উত্তরদিক থেকে দক্ষিণ দিকে হাওয়া
বইছে এবং জলের ঢেউ উত্তর থেকে দক্ষিণে যাচ্ছে তাহলে যে মাত্রায় সার প্রয়োগে করা হবে তার ৩০ শতাংশ উত্তর দিকে এবং বাকী ৭০
শতাংশ দক্ষিণ দিকে ঢেউযুক্ত অঞ্চলে প্রয়োগে করতে হয়। এর
কারণ উদ্ভিদকণার নিজস্ব কোন গমন অঙ্গ নেই। জলের ঢেউ যেদিকে যায় এদের গতিও সেদিকে
হয়। তাই উত্তর অপেক্ষা দক্ষিণ দিকের অঞ্চলে উদ্ভিদকণার পরিমাণ বেশী হবে এবং
স্বাভাবিকভাবেই এই অংশে বেশী মাত্রায় সার প্রয়ােগ করা দরকার। যদি পুকুরের জল
স্থির থাকে অর্থাৎ হাওয়া না থাকে তবে পুকুরের সর্বত্র সমানভাবে সার প্রয়োগ করা দরকার। ৬) পুকুরের মাটি অঞ্চ এবং মােট
অ্যালকালিনিটি প্রতি লিটার জলে ২০ মিলিগ্রামের কম হলে সার প্রয়োগে করলে জলে সারের সুফল আসবে না। সারের উপকারিতা
পেতে হলে আগে চন প্রয়োগে করে। পকরেমাটির
পি এইচ ও মোট অ্যালকালিনিটির পরিমাণ বাড়িয়ে নিয়ে সার প্ প্রয়োগে করতে হবে। ৭) নাইট্রোজেন যুক্ত সার বিশেষ করে
অ্যামোনিয়া সালফেট
বেশী ব্যবহার করলে জল অম্ন হয়। তাই মাঝে মাঝে পুকুরে চুন প্রয়োগে করে জলের অম্লভাব দূর করতে হয়। ৮) পুকুরের
ফসফেট জাতীয় সার ও চুন কখনও একসঙ্গে ব্যবহার
করা উচিত নয় কারণ - ফসফেটকে পুকুরের তলাকার মাটিতে অধঃক্ষিপ্ত করে দেবে।
যে সব সার উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে উৎপন্ন করা হয় তাদের জৈব
সার বলে। এই জৈব " অনেকগুলি পুষ্টি উপাদান দিয়ে গঠিত। জৈব সারের উপকারিতা হল
১) মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য জু প্লাংকটন বা প্রাণীকণা
বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। , এই সার ধীরে ধীরে
ও দীর্ঘ সময় ধরে বিয়ােজিত হয় ও জলে পষ্টি উপাদান।
২) এই সার
ধীরে ধীরে ও দীর্ঘ সময় ধরে বিয়জিত হয় ও জলে পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধি করে, ফলে পুকুর
অনেকদিন উর্বর থাকে।
৩) এরা অজৈব সারের কার্যে সহায়তা করে।
আরও দেখুন-মিশ্র মাছ চাষে পুকুরে পোনা মজুত আদর্শ পদ্ধতি এবং নিয়মিত খাদ্য দেওয়ার পদ্ধতি এবং পরিমান
জৈব সারের প্রকারভেদ এবং জু প্লাংকটন
তৈরির পদ্ধতি
জৈব সারকে দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
১) উদ্ভিজ্জ জৈব সার এই সমস্ত সার উদ্ভিদ বা উদ্ভিজাত পদার্থ থেকে
উৎপন্ন হয়। যেমন- সবুজ সার, কম্পোস্ট সার, খল লজাতীয় সার ইত্যাদি।
২) প্রাণীজ জৈব সার এই সমস্ত সার প্রাণী বা প্রাণীজাত পদার্থ থেকে
তৈরী হয়। যেমন গোবর , পলি সার, শুকরের বর্জ্য
পদার্থ ইত্যাদি। *
মাছ
চাষে ব্যবহৃত কয়েকটি উল্লেখ যোগ্য জৈব
সারের ব্যবহার ও প্রয়োগে
পদ্ধতিঃ
১) সবুজ সার সবুজ সার সাধারণতঃ নার্শারী বা আঁতুর পুকুরে ব্যবহার করা হয়। নার্শারী পুকুরে ডিমপােনা ছাড়ার আগে পুকুরের শুকনাে মাটিতে ধঞ্চে, মটর প্রভৃতি গাছ চাষ করা হয়। গাছগুলি বড় হলে গাছগুলিকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুকুরে জল ভর্তি হয়ে গেলে এই গাছ পচে সবুজ সার সৃষ্টি করে। এই রকম সারে পুকুরে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ফলে ডিমপোনা থেকে ধানী পনার উৎপাদন ভাল হয়।।
২)কম্পোস্ট সার
গোবরএর সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার জলজ উদ্ভিদ, ঘাস, পাতা প্রভৃতি একটা গর্তের মধ্যে পচিয়ে এই সার তৈরী করা হয়। এই রকম একটি ১০০ কেজি কম্পোস্ট সার তৈরীর উপাদানগুলি
ক্র,নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
১ | গোবর | ২৫ কেজি |
২ | সরষের খোলে | ৫ কেজি |
৩ | কচুরীপানার ছাই | ২৫ কেজি |
৪ | ঝাউ ঝাঝি | ১০ কেজি |
5 | পুকুরের নীচের পাক | ১৫ কেজি |
| মোট | ১০০ কেজি |
জলাশয়ের পাড়ে সুবিধামত জায়গায় গর্তকরে বা চৌবাচ্চা তৈরী
করে এই উপাদানগুলো কে মিশিয়ে রাখতে
হবে। এবার গর্তের মুখ ভাল করে ঢেকে দিতে
হবে যাতে সূর্যালোক প্রবেশ করতে না
পারে। এভাবে ৩০ দিন রাখার পর গর্তটিকে জল ভর্তি করে ঘেঁটে দিয়ে আবার মুখ বন্ধ করে
রাখতে হবে। ৩-৪ দিন পর সেই সার - জল পুকুরে দেওয়া যাবে। একই জায়গায় একইভাবে
আবার জল ভর্তি করে, মুখ বন্ধ রেখে
৩-৪ দিন বাদে সার-জল আবার সংগ্রহ করা যেতে পারে। এই ধরনের কম্পােস্ট সার হেকটর
প্রতি ৬০০-১০০০ কেজি প্রয়ােগ করা যেতে পারে। তবে এই সার একসঙ্গে বেশী ব্যবহার করা
উ পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্যকণার পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রয়ােগ করা উচিত। এছাড়া এই
সার পুকুরের পি এইচ মান কম করে দেয়, তাই সার প্রয়োগের ৩-৪
দিন পর পুকুরের পি এইচ মান দেখে পরিমাণ মত চুন প্রয়ােগ করতে হয়। ৩)খোল জাতীয় সার ও উদ্ভিজ্জ সারের মধ্যে খােলজাতীয়
সারের ব্যবহার সর্বাধিক। সরষে, বাদাম, মহুয়া, তিল প্রভৃতি পেষাই করে তেল বার করে নেওয়ার পর যে অবশিষ্ট অংশ পাওয়া যায় তাকে খৈল বা খোল বলে । এই সমস্ত খোলের মধ্যে নাইট্রোজেন ফসফেট ও পটাশ জাতায় রাসায়নিক উপাদান থাকে। সাধারণতঃ সরষের
খোলে ও মহুয়া খোলের ব্যবহার সর্বাধিক।
সরষে খোলের ব্যবহার
সরষে খোলকে পুকুরে সার হিসাবে এবং মাছের পরিপূরক খাদ্য
হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সার
হিসাবে ব্যবহার করলে জলে ভিজিয়ে নরম করে গোবরএর সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করা
হয়। মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করলে সরষে খোলে গুড়ো করে পুকুরের জলে সরাসরি ছড়িয়ে দিতে হয় অথবা
চালের কঁড়োর সঙ্গে মিশিয়ে পুকুরে প্রয়োগ করতে হয়।
গোবর
দিয়ে খাদ্য
তৈরি পুকুরে
গোবর জাতীয় সার পুকুরে দিলে, গোবর জীবানুর সাহায্যে পচে তার মধ্যে থাকা
নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ
উপাদানগুলি মুক্ত হয়ে জলের উর্বরতা বাড়ায়, ফলে জলে প্রাণীকণার উৎপাদন বাড়ে।
পুকুরে গোবর ব্যবহারের
পদ্ধতিঃ ১) কাঁচা গোবর সরাসরি জলে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
২) পুকুরের পাড়ে গর্ত করে গোবর জমিয়ে
তাতে জল মিশিয়ে দিয়ে মাঝে মাঝে তরল গোবর পুকুরে দেওয়া
যেতে পারে।
৩) আর একটি ভালো পদ্ধতি হলো পুকুরের তিন-চার জায়গায় বাঁশের বেড়া দিয়ে অল্প জায়গা।
ঘিরে গোবর জমা করলে আস্তে
আস্তে তা পুকুরের জলে মিশে যাবে
জৈব সার প্রয়োগ সতর্কতা। জৈব সার বিশেষ করে প্রাণীজ জৈব সার পুকুরে একসঙ্গে ব্যবহার করা উচিত নয়। তার কারণ জৈব সার পচনের জন্য প্রচুর পরিমাণে অকসিজেনের দরকার হয়, ফলে পরে অকসিজেনের সমস্যা হতে। পারে। এছাড়া পুকুরে প্রাণীজ জৈব সার বিশেষ করে কাঁচা গােবর ব্যবহার করলে প্রচুর পরিমাণে। ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে পরবর্তীকালে যাহা মাছের রােগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আরও দেখুন - পুকুরে মাছ ভাসার সম্ভাব্য কারন কি? এবং করনীয় কি ?
মহুয়া খোল প্রয়োগে দুটি
উপকার হয়- “প্রথমে বিষ পরে সার ” অর্থাৎ মহুয়া খোল প্রথমে বিষরূপে অবাঞ্ছিত মাছদের নিধন করে এবং
পরে সার রূপে কাজ করে পুকুরের উৎপাদন শক্তি বাড়িয়ে তোলে । আগেকার মাছ নষ্ট করে নতুন করে পুকুরের মাছ ছাড়া
হবে এরকম পুকুরে মহুয়া খোল ব্যবহার করা
হয়। পুকুরে রাক্ষুসে মাছ যেমন শাল, সৌল, বোয়াল , চিতল, ফলুই প্রভৃতি মাছ এবং ব্যাঙ, সাপ ইত্যাদি ছোট ছোট চারা পোনা খেয়ে ফেলে। এছাড়া মৌরলা, পুটি, দাড়িকা, চ্যালা প্রভৃতি
আমাছা। প্রাকৃতিক খাদ্যকণা ভক্ষণ করে পুকুরে পোনা জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের অভাব ঘটায়।
তাই এদের মারার জন্য মহুয়া খোল ব্যবহার করা
হয়। এই খোলে স্যাপোনিন নামক একধরনের উপক্ষার থাকে যা জলে দ্রবীভূত হয় এবং ফুলকা ও মুখ বিবরের
মাধ্যমে মাছ, সাপ, ব্যাঙ প্রভৃতির
রক্তে প্রবেশ করে রক্তের লোহিত
রক্তকণাগুলিকে ধ্বংস করে,
ফলে মাছ, সাপ, ব্যাঙ প্রভৃতির
মৃত্যু হয়। এরপর মহুয়া খোল জলে পচতে থাকে
এবং পুকুরের জলে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে মাছের সরবরাহ করে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যকণা
জুপ্লাংকটনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে অর্থাৎসাররূপে কাজ করে।
পুকুৱে মহুয়া খোল প্রয়োগ এর পরিমাণ নির্ধারন
পুকুরে ২৫০ পি পি এম হারে মহুয়া খােল প্রয়ােগ করলে
অবাঞ্ছিত মাছ মারা যাবে। এই ২৫০ পি পি এম কথার অর্থ হল প্রতি লিটার জলে ২৫০ মিলিগ্রাম
মহুয়া খোল ব্যবহার করলে
সুফল পাওয়া যাবে। তাই মহুয়া খোল
প্রয়োগের আগে মাছ চাষীকে
জানতে হবে ঐ পুকুরে কত পরিমাণ জল আছে। পুকুরে। জলের পরিমাণ না জানলে মহুয়া খোল প্রয়োগ পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এরজন্য
পুকুরের আয়তন ও জলের গভীরতা নির্ণয় করতে হবে। পুকুরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও জলের
গভীরতা মিটারে প্রকাশ করে। কিউবিক মিটার নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু এক কিউবিক মিটার
সমান এক হাজার লিটার জল, তাই একহাজার লিটার
জলে ২৫০ গ্রাম বা ০.২৫ কিলো গ্রাম মহুয়া খোল দরকার। ধরা যাক, একটি পুকুরে দৈর্ঘ্য ৫০মিটার, প্রস্থ ৪০ মিটার
এবং পুকুরে জলের গভীরতা এক মিটার। এই পুকরের আয়তন হবে
দৈর্ঘ্য x প্রস্থ। অর্থাৎ ৫০ মিটার X ৪০ মিটার = ২০০০
বর্গ মিটার। এই ২০০০ বর্গ মিটার আয়তন পুকুরে জলের পরিমাণ হবে
পুকুরের আয়তন x পুকুরের জলের গভীরতা। অর্থাৎ ২০০০ বর্গমিটার X১ মিটার = ২০০০
কিউবিক মিটার।
আমরা জানি ১ কিউবিক মিটার = ১০০০ লিটার বা ১০০০ কিউবিক
মিটার = ২০০০ X ১০০০ = ২০০০০০০
লিটার।
অর্থাৎ পুকুরে ২০০০০০০ লিটার জল আছে।।
যদি পুকুরে ২৫০ পি পি এম মহুয়া খোল দরকার তবে প্রতি লিটার জলে ২৫০ মিলিগ্রাম
মহুয়া খোল প্রয়োগ করতে
হবে।
পুকুরে ২০০০০০০ লিটার জল থাকার জন্য মহুয়া খােলের পরিমাণ
হবে২০০০০০০ X ২৫০ = ৫০০০০০০০০
মিলিগ্রাম =৫০০০০০ গ্রাম =৫০০ কিলােগ্রাম।
পুকুৱে মহুয়া খোল ব্যবহারের
পদ্ধতিঃ
মহুয়া খোলের বেশীর ভাগ অংশ
কেক অবস্থায় থাকে। এরা সহজে জলে দ্রবীভূত হয় না। তাই সরাসরি কেক অবস্থায় মহুয়া
খোল পুকুরে প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায় না। পুকুরে কতটা পরিমাণ
মহুয়া খেল লাগবে তা নির্ণয় করে বস্তা সমেত মহুয়া খোল কে প্রয়োগ আগের দিন সন্ধ্যাবেলা পুকুরের জলে ভাসিয়ে
দিতে হবে। এর ফলে মহুয়া খোলের কেকগুলো জল শোষণ করে
নরম হয় এবং চাপে গুড়ো হয়ে যাবে। পরের দিন রোদ উঠলে বস্তা গোল খুলে গুড়ো মহুয়া খোল পুকুরের সর্বত্র
সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হয়। অল্প সময় পরে মাছ গুলোকে জলের উপরে খাবি খেতে থাকবে এবং সেই সময় এদের
জাল দিয়ে তুলে নিতে হবে। মহুয়া খেল দেবার কিছুদিন পর্যন্ত জল বিবর্ণ থাকবে এবং
পি এইচ ও দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম হয়ে
যাবে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে মহুয়া খোলের বিষক্রিয়া নষ্ট
হয়ে যাবে এবং জলের রঙ বাদামী বা কালচে বাদামী হয়ে পড়লে বুঝতে হবে পুকুরে
প্রাকৃতিক খাদ্যকণা জন্মাচ্ছে এবং মাছ ছাড়ার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরী হয়ে গেছে।
তথ্যসূত্র -পশ্চিমবঙ্গ সরকার মৎস্যবিভাগ।
আরও দেখুন-
- পাবদা মাছের চাষ ও প্রজনন
- কিভাবে বায়োফ্লক মাছ চাষ হয় ? বায়োফ্লক মাছ চাষ সরকরি ঋণের আবেদন পদ্ধতি। বায়োফ্লক মাছ চাষে সরকার ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে।
- মুক্তা চাষ পদ্ধতি । সরকারিভাবে মুক্তা চাষের প্রশিক্ষণের জন্যে আবেদন-
- মাছ চাষে পুকুরে চুন প্রয়োগের সঠিক পদ্ধতি ? কোন চুন কিভাবে কখন কতটা ব্যাবহার করলে মাছের ওজন ভাল হবে?
- পুকুরের জল বাদামি রং ,সবুজ রং ,দুর্গন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি -
- মাছ ও হাঁসের যৌথ খামার তৈরী পদ্ধতি
- পুকুরে মাছ চাষে প্রাকৃতিক খাদ্য এবং পরিপূরক খাদ্য তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতি
- শোল মাছের চাষ ও প্রজনন প্রযুক্তি -পুকুরে/ট্যাঙ্কে
- শোল মাছের উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য