মাছ চাষে পুকুরে চুন প্রয়োগের সঠিক পদ্ধতি ? কোন চুন কিভাবে কখন কতটা ব্যাবহার করলে মাছের ওজন ভাল হবে?

Didibhai Agrofarm
0
পুকুরে সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি পদ্ধতি ,, জু  প্লাংকটন,ফাইটো প্লাংকটন  তৈরি পদ্ধতি

পুকুরে চুন ও সারের ব্যবহার কেন করব ?

মাছ চাষের পুকুরে মাছের ভাল ফলন পেতে হলে প্রাকৃতিক খাদ্য উদ্ভিদকণা কাল উদ্ভিদকণার জন্ম ও বুদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে মাটিতে আবদ্ধ অবস্থায় থাকা বিভিন্ন প্রকার পষ্টি পুষ্টি উপাদানগুলাকে ব্যবহারযোগ্য  করার জন্য চুন ও সার প্রয়োগ করতে হয়।

পুকুরে চুনের ব্যবহার কিভাবে করতে হবে

মাছ চাষে চুনের মত এরকম উপকারী দ্বিতীয় আর কোন পদার্থ নেই। চুনের প্রধান কাজ হল। পুকুরের তলাকার মাটি ও জলের অভাব দূর করা। চুনের অন্যান্য গুণগুলাে হল

১) মাছের বৃদ্ধির জন্য পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা দরকার। এই প্রাকৃতিক খাদ্যের পুষ্টির জন্য নাইট্রোজেন দরকার। চুন পুকুরের জৈব পদার্থের পচনক্রিয়া দ্রুততর করে পুকুরে। ব্যবহারযােগ্য নাইট্রোজেনর পরিমাণ বাড়িয়ে তােলে, ফলে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যপ্ত পরিমাণে জন্মায়।।

 ২) পুকুরে ফাইটোপ্লাংকটন বা উদ্ভিদকণার বৃদ্ধির জন্য ব্যবহারযােগ্য ফসফেট দরকার। ফসফেটের এই ব্যবহার যােগ্যতা মাটির পি এইচের মানের উপর নির্ভর করে। মাটির পি এইচ মাত্রা ৬.৫-৭.৫ এর মধ্যে থাকলে পুকুরে ব্যবহারযােগ্য ফসফেট ভালাে পরিমাণে পাওয়া যায়। কিন্তু মাটির পি এইচ মান ৬.৫ এর কম হলে অর্থাৎ মাটি খুব অল্প হলে, ফসফেট লােহা ও অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে আবদ্ধ থাকে এবং এই ফসফেটকে উদ্ভিদকণা ব্যবহার করতে পারে না। চুন প্রয়ােগ করলে মাটির অম্লভাব দূর হয় ফলে ফসফেট। আবদ্ধঅবস্থা থেকে মুক্ত হয় এবং উদ্ভিদকণা ফসফেটকে ব্যবহার করতে পারে। তাই মাছ চাষের পুকুরে সারের সুফল পেতে হলে সার প্রয়ােগের আগে পুকুরে চুন প্রয়ােগ করে মাটির অম্লভাব দূর করে নিতে হয়। 

৩) দিনেরবেলা পুকুরে জলের পি এইচ মানের ওঠা নামা পুকুরের মােট অ্যালকালিনিটির মানের উপর নির্ভর করে। পুকুরে অ্যালকানিটির পরিমাণ কুব কম হলে সকালবেলার পি এইচ এবং বিকালবেলার পি এইচ মানের পার্থক্য খুব বেশী পরিমাণে হয়, যা মাছ চাষের পক্ষে ক্ষতিকারক। চুন ব্যবহারের ফলে পুকুরে অ্যালকালিনিটির পরিমাণ বাড়ে এবং এই চুন পুকুরে বাফার হিসাবে কাজ করে। ফলে পুকুরের। জলের সকাল ও বিকাল বেলার পি এইচ মানের খুব বেশী পার্থক্য হয় না এবং পুকুরে মাছ চাষের পথে। অনুকুল পরিবেশ বজায় থাকে। 

৪) চুনে ক্যালসিয়াম থাকে তাই চুন প্রয়ােগে পুকুরে ক্যালসিয়াম বাড়ে, ফলে পুকুরের উৎপাদনশাত। বাড়ে।।

 ৫) চুন তার অতিক্ষারকীয় বৈশিষ্ট্য দ্বারা মাছের কয়েকটি রোগের  নিরাময় করতে সাহায্য করে। 

৬) চুন জলের ঘােলাটে ভাবকে দূর করে জলের ভৌত অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে পরােক্ষ ভাবে জলে। অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। 

৭) চুন পুকুরে বিষাক্ত গ্যাস নষ্ট করে।

 আরও দেখুন -মিশ্র মাছ চাষে পুকুরে পোনা মজুত আদর্শ পদ্ধতি এবং নিয়মিত খাদ্য দেওয়ার পদ্ধতি এবং পরিমান

পুকুৱে ব্যবহৃত চুনের পরিমাণ কতটা হবে

পুকুরে চুন কতটা দরকার তা জল ও মাটির পি এইচ ক্রম দেখে নির্ধারিত করা উচিত। পুকুরের তলাকার মাটি ও জল যত বেশী অম্ন হবে চুনের পরিমাণ তত বেশী হবে। পুকুরের পি এইচ প্রায় প্রশম হলে চুন খুব কম পরিমাণে ব্যবহার করা হয়।

 চুন প্রয়োগের পরিমাণ বিভিন্ন প্রকার মাটিতে নিম্নরূপ –

মাটির      পি এইচ

মাটির         পি এইচ

 

চুন প্রয়োগের মাত্রা(প্রতি  হেক্টর /বৎসর)

৪.০- ৫.০

অতি অম্লীয়

২০০০ কেজি

৫.১-৬.১

অল্প অম্লীয়

১০০০ কেজি

৬.৬ -৭.৫

প্রায় প্রশমিত

৫০০ কেজি

৭.৮-৮.৫

অল্প অম্লীয়

২০০ কেজি

৮.৬ বা তার বেশি

অতি ক্ষারীয়

 

চুন প্রয়োগের দরকার নেই


আরও দেখুন  -  

মাছ চাষে পি এইচ (PH ) এর গুরুত্ব। জলে Ph এর গুরুত্ব ও ব্যবহার 

জেনে নেওয়া যাক চুনের প্রকারভেদ ও কার্যকারিতা কিভাবে কাজ করে --

১।চুনের নাম - ক্যালসিয়াম অকসাইড বা কুইক লাইম বা পাথুরে চুন রাসায়নিক সংকেত : CAO

প্রকৃতি- অম্লত্ব প্রশমিত করার ক্ষমতা খুব বেশী অর্থাৎ জল ও মাটির পি এইচ খুব | সেইসমস্ত পুকুরে এই চুন ব্যবহার করলে খুব কুইক লাইম তাড়াতাড়ি বাড়িয়ে তোলে  জলে মেশালে তাপ উৎপন্ন হয়

কার্যকারিতা -যে সমস্ত পুকুরের মাটি ও জল খুব অম্লযুক্ত | সেইসমস্ত পুকুরে এই চুন ব্যবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাওয়া যায়।মাছ রোগাক্রান্ত হলে এই চুন ব্যবহার করা হয়।

.২।চুনের নাম - ক্যালসিয়াম হাইড্রকসাইড বা হাইড্রেটেড লাইম বা কলি চুন রাসায়নিক সংকেতঃ Ca(OH)2

প্রকৃতি - অম্লত্ব প্রশমিত করার ক্ষমতা পাথুরে চুন অপেক্ষা খুবই কমজলে মেশালে খুব তাপ উৎপন্ন হয় 

কার্যকারিতা - পুকুরে সাধারণত এর ব্যাবহার খুব কম

৩।চুনের নাম - ক্যালসিয়াম কার্বনেট বা কৃষিকার্যে ব্যবহৃত চুন ,রাসায়নিক সংকেত CaCO3

প্রকৃতি - অম্লত্ব প্রশমিত  করার ক্ষমতা খুবই কম অর্থাৎ জল ও মাটির পি এইচ হঠাৎ করে বাড়িয়ে তুলতে পারে না।জলের সঙ্গে মেশালে তাপ উৎপন্ন হয় না

কার্যকারিতা.- যদিও এই চুন কৃষিকার্যে বেশি ব্যবহৃত হয় তবুও যে সমস্ত পুকুরের জলের পি এইচ ৮ বা ৮ এর উপরে কৃষিকার্যে ব্যবহৃত চুন বাড়িয়ে তুলতে পারে না। উপোরন্তু চুনের অন্যান্য উপকারিতা গুলি পাওয়া যাবে

 আরও দেখুন  -  পুকুরের জল বাদামি রং ,সবুজ রং ,দুর্গন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি -

৪।চুনের নাম- ডলোমাইট রাসায়নিক সংকেতঃ  CaCO3MgCO3

প্রকৃতি - অম্লত্ব প্রশমিত করার ক্ষমতা খুব কম যদিও এই চুনে ক্যালসিয়াম এর সাথে ম্যাগনেসিয়ামও থাকে।

কার্যকারিতা -পুকুরে উদ্ভিদকণার পুষ্টির জন্য কিছু পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম দরকার। এই চুনে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে নেসিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করে উদ্ভিদকণার পুষ্টিতে সাহায্য করে। করে। যদিও মিষ্টি জলে এর ব্যবহার কম তবুও অন্যান্য চুনের সঙ্গে অল্প পরিমাণে ব্যবহার করলে ভাল সুফল পাওয়া যাবে।

বি :দ্র:-হিসেব সুবিধার্থে ১ হেক্টর=২৪৭ শতক এবং ২.৪৭ এর একটু বেশি ,যারা একর এ হিসেব করবেন একর দিয়ে ভাগ করে এবং যারা শতক হিসেব এ বিঘা বের করবেন তারা শতক দিয়ে হেক্টর কে ভাগ দিয়ে চুনের বা পোনার বা খাদ্যের হিসেব বের করে নিতে পারেন 

পুকুরে চুন প্রয়োগের পদ্ধতি

১) মাছ চাষের প্রথম ধাপ পুকুর প্রস্তুতি। তাই বর্ষার আগে শুকনো পুকুরে চুন মাটিতে ছড়িয়ে লাঙ্গল দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে ফেলতে হয়।

২) পুকুরে জল আছে এরকম পুকুরে ক্যালসিয়াম অকসাইড প্রয়োগের ২৪ ঘণ্টা আগে পাত্রে জলে মিশ্রিত করে, ঐ দ্ৰৰণ নৌকা বা বড় কোন পাত্রের সাহায্যে পুকুরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দিতে হবে

পুকুরে চুন  প্রয়োগের সঠিক সময়ঃ

যদি স্থির করেন যে চুন পুকুরে দিবেন তাহলে  খুব সকালের দিকে পুকুরে চুন প্রয়োগ করা উচিত কারণ এই সময় জলের পি এইচ কম থাকে। যত রোদ উঠবে তত পুকুরের উদ্ভিদকণার সালোকবশ্লেষের হার বাড়তে থাকবে এবং সেই সঙ্গে জলের পি এইচ মাত্রাও বাড়তে থাকবে। তাই বিকেলের দিকে চুন প্রয়োগ করলে জলের পি এইচ হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে, যা মাছ চাষের পক্ষে ক্ষতিকর।

পুকরে নিয়মিত নিয়ম মাফিক চুন এর প্রয়োগ করলে রোগ কম হবে এবং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে

তথ্যসূত্র -পশ্চিমবঙ্গ সরকার মৎস্যবিভাগ।  

 আরও দেখুন  -  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)