অমৃত জল বা মিরাক্কেল জৈব তরল সার তৈরী পদ্ধতি

Didibhai Agrofarm
0
অমৃত জল বা মিরাক্কেল তৈরী এবং ব্যবহার পদ্ধতি

জৈব সার বলতে কি বুঝো? জৈব সারের কয়েকটি উদাহরণ

জীবিত উৎস থেকে উৎপণ্য সার কে জৈব সার বলে, আর বিশদভাবে বললে প্রাণীর বিষ্ঠা ও মূত্র বা সরাসরি ভাবে প্রাণী ও উদ্ভিদের শরীর বা শরীরের অংশ থেকে যে সার তৈরি হয় তাকে জৈব সার বলে যেগুলিকে বিভিন্ন মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করে বিভিন্ন নাম দিয়ে থাকি, এর উল্টো দিকে রয়েছে খনিজ পদার্থ থেকে তৈরি কারখানায় রাসায়নিক পদ্ধতিতে তৈরি সার যেমন কিনা বাজারে ইউরিয়া ডিএ পি,পটাশ প্রভৃতি নামে পাওয়া যায় –

জৈব চাষের ধারণা -

আমরা একটি ধারণা নিয়ে চলি যে প্রাচীন কাল থেকে যে জৈব চাষ হত তা শুধু গোবর দিয়ে হত এবং এখনো সেই ভাবে চাষ করতে গেলে গোবর অনেক প্রয়োজন এবং এর জন্যে তাহলে অনেক গরু লাগবে সুতরাং সম্ভব নয়। কিন্তু একটা কথা বলে রাখা ভাল যে আগে প্রযুক্তি উন্নত না থাকলেও যে পদ্ধতি চলত সেটার সাথে বিজ্ঞান এর ভূমিকা ছিল কারণ সেই সময় বেশির ভাগ জমি বছরে একবার চাষ হত অর্থাৎ একই জমিতে এক চাষ বার বার হতো না ফলে প্রাকৃতিক ভাবে জমিতে অনুখাদ্য তৈরি হত। কার্বন বৃদ্ধি হত এবং সেখানে গোবর সার দেওয়ার পর অল্পতেই তা গাছের পুষ্টিমেও খাদ্যতে রূপান্তর করত , বর্তমান সময়ে আমরা প্রাকৃতিক চাষ এর কোথায় শুনছি বহু মানুষ করছে সেটি নতুন নয় একটু আগে আমরা যেটি বললাম শেটিকেই এখন যেহতু জায়গা জমি কম তাই বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট কোন কোন জিনিসগুলো জৈব বা প্রাকৃতিক চাষে অবদান রাখতো সেই জিনিস গুলোকে চিহ্নিত করণ করে নিয়ে একটি পদ্ধতি তৈরি করে কম অধিক জায়গায় কম জিনিস প্রয়োগ করে উৎপাদন আগের জৈব চাষের থেকেও অনেক বেশি পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই জৈব চাষ বলতে যে শুধু গোবর সেটি নয় গোবর এর সাথে এখন গমুত্র যুক্ত হচ্ছে আগে জমিতে পশুচারণ  বেশি হত তাই বুঝতে পারতো না যে সেখানে পশুর মূত্র গুলো কাজ করছে জমিতে কিন্তু আজ তা প্রমাণ করে গোবর এর সাথে গমুত্র যুক্ত হয়েছে। আগে জমিতে একবার অন্তত ডাল চাষ হত কিন্তু এখন হয় না সেটিকে ধরে রাখার জন্যে সরাসরি ডাল বেসন ব্যবহার হচ্ছে সতরাং জৈব চাষ বলতে শুধু গোবর দিয়ে নয়। গোবর সার ও গমুত্র এর সাথে আর কিছু বস্তু মিশিয়ে জবাণুর বৃদ্ধি ঘটিয়ে কম গবরে অধিক জমি চাষ কিভাবে হয় তা জানব তার মধ্যে একটি সার অমৃত জল বা অমৃত পানি বা মিরাক্কেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত হচ্ছে যা গাছের অনুখাদ্য ঘাটতি পূরণ করে দ্রুত বৃদ্ধি সহায়ক হিসবে কাজ করে এবং রোগ কম হয় সেই সাথে গাছের উৎপাদন শক্তিও বেড়ে যায়। 

বর্তমান জৈব চাষের অগ্রগতি -

 বর্তমান সময়ে জৈব খাদ্যের একটি চাহিদা দেখা যাচ্ছে সেই সাথে জৈব চাষের ও যারা আগ্রহী তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে শিখে করছে আর যারা বেশি জ্ঞানী তারা সেই পুরোনো সিস্টেম কে ভাবছে এবং সময়এর সাথে চলতে নারাজ , দীর্ঘদিন চাষ কার্যের সাথে গবেষণা লব্ধ জ্ঞান নিয়ে নিরলস কাজ করে পদ্যশ্রী সন্মান প্রাপ্ত সন্মানিয় সুভাষ পালেকর মহাদয় তার চাষ কার্য কে দেশের সামনে রেখেছেন এবং সেটিকে সরকার মান্যতা দিয়েছে সেই অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন রাজ্যে জৈব বা প্রকৃতক চাষ কার্য চলছে তার কোথায় একটি দেশী গাই যদি থাকে তবে তা দিয়ে আপনি 90 বিঘা জমি জৈব তে চাষ করতে পারবেন ,যা শুধু গোবর দিয়ে করলে 10 টি গুরুর প্রয়োজন হবে। মনে রাখতে হবে চাষ মানে জীবাণুর খেলা আমরা যা কিছুই জমিতে প্রয়োগ করি তা জীবাণু গাছের খাদ্য হিসেবএ তৈরি করে। জীবাণু গাছের খাদ্য রান্না করে গাছকে খাওয়াতে সহায়তা  করে।  জীবাণু যত বেশি হবে গাছের বৃদ্ধি ফল তত বেশি হবে , আমরা এটাও জানি না হয়তো মাটি তে কি আছে এক কোথায় বলতে আমরা অন্ধকারে শুধু হাত ঢুকিয়ে দেই তাতে কি উঠবে জানি না কিন্তু জমিতে যত বেশি জীবাণু সারের ব্যাবহার বাড়াবেন তত বেশি ফলন বৃদ্ধি হবে আর তা আমরা বাড়িতেই প্রায় বিনা পুজিতে প্রস্তুত করতে পারবো। মনে রাখতে হবে উৎপাদিত ফসলের দাম আমাদের হাতে নেই  কিন্তু উৎপাদন খরচ আমাদের হাতে আছে। যত খরচ কমাতে পারব দাম কম পেলেও শেষ হাসিটা আমরাই হাসব রাসায়নিক সার ব্যাবহার কারী  কৃষক নয় কারণ তাদেরকে ফসলের বাজার তার প্রাপ্ত মূল্য না দিয়ে  এবং সার ব্যবসায়ী অধিক দাম নিয়ে  দুজনেই লুটে খায় । 

  আরও দেখুন

দ্রুত কম্পোস্ট সার তৈরী পদ্ধতি

  তরল জৈব সার অমৃত পানি (মিরাক্কেল/ভিটামিন ) প্রস্তুতি- 

 মিরাক্কেল শব্দটি সম্পর্কে  আপনারা সকলেই জানেন যার আশা নেই তবু বেচে ফিরে আসে যে শব্দটি হয়ত ডাক্তার বাবুদের মুখে শুনে থাকি আমরা  এই সারের গুণ ঠিক তাই যার আশা নেই ফলন দিবেনা মরে যাবে সেই গাছ ও আর ফলন দেয়, অর্থাৎ যদি আমরা সঠিক সময়ে দিতে পরি বাড়িতে প্রস্তুত করে তাহলে খরচ কম ফসল উৎপাদন বেশি করে আয় দীগুণ করে দিবে -

উপাদান –

  • দেশী গরুর গোবর 1 কেজি। 
  • দেশী গরুর গমুত্র 1 লিটার । 
  • চিটা গুড় 50 গ্রাম ।  
  • পচা কলা 6-7 টি । 
  • জল 10 লিটার । 
  • এক কাপ ভাতের ফ্যান । 
  • 50 গ্রাম ব্যসন । 
  • এক মুঠ মাটি বট বা পাকর গাছের গড়ার । 
  • একটি 50 লিটার ড্রাম । 

 

অমৃত পানি তৈরির পদ্ধতি – 

উপরের সবটা একটা পাত্রে নিয়ে ভাল করে হাত দিয়ে মিশিয়ে নিয়ে 50 লিটারের ড্রামে ঢালুন তার পর জল ঢালুন এবং একটি লাঠি নিয়ে ভাল করে ঘেটে দিয়ে একটি অন্ধকার জায়গায় 3 দিন রেখে দিন এবং ঐ 3 দিন দিনে 3 বার একটি লাঠি দিয়ে 10 বার সোজা এবং 10 বার উল্টো করে ঘাটতে হবে । 

ব্যাবহার –

চতুর্থ দিনে আপনার অমৃত পানি রেডি হয়ে গেছে এবার ব্যাবহার করতে পারেন । তবে যতদিন ব্যাবহার চলাকালীন  ড্রামে থাকবে ততদিন ডাল দিয়ে নিয়মিত ঘোড়াতে হবে দ্রবনটি । 

চারা গাছে ব্যাবহার করলে 1 লিটার অমৃত পানির সাথে 7-8 লিটার জল মেশবেন এবং এবং বড় গাছ হলে 1 লিটার অমৃত পানির সাথে 5-6লিটার জল মিসবেন, গাছের গড়তে দিবেন সঙ্গে গাছের গায়ে দিবেন এবং বিশেষত পাতায় দিবেন। মনে রাখবেন গাছ শুধু শিকড় দিয়ে নয় তার পাতা দিয়েও আহার গ্রহণ করে । 

কিভাবে কাজ করে অমৃত পানি

গোবরে রয়েছে অজস্র জীবাণু।  বেসন এ রয়েছে রাইবোজিয়াম্ এবং চিটে গুড় ও পচা ফলে রয়েছে কার্বন, উদ্ভিদ ও জীবনুদের নানান খাদ্য। সেই সাথে গাছের গোড়ার মাটিতে রয়েছে একধরনের উপকারী জীবাণু। 3 দিন ধরে ঐ মিশ্রণ পচতে থাকে এবং জীবাণু গুলির সংখ্যা বাড়তে থাকে।  যত পচতে থাকবে তত জীবাণুর সংখ্যা বাড়তে থাকে, চতুর্থ দিনে জীবাণুদের সংখ্যা বেশি বাড়ে এবং এর পর ধীরে ধীরে কমতে থাকে, তাই চতুর্থ দিন ব্যাবহার করলে মিশ্রণটি ভাল কাজে আসে। এর ব্যবহারে উদ্ভিদের খাদ্য ও জীবাণুরা মাটিতে প্রবেশ করে মাটিতে জীবাণুর সংখ্যা বাড়িয়ে মাটি উর্বর করে এবং পাতায় অনুখাদ্যের কাজ করে, তাই দেখা গেছে যে ঐ সার দেওয়ার  ফলে গাছের স্বাস্থ্য ভাল হয় এবং উৎপাদন  বেড়ে যায়


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)