ধানের জমিতে রোগপোকার আক্রমণ বেড়ে চলেছে কিন্তু সঠিক সমাধানের চেষ্টা করলেও তা হয় না এবং ধানের ক্ষেত্রে রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণে যতটা খরচ হয় অনেক সময় হয়তো ততটা ফলন ব্যাহত হয় না তাই পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ করলে ফলনে কোনো ব্যাঘাত ঘটনা না এবং জমিতে রোগ পোকার আক্রমণ কমতে থাকে।
1.কোন সময়ে কোন পোকা আক্রমন করে
1.1.পাশকাঠি ছাড়ার সময়ে –
- মাঝরা পোকা গুছিতে মাঝ পাতা শুকনো হয়ে যায়।
- ডেপু পোকা পাশকাঠি আক্রান্ত হয় ।
- পামরি পোকা দু একটি করে পাতা আক্রান্ত হতে দেখা যা...
- চুঙ্গি পোকা গুছিতে দু একটি পাতা চোঙ হয়ে যায় ।
- সবুজ শ্যামা পোকা গুছিতে 5-10 টি দেখা যায় ।
- পাতামোরা পোকা গুছিতে এক দুটি পাতা মোড়ানো দেখা যায়...
1.2. থোড় আসার সময় –
মাঝরা পোকা 5-8 গুছিতে একটি মথ দেখা যায় ।
1.3.বৃদ্ধির অবস্থায়
- পাতা মোরা পোকা দুটি এক দুটি পাতা ক্ষতি গ্রস্থ হবে ।
- সবুজ শ্যামা পোকা গুছিতে 8- 10 টি পোকা দেখা যাবে ।
- বাদামি শোষক পোকা গুছিতে 5-10 টি দেখা যাবে ।
1.4. শীষ বেরোনোর সময় -
- মাঝর পোকা 8-10 গুছিতে একটি মথ দেখা যায়.।
- বাদামি শোষক পোকা গুছিতে 5-10 টি দেখা যায়।
- শীষ কাটা লেদা পোকা গুছির গোড়ায় এক দুটি দেখা যায় ।
- গান্ধী পোকা গুছিতে একটি বা তার অধিক দেখা যায় ।
বি ;দ্র প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুদিন জমি ঘুরে এসে রোগ পোকা নির্ণয় করে তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ,
2.ধানের রাইসব্লাস্ট বা ঝলসা রোগ , পাতার বাদামি রোগ , খোলা পচা বা শীথব্লাইট , ব্যাক্টেরিয়াল ব্লাইট ,গোড়া পচা রোগ দমনের উপায় –
100 গ্রাম টাটকা গোবর সকালে 1 লিটার জলে গুলে রেখে বিকেলে বেলায় স্প্রে করতে হবে , বীজতলা থেকে শুরু করে প্রতি 12-15 দিন অন্তর নিয়মিত স্প্রে করা উচিত এবং রোগ দেখা দিলে 7 দিন পর পর করা উচিত , বিঘা প্রতি 70 থেকে 80 লিটার এই গোবর নির্যাস লাগবে , ।
আথবা ট্রাইকোডারমা ভীরিডী জীবাণু প্রতি লিটার জলে 15 গ্রাম করে গুলে নিয়ে 15 দিন পর পর স্প্রে করলে সম্পূর্ণ নিরাময় হয় , তবে আগে যদি বীজ ও চারা শোধ করা হয় তাহলে আর ভাল হয় রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
খোলা পচা রোগের জন্যে 10 লিটার জলে 4 মিলি লিটার পামারোজ তেল ও 4 গ্রাম সাবান গুলে 7 দিন অন্তর 2-3 বার স্প্রে করতে হয় ।
এই নির্যাস প্রয়োগের ফলে শুধু রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ নয় গাছের বৃদ্ধিতে অনেক ভাল কাজ করে ফলে সারের যোগান কম লাগবে ।
3. বিভিন্ন যান্ত্রিক পদ্ধতিতে শত্রু পোকা নিয়ন্ত্রণ –
বিঘা প্রতি 50-60 টা ধনছে গাছ ধান লাগানোর পর লাগিয়ে দিত পারেন অথবা বিভিন্ন গাছের ডাল , বাসের ঝিক বা 4ফুট উচ্চতার (T )টি বানিয়ে বসিয়ে দিতে পারেন সম্পূর্ণ জমিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে।
এর ফলে বিভিন্ন পাখি বা পেচা এসে বসবে রাতে বা দিনে এবং পোকা ধরে খাবে , এর ফলে অনেকটাই পোকা নির্মূল হয় ।
গান্ধী পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্যে কাকড়া বা পচা শামুক ব্যাবহার করা যেতে পারে যেমন ফুল আসার সময় বিঘা প্রতি 20-25 টি কাকড়া বা শামুক থেত করে 3-4 ফুট একটি লাঠি ধান জমিতে গেড়ে দিয়ে তার মাথায় এই থেত লাগিয়ে দিতে হবে , এর ফলে গান্ধী পোকা পচা কাকড়া বা শামুক এ আকৃষ্ট হয়ে বসবে ভোর বেলায় গিয়ে সেগুলি ঠোঙাতে ভরে মেরে ফেলতে হবে ।
কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষ এই দুই প্রতি পক্ষে 2 বার করে 1-2 আলোক ফাদ ব্যাবহার করা যেতে পারে হয় মশাল জালিয়ে বা এমনি আগুন জালিয়ে জমির আলে আথবা লাইট এর ব্যবস্থা করতে পারলে নিচে জল দিয়ে আলোক ফাদ ব্যাবহার করা যেতে পারে তবে জলে সারফ বা সাবান গুলে দিবেন ।
এর ফলে বিভিন্ন পোকা মারা যায় আগুনের সংস্পর্শে এসে বা লাইট এর নিচে জলে পরে মারা যায় ।
4.কীটবিতারক দিয়ে বিভিন্ন পোকা নিয়ন্ত্রণ -
গান্ধী পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্যে নিম তেল 3% বা বাড়িতে নিঁম পাতা দিয়ে নিমাস্ত্র তৈরী করে ধানের দুধ হবার সময় থেকে 7 দিন অন্তর দুবার স্প্রে করলে নিয়ন্ত্রণে আসে ।
শোষক পোকা ,জাবপোকা ,শুয়োপোকা ,মাজরা পোকা, শ্যামা পোকা /কারেন্ট পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্যে সরাসরি 5-8 গ্রাম সাবান ( সার্ফ নয় )প্রতি লিটার জলে গুলে বিকেলের দিকে স্প্রে করতে হয়। যদি একটু কাজ কম হয় তবে নিঁম তেল ৩% বা নিমাস্ত্র /অগ্নিঅস্ত্র তৈরী করে সাবান দ্রবনের সাথে মিশিয়ে বিকেলের দিকে ৭ দিন পর স্প্রে করলে পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরও দেখুন - জৈব কীটনাশক অগ্নিঅস্ত্র কি ? কিভাবে তৈরি করবেন ? কিভাবে ব্যাবহার করবেন ? চাষের জন্যে কতটা লাভদয়ক ?
5.মূল্যায়ন
জৈব ভাবে ধানের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ করলে ফলন ভাল হয় এবং বিষমুক্ত খাদ্য নিজে উৎপাদন করে খাওয়া যায় ও ছাসে খরচ কম হয় সেই সাথে মাটির স্বাস্থ ও পরিবেশ ভালো থাকে। বিষ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকেলে স্প্রের সময় শরীরে ক্ষতি হয় না এবং বিষমুক্ত খাদ্য খেলে স্বাস্থ ভালো থাকে।
FAQ(প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর )
1.ধানের থোর আসার সময় কি রোগ হয় ?
মাঝরা পোকা –5-8 গুছিতে একটি মথ দেখা যায় ।
2.ধানের বৃদ্ধির অবস্থায় কি রোগ হয় ?
পাতা মোরা পোকা –দুটি এক দুটি পাতা ক্ষতি গ্রস্থ হবে ।
সবুজ শ্যামা পোকা –গুছিতে 8- 10 টি পোকা দেখা যাবে ।
বাদামি শোষক পোকা – গুছিতে 5-10 টি দেখা যাবে ।
3.ধানের শীষ বেরোনোর সময় কি রোগ হয় ?
মাঝর পোকা 8-10 গুছিতে একটি মথ দেখা যায়.।
বাদামি শোষক পোকা গুছিতে 5-10 টি দেখা যায়।
শীষ কাটা লেদা পোকা গুছির গোড়ায় এক দুটি দেখা যায় ।
গান্ধী পোকা গুছিতে একটি বা তার অধিক দেখা যায় ।
তথ্য সূত্র -
পশ্চিমবঙ্গ সরকার লাইভলিহুড মিশন সুস্থায়ী চাষ ব্যবস্থাপনা ।
আরও দেখুন -
- গােবর গ্যাস স্লারি কি ?এবং কৃষি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার -
- ফসফো কম্পোস্ট কি ?ফসফো কম্পোস্ট সার তৈরী সহজ পদ্ধতি এবং ব্যবহার
- সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থাপনা জৈব সারের গুরুত্ব
- জৈব কীটনাশক তৈরী পদ্ধতি
- জৈব চাষে রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণে সবচয়ে ভালো 16 টি সহজ ও পরিবেশমুখী কীটনাশক , ছত্রাক নাশক টোটকা
- দ্রুত কম্পোস্ট সার তৈরী পদ্ধতি
- তরল জৈব সার তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতি -
- সবুজ সার ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়িয়ে তোলা যায় সহজেই
- সবুজ সার কি? সবুজ সার তৈরী পদ্ধতি -
- কেঁচো সার তৈরী পদ্ধতি
- গোবর দিয়ে নার্সারির জন্যে পরিবেশবান্ধব টব বা পট তৈরীর সহজ পদ্ধতি-
- জীবান্মৃত কিভাবে তৈরি করব ? জৈব চাষে জীবান্মৃত কিভাবে কাজ করে ? এবং এর ব্যাবহার কিভাবে হয় ?
- অমৃত জল বা মিরাক্কেল জৈব তরল সার তৈরী পদ্ধতি
- নিমাস্ত্র কিভাবে তৈরি করে ? ব্রম্মাস্ত্র কিটনাশক কিভাবে তৈরি করে ?
- বিজামৃত তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতি
- ঘনজীবামৃত জৈব সার তৈরি পধতি
- পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ধানের রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন