স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি

Didibhai Agrofarm
0
স্ট্রবেরি চাষ পদ্ধতি / strawberry Farming process


স্ট্রবেরি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের একটি ফুলের  উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত ফল। স্ট্রবেরি হল দুটি ভিন্ন জাতের মধ্যে একটি ক্রস কৃত ফল গাছ। বিভিন্ন উদেশ্য নিয়ে ফ্রান্স এ  প্রথম এই ফলের চাষ করা হয়েছিল। এই ফল পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা  যেমন ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা জুড়ে ব্যাপক ভাবে চাষ হচ্ছে।  ভারতেরও বিভিন্ন রাজ্যে সফল ভাবে এর চাষ হচ্ছে যেমন - পশ্চিমবঙ্গ ,হিমাচল প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ,, , দিল্লি, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান  এবং পাঞ্জাবে   স্ট্রবেরি চাষ হকহে সফল ভাবে।  এই ফলের আকার সাদা বা গাঢ় লাল রঙের হার্টের আকৃতির হয় এর  দৈর্ঘ্য 2 থেকে 5 সেন্টিমিটারের মধ্যে থাকে। স্ট্রবেরি হল একটি বহু  বর্ষজীবি কম বর্ধনশীল একটি তন্তুযুক্ত শেকড়ের বেসাল পাতা যুক্ত ভেষজ উদ্ভিদ।   

    1.স্ট্রবেরি চাষের গুরুত্ব -

    এই ফল চাষ করলে লাভবান হওয়া যায় বেশি। খরচের পরিমান ধীরে কমতে থাকে। গাছের ফল সুগন্ধি ও গন্ধের জন্য বিখ্যাত। স্ট্রবেরির ব্যবহার খাদ্য, পানীয়, মিষ্টান্ন, পারফিউম এবং প্রসাধনীর মতো  বিভিন্ন পণ্যে পাওয়া যায়।স্ট্রবেরির বিভিন্ন জাত তার সুগন্ধির জন্যে বিভিন্নভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। 

    2.স্ট্রবেরি চাষের উপযুক্ত পরিবেশ -

    স্ট্রবেরি চাষ মূলত পিএইচ 5.7-6.5 সহ বেলে দোআঁশ থেকে দোআঁশ মাটি চাষের জন্য আদর্শ। জাত অনুসারে প্রতিটি স্ট্রবেরির চাষ দিবালোকের সূর্যালোকের বিভিন্ন এর উপর নির্ভর করে। এটি মূলত নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে  ভাল জন্মে। পশ্চিমবঙ্গে স্ট্রবেরি চাষের অনুকূল ভাব হয়ে থাকে। 

    3.স্ট্রবেরি চাষ কিভাবে হয় -

    স্ট্রবেরি চাষের জন্যে উপযুক্ত জাত নির্বাচন করে মাটি প্রস্তুত করে সাধারণ বা খড় দিয়ে বা প্লাস্টিক মালচিং দিয়ে চাষ করা -

    a.স্ট্রবেরির উন্নত জাত -

    ভারতে বিভিন্ন প্রজাতির স্ট্রবেরি চাষ হলেও তাদের মধ্যে চাষকৃত উল্লেখযোগ্য স্ট্রবেরি জাতগুলি হল সেলভা, চ্যান্ডলার, টিওগা,বেলরুবি, টরে,  ফার্ন এবং পাজারো এছাড়াও এর কতগুলি জাত রয়েছে সেগুলি হল রেড কস্ট,  প্রিমিয়ার,  ব্যাঙ্গালোর,   পুসা আর্লি ডোয়ার্ফ,। 

    b.জমি প্রস্তুতি -

    প্রথমে এক চাষ দিয়ে মাটিতে মিথাইল ব্রোমাইড এবং ক্লোরোপিক্রিনের মিশ্রণ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে চাষ দিতে হবে গাছের শেকড় বৃদ্ধির জন্যে।  বিঘাপ্রতি টো থেকে ২৫ কুইন্টাল গোবর সার দিতে হবে এবং এন পি কে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে টো কাজেই দিতে হয়। মাটি প্রস্তুত হয়ে গেলে প্লাষ্টিক মালচিং এবং ড্রিপ সিস্টেম ব্যবহার করলে -প্রথমে মাটি ঢিপি তুলে পাইপ বিছিয়ে প্লাস্টিক বিছিয়ে দিতে হবে। আর সেটা না করলে চারা লাগানোর দিকে অগ্রসর হতে হবে।

    c.স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি-

    স্ট্রবেরি লাগানোর আদর্শ সময় সেপ্টেম্বর থেকে অক্টবর মাস ধরা হয়। চাষের জন্যে ভাইরাস মুক্ত স্ট্রবেরির জন্যে টিস্যুকালচার করে লাগানো হয় অথবা স্ট্রবেরির রানার লাগানো হয়। জাত এবং ধরণ অনুযায়ী স্ট্রবেরির রোপনের দুরুত্ব নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত ৩০ সেমি: চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারি ৪৫ -৬০ সেন্টিমিটার দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়। 

    4.স্ট্রবেরি গাছের পরিচর্যা-

    স্ট্রবেরির মূল খুব বেশি মাটির গভীরে প্রবেশ করে না তাই নিয়মিত জল দেওয়া যেতে পারে ড্রিপ বা স্প্রিঙ্কলারের মাধ্যমে তবে কম পরিমানে । মাটিতে রস থাকা আবশ্যক কিন্তু জল বেশি হলে গোড়া,কান্ড  পচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রথম বছরে গাছের আগাছা দমনের জন্যে প্লাস্টিক শীত মালচিং না দেওয়া হলে চারা রোপনের পর খর  মালচিং দিতে হবে। স্ট্রবেরির  ভালো ফলন প্রাপ্তির জন্যে ফুল ফোটার চার দিন পর GA 3  (50 ppm.) স্প্রে করা হলে এবং ফুল আসার পর ম্যালিক হাইড্রাইজাইড (0.1-0.3%) স্প্রে করলে ফলন 31-41% বৃদ্ধি পায় এবং  মোরফাকটিন (@50 ppm.) ফলের আকার উন্নত করে।

    5.স্ট্রবেরি গাছের রোগ-

      যে এলাকায় স্ট্রবেরি রোপণ করতে হবে সেগুলি সাদা গ্রাব এবং কাটওয়ার্ম থেকে ফসলকে মুক্ত রাখা উচিত। লোমশ শুঁয়োপোকা এবং সাদা গ্রাব, কাটাকৃমি  স্ট্রবেরি গাছে আক্রমণ করে। এই ধরণের পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসলকে রাখা করার জন্যে এন্ডোসালফান (0.05%) বা ম্যালাথিয়ন (0.05%) প্রয়োগ কার্যকরী হতে দেখা গেছে। স্ট্রবেরি গাছে প্রায়শই পাতায় দাগ এবং ধূসর ছত্রাক দেখা যায় এর জন্যে কার্বেন্ডাজিম/থায়োফেনেট মিথাইলের প্রয়োগ কার্যকরী হবে। এছাড়াও পাকার সময় স্ট্রবেরির ফলের রং কখনো কখনো সাদা বা একটু ফেকাসে হয়ে থাকে যা জলবায়ুর তারতম্যের কারণে হয়ে থাকে এটি একটি শরীরবৃত্তীয় ব্যাধি। 

    আরও দেখুন -

    mushroom spawn মাশরুম স্পন তৈরি পদ্ধতি 2022 - দিদিভাই এগ্রোফার্ম

    6.স্ট্রবেরি উৎপাদন -

    যখন ফলের রং অর্ধেক থেকে তিনশতাংস পূর্ণ হবে তখনি ক্ষেত্রে থেকে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। ফসল চেরা সাধারণত দুদিন তিন দিন পর সকাল বেলা করা হয় এবং অতিরিক্ত তাপের কারণে যাতে ফল ক্ষতি গ্রস্থ না হয় সেই কারণে ফল গুলিকে সংগ্রহ করে ছায়া যুক্ত জায়গায় রাখা হয়। প্রজাতি ভেদে এর উপাদান নির্ভর করে তাই নির্দিষ্ট করে এর উৎপাদন পরিমান বলা সম্ভব হয়না। ফসল কাটার পর ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কল স্টোরেজ এ রেখে ১০ দিন পর্যন্ত সঠিক বাজারে বিক্রির জন্যে অপেক্ষা করা যেতে পারে। গ্রেডিং করে ছোট বোরো সাইজ নির্বাচন করেও বাজারজাত করুন করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়। 

    FAQ(প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর )

    কোন পরিবেশ স্ট্রবেরি চাষের উপযুক্ত ?

    স্ট্রবেরি চাষ মূলত পিএইচ 5.7-6.5 সহ বেলে দোআঁশ থেকে দোআঁশ মাটি চাষের জন্য আদর্শ। জাত অনুসারে প্রতিটি স্ট্রবেরির চাষ দিবালোকের সূর্যালোকের বিভিন্ন এর উপর নির্ভর করে। এটি মূলত নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে  ভাল জন্মে। পশ্চিমবঙ্গে স্ট্রবেরি চাষের অনুকূল ভাব হয়ে থাকে। 

    স্ট্রবেরি চাষের সঠিক সময় কোনটি ?

    স্ট্রবেরি লাগানোর আদর্শ সময় সেপ্টেম্বর থেকে অক্টবর মাস ধরা হয়।

    স্ট্রবেরির ভালো জাতগুলি কি কি ?

    ভারতে বিভিন্ন প্রজাতির স্ট্রবেরি চাষ হলেও তাদের মধ্যে চাষকৃত উল্লেখযোগ্য স্ট্রবেরি জাতগুলি হল সেলভা, চ্যান্ডলার, টিওগা,বেলরুবি, টরে,  ফার্ন এবং পাজারো এছাড়াও এর কতগুলি জাত রয়েছে সেগুলি হল রেড কস্ট,  প্রিমিয়ার,  ব্যাঙ্গালোর,   পুসা আর্লি ডোয়ার্ফ।

    কিভাবে স্ট্রবেরির ভালো উৎপাদন পাওয়া যায় ?

    স্ট্রবেরির  ভালো ফলন প্রাপ্তির জন্যে ফুল ফোটার চার দিন পর GA 3  (50 ppm.) স্প্রে করা হলে এবং ফুল আসার পর ম্যালিক হাইড্রাইজাইড (0.1-0.3%) স্প্রে করলে ফলন 31-41% বৃদ্ধি পায় এবং  মোরফাকটিন (@50 ppm.) ফলের আকার উন্নত করে।

    স্ট্রবেরির প্রধান রোগ গুলি কি ?

    কাটওয়ার্ম , লোমশ শুঁয়োপোকা এবং সাদা গ্রাব, কাটাকৃমি  স্ট্রবেরি গাছে আক্রমণ করে। এই ধরণের পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসলকে রাখা করার জন্যে এন্ডোসালফান (0.05%) বা ম্যালাথিয়ন (0.05%) প্রয়োগ কার্যকরী হতে দেখা গেছে। স্ট্রবেরি গাছে প্রায়শই পাতায় দাগ এবং ধূসর ছত্রাক দেখা যায় এর জন্যে কার্বেন্ডাজিম/থায়োফেনেট মিথাইলের প্রয়োগ কার্যকরী হবে।

    তথ্য সূত্র  ডঃ যশবন্ত সিং পারমার ইউনিভার্সিটি অফ হর্টিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রি, সোলান, নৌনি-173230, হিমাচল প্রদেশ।

    আরও দেখুন -

    ঘনজীবামৃত জৈব সার তৈরি পধতি


    x

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    0মন্তব্যসমূহ

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)